Abosar

সমুদ্রের কান্না

কৃষ্ণা দাস

সৌপর্ণ ঘরটায় ঢুকে ব্যালকনির দরজাটা খুলে দিল। সমুদ্রের বিকট আওয়াজের সঙ্গে হুহু করে তাজা হাওয়া ঢুকে এল ঘরে। একেবারে সি-ফেসিং রুম। ভাড়াটাও অনেক। সৌপর্ণের যা আয়, তাতে ওর সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে ঘরভাড়া। তবুও কার্পণ্য করেনি সৌপর্ণ। 

সুমেধা খাটে বসে হাঁ করে শ্বাস নিচ্ছে। চোখ মুখ ক্লান্তি। জার্নিটা ওর পক্ষে বেশ বেশি হয়ে গিয়েছে। সৌপর্ণ কাছে এসে বলল, “একটু শুয়ে নাও। রোদ একটু পড়ে এলে বিচে যাব।”

সুমেধা তাকিয়ে থাকল সৌপর্ণের দিকে। সৌপর্ণ বলল, “কিছু বলবে?’’

সুমেধা ম্লান হাসল। সৌপর্ণ দেখল, কী করুণ সেই হাসি। সুমেধা বিছানায় শুয়ে পড়ল। সৌপর্ণ সুমেধার পাশে বসল। সুমেধার শীর্ণ আঙুলে সৌপর্ণ ডান হাত ছোঁয়াল। আর তখনই মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইল বার করে নম্বরটা দেখে কেটে দিল। সুমেধা কোটরগত বিষণ্ণ চোখে জিজ্ঞেস করল, ‘‘কার ফোন?’’ সৌপর্ণ বিরক্ত গলায় বলল, “ফালতু যত্ত ফোন। এই অফার সেই অফার।” 

দরজা দিয়ে ঝড়ের মতো হাওয়া আসছে, সেই সঙ্গে সমুদ্রের গর্জন। সুমেধা ক্ষীণ স্বরে বলল, “যাবে?”

“কোথায়”?

“বিচে।”

“এখন? খুব রোদ তো।”

“হোকগে।”

“লাঞ্চ করে নিই আগে, তার পর না হয় যাব?’’

“ক’টা বাজে?”

সৌপর্ণ ঘড়ি দেখে বলল, “বারোটা দশ।”

“খিদে নেই। এখন যাবে বিচে?”

“বিশ্রাম নিলে ভাল হত না?”

সুমেধার মুখটা নিষ্প্রভ হয়ে গেল। সৌপর্ণ কী মনে করল, তার পরেই বলল, “আচ্ছা চলো।”

ঢেউগুলো দূর থেকে ছুটে এসে ফেনায় ফেনায় তীরে ভেঙে পড়ছে। কতগুলো গাংচিল সেই ঢেউয়ের ওপর উড়ছে। যত বার সৌপর্ণ সমুদ্রকে দেখে, তত বারই নতুন লাগে। কিন্তু এই প্রথম সমুদ্রের আওয়াজটাও ওর কাছে নতুন লাগল। আগে সমুদ্রের আওয়াজে কেমন স্বাধীনতার ডাক থাকত। কেমন উত্তাল আনন্দ। কিন্তু আজ যেন কেমন গুমরে গুমরে কান্নার মতো লাগছে।

ডাবওলা একটা ডাব সৌপর্ণের হাতে ধরিয়ে দিল। সৌপর্ণ স্ট্র গুঁজে ছাউনির তলায় প্লাস্টিকের চেয়ারে বসা সুমেধার হাতে ধরিয়ে দিতেই মোবাইটা আবার বেজে উঠল। সৌপর্ণ দ্রুত লাইনটা কেটে নিজের ডাবটা নিয়ে সুমেধার কাছে এসে বসল। 

সৌপর্ণ দেখল, সুমেধার চোখ দূর সমুদ্রে নিবদ্ধ। রাকা যে কী আরম্ভ করেছে! ওকে কত বার বলে এসেছে, মাত্র তিনটে দিন যেন যোগাযোগ না করে। আর তো মাত্র তিন মাস। তার পরেই ওরা এক হবে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। 

সুমেধার স্তন বাদ দিয়েও কোনও লাভ হল না। ক্যান্সার এখন ছড়িয়ে গিয়েছে। এখান থেকে ফিরেই আবার কেমো। ডাক্তার একটুও আশা দেখায়নি, বরং বলেছে, সুমেধার কোনও অপূর্ণ ইচ্ছে থাকলে পূরণ করতে। সুমেধা কোনও দিনই মুখ ফুটে কিছু চায়নি। তবু সৌপর্ণ জানে, সুমেধা সমুদ্র ভালবাসে। তাই আসা। হয়তো নয়, নিশ্চিত ভাবে এটাই ওর জীবনের শেষ সমুদ্র দেখা।

দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে তাদের বিবাহিত জীবন স্রোতহীন মজা পুকুরের মতোই কেটে গেল বারো বছর। হার্টের অসুখে অসুস্থ বাবা আর বাতে ভোগা মা কোনও এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের ঘরোয়া নম্র শ্যামলা মেয়েটিকে ছেলের পুত্রবধূ করেছিলেন ছেলের মতের বিরুদ্ধেই। সৌপর্ণ চেয়েছিল পায়ের তলার মাটি আরও একটু শক্ত করে বিয়ে করতে। বিদেশি কোম্পানির এক অস্থায়ী পদে সে তখন সবে যোগ দিয়েছিল। বাবা মা তার অবস্থা বোঝেননি। পদ স্থায়ী হওয়ার আগেই মিঠিও চলে এল। প্রথম সন্তান সুমেধা নষ্ট করতে চাইল না কিছুতেই।

পরে পদ স্থায়ী হলেও ক্রমশ সংসারের জাঁতাকলে পড়ে সৌপর্ণ ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ল। অফিস আর বাড়ির মধ্যে সে হাঁপিয়ে উঠল। জীবনে তেমন কোন আনন্দ ছিলই না। শুধুই দায়িত্ব, আর অর্থ উপার্জন।

বছরখানেক আগে অফিসে সৌপর্ণের বিভাগে রাকা নামে একটি মেয়ে অন্য বিভাগ থেকে বদলি হয়ে এল। সে অসম্ভব স্মার্ট আর সুন্দরী। 

আর প্রায় সেই সময়ই হঠাৎ সুমেধার স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়ল। চিকিৎসা শুরু হল। কিন্তু ধীরে ধীরে অর্থ ও মানসিক দুই দিক দিয়েই সৌপর্ণ ক্রমশ শেষ হয়ে গেল। এক দিন বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় বাড়ি ফেরার পথে রাকার সঙ্গে দেখা। ও ডেকে নিল ক্যাবে। সৌপর্ণের মুখ দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘‘কী হয়েছে?’’ সৌপর্ণ অফিসে কাউকে না জানালেও রাকাকে সব জানাল। রাকা সে দিন পাটুলিতে ওর ফ্ল্যাটে সৌপর্ণকে নিয়ে গেল। কফি করে খাওয়াল।  

এর পর সৌপর্ণকে প্রায়ই বাড়ি ফেরার পথে রাকা ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে কফি খাওয়াত, ওকে সঙ্গ দিত। দু’এক বার টাকা ধারও দিয়েছে। এ ভাবেই দু’জনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। আর এক দিন দুর্বল মুহূর্তে দু’জনের শরীরও মিলে গেল। তার পর নিয়মিত, সচেতন ভাবে। দু’জনের ইচ্ছেয়। সৌপর্ণ অফিস-ফেরত রাকার সঙ্গে প্রথমে পাটুলি ফিরত, পরে রাত দশটা নাগাদ গড়িয়ায় নিজের বাড়িতে। 

রাকা এখন সৌপর্ণকে চায় আইনত। হয়তো সুমেধার মৃত্যুর অপেক্ষা। সৌপর্ণ চায়, যে ক’টা দিন সুমেধা বাঁচে তাকে যতটা পারা যায় সুখ দিতে। সুমেধা এখনও জানে না ওর আয়ু খুবই সীমিত।

বুক পকেটে ফোনটা আবার বেজে উঠতেই সৌপর্ণ চমকে উঠল। সুমেধা সমুদ্রের দিকে তাকিয়েই বলল, “ফোনটা এক বার ধরো।”

সৌপর্ণ ফোনটা হাতে নিয়ে বিরক্ত গলায় বলল, “বেড়াতে এসেও নিস্তার নেই। অফিসের ফোন।”

ফোনটা নিয়ে সে এগিয়ে গেল রাস্তার দিকে, “বলো?”

“কোথায়? আই মিন কী করছ?’’

“রাকা এই দু’দিন ফোন কোরো না প্লিজ। কলকাতা ফিরে কথা হবে।’’  

সৌপর্ণ লাইন কেটে ফিরে এল সুমেধার কাছে। বলল, “চলো, এ বার ফেরা যাক। আবার বিকেলে আসব।”

ব্যালকনি থেকে নীচে রাস্তায় মানুষের ঢল। সমুদ্রের দিক থেকে তীব্র ঢেউয়ের আওয়াজ। সুমেধা বসে ছিল চুপচাপ। আজকাল ও বড় বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আগে মিঠির সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, এমনকি বাবার সঙ্গেও সুমেধা সারা দিন কথা বলত। আসলে সুমেধা কথা বলতে ভালবাসে। সৌপর্ণ আগাগোড়া বাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। কিন্তু সুমেধা এখন সৌপর্ণকেও হারিয়ে দেয়। প্রয়োজনেও কথা বলে না। সৌপর্ণ আজ ঠিক করল সুমেধার সঙ্গে অনেক গল্প করবে। সে চেয়ারটা টেনে সুমেধার পাশে এসে বসল।

“তোমার মনে আছে প্রথম যখন পুরী আসি সে বছর মিঠি হল?”

উত্তরে সুমেধা কিছু বলল না। সৌপর্ণ বুঝল, সুমেধার মনে আছে। অতি দ্রুত সুমেধার চোখের পাতা ওঠানামা করল।

“তোমার মনে আছে, সে বারে তুমি লং স্কার্টের উপর আমার একটা শার্ট পরে দু’ঘণ্টা ধরে আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলে? তার পর সেজেগুজে বেরোনোর সময় শার্ট খুলে আবার শাড়ি পরেছিলে?”

এ বার সুমেধা সৌপর্ণের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। সৌপর্ণ অনুভব করল হাসলে এখনও ওকে ভীষণ সুন্দর লাগে।

আবার ফোনটা বেজে উঠল। সৌপর্ণ রেগে গিয়ে বন্ধ করে দিল। সুমেধা দেখল। করুণ হাসি দিয়ে বলল, “কাটলে কেন? কথা বলতে?”

সৌপর্ণের মুখটা থমথম করছে। সুমেধা কি কোনও সন্দেহ করছে, এ ভাবে বারবার ফোন আসা আর কেটে দেওয়া নিয়ে? না, ওকে কিছু জানানো যাবে না। সৌপর্ণ মুখে বিরক্ত ফুটিয়ে বলল, “ছাড়ো তো। ফালতু যত সব ফোন। ক্রেডিট কার্ড নিন, লোন নিন। দু’দণ্ড শান্তিতে সময় কাটাব তারও উপায় নেই।’’

সুমেধা  বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ক্লান্ত চোখে। ওর চোখে বিষাদ ছেয়ে আছে। দিব্যি একটু হেসেছিল, আবার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। সৌপর্ণ দেখছিল সুমেধাকে। মাথার অমন মেঘের মতো কালো এক ঢাল চুল উঠে গিয়ে সামান্য কিছু রয়ে গিয়েছে। উঠে যাওয়ার প্রতীক্ষায়। মুখের চোয়াল ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। কোটরগত বড় বড় চোখে যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু নেই। ব্লাউজটা কাঁধ থেকে নেমে যাচ্ছে বার বার। সুমেধা কোনও রকমে তাকে স্বস্থানে বজায় রাখছে।

ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। মিঠি কী করছে এখন? সুমেধা আনতে চেয়েছিল মিঠিকে। ও আসতে চায়নি। বরং মাসির বাড়ি যেতে চেয়েছিল। সমুদিদির সঙ্গে ওর ভাব বেশি। সুমেধার দিদিও ওকে খুব ভালবাসে। কিন্তু কথাটা তা নয়। একটা দশ বছরের মেয়ের বাবা-মা’র প্রতি তেমন টান নেই কেন? সুমেধার অসুখ ধরা পড়ার আগে মিঠি মা ছাড়া কিছু বুঝত না। মায়ের সঙ্গেই তার যাবতীয় কথা। এখন মাকে এড়িয়ে যায়। সৌপর্ণ কাছে টানতে চেয়েছিল। আসেনি। সৌপর্ণ বোঝে, আসলে ও মার জন্য সিকিয়োরিটির অভাব বোধ করছে। সে জন্যই হয়তো মাসি বা মাসতুতো দিদিকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। নাকি অন্য কিছু, যা সৌপর্ণ জানে না!

সৌপর্ণ মিঠির কথা তোলে। বলে, “মিঠিটা কেমন বড় হয়ে গেল, তাই না? দেখো কেমন এল না এখানে। মাসির বাড়ি যেতে চাইল।”

সুমেধা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ও ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।”

কেঁপে উঠল সৌপর্ণ। ভবিষ্যৎ মানে? তবে কি সুমেধা, মিঠি সব জানে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “মানে?”

 “আর তো ক’টা দিন?”

“কী উল্টোপাল্টা বলছো?”

“ফোনটা অন করো। রাকা হয়তো টেনশন করছে।”

ঝড়ের দাপটে কথাগুলো সৌপর্ণের কান ছুঁয়ে মিলিয়ে গেল। তার মানে সুমেধা জানে? সব জানে? হঠাৎ একটা তীব্র লজ্জা আর অনুশোচনা উঠে এসে সৌপর্ণর কণ্ঠ রোধ করল। ও তাড়াতাড়ি বারান্দা ছেড়ে রুমে উঠে গেল। 

এত দিন যত্ন করে যা লুকিয়ে রেখেছে, তা যে অনেক আগেই প্রকাশিত, তা কে জানত। এত দিন সৌপর্ণ একনিষ্ঠ স্বামীর অভিনয় করে চলেছে, সব ফালতু। হঠাৎ ওর মনে হল, সব যখন জানেই তখন আর আড়াল করে কী হবে। জানতে হবে কবে থেকে কী ভাবে জেনেছে। সৌপর্ণ আবার বারান্দায় এসে সুমেধার পাশে বসল। ফোনটাকে বন্ধ করে দিল। সুমেধার কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। সে একভাবে অন্ধকার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।

সৌপর্ণ কোনও ভনিতা না করেই বলল, “রাকার ব্যাপারটা জানোই যখন, তখন একটা কথা জানার খুব ইচ্ছে করছে।” 

সুমেধা চুপ।

“কী ভাবে, কবে জানলে?”

সুমেধা তাকাল সৌপর্ণের দিকে। ম্লান হেসে বলল, “রাকা জানিয়েছে।”

সৌপর্ণ আকাশ থেকে পড়ল। 

“রাকা! রাকা জানিয়েছে? কবে? কী ভাবে?”

সুমেধা স্থির গলায় বলল, “মনে নেই, তবে আমি তখন অসুস্থ ছিলাম।”

“মানে? কী বলেছিল রাকা?”

সুমেধা আবার ম্লান হাসল। সৌপর্ণ অধৈর্য হল।

“প্লিজ় বলো। আমার এ সব জানা দরকার। প্লিজ়!”

সুমেধা আবার অন্ধকারে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, “আপনি সৌপর্ণকে মুক্তি দিন। ও আমার কাছে শান্তি, সুখের জন্য ছুটে আসে। আমার শরীরে ডুব দিয়ে বেঁচে থাকার রসদ খোঁজে। ওকে যত তাড়াতাড়ি পারেন মুক্তি দিন। আর পেরে উঠছে না বেচারা।” এতগুলো কথা একসঙ্গে বলে সুমেধা হাঁপাচ্ছিল। 

সৌপর্ণ দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরল। ছিঃ ছিঃ রাকা, ছিঃ! আমি তো ভুল করেইছি কিন্তু আমার অপরাধ তুমি শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছ মরণাপন্ন মানুষটাকে এমন কদর্য ভাবে ফোন করে। দিনের পর দিন আমি অভিনয় করেছি ওকে শেষ ক’টা দিন একটু আনন্দ দিতে। দিনের পর দিন সুমেধা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেও আমাকে এক বারও বুঝতে দেয়নি যে ও সব জানে। আমি যে ওর মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি তা ও জানত! ছিঃ! নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গিয়েছি আমি, শেষ হয়ে গিয়েছি।

ফোনটা অন করতেই দপ করে আলো জ্বলে উঠল। আবার রিং হচ্ছে। রাকার নম্বর। বেজে বেজে থেমে গেল। দু’মিনিট পরে আবার ফোনটা এল। সৌপর্ণ ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকল। সুমেধা আগের মতোই স্থির, অচঞ্চল। ফোনটা বেজে বেজে অফ হয়ে গেল। তার পর লাগাতার বাজতেই থাকল আবার। এক সময় ফোনটা হাতে তুলে নিল সৌপর্ণ, “হ্যালো!”

ও পাশ থেকে ঝাঁঝিয়ে উঠল রাকা, “কী ব্যাপার সৌপর্ণ? ফোনটা ধরছিলে না কেন? কী করছিলেটা কী তুমি এত ক্ষণ?”

সৌপর্ণ গলায় মজা নিয়ে হালকা ভাবে বলল, “আরে পুরী এসেছি বৌকে নিয়ে। কী করতে পারি বোঝ তো? এত দিন পর বৌকে একলা পেয়েছি নিজের মতো করে। কলকাতায় বাবা-মা, দায়দায়িত্ব, সে ভাবে কী এনজয় করতে পারি বলো?”

“মানে? কী বলছ তুমি সৌপর্ণ? তুমি কি মানুষ? আমি তো বুঝতেই পারছি না, একটা পোকায় কাটা ঘৃণ্য শরীর, ছিঃ!” তীব্র ঘৃণার শব্দগুলো শেষ হল না।

“কী যে বলো না রাকা! আমার সন্তানের মা, আমার বাবা-মা’র নয়নের মণি... সব চেয়ে বড় কথা, এ তো আর অবৈধ নয় রে বাবা, আজ একে ভাল লাগল, কাল লাগল না, ছেড়ে দিলাম, তা তো নয়? আরে এ আমার বিয়ে-করা বৌ। আমার ভালমন্দ জেনেও যে আমাকে পাগলের মতো ভালবাসে। আমার একমাত্র জীবনসঙ্গিনী।”

ক্ষোভে ফেটে পড়ল রাকা, “হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ সোয়াইন...”

বাকি কথা শোনা গেল না। ফোনটা চুপ হয়ে গেল।

সুমেধা কাঁদছে। সৌপর্ণ সুমেধাকে দু’হাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বাচ্চার মতো কেঁদে ফেলল। কান্না থামতে ওর মনে হল, অন্ধকার সমুদ্র থেকে যে আওয়াজটা আসছে সেটাও ঠিক গোঁঙানির মতো। 

সমুদ্রও কাঁদছে।