Abosar

হাতে আঁকা ছবি

বিতান সিকদার

নিকুচি করেছে লেডিজ় হস্টেলের। প্রেমের গপ্পো খাড়া করতে হবে। সম্পাদক হুড়ো দিচ্ছে। নে, এ বার বল। এই গলি দিয়ে ঢুকেই সেই কোচিং তো? যেখানে তোর শুভদৃষ্টি হয়েছিল?’’

দৃশ্যত নিরুপায়, অর্ধঘুমন্ত ও কিঞ্চিৎ বিরক্ত অয়ন আমার কথা শুনে বিড়বিড় করল, “শালা গপ্পের প্লট সাপ্লাই দিতে গিয়ে বলির পাঁঠা হলাম আমি... কত বার করে বলছি, ইউনিভার্সিটির একটা মামুলি চটকে যাওয়া প্রেম... আর কিসেরই বা প্রেম! একতরফা একটা...”

শীতের সকাল। সাড়ে ছ’টা। গোলাপবাগ, বর্ধমান। মাঙ্কি ক্যাপ পরা মর্নিং ওয়াকার্স। রাস্তায় ঝাড়ুদার। আশপাশের দোকানগুলো খুলছে। সুয্যিমামা আড়মোড়া ভাঙছে।

রাস্তার পাশের একটা চায়ের দোকানে ‘‘দু’টো ভাঁড়ে’’ হাঁক দিয়ে অয়ন বললে, “কী কুক্ষণেই যে তোকে বলতে গিয়েছিলাম।”

‘কুক্ষণ’টা এসেছিল দিন সাতেক আগে। সরস্বতী পুজোর দিন। যথারীতি আমাদের অফিসের মেয়েরা শাড়ি পরে বিপজ্জনক ভাবে সুন্দরী হয়ে উঠেছিল। এমনিতে অয়ন মুখচোরা। সে দিন হঠাৎ করে উগরে দিল— “এই দিনটাতে মেয়েদের কী সুন্দর দেখায় না? প্রত্যেকে দেবী!”

প্রায় ঘোরে চলে গিয়েছে। বিলক্ষণ বুঝতে পারলাম, ছোকরা সামনে তাকিয়ে থাকলেও ভাবছে পিছনের কোনও কথা। একটু ঘাঁটাতেই লাজুক মুখ করে বলে ফেলেছিল, “এই দিনই তাকে আশিসবাবুর কোচিংয়ে প্রথম দেখি...” কাজ এসে পড়ায় ব্যাপারটা সে দিন পুরোটা শুনতে পারিনি।

এ দিকে এর দু’দিন পরই ‘নবযুগ’ পত্রিকার অফিস থেকে সম্পাদক দত্তগুপ্তর ফোন, “বসন্তকাল আসতে যাচ্ছে, শুধু অফিস চটকালেই চলবে? প্রেমের গল্পের এডিশন বেরবে। চটপট লিখে পাঠিয়ে দাও।”

মাঝে-মাঝে টুকটাক লিখি। সেই সূত্রেই ফোন। কিন্তু মুশকিল একটাই। এমনিতে একটা থোড়-বড়ি-খাড়া দাঁড় করিয়ে দিতে পারি, কিন্তু এমন তাগাদা আসলেই আমার সব ভোঁ-ভাঁ হয়ে যায়। কী করি-কী করি ভাবছি, এমন সময় অয়নের সেই কোচিংয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ওকে বলায় বলল, “উরি সব্বোনাশ! সে কবেকার কথা। তাই নিয়ে তুই গপ্পো লিখবি? আর সেটা আবার ছাপা হবে? আমি পারব না...”

“তোর ঘাড় পারবে,” বলে কাল রাত্রে প্রায় ওর ঘাড় ধরেই বর্ধমানে নিয়ে এসেছি। অয়ন চক্কোত্তি বর্ধমানের ছেলে। কলকাতার সওদাগরি আপিসে আমার সহকর্মী। আর এখন ওকে নিয়ে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য ছোকরার কৈশোরলীলার স্থান পরিদর্শন করে গাথা রচনা করা। ভোর ভোর বেরিয়েছি। ঘটনাবলির সঙ্গে মিলিয়ে সমস্ত স্থান দেখে তবে প্লট, আর তার পর গপ্পো। প্রথম দ্রষ্টব্য আশিসবাবুর কোচিং, যেখানে হতভাগা প্রথম হোঁচট খেয়েছিল।

অয়নের চিন্তা অন্য। এই ‘স্থান পরিদর্শন’ করতে গিয়ে ছড়িয়ে না ফেলি। সামনে একটা লেডিজ় হস্টেল। সে ফিসফিস করে বললে, “পাকিয়ে তুলছিস মাইরি! পাশেই মেয়েদের হস্টেল। সাতসকালে দুই গেঁড়েমদন এখানে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কী গাব জ্বাল দিচ্ছে... ওদের দারোয়ানটা আবার মহা তেএঁটে! 

এ বার কাটি চল।”

কিন্তু যখন বুঝল সে দিনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ না শুনে আমি নড়ছি না, তখন নিরুপায় হয়ে ফুটপাতে উঠে বলল, “কোচিংয়ে সরস্বতী পুজো ছিল। ও শাড়ি পরে এসেছিল। ওতেই আমি কাত! এই রাস্তা পার হয়ে ওভারটেক করলুম। আমায় দেখে ও-ই ডেকেছিল।”

‘‘ব্রিলিয়ান্ট!’’

‘‘বলল, কী যেন নোট্স দরকার। আর নোট্স! সামনে সাক্ষাৎ সরস্বতী। আমি লাট খাচ্ছি...কী বলি কী বলি! শেষে বলে দিলাম।’’

‘‘প্রোপোজ়?’’

‘‘দূর! বললাম— ‘তোকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে।’’

‘‘তার পর?’’

‘‘আর কী! জলতরঙ্গের মতো হাসি।’’ ম্লান হাসে অয়ন। 

‘‘তার পর?’’

অয়ন হেসে বলল, “আমি বধ!”

 

গোলাপবাগ থেকে অয়নের স্কুটারের পিছনে বসে যেতে যেতে অয়ন বলল, “সেই থেকে বসন্তকালের হাওয়ায় পেকে ওঠা হৃদয়ের ঘা নিয়ে পেছু পেছু ঘুরঘুর করছি। ঘাড়ে-গলায় পাউডার মাখতে শুরু করেছি। তদ্দিনে পটল, ভেটকি, সুকোমল এরা সব টের পেয়ে গিয়েছে। বলেছে— ‘লেগে থাক।”

‘‘খাসা!’’

“কিসের খাসা?” অয়নের চটক ভাঙে যেন, “এই একই ব্যাপার একই ভাবে আদিমকাল থেকে চলে আসছে। এতে বাহবার কিছু নেই।”

‘‘সে আমি বুঝব। এখন চল।’’

‘‘বাড়ি যাব তো?’’

‘‘না, ইউনিভার্সিটি...’’

ইউনিভার্সিটি পৌঁছে এক পাশে স্কুটারটা স্ট্যান্ড করতে করতে শুনলাম ছোকরা গজর গজর করছে, “অবাক লাগছে এটা ভেবে যে বয়ঃসন্ধির চুলকানি তোর বয়ঃপ্রাপ্তিকালে চাগাড় দিল!”

আমি একটু খেঁকিয়ে উঠলাম। তাতে অয়ন একটু নরম হয়ে বলল, “আচ্ছা একটা কথা বল। আমরা এখন যেটা করছি, সেটার সত্যিই কোনও মানে হয় কি?”

হেসে বললাম, “বেশ! তুই এখন তোর পরিণত বয়েসের পরিপক্ব বুদ্ধি খাটিয়ে যা যা করিস, সে সবের মানে আছে তো?”

কোনও যুক্তিতেই আমি ‘মানছি না, মানব না’ দেখে নিরুপায় অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আয় তবে। ওই বেঞ্চিটাতে বসি।”

বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, “পরবর্তী ঘটনা কি এখানে?”

‘‘না।’’

‘‘তবে?’’

অয়ন বলা শুরু করল, “এখানেও বলা যায় অবশ্য। মাঝে-মাঝেই এ-ভবন সে-ভবনের সামনে দেখা হয়ে যাচ্ছে। কখনও দিঘির পাড়ে, কখনও ক্লাসে, কখনও করিডরে, কখনও...ওই আর কী।”

‘‘কী হল?’’

‘‘এক দিন আমায় ডেকে বলল সন্ধেবেলা ওদের বাড়ি যেতে।’’

‘‘জিও!’’

‘‘টিপ্পনী কাটিস না।’’

‘‘ওকে ওকে...’’

‘‘হ্যাঁ, কী একটা পুজো ছিল। নেমন্তন্ন করল। সঙ্গে আরও অন্য বন্ধুবান্ধবদেরও বলেছিল অবশ্য।’’

‘‘গেলি?’’

‘‘যাব না মানে? রীতিমতো সেজেগুজে। বাড়িতে সারা দুপুর রিহার্সাল করেছি। শুভাকাঙ্ক্ষীরা বুদ্ধি দিয়েছিল, ‘ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিস।’ ’’

‘‘বোঝালি?’’

‘‘আর বোঝানো! আমার দ্বারা ও সব হয়? খিচুড়ি খেয়ে ওদের বাড়ি থেকে বেরোবার সময় গেটের বাইরে এসে দুটো ঢেকুর তুলে পাঁঠার মতো বলে বসে রইলাম, ‘আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি।’ ’’

‘‘কেয়া বাত!’’

‘‘ও চোখ নামিয়ে নিল। কিচ্ছু বলল না। পরদিন বন্ধুবান্ধব শুনে আমার পিঠ চুলকে দিল— ‘বাঘের বাচ্চা!’ ও দিকে ও পাশ থেকে কোনও সাড়াশব্দ নেই। বুঝেই উঠতে পারছি না কিছু। শেষে সপ্তাহান্তে আবার অ্যাপ্রোচ। এ বার ওই সামনের লন।’’

‘‘কী বললি?’’

‘‘মিনমিন করে বললাম, ‘তুই তো কিছু বললি না।’ ও সটান বলে দিল, ‘আমি ইন্টারেস্টেড নই অয়ন। আমি এখানে পড়তে এসেছি।’ একেবারে নকআউট পাঞ্চ!’’

‘‘যাহ্‌!’’

‘‘আমিও আহত। ভেটকি সান্ত্বনা দিল, ‘জানিস না, না-টাকেই হ্যাঁ 

ধরে চলতে হয়। এক কাজ কর। লিখিত দে।’ ’’

“প্রেমপত্তর?” আমি উত্তেজিত।

অয়ন বলল, “হ্যাঁ। দোলের আগে। নানা কথা ইনিয়ে বিনিয়ে লেখা অতি জঘন্য একটা চিঠি।”

‘‘তার পর?’’

‘‘আর তার পর! তার পর আক্রমণ! একেবারে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে অ্যাটাক। ফোন করে বলল, ‘তোকে না এক বার বারণ করেছিলাম এ সব করতে। তার পরও সাহস হয় কী করে? দে, মেসোমশাইকে ফোনটা দে। আজ আমি সব বলে দেব।’ ’’

‘‘সব্বোনাশ!’’

‘‘ভাব এক বার! আমি এ দিকে ফোন ধরে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি— ‘নোট্স? কোন নোট্স? পার ক্যাপিটা ইনকাম? ওটাও করতে হবে?’ ও দিকে বাড়িতে তখন আমার সাপ্তাহিক শ্রাদ্ধ হচ্ছে। পাশেই বাবা। মা জলখাবার বাড়ছে। এ দিকে-সে দিক থেকে নানা কথা— ‘ধর্মের ষাঁড় কোথাকার’, ‘একটা কাজ তোকে দিয়ে হয় না’, ‘সারা ক্ষণ বন্ধুবান্ধব, ফুর্তি...’ ও দিকে ও ফোনে চেঁচিয়ে যাচ্ছে— ‘চিঠি লেখা? বার করছি। প্রেম করা জম্মের মতো ঘুচিয়ে দেব।’ ভাগ্যিস সে দিন ফোনটা আমি তুলেছিলাম।’’

 

অনেক ক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। অয়ন ফোঁস ফোঁস করে একটা সিগারেট শেষ করল।

বললাম, “এর পর?”

‘‘এরও পর চাই তোর?’’

‘‘তাড়াতাড়ি বল।’’

একটা অনিচ্ছা-অনিচ্ছা ভাব করে অয়ন সেই বেঞ্চ থেকে উঠে বেশ কিছুটা পথ পার হয়ে আমায় ক্যান্টিনে নিয়ে এল। বসে বলল, “একটা ব্যাপার একটু শান্ত হয়ে বোঝ।”

‘‘বল।’’

‘‘এ ঘটনা তখনকার অনেকেই জানে। তার উপর যদি এটা ছেপে বেরয়, সেই কাসুন্দি ঘাঁটা নিয়ে যদি কোনও ক্যাঁচাল...’’

‘‘কিসের ক্যাঁচাল? আমি নাম গোত্র সব পালটে দেব। ও নিয়ে ভাবিস না। জানবি, লেখকরা বাস্তব থেকে ঝেড়েই গপ্পো লেখেন।’’

অয়ন চুপ করে গেল। কিছু ক্ষণ পর দু’টো প্রাগৈতিহাসিক ভেজিটেবল চপ আর দু’কাপ চা নিয়ে আমার সামনে এসে বসল।

বললাম, “বল।”

অয়ন শুরু করল, “সেই ফোনের পর কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। পটল তত্ত্ব বোঝাতে এসেছিল। খেংরে বিষ ঝেড়ে দিয়েছি। তার সঙ্গে যদিও এখানে ওখানে সামনাসামনি হয়েই যাচ্ছিল। আমি স্রেফ ইগনোর করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম তুমি যেটা করেছ, প্রাণে মায়াদয়া থাকলে কেউ করে না। এখন যেখানে তুই বসে আছিস, সেখানে সে দিন ভেটকি বসে ছিল। আশপাশে সুকোমল, নাকু, পটল মোটামুটি সবাই ছিল। কিছু ক্ষণ পর দরজা দিয়ে তার প্রবেশ। আর প্রবেশ করেই এ দিক-ও দিক চেয়ে সটান এই টেবিলে।’’

‘‘আবার কেত্তন?’’

‘‘সামনে এসে বসল। প্রথম প্রশ্ন, ‘ব্যস্ত’? আমার পেট গুড়গুড়, ‘নাহ্‌ তেমন কিছু ...’। ‘একটা কথা বলার ছিল তোকে,’ কথা শেষ না হতে দিয়েই বক্তব্য। কী কথা— কেন কথা— আবার কথা— ইত্যাদি ভাবছি, এমন সময় ও যেটা করল, ভাবলেও আমার— সটান আমার হাতদুটো চেপে ধরে সবার সামনে অকপটে বলে বসে রইল, ‘আমি সে দিনের ঘটনার জন্য দুঃখিত অয়ন। বড্ড ভুল হয়ে গেছিল। তুই প্লিজ় রাগ করে থাকিস না।’ ’’

 

বিকেলে দামোদরের চরে বসে আছি। আকাশ জুড়ে হোলি খেলে সুয্যিমামা বাড়ি ফিরছে। অয়ন একটু আগে বলছিল, “ওই হাতদুটো ধরে ওর ওই কথাগুলো বলা। ব্যস! আর কিছুর প্রয়োজন ছিল না। এর পর ফোন করতাম, কথা বলতাম। আড়ষ্টতাটা চলে গিয়েছিল।”

‘‘শেষ?’’

‘‘শুরুই তো হল না! এই নোনতা-মিঠে অভিজ্ঞতাগুলোই পুঁজি।’’

‘‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু গল্পটাকে নিয়ে ফেলব কোথায়?

অয়ন হাসল। কিছু বলল না।

 

নোনতা কি মিঠে জানি না, তবে সেই সন্ধেয় আরও একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। অয়ন স্কুটারে চাপিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে পার হয়ে, ছোট রাস্তায় ঢুকে, বড় রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে মোটামুটি মিনিট বিশেক পর যে রাস্তায় এল, তার এক পাশে মাঠ। তাতে গরু চরছে। আর-এক পাশে সার দিয়ে বাড়ি।

অয়ন স্কুটারটা মাঠে থামিয়ে একটা গরুর আড়ালে স্ট্যান্ড করে ফিসফিস করে বলল, “আমার পিছনে রাস্তা। তার ও পারে হলুদ রঙের একটা দোতলা বাড়ি।”

‘‘হুম!’’

‘‘ওটাই।’’

‘‘কী?’’

‘‘ওরই সামনে দাঁড়িয়ে... সেই যে, খিচুড়ি খেয়ে, ঢেকুর তুলে, হাত মুছতে-মুছতে...’’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, “এটা ওর বাড়ি?”

“আস্তে! আস্তে!” অয়ন অপরাধীর মতো চোরা চোখে এ দিক-ও দিক দেখছে।

বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। দোতলায় জানলা খোলা। ঘরে আলো জ্বলছে। একটু ভাল করে ব্যাপারটা দেখব, বুঝব, তা হতভাগার জ্বালায় শান্তিতে দাঁড়ানোই দুষ্কর। ক্রমাগত বলে চলেছে, “চল এ বার।”

“দাঁড়া না,” তত ক্ষণে আমার চোখ বাড়ির ছাদে আটকে গেছে। একটা ছায়ামূর্তি। সালোয়ার-কামিজ় পরা। ছাদে পায়চারি করছে।

অয়ন আমার দিকে চেয়ে কুঁইকুঁই করে বলল, “অমন হাঁ করে কী গিলছিস?”

‘‘এক বার ছাদের দিকে তাকা!’’ 

‘‘সব্বোনাশ! কেন? কেউ দাঁড়িয়ে আছে না কি?’’

‘‘পায়চারি করছে।’’

‘‘কে?’’

‘‘তা আমি জানব কী করে? ওই জন্যই তো দেখতে বলছি।’’

‘‘দেখতে হবে না। চল কাটি। আমার কাছে ওর ছবি আছে। বাড়ি গিয়ে দেখাচ্ছি।’’

‘‘চোরের মতো করছিস কেন? বলছি এক বার ছাদের দিকে তাকা...’’

“যন্ত্রণা!” অয়ন কয়েক লহমা ইতস্তত করে একটা গরুর আড়ালে গিয়ে বসে পড়ল। তার পর কিছু ক্ষণ পর ফিসফিস করে বলল, “এ যে মোটে দাঁড়াচ্ছে না রে।”

‘‘ফোন কর।’’

‘‘অ্যাঁ!’’

‘‘কর।’’

‘‘বাড়াবাড়ি করিস না।’’

“আমায় নাম্বারটা দে,” আমি পকেটে হাত ঢোকালাম।

অয়ন তড়িঘড়ি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে বলল, “কী যে করছিস তুই...”

আমি ওর ফোনের পিঠে কান লাগিয়ে শুনলাম রিং হচ্ছে।

তার পর...

ছায়ামূর্তি ছাদের পাঁচিলের ধারে এসে দাঁড়াল। পায়চারি বন্ধ করল। দেখলাম, মেয়েটার একটা হাত কানে উঠে এল। কানে শুনলাম, “হ্যালো!”

সময় থেমে গেল যেন সেই মুহূর্তে।

অয়ন কানে ফোনটা ধরে স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

 

মাঝরাতে হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেল। কিসের যেন খুটখাট শব্দ। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার নয়। জানলা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। সেই আলোয় দেখি অয়ন চেয়ারে বসে ডেস্কের উপর কী যেন নাড়াচাড়া করছে।

ডাকলাম, “আনু!”

“উঠে পড়লি?” অয়নের চমক ভাঙে যেন।

হাতঘড়িতে সোয়া দু’টো। টেবিলের কাছে গেলাম, “ঘুমোসনি?”

অয়ন মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল। এক অনাবিল হাসি। চাঁদের আলোয় দেখি ওর চোখের কোণ দু’টো চিকচিক করছে। বলল, “ওর ছবিটা খুঁজছিলাম তোকে দেখাব বলে,” টেবিলে রাখা একটা খাম আমার দিকে এগিয়ে দিল।

খামটা খুলে দেখি ভিতরে একটা কার্ড। এ কার্ড আমি অনেক দেখেছি। এ কার্ডে বাস্তবিকই একটা মেয়ের ছবি থাকে। এটাতেও ছিল। হাতে আঁকা ছাপা ছবি। মেয়েটা একটা পালকিতে বসে আছে।

কার্ডের উপরে লেখা— শুভবিবাহ!