Abosar

হারা কার্তিক

শিশির রায়

মা’র বয়স হচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে সব কিছু। সে দিন পোস্তর বড়া করেছে, নুন দেয়নি। খেতে বসে পাতে পোস্তর বড়া দেখে মনটা যত খুশি হয়েছিল, মুখে দিতে মেজাজ ততটাই খিঁচড়ে গেল। অত ভাল একটা খাবারে নুন না দিলে থাকেটা কী! থালার ওপর খুব সুন্দর অথচ বিস্বাদ দুটো বস্তু। রাগ হল খুব, এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম। মা’র মুখটা কালো হয়ে গেল।

‘‘শিবু, শোন...’’

‘‘কী শুনব? এই গরমে টিউশনি সেরে এসে একটু শান্তিতে খাব, তাতেও নুন নেই! মাথাখারাপ হয়ে যাচ্ছে তোমার!’’

শুধু রান্না নয়। রোজকার অন্য কাজও ভুলে ভরা। এক ভুলে যাওয়া থেকে অন্য ভুল। স্নান করে রোজ ছাদে যায় চুল ঝাড়তে, কাচা কাপড়গুলোও নেড়ে দিয়ে আসে। কালও গিয়েছে, চুল ঝেড়ে নেমে এসেছে নীচে। আমার জিনসের প্যান্টটা ধুয়ে দিয়েছিল। আজ সকালে বেরোব বলে ছাদ থেকে প্যান্টটা আনতে গেছি, দেখি, এক কোণে বালতিটা। সারা বিকেল-রাত কাপড়গুলো ওখানেই পড়ে আছে। আধ-শুকনো, কুঁচকোনো সাপের কুণ্ডলী যেন। বালতির একেবারে তলায় জিনসটা, ভেজা। সারা রাত পড়ে থেকে চিমসে গন্ধ বেরোচ্ছে।

রেগেমেগে এসে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। মা চা করছিল রান্নাঘরে, চামচে দিয়ে চিনি নাড়ার শব্দ। একটু পরেই আমার ঘরে কাপ হাতে ঢুকে থমকাল, ‘‘শুলি যে? শরীর খারাপ করল নাকি?’’

‘‘আমি কী পরে টিউশনি যাব?’’

‘‘ প্যান্ট ধুয়ে দিয়েছি তো কাল!’’

‘‘ধুয়েছ, ধুয়ে মেলেছ? দেখো গিয়ে ছাদে! পাগল হয়ে যাচ্ছ তুমি,’’ দুমদুম পা ফেলে এলাম বারান্দায়।

আমার একটাই ভদ্র-সভ্য জিনস প্যান্ট। ওটা পরেই রোজ বেরোই আঁকার টিউশনিতে। ন’টা টিউশনি করে মাসে আট হাজার রোজগার। ওতেই মা-ছেলের সংসার চালাতে হয়। দু’টো লোকের কী এমন খরচ, বললে হবে না। ভাত, একটা সবজি, সপ্তাহে দু’দিন মাছ এক দিন ডিম করলেও আজকের বাজারে কম খরচা? ইলেকট্রিসিটি, মিউনিসিপ্যালিটি ট্যাক্স, কেব্‌ল-এর টাকা, আমার মোবাইলের খরচা আছে। মা’র জন্য একটা ল্যান্ডফোন পুষতে হয়, তার খরচ। বাবার রেখে যাওয়া এই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আছে বলে রক্ষে। নয়ন দত্ত স্ট্রিটের এই হদ্দ পুরনো দোতলা বাড়ি, তার মধ্যেই পাঁচ-পাঁচটা পরিবার। আমাদের ভাগে সরু এক ফালি বারান্দা, পর পর তিনটে ঘর। দেওয়ালে পলেস্তারা খসে পড়ছে, কালো পাড়ওলা লাল মেঝে জায়গায় জায়গায় চাকলা-ওঠা। মাথার ওপর কড়ি-বরগা নড়বড়ে, কোন দিন ভেঙে ঘাড়ে পড়বে ঠিক নেই। সবার আগে বাড়িটা মেরামত করতে হবে। আমার পোশাকের বিলাসিতা পোষায়?

খরচ বাঁচাতে বিয়েও করিনি। ধুস, এতেই সামলানো যাচ্ছে না! আমি শিবশঙ্কর সিংহ, আটত্রিশ বছর বয়সি একটা দামড়া। মাস গেলে মোটে আট হাজার রোজগার করি, আমাকে কে মেয়ে দেবে? শ্যামল, আমার ভগ্নীপতি অবশ্য ছিনে জোঁকের মতো লেগে আছে পিছনে। আমার বোন পলা-ও। আরে তোদের বিয়ে দিয়েছি, তোরা থাক সংসার নিয়ে, আমাকে টানাটানি কেন? এখানে এলেই শ্যামলের এক কথা, ‘‘দাদা, ব্যাটাছেলেদের আবার আটত্রিশ কোনও বয়স নাকি? বলেন তো আমি দেখছি।’’ আরে তুই আমার বোনটাকে দেখ, তাতেই হবে। বিয়ের সময় তো খাট-আলমারি-গলার-হাতের সব বুঝে নিয়েছিলি! এখন এ সব এক্সট্রা পিরিত লোক-দেখানো মনে হয়। পলাকে তাও দাবড়ে চুপ করানো যায়, শ্যামল জামাই মানুষ, ওর কথা শুনে নিতে হয় মুখ বুজে। নইলে মা আবার ঝামেলা করবে।

আলনার পিছন থেকে একটা পুরনো ফুলপ্যান্ট বের করলাম খুঁজে খুঁজে। ছাইরঙা, বহু বছর না-ব্যবহারে কেমন দাগ-দাগ হয়ে আছে। বাবার প্যান্ট ছিল বোধহয়। বারমুডার ওপর গলিয়ে দেখলাম, কাজ চলে যাবে। আজ এই ছিল কপালে। থাকুক, তা বলে টিউশনি মিস করা যাবে না।

বেরোচ্ছি, মা কাঁচুমাচু মুখে কুড়ি টাকার একটা নোট এগিয়ে দিল, ‘‘ফেরার সময় চারটে সন্দেশ আনিস। ঠাকুরকে দোব।’’

‘‘কেন? বাতাসা শেষ? আর আজ তো পূর্ণিমা-টূর্ণিমা নয়!’’

‘‘ওই একটু মানত করেছি।’’

‘‘ঠিক করে বলো।’’

মা’র মাথাটা নিচু হতে থাকে, ‘‘পলা ওর চেনটা রাখতে দিয়েছিল...’’

‘‘মা! আবার! আবার তুমি হারিয়েছ? নিজের জিনিস হারাও ঠিক আছে, বোনের গয়নাও! একটা আস্ত সোনার চেন হারিয়ে ফেললে?’’

চটি গলানো হয় না পায়ে। সিঁড়িতেই বসে পড়ি। আমার চিৎকারে উলটো দিকের বাড়ির মাসিমা বেরিয়ে আসেন।

‘‘কী হল দিদি? শঙ্কর, কী হল!’’

মা ধরা গলায় বলে, ‘‘হারা কার্তিককে বলেছি। ঠিক পেয়ে যাব, দেখিস!’’

আমি এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াই। তার পর বেরিয়ে যাই ঝড়ের বেগে।

 

*******

শিয়ালদার এই বহুতলে বেশির ভাগই অবাঙালি। ব্যবসায়ী লোক সব, টাকাপয়সার শেষ নেই। এই সব বাড়ির ছেলেরা একটু বড় হয়েই দামি বাইক হাঁকাবে, পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করবে, বাবার ব্যবসা সামলাবে। মেয়েরা শপিং মল থেকে অকারণে জিনিস কিনবে রোজ, বিয়ে করে চলে যাবে অন্য অবাঙালি বাড়িতে। এদের মাথায় আঁকা শেখার কথা ঢোকাল কে?

আজ মনটা কেমন খিঁচ ধরে আছে। ঘিঞ্জি শহরে এসি ঘরে বসে আমার ক্লাস ফোরের অবাঙালি ছাত্র গ্রামের দৃশ্য আঁকছে। ধানখেত, গরু, পুকুর। কাঠের দোকানের হারুদা দু’বার ফোন করল এরই মধ্যে। সব মাল রেডি, আজ বিকেলে ডেলিভারি দিয়ে যাবে বাড়িতে। দেওয়ালে কড়িগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। ক্ষয়ে এসেছে একেবারে, নতুন ঠেকনাই না দিলে চলবে না আর। হারুদাকে দেখিয়েছিলাম। বলল, বরগাগুলোরও হাল তথৈবচ। বর্ষার আগে না সারালে ভোগান্তি আছে। রবিবার সন্ধেয় কালবৈশাখী উঠেছিল, দেখি ক্যাঁচক্যাঁচ করছে তিন-চারটে। কোন দিন না নিজের বাড়ি চাপা পড়েই মরতে হয়। উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ি, খাঁটি সেগুন কাঠের বরগা অনেক বছর টেনেছে। আর পারছে না। হারুদা একটা এস্টিমেট দিয়েছে, সাড়ে ন’হাজার। মিস্তিরির মজুরি-টজুরি নিয়ে বারো। আমার মাসমাইনের থেকেও বেশি। চোখে অন্ধকার দেখার কথা। তবু বলেছি, করো। আজ থেকেই করো। একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ঠিক। হতেই হবে। 

অবাঙালি টিউশনবাড়িতে ভাল জিনিস খেতে দেয়। কিন্তু আজ কাজু বরফিও ভাল লাগছে না। মা’র ব্যাপারটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। পলাকে কী বলব আমি? শ্যামলকে? মা হারিয়ে ফেলেছে তোমাদের সোনার চেন, ব্যস? পলারা নর্থ বেঙ্গল গিয়েছিল ঘুরতে। ডুয়ার্স, দার্জিলিং, গ্যাংটক মিলিয়ে ন’দিনের ট্রিপ। বাগুইআটির ছোট ফ্ল্যাট স্রেফ তালাবন্ধ রেখে যেতে ভরসা পাচ্ছিল না, তাই পলা ওর গয়নাগুলো রেখে গিয়েছিল মা’র কাছে। রেখে যা সে ঠিক আছে, ঢং করে তোর চেনটা মা’কে পরিয়ে যাওয়ার কী ছিল? বাক্সের মধ্যেই রেখে যা! গেল তো হারিয়ে? মা’র এখন কী ভুলোপানা বাতিক হয়েছে, তোরা তার খবর রাখিস? সামলাতে তো হয় আমাকে। কেব্‌ল-এর দু’শো হাতে দিলাম সে দিন, কোথায় রেখেছে, খেয়াল নেই। দু’দিন ময়লার বালতি নীচে নামিয়ে রেখে আসতে ভুলে গিয়েছে। এমন ভুলো লোক দিয়ে সংসার চলে?

আর কিছু বলতে গেলেই ওই এক, হারা কার্তিক। কি না, হারা কার্তিককে মন থেকে বললে হারানো জিনিস ফিরে পাওয়া যায়। ঠাকুরদেবতার আর কাজ নেই। তুমি টাকাপয়সা, সোনার চেন ফেলে-ছড়িয়ে রাখবে, চোরে তুলে নিয়ে যাবে, আর হারা কার্তিক আবার উদ্ধার করে এনে তোমার সামনে ফেলে দেবেন, পটাং! এই সব সেকেলে বিশ্বাসে জীবন চলে? মা’কে কে বোঝাবে! দু’বার নাকি হারা কার্তিককে মানত করে ফিরেও পেয়েছে কী কী সব। দু’বারই আমাকে দু’কিলো নুন দিয়ে আসতে হয়েছে মোড়ের কালীমন্দিরে। তাও ভাল, এই দেবতাটির বেশি খাঁই নেই। কার্যোদ্ধার হলে যে কোনও মন্দিরে কিলোখানেক নুন দিয়ে এলেই তুষ্টু। নইলে কলকাতায় কার্তিকঠাকুরের মন্দির খুঁজতে জান কয়লা হয়ে যেত।

ধড়াম করে জানলা বন্ধ হল কোথায়। আমার ছাত্র লাফিয়ে উঠল, ‘‘স্যর, আঁধি আয়া!’’ আমি জানলা বন্ধ করার অছিলায় পায়ে পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। খুব জোর ঝড় উঠেছে। শোঁ-শোঁ হাওয়া উড়িয়ে-তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। দূরে শিয়ালদা স্টেশনের দিকটায় আকাশ একেবারে গাঢ় বেগুনি। দু’টো ঢ্যাঙা সুপুরিগাছ উথালপাথাল দুলছে। সব ঝড়ের ছবি আঁকা যায় না। এই ছবিটা আঁকতে পারলে বেশ হত।

 

*******

কোনও বাস নেই পথে। কলকাতায় গরমে এমন ঝড়বৃষ্টি শেষ কবে হয়েছে কে জানে। একটা সেভেন্টি নাইন-ডি’তে মানিকতলা এলাম কোনও মতে, বাকিটা হাঁটা। ইলেকট্রিকের খুঁটি উপড়ে পড়েছে কোথাও, তিন-চার জায়গায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ। দুপুর সাড়ে তিনটের কলকাতাকে মনে হচ্ছে খাঁ-খাঁ গিলতে-আসা সন্ধে। আমার আদ্যিকালের রদ্দি মোবাইলে এমনিতেই খেয়ালখুশি টাওয়ার আসে-যায়, ঝড় ওঠার পর থেকেই দেখছি সিগনাল নেই। মা, হারুদা, কাউকেই ফোন করতে পারিনি। তিন নম্বর টিউশনবাড়ির ছাত্রী নিধি, ওর মা’র মোবাইল থেকে ফোন করব ভেবেছিলাম। হবি তো হ আজই মাম্মি বাড়ি ছিলেন না। কপাল আর কী।

দোতলার সিঁড়ির মুখে উঠতেই কেমন একটা মনে হল। আমাদের দরজা, উলটো দিকের মাসিমার দরজা— দু’টোই খোলা। তিন-চার জোড়া জুতো সামনে। শ্যামলের জুতো জোড়া চিনতে পারলাম, ওরা এই ঝড়জলের মধ্যে এ বাড়িতে কেন?

মাসিমার সঙ্গে ধাক্কা লাগছিল আর একটু হলেই। ‘‘একটা ফোন করবে তো, শঙ্কর! কী অবস্থা...’’

চিড়িক করে কী একটা হয়ে গেল মাথার মধ্যে। একদৌড়ে মা’র ঘরে গেলাম। কই, কেউ নেই তো! মা, পলা, শ্যামল, কোথায় ওরা! ঘরের মেঝেতে ধুলো ভর্তি। জিনিসপত্র ছত্রখান এদিক-ওদিক। চিৎকার করে উঠলাম, ‘‘মা!’’

দু’টো হাত চেপে ধরল আমাকে। শ্যামল। ‘‘মা ও ঘরে। তোমার ঘরে। এখন ঠিক আছে। তুমি এক্ষুনি বেরোও এ ঘর থেকে। বরগা খসে পড়েছে আজ ঝড়ের পর। আর একটু হলেই... খুব জোর বেঁচে গেছেন।’’

মা আমার খাটে শুয়ে। চোখ বন্ধ। কেমন অসম্ভব ক্লান্ত, রোগা লাগছে মা’কে। পাকা কয়েক গাছি চুল ছড়িয়ে আছে বালিশ বেয়ে। পলা মেঝেতে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মা’র মাথায়। কপালের ডান দিকটা ব্যান্ডেজ করা। ওখানেই কি...? সাদা শাড়িতে ধুলো-ময়লার দাগ। আমার মা, পুরনো বাড়ি খসে-ধসে আর একটু হলে মরতে বসা আমার মা’কে দেখে হঠাৎ মনে হল, মা’র ভুলে যাওয়াটা বড় কোনও রোগের শুরু নয় তো? ওই যে আলঝাইমার্স না কী বলে? নিধির ঠাকুমার আলঝাইমার্স আছে শুনেছি। ওদের বাড়ি পড়াতে গেলে মাঝে মাঝে বুড়িকে দেখি বারান্দায় বসে থাকতে। দেখে আর পাঁচটা মানুষের মতোই তো মনে হয়। ক্যানসার, আলঝাইমার্স... এ সব তো বড়লোকদের রোগ। মা’র কেন হতে যাবে? আমি তো আলঝাইমার্স বানানও জানি না। মা’র আলঝাইমার্স হলে আমি
সারাতে পারব?

পলা বোধহয় কাঁদছিল, চোখের নীচে শুকনো জলের দাগ। আস্তে করে ডাকল, ‘‘মা, দাদা এসেছে।’’

মা খুব আস্তে আস্তে চোখ খুলল। বলল, ‘‘আয়। শ্যামলকে একটু চা করে দে পলা, যা...’’

পলা উঠে গেল। এখন শুধু আমি আর মা। শ্যামল বোধহয় ছাদে গিয়েছে সিগারেট খেতে। মা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো করে বলল, ‘‘লাগেনি তেমন। ওই একটু... হারু তোকে মোবাইলে না পেয়ে এখানে ফোন করেছিল। আজ যা অবস্থা, আর আসবে না। তুই চান সেরে আয়। ক’টা বাজে এখন, ভাত খাসনি তো এখনও।’’

উঠে আসছি, মা হাতটা চেপে ধরল। ‘‘শিবু, চেন হারানোর কথাটা ওদের বলিনি এখনও।’’

‘‘পরে হবে মা।’’

‘‘মিষ্টির দোকান কি খোলা? শ্যামলের জন্য একটু মিষ্টি নিয়ে আসিস। আর ওই চারটে সন্দেশ বলেছিলাম সকালে...’’

চৌবাচ্চার জল কী ঠান্ডা! বাথরুমের মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছি। বন্ধ মুঠোটা খুললাম। হারুদা বলেছে, মিস্তিরির মজুরি নিয়ে মোট বারো। সব, সব হয়ে যেত। হয়ে গিয়েও হাতে থাকত আরও কিছু টাকা। একটা জিনস কেনা যেত। মা’র কি আলঝাইমার্স হয়েছে? বড় ডাক্তার দেখানো যেত।

পলার এক ভরির সোনার চেনটা হাতে ঝিকিয়ে উঠল এক বার। আমি, ব্রাহ্মণ ঘরের পইতেধারী ছেলে শিবশঙ্কর সিংহ, ন’টা আঁকার টিউশনি করে আট হাজার রোজগার করি মাসে। টিপে টিপে খরচা করি, টেনেটুনে মাস চালাই। এই চেন আমিই গড়িয়ে দিয়েছি পলাকে। হাতের, কানের, গলার... বোনের বিয়েতে বাদ রাখিনি কিছু। হ্যাঁ, এই রোজগারেও। এখন যদি সেই চেনটাই মা’র ভুলে যাওয়ার ভুলে আমার হাতে চলে আসে, আমি নেব না? এ তো আমার রোজগার। আমার ঘাম! কী হবে নিলে? বলে দিলেই হল, মা হারিয়ে ফেলেছে! কিচ্ছু সন্দেহ হত না পলার। তার পর বউবাজারের কোনও দোকানে গিয়ে...

চৌবাচ্চার জলে ছুড়ে ফেলে দিলাম চেনটা। টলটলে জলের তলায় এক চিলতে সোনা ঝিকমিক করছে। থাক। মা খুঁজে পাবে ঠিক।

জামার পকেটে খান ষাটেক টাকা আছে এখনও। শ্যামলের জন্য মিষ্টি, মা’র ঠাকুরের সন্দেশের পরেও কুড়ি মতো থাকবে। হারা কার্তিকের এক কিলো নুন হয়ে যাবে।

কী শান্তি...

 

‘রবিবাসরীয়’ বিভাগে ছোটগল্প পাঠান, অনধিক ১৫০০ শব্দে।
ইমেল: rabibasariya@abp.in সাবজেক্ট: rabibasariya galpa

ডাকে পাঠানোর ঠিকানা:

‘রবিবাসরীয় গল্প’,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা ৭০০০০১

যে কোনও একটি মাধ্যমে গল্প  পাঠান। একই গল্প ডাকে ও ইমেলে পাঠাবেন না। পাণ্ডুলিপিতে ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি জানাবেন। ইউনিকোড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।