গুরুতর কিছু যে একটা বাড়িতে হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন রজনীবাবু। তিনি ধৈর্যশীল মানুষ। জানেন, সমস্ত ঘটনা ঘটার কাল এবং ফলাফল বিধিনির্দিষ্ট। তাঁর অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষেত্রবিশেষে ধৈর্য ও ফল পরস্পরের সমানুপাতিক। ষষ্ঠেন্দ্রিয় জানান দিচ্ছিল, স্ত্রী তাপসীও তার সময় ও মর্জি বুঝে কিছু একটা বলতে চায়।
কিন্তু এই ক’টা দিন রজনীবাবু হাঁপ ছাড়ার সময় পাচ্ছেন না। কলেজের তিন ইউনিয়নের তেত্রিশ রকমের বায়নার ফিরিস্তি, টিচারদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, কলেজে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ-ভাঙচুর আর ইলেকশনের ঝঞ্ঝাট তো লেগেই আছে। তাঁর এক-এক সময় মনে হয়, এই বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো চেপে বসে থাকা ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ পদ থেকে নিষ্কৃতি পেলেই তিনি বেঁচে যান। বেশ ছিলেন অন্য টিচারদের মতো কেচিং সেন্টার, ধরাবাঁধা ক্লাস আর তাঁর রিসার্চ ওয়ার্ক নিয়ে। কেন যে সুখে থাকতে ভূতে কিলোল!
এই তো সে দিনের কথা, রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত কলেজে নিজের চেম্বারে ঘেরাও হয়ে ছিলেন। রীতিমত কালো পতাকা, প্ল্যাকার্ড, আর ‘প্রিন্সিপালের কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার মুহুর্মুহু স্লোগানে কলেজ করিডরে ধুন্ধুমার কাণ্ড। বিষয়টা কী? না, বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দাবি, তাদের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সেক্রেটারিকে বাংলার অধ্যাপিকা মিসেস হাজরা সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় সর্বসমক্ষে শ্লীলতাহানি করেছেন। অতএব অভিযুক্ত ওই ম্যাডামকে তাদের সেক্রেটারি ও প্রিন্সিপালের সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব, জাঁদরেল মিসেস হাজরার বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ শুনে প্রথমে হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পাননি। পরে ভেবে দেখলেন, বিষয়টি বেশ গুরুতর এবং স্পর্শকাতর। বিশেষ করে যখন বরিষ্ঠ অধ্যাপিকা, ছাত্রনেতার উপর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং অভব্য ভাষা প্রয়োগের অভিযোগে অভিযুক্ত। এ দিকে মিসেস হাজরা এবং কলেজের অন্য টিচাররাও এককাট্টা। তাঁদের বক্তব্য, এটা একটা পরিকল্পিত অভিযোগ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা গভীর চক্রান্তের অন্যতম দৃষ্টান্ত। অভিযুক্তের বক্তব্য, সন্তানতুল্য ছাত্রের প্রতি কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি এবং ওই সব ভাষা প্রয়োগের কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না।
কোনও রকমে যুযুধান দুই পক্ষকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যখন ঘেরাওমুক্ত হলেন, তখন পেটে খিদে-তেষ্টা সব মরে গেছে। শুধু কি এই, কলেজ বিল্ডিং তৈরি, নিউ অ্যাডমিশন নিয়ে পরিচালন সমিতির দাদাগিরি থেকে শুরু করে কলেজ সোশ্যালের চাঁদা নিয়ে হাতাহাতি— সব কিছুতেই প্রিন্সিপালের হস্তক্ষেপ দাবি করা প্রায় নিয়মের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রজনীবাবুর মাঝেমধ্যে মনে হয়, বাইরের পৃথিবীর বিশাল কর্মময় জগৎ তিমি মাছের মতো বিরাট হাঁ নিয়ে তাঁকে গিলে খেতে আসছে। আর তিনি পরিত্রাণের আশায় প্রাণপণে ক্ষুদ্র এক সামুদ্রিক প্রাণীর মতো বৃথাই এ দিক-সে দিক ছুটে বেড়াচ্ছেন।
******
প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলেজে সে দিন ছুটি ছিল। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর ইজিচেয়ারে বসে বই পড়তে পড়তে ঝিমুনি মতো এসে গিয়েছিল রজনীবাবুর। স্ত্রীর আলতো স্পর্শে চটকাটা ভেঙে গেল। ঘুম-জড়ানো চোখে রজনীবাবু তাকালেন। মুখে জিজ্ঞাসাচিহ্ন।
‘‘মেয়ে কী সর্বনাশ করেছে, জানো?’’ একটু থেমে থেমে শান্তভাবে বললেন তাপসী। ঠিক যেমন ভয়ংকর দুর্যোগ ঘটার আগে প্রকৃতি হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে যায়।
রজনীবাবু সোজা হয়ে বসলেন। অহেতুক টেনশন করা তাঁর স্ত্রীর একটা স্বভাব। তাই তিনি খুব একটা উদ্বিগ্ন হলেন না। কিন্তু আজ যেন তাপসীর চোখেমুখে আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস স্পষ্ট। প্রত্যাশা মতোই ঝড়ের দাপট আছড়ে পড়ল।
‘‘ও...ও একটা বাচ্চা নিতে চায়, মা হতে চায়!’’
‘‘ওহ... এই ব্যাপার, তাতে আর অসুবিধাটা কী? এমন কিছু কঠিন ব্যাপারও না, আমার কয়েকটা ভাল চাইল্ডস হোমের ঠিকানা জানা আছে। সেখানে অ্যাপ্লিকেশন করে দিলেই হবে। তা ছাড়া দত্তক নেওয়া তো মহা পুণ্যের কাজ,’’ রজনীবাবু বিষয়টা সহজ করতে চাইলেন।
‘‘তা হলে তো ল্যাঠা চুকেই যেত, উনি সিঙ্গল মাদার হবেন। নিজের পেট থেকে বাচ্চা বিয়োবেন। আমাদের মুখে চুনকালি মাখাবেন। তা এতই যখন মা হওয়ার শখ উথলে উঠেছে, একটা বিয়ে করে আমাদের উদ্ধার করলেই হত! এ ভাবে আমাদের মাথা হেঁট হত না! উহ্ মা গো, একটা আইবুড়ো ধিঙ্গি মেয়ে ধুমসো পেট নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবে! হে ভগবান, এমন জিনিস দেখার জন্যই কি আমাকে এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছিলে!’’ রুচিশীলা তাপসী ক্রমশ বেআব্রু হচ্ছেন।
রজনীবাবু স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর মেয়ে ছোট থেকেই প্রচণ্ড সাহসী, ডানপিটে আর স্বাধীন মতাদর্শে বিশ্বাসী। মেয়ের মুক্ত চিন্তাভাবনা ও আগ্রাসী কার্যকলাপে বেশির ভাগ সময় সমর্থন না থাকলেও তাঁকে বাধা দেননি। মেয়ে যখন সারা জীবন বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল রইল, মা-মেয়ের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ লাগার উপক্রম। মাসকয়েক মুখ দেখাদেখি একেবারে বন্ধ।
রজনীবাবু প্রাথমিক ভাবে বেশ ক্ষুণ্ণ হলেও নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এই ভেবে, অসুখী দাম্পত্যের চেয়ে হয়তো একাকী জীবন কাটানো অনেক বেশি শান্তির। তাঁর চেনাশোনা অনেক মানুষই তো বিয়ে না করে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। পড়াশুনো-কেরিয়ার-বিয়ে-সন্তান, এই চিরপরিচিত সিঁড়িভাঙা অঙ্কের বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে যদি তাঁর মেয়ে থাকতে চায়, থাকুক। নিজের মতো থাকতে চেয়ে ও যদি আনন্দে থাকতে পারে, তার তুল্য আর কী-ই বা আছে!
তাঁদের বিয়ের বেশ কিছু বছর পরও তাঁরা ছিলেন সন্তানহীন। উন্নত চিকিৎসা, ঠাকুর-দেবতা মানত, হরেক তীর্থস্থান— কিছুই তাপসী বাদ রাখেননি সন্তানলাভের আশায়। শেষে যখন হাল ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম, তখনই ঈশ্বর করুণা করলেন। বড় অভীপ্সিত একমাত্র সন্তানের জন্মমুহূর্ত খুবই আনন্দের। আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মানসিক তপস্যার জন্যেই মেয়ের জন্ম হয়েছে বলে বিশ্বাস করে তাপসী নাম রেখেছিলেন ‘তপজা’। ছোট থেকেই সে বড় আদরের। প্রশ্রয়ের।
এখন এ কী অবিশ্বাস্য কথা শুনছেন তিনি?
ভিতরে ভিতরে মুষড়ে পড়লেও স্ত্রীর সামনে সহজ ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘ঠিক আছে। ও ফিরুক অফিস থেকে। রাতে ওর সঙ্গে
কথা বলছি।’’
******
ক’দিন ধরে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছেন না রজনীবাবু। শুধু মনে হচ্ছে, অভিভাবক হিসাবে তাঁর কোথাও একটা বড় ফাঁক থেকে গেছে। নিজেকে চরম প্রতারিত, ব্যর্থ মনে হচ্ছে। তপজা যে তলে তলে এত দূর এগিয়ে গেছে, স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। নিজের জীবন সম্পর্কে এত বড় সিদ্ধান্ত নিল ও, অথচ বুড়ো বাপ-মায়ের কী অবস্থা হবে, এক বারও ভাবার প্রয়োজন মনে করল না! অভিমানে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিলেন রজনীবাবু। এই সে দিন পর্যন্ত সারাটা দিন কোথায় কী করেছে তা বাবাকে বলতে না পারলে যার ঘুম হত না, বাবার খুঁটিনাটি সমস্ত দিকেই যার তীক্ষ্ণ নজর, সেই মেয়ে তাঁর কাছ থেকে এত দূরে সরে গেল কী ভাবে?
মনে আছে, তপজা প্রথম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তার প্রোফাইলের নাম দিয়েছিল ‘তপজা রজনী মিত্র’। খুব হেসেছিলেন তাঁরা। তাপসীর দেওয়া ‘বাপন্যাওটা’ নামটার ওপর সে দিনই বোধহয় অফিশিয়াল সিলমোহর পড়ে গিয়েছিল।
সে দিন রাতে জবাবদিহির ভঙ্গিতে রজনীবাবু প্রশ্নবাণ ছুড়লে তপজা সাফ জানাল, সব কেন বা কী-র উত্তর দিতে সে বাধ্য নয়। শুধু এটুকুই সে বলতে পারে, তাঁর কৃত্রিম গর্ভধারণের সমস্ত প্রক্রিয়া মাসখানেক আগেই কলকাতার এক পরিচিত ক্লিনিক থেকে সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তেই তার এই সিদ্ধান্ত, সুতরাং আর পিছনোর প্রসঙ্গ অবান্তর। তার অনাগত সন্তানের পিতা অজ্ঞাত এবং ইচ্ছাকৃত ভাবেই সে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা এক জন ডোনারের স্পার্ম পছন্দ করেছে।
মেয়ের এই নির্লজ্জ স্পর্ধায় মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিল রজনীবাবুর। সটান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন তাকে। তপজা শুধু এক বার চমকে উঠেছিল। বোধহয় মানসিক ভাবে তার প্রস্তুতিও খানিকটা ছিল। পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নেয়। পর দিন ভোরেই নিজের সামান্য ক’টা জিনিস নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। মেয়ের দিকে ঘাড় ফিরিয়েও দেখেননি রজনীবাবু। বুকভর্তি অভিমান আর হতাশা ঘিরে ধরেছিল তাঁদের। সারাটা দিন অভুক্ত অবস্থায় কেটেছিল।
তপজার অনুপস্থিতিতে সপ্তাহ দুয়েক বাড়িটা যেন অসহ্য লাগতে লাগল রজনীবাবুর। যে বাড়ির প্রত্যেক কোনায় তপজার ছোঁয়া লেগে আছে, রাতে যার হাতের পারিপাট্যে নরম বিছানায় ঘুম নেমে আসত দু’চোখে, বাড়িতে স্পেশাল কোন আইটেম যার হইচই-তদারকি ছাড়া রান্নাই হত না, তাকে ছাড়া ঘর-দুয়ার যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগতে লাগল রজনীবাবুর। মনে হচ্ছে, জীবনের প্রাণশক্তি এই ক’দিনেই অর্ধেক হয়ে গেছে।
পেশাগত জীবনে বহু ঝড়ঝাপটা সামলানোর অভিজ্ঞতা থাকায় রজনীবাবু জানেন, মনের কোনও তিক্ত ক্ষত উপশমকারী অব্যর্থ মলম হল সময়। কিন্তু জীবনের এই বিচিত্র সন্ধিক্ষণে সময় নামক জলযানে খুব একটা ভরসা করা যায় কি? জীবনসায়াহ্নের এই অভূতপূর্ব অবস্থায় নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। সমাজের অঙ্গুলিহেলন, ভ্রুকুঞ্চন আর বক্রোক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা কি তাঁদের আছে?
এত দিন প্রাণরহস্যের জটিল তত্ত্ব নিয়ে রাশি রাশি রিসার্চ পেপার তৈরি করেছেন। কত গবেষণারত ছাত্রকে গাইড করেছেন। নিউক্লিক অ্যাসিড, জাইগোট, সেল ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেজের রূপান্তর নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ হয়ে থেকেছেন। কিন্তু ভাবেননি, তাঁর একমাত্র সন্তান অত্যাধুনিক বিজ্ঞান আর পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার যূপকাষ্ঠে নিজেকে বলি দেবে। কী করে তিনি তাকে বোঝাবেন, এখনও এই পোড়া সমাজ ততটা উদারমনস্ক হয়ে ওঠেনি। সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে পিতৃপরিচয়, বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি এখনও এই সমাজে মহা মূল্যবান। নয়তো তাকে পদে পদে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এত কিছু সামলানোর মতো শক্ত শিরদাঁড়া কি সমাজ-সংসার সম্পর্কে অনভিজ্ঞ মেয়েটার আছে? তাঁরা এই পৃথিবীতে আর ক’দিন! সারা জীবনই হয়তো সমাজের অহেতুক কৌতুহল আর পড়শির নাক-গলানো মানসিকতার শিকার হবে তপজা আর তার সন্তান। কী জানি, হয়তো এত দিনেও মেয়েটাকে ঠিক চিনে উঠতে পারেননি তিনি। তাঁদের মেয়ের মধ্যে যে এত আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে, পাশে থেকেও টের পাননি তাঁরা। নিজেকে শত প্রবোধবাক্য দেওয়া সত্ত্বেও আজন্মলালিত রক্ষণশীল মূল্যবোধ কিছুতেই সহজ হতে দিচ্ছে না তাঁকে।
******
সে দিন রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলেন রজনীবাবু। তিনি যেন এক প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার গুহার মুখের কাছে এসে আছড়ে পড়েছেন। অন্য দিকে যাওয়ার সমস্ত পথ অবরুদ্ধ। ঘোর তমসায় আচ্ছন্ন চার দিক। এক বিন্দু আলোর দেখা পাওয়ার জন্য তিনি মাথা কুটছেন।
এমন সময় জান্তব গরগর ধ্বনি আর ফোঁসফোঁসানি শুনে টের পেলেন, পিছন থেকে হিংস্র শ্বাপদকুল তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে। আক্রমণ করতে উদ্যত। প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে গুহার মধ্যে ঢুকতেই তাঁর কানে এল এক মানবশিশুর চাপা কান্নার আওয়াজ। ক্রমশ যেন তা বাড়ছে। প্রতিধ্বনিত হচ্ছে গুহার সর্বত্র। ভয়, উত্তেজনা আর শিহরন মেশানো হিমস্রোত বয়ে যাচ্ছে রজনীবাবুর শিরদাঁড়া দিয়ে।
মনে হল, অবশেষে যেন তিনি তীব্র অমানিশা ভেদ-করা আলোর পথের হদিশ পেলেন। উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়াতে লাগলেন সেই শব্দের উৎসপথ লক্ষ্য করে। সেখানে পৌঁছাতে পারলেই যেন তিনি মুক্তি পাবেন। তাঁর বহু যুগের কষ্ট, বেদনার অবসান হবে। কিন্তু কোথায় সেই উৎসস্থল? এক আজব গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে তিনি ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে লাগলেন।
ধড়মড় করে উঠে বসলেন রজনীবাবু। পাশে স্ত্রী ঘুমন্ত। জোরে জোরে শ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রজনীবাবুর সারা শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ছুটছে। দেহ-মন ক্লান্ত, অবসন্ন। মনে হচ্ছে, গভীর জ্বর সদ্য সদ্য শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর রজনীবাবুর মন জুড়ে-থাকা জমাট এক রাশ অভিমান, হতাশা, রাগ আর শঙ্কা বাষ্পীভূত হয়ে বাইরের কুয়াশার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অজান্তেই অকাল নিম্নচাপের জলভরা মেঘের রাশি ভিড় করে এল তাঁর চোখের কোলে।
রজনীবাবু জানালার দিকে তাকালেন। সবে ভোর হচ্ছে। জানালা লাগোয়া শিউলিগাছ থেকে টুপটাপ ফুল ঝরে পড়ছে। পুজো আসছে। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিলেন। একটা ফোন করতে হবে। ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারটা যেন সাবধানে থাকে মেয়েটা। আর পারলে পুজোয় যেন এক বার....
‘রবিবাসরীয়’ বিভাগে ছোটগল্প পাঠান, অনধিক ১৫০০ শব্দে।
ইমেল: rabibasariya@abp.in সাবজেক্ট: rabibasariya galpa
ডাকে পাঠানোর ঠিকানা:
‘রবিবাসরীয় গল্প’,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১
যে কোনও একটি মাধ্যমে গল্প পাঠান। একই গল্প ডাকে ও ইমেলে পাঠাবেন না। পাণ্ডুলিপিতে ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি জানাবেন। ইউনিকোড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।