Abosar

শব্দটা জরুরি

রিমি মুৎসুদ্দি

শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে। মাথার ভিতরটাও কেমন দপদপ করছে। দু’হাতে মাথার রগদু’টো চেপে উঠে বসলেন তিনি। এ বার বুঝতে পারলেন, এত ক্ষণ ঘুমিয়েই ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই শব্দটা শুনেছেন। শব্দের একটা অনুরণন তাঁর মাথার ভিতর রয়ে গিয়েছে। 

চায়ের কাপ স্ত্রীর হাত থেকে নিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললেন তিমিরবাবু। 

‘‘আশপাশে কোথাও কি দেওয়াল ভাঙা হচ্ছে?’’

‘‘কী জানি? সারা ক্ষণই তো কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু ভাঙছে।’’ 

‘‘হ্যাঁ, পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির দৃশ্য তো সর্বত্রই। কিন্তু খুব কাছেপিঠে কি কিছু ভাঙছে?’’

‘‘সে রকম কিছু তো খেয়াল করিনি। তবে এখন তো কোনও দিকে তাকাবার ফুরসত নেই। ভাঙতেও পারে কোথাও কিছু। তুমি কাগজপত্রগুলো ভাল করে দেখে নাও। দশটার মধ্যে ব্যাঙ্কে যেতে হবে। বাবানকেও বলে রেখেছি।’’

এ বার আবার যেন শব্দটা শুনতে পেলেন তিনি। উফফ! অসহ্য!

‘‘ছাদ ঢালাই হয়ে গেল দাদা! আমরা মিষ্টিমুখ করব না?’’

‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ। সে সব হবে। কিন্তু এখানেও দেড় ইঞ্চি জায়গা কেন ছাড়লে বিশু? গ্যারেজের পাশে অতটা জায়গা না ছেড়ে একেবারে লাগোয়াই তো গাঁথনিটা তুলতে পারতে!’’ 

‘‘আরে দাদা, এখান দিয়ে ড্রেনের পাইপটা যাবে! গ্যারেজের পাশে এই জায়গাটুকু বৌদিই বলেছেন রাখতে। বাড়িতে একটু বাগান-টাগানও তো করতে পারবেন।’’ 

‘‘না-না। সে বাগান না হয় ছাদে বা বারান্দায় হবে’খন। তোমাকে প্রথমেই বলেছিলাম, কিচ্ছু বাদ রেখো না।’’

‘‘খুব বেশি জায়গা ছাড়িনি দাদা। বাড়িটা হোক। আপনি দেখে প্রশংসা করবেনই আমার কাজের। বৌদির এত পছন্দ বাড়ির প্ল্যান, আর আপনি খুঁতখুঁত করছিলেন প্রথম থেকে।’’

‘‘জায়গা মোটে বিশ ছটাক! ছোট ছোট সব ঘর! এখানে আবার হাত-পা ছড়িয়ে থাকবই বা কী ভাবে?’’

‘‘জমির মাপ নিয়ে মনখারাপ করবেন না। একেবারে প্রপার জায়গা। সামনে হাসপাতাল। আরও কত উন্নতি করবে এই জায়গাটা আগামী বিশ বছরে দেখে নেবেন! তখন এই বিশ ছটাক জায়গার উপর আপনার এই বাড়িটারই কত লাখ টাকা যে দাম হবে!’’ 

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিমিরবাবু। বালিগঞ্জের মোড়ে বাইক অ্যাক্সিডেন্টে পা ভেঙে সেই কবে থেকেই বিশু ঘরবন্দি। ভাঙা পা জোড়া লাগেনি। ওর ছেলেরা কেউই প্রোমোটারি করে না। প্রোমোটারি করার মতো আর এক ছটাক জমিও এ অঞ্চলে নেই। এখন প্রোমোটারদের রমরমা রাজারহাটের দিকে। বিশুর এক ছেলে পার্টি করে আর কবিতা লেখে। আর এক জন কোথায় যেন চাকরি করে। 

দক্ষিণ কলকাতায় এই জমিটা তখন জলাজমিই ছিল। একটু সস্তায়ই কিনেছিলেন। তাও কত ঋণ করতে হয়েছিল। বিশ বছরে সত্যিই উন্নতি হয়েছে এলাকার। বড় রাস্তায় গেলেই শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স। কফি শপ, কাফে, টি জয়েন্ট। কত কত নাম! কিন্তু এখনও পলতার পরিস্রুত জল এসে পৌঁছায়নি এখানে। বড় ঘোলা আর লাল জল। খুব শিগগিরই আসছে পলতার জল, প্রায়ই শোনেন তিনি। দেখা হয়তো আর হবে না এ জীবনে।

‘‘তুমি এখনও বসে আছ? তৈরি হতে হবে না?’’ তন্দ্রার ডাকে চমক ভাঙল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘সবে তো ন’টা বাজে। কতটুকু আর পথ? সাড়ে ন’টায় রওনা দিলে দশটার মধ্যে হেঁটেই পৌঁছে যাব।’’

‘‘একেবারে স্নান সেরে যাও। ওখান থেকে শ্যামবাজার যেতে হবে। আজ রংমিস্ত্রি নিয়ে আসবে খোকন। তুমি দাঁড়িয়ে থেকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ো।’’

উফফ! হাতুড়ির আওয়াজ আবারও শুনতে পাচ্ছেন তিনি। কাছেই কোথাও বাড়ি ভাঙা হচ্ছে নিশ্চয়ই। তন্দ্রা জানে না। 

আর দেরি না করে স্নানে গেলেন। ক’দিন ধরে বাড়িটার সব জিনিসপত্রের উপরই বড় মায়া হচ্ছে তাঁর। অথচ কয়েক দিন আগেও ভাবতেন, স্নানঘরটা বড় সাদামাটা। পুরো দেওয়াল জুড়ে টাইলস লাগালে ভাল হত। একটা বাথটবও রাখার জায়গাও নেই, এত ছোট! 

ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের আপাত-নিরীহ মুখটা মনে পড়ছে তাঁর, “আমার রিটায়ারমেন্টের আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি। পুরনো এনপিএ নিয়ে এমনিতেই জেরবার। এখন ঝুঁকি নেওয়া সত্যিই প্রাণঘাতী।”

“কিছুই কি উপায় হবে না? আমার যে খুব তাড়াতাড়ি এই লোনটা প্রয়োজন। আর মাত্র কয়েকটা দিন হাতে। প্রাইভেট সংস্থাগুলোয় এত চড়া সুদ! রিস্ক নিতে পারব না। আমার সঞ্চয় তো তেমন নেই!”

“নাহ। এত তাড়াতাড়ি কিছুই হবে না। আমাকে হয়তো জল্লাদ মনে হচ্ছে আপনার। কিন্তু আমি যে কতটা অসহায়!”

তিমিরবাবুর লম্বা চেহারাটা বেশ খানিকটা ঝুঁকে পড়েছে। আর বসে থেকে লাভ নেই। ওঠার উপক্রম করতেই ম্যানেজারবাবু বললেন, “বসুন। চা খাবেন?”

তিনি মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি প্রকাশ করলেন।

“এক কাপ চা খেয়েই যান। এই কদিন আগে আমি হাসপাতাল থেকে ফিরেছি। কেন জানেন?”

উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি বলে যান, “লোন আদায় করতে গিয়ে। ছেলে লোন নিয়ে বিদেশে গিয়েছে পড়তে। সেই লোন প্রায় দশ বছর হয়ে গেল শোধ করে না। এই লোন স্যাংশনের সময় আমি ছিলাম না। কিন্তু হেড অফিস থেকে লোন আদায়ের ভার আমার উপরেই পড়ল। ছেলের বাবা মারা গিয়েছে। মা আর দিদি। প্রথম প্রথম তারা দুঃখের সাতকাহন গাইত। কিন্তু আমি কী করব বলুন? বললাম, তেমন হলে বাড়ি বিক্রি করেও ব্যাঙ্কলোন শোধ করতেই হবে। এই টাকা তো ফাঁকি দেওয়া যাবে না।”

“ব্যস! বাড়ি বিক্রি শুনেই তারা নাকি স্থানীয় পার্টি অফিসে যোগাযোগ করেছিল। এখন জানি না কে তাদের বুদ্ধি দিয়েছিল যে, ব্যাঙ্কলোন ফাঁকি দেওয়ার প্রথম উপায় ম্যানেজারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা। আমি বহুবার ফোনে না পেয়ে দ্বিতীয় বার তাদের বাড়ি যেতেই পাড়ার লোকজন মিলে আমাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশি মামলায় তো আমি রেহাই পাই। কিন্তু হাসপাতালে রীতিমতো দু’-দু’টো ফ্র্যাকচার নিয়ে বেশ কিছু দিন পড়ে থাকতে হল। অথচ উপরমহল থেকে কি আমি বাহবা পেলাম? পেলাম না। কারণ, সে লোন তো এখনও শোধই হয়নি। এর পর আবার কী ভাবে লোন মঞ্জুর করি বলুন তো?”

তিমিরবাবুর নিশ্চুপ মুখের দিকে তাকিয়ে ম্যানেজারবাবুই বুদ্ধি দিলেন, “এর চেয়ে অন্য কোনও উপায়ে কিন্তু দ্রুত টাকাটা পেতে পারেন। আপনার জমিটার পরিমাপ ঠিক কত? আমার কাছে এক জন মারোয়াড়ি...”          

জলের শব্দ যেন স্মৃতি হয়ে বার বার ধারাপাতে ভিজিয়ে দিতে চাইছে। তিমিরবাবু শুনতে পাচ্ছেন, “ফিক্সড ডিপোজ়িটের টাকার উপর আপনি লোন পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের কোনও রিস্ক নেই।”

‘ফিক্সড ডিপোজ়িট’ শব্দটা উচ্চারণ করলেন এক বার। এর পর তিনি জোর করেই দ্রুত স্নান সারলেন। 

তন্দ্রা গরম ভাত বেড়ে রেখেছে টেবিলে। ডালের বাটি, মাছের ঝোল সব রাখা আছে। তিনি খেতে বসলেই এক এক করে পরিবেশন করবে। ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে আবার তাঁর মনে হল আওয়াজটা যেন শুনতে পাচ্ছেন। তন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা ডাইনিং টেবিলটাও তা হলে বিক্রিই করে দিতে হবে?”

 

“সাধন বলেছিল, এই ডাইনিং টেবিলটা ওর খুব পছন্দের। ওটা ওই কিনে নিতে চায়। যে দামে কেনা, সেই দাম দিতেও ওর আপত্তি নেই।”

“ওহ! তা হলে তো ভালই। তোমার দু’ভাই-ই আমাদের ফার্নিচারগুলো কিনে নিতে চায়। আসলে অকশনে কেনা এই পুরনো আসবাবগুলোর ইজ্জতই আলাদা। ইচ্ছে থাকলেই হয় না। রুচির প্রয়োজন। তবে এখন আর ওই উত্তর কলকাতার ঘুপচি বাড়িতে কোনও রুচিই অবশিষ্ট থাকবে না।”

কথা ক’টা বলেই ভাত খেতে বসলেন তিনি। তন্দ্রাও আর কথা বাড়ালেন না। 

  

কথা মোটামুটি শেষ। সব কিছুই ঠিকমতো হয়ে যাওয়ার কথা। হয়ে চলেও। তিমিরবাবু আর তন্দ্রার একমাত্র ছেলে তুষারের ফ্রাঙ্কফুর্ট যাওয়ার ভিসাও এসে গিয়েছে। টিকিটটা কাটাই শুধু বাকি। এই ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স পড়ার জন্য কত রাতই না জেগেছে তুষার। ঘুম থেকে উঠে মাঝরাতে টয়লেটে যাওয়ার সময় তিমিরবাবু দেখতেন, ছেলের ঘরে আলো জ্বলছে। উঁকি দিয়ে দেখেছেন, টেবিলের উপর কোনও বই বা ল্যাপটপে ঝুঁকে নিবিষ্ট হয়ে আছে ছেলে। যদিও ল্যাপটপে মনোনিবেশ মানেই যে লেখাপড়া, তা নাও হতে পারে। অন্তত এখনকার এই আন্তর্জাল প্রভাবিত পৃথিবীতে তো নয়ই। কিন্তু সতর্ক পর্যবেক্ষণই তাঁকে নিশ্চিন্ত করেছে। ছেলে লেখাপড়াই করছে। বাবা হিসেবে তিনি গর্বিতও। 

শ্যামবাজারের শরিকি বাড়িতে তাঁদের তালা দেওয়া ঘরদু’টোয় মেরামতের কাজ চলছে। মেরামত বলতে অবশ্য দু’টো ঘর রং করার কাজই। আর রান্নাঘরটা একটু ভেঙে তন্দ্রার মনের মতো করা হচ্ছে। যতটা খরচ কমিয়ে করা যায়। 

পাঁচ মাথার মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে মানুষের মিছিল দেখতে দেখতে তাঁর মনে হল, হাতুড়ির আওয়াজটা আসলে ওই পুরনো রান্নাঘর ভাঙার আওয়াজই। এই শব্দটাই মাথার ভিতর ঘুরছে ক্রমাগত। 

বাড়ি ফিরে আরও এক বার ছেলের ইউনিভার্সিটির কাগজপত্র নিয়ে বসবেন তিনি। তন্দ্রা ও বাবান আলোচনা করে আরও কত কী সম্ভাবনা! ভবিষ্যৎ গবেষণার বিষয়। তন্দ্রা কি বোঝে সবটা? বাংলার ছাত্রী ছিল ও। মলিকিউলার বায়োলজিতে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় এতটা দক্ষ হয়ে উঠল কী করে? 

তিমিরবাবু ভাবতে থাকেন। মনে পড়ে যায়, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে সুদীপ রোজ আসত কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে। তন্দ্রার কারণেই যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সুদীপের আগমন তা তিনি জানতেন। উচ্চশিক্ষার জন্য সুদীপ আমেরিকা চলে গেলে আর যোগাযোগ রাখেনি তন্দ্রার সঙ্গে। এ সব তিনি জেনেই বিয়ে করেছিলেন তাঁর সহপাঠিনীকে। আজ ছেলের বিদেশযাত্রা নিয়ে তন্দ্রার এত আয়োজনের পিছনে কি পুরনো স্মৃতি? ভাবনাটা মনে আসায় অবশ্য নিজেই হেসে উঠলেন। 

‘‘আরে! রাস্তে কে বিচ মে খাড়া হো কর হাস রহে হ্যায়? থোড়া সাইড হো যাইয়ে!’’

সাইকেলটা ঘাড়ের উপরই প্রায় ফেলে দিচ্ছিল ছেলেটা। নোংরা পান-খাওয়া দাঁতের পাটি বার করে হাসতে হাসতে মন্তব্যটুকু ছুড়েই আবার ভিড়ে মিলিয়ে গেল। মিলিয়ে গেল বললে ভুল হবে। এত ট্রাফিকে একমাত্র সাইকেলই দ্রুত যেতে পারে। তাই অনেকটাই এগিয়ে গেল। 

উত্তর কলকাতা মানেই বিহারি, মারোয়াড়ি ও আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই অ্যাডজাস্টমেন্ট। অবশ্য অবাঙালিদের ভিড় দক্ষিণেও এখন। তবুও দক্ষিণ কি একটু বেশিই মার্জিত? ভাবনাটা মাথায় আসতে আবার নিজেকে শাসন করলেন। তাঁর জন্মই তো শ্যামবাজারের এক অচেনা সরু গলিতে। আর পুরনো শরিকি বাড়িটারও তো প্রায় একশো বছর হয়ে গেল। তুলনায় দক্ষিণ কলকাতা তো এই সে দিন জন্মাল। প্রথম-প্রথম অফিস থেকে ফিরে কী বিরক্তিই না লাগত তাঁর! ফাঁকা ফাঁকা, নির্জন সন্ধেগুলোয় যেন দমবন্ধ মনে হত। পাঁচ মাথার মোড়ের ভিড়, গলির কোলাহল, রকের আড্ডা বড় বেশি মিস করতেন। তন্দ্রার উপর রাগ হত তাঁর। তন্দ্রার তাড়নাতেই এই বাড়ি। 

বাড়ি ফিরে কাগজপত্র নিয়ে বসলেন আবার। সবই খরচপত্রের হিসেব। বাড়ি বিক্রির টাকা থেকে বেশির ভাগই রেখেছেন ছেলের জন্য। মোটামুটি পাঁচ বছরের হিসেব। সে অবশ্য বলেছে, “বাবা, দু’বছরে চাকরি পেয়েই তোমাকে আর-একটা ফ্ল্যাট কিনে দেব রাজারহাটে।” 

তিমিরবাবু জানেন। মাত্র ক’বছরই হয়তো তাঁকে উত্তর কলকাতায় পুরনো বাড়িতে থাকতে হবে। তার পর ছেলে চাকরি পেলে ফ্ল্যাট। এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েই পড়েছিলেন। 

তন্দ্রা এসে জড়িয়ে ধরেছে তাঁকে। 

‘‘কী করছ? শান্ত হও প্লিজ়! এখন কি তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে? বাবানের যাওয়ার সময় হয়ে এল। সব জিনিসপত্র খালি করে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে আমাদের। অ্যাকাউন্টে তো পুরো টাকাটাই দিয়ে দিয়েছেন জালানরা। বাড়ি খালি করার দিনও ঠিক। তুমি এগুলো কী করছ?’’

বেশ কয়েকবার তন্দ্রা বললেন, “তুমি এগুলো কী করছ?”

তবুও তিমিরবাবুর ঘোর কাটে না। তিনি হাতুড়ি দিয়ে দেওয়ালে ক্রমাগত শব্দ করতেই থাকেন। আর বলেন, “বিশ বছরে কত উন্নতি হল বলো? বিশ বছর...”

ছেলে বাবানও এসে গিয়েছে, ‘‘বাবা, আমার বিদেশ যাওয়ার জন্য তোমায় বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে বলে এত কষ্ট পাবে জানলে আমি জার্মানি যেতাম না কখনওই।’’ 

তন্দ্রা আঁচলে কান্না চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিমিরবাবুর মুখে মৃদু হাসি। হাতের হাতুড়িটা না ফেলেই ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “শব্দটা খুব জরুরি! জমি কেনা, বাড়ি তৈরি থেকে আজ পর্যন্ত কত স্মৃতি এই বাড়িটায়। জার্মানি যাওয়া, পড়াশোনা করা ভাল চাকরি, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন তোমার চোখে! স্বপ্ন ভাঙার শব্দ তোমায় শুনতে দেবো না বলেই তো স্মৃতি ভাঙার শব্দ শোনালাম।”

 

ছবি: মনোজ রায়