Abosar

লাল গিরগিটি

মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

বাঁধের ধারে নিরক্ষরেখা দেখছিল প্লাবন। জীবনটাই লটারি। সারা রাজ্যে ইংরেজি ইংরেজি গন্ধ। ভাষার দেমাক, চলনের ঠাটবাট। এমন ঘেরাটোপে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় দু’শো বছরের স্কুলটির ঠমক-চমকই আলাদা। ওদের দেখানোর কিছু নেই। আভিজাত্যই সব। ভাঙা লাল ইট কিংবা সুরকির খিলান পর পর গেঁথে তোলা পুরনো ক্লাস ঘরের সাবেক ধরন। বাইরে থেকে প্রাচীরের ধার দিয়ে যেটুকু দেখা যায় আর কী! ভিতরে ঢুকে পড়ে সব খুঁটিয়ে দেখার ইচ্ছে এ শহরে কার না হয়। কিন্তু সে তো আর সম্ভব হয় না। ইচ্ছে পূর্ণ হয় যদি অফিসের কোনও পরীক্ষাকেন্দ্র হয় সে স্কুলে। তা হলে প্লাবন, অনীশ, অমিত ওরা বেশ খুশি খুশি মনেই স্কুলে ঢুকে পড়ে। তখন আমলকি, সবেদা, পেয়ারা, নারকেল, পাম গাছের ধারাভাষ্যে একচোট নাকানি চোবানি খায় ওরা। আর বিস্তৃত সবুজ মাঠ! তা-ই বা কম কিসে!

প্লাবনের একটিই মেয়ে। বয়স যখন চার, এল কেজি-তে পড়ছে, তখন থেকেই ভেবে রাখা, ‘আহা! এ স্কুলে যখন পড়বে বাবি…’ কিন্তু কী ভাবে! ভাগ্যে থাকলে নিশ্চয়ই হবে। আবার মনে মনে বছর যায় আর ঘুরে-ফিরে ভাবে, নিশ্চয়ই এখানকার বড়দিমণি যিনি থাকবেন, তাঁকে বলেই ঢোকাতে হবে। পর ক্ষণেই বিষণ্ণ হয় মন। ভাগ্য কি এত সুপ্রসন্ন হবে, কে জানে!

 এই তো সে দিন ওই স্কুলের তিন জন শিক্ষিকা কী কাজে এসেছিলেন অফিসে, সম্ভবত কম্পিউটার-সংক্রান্ত কোনও কাজ আটকে গিয়েছে, ওদের দেখলেই প্লাবনের কেমন বুক ধুকপুক করে। আসলে যতই ইংরেজি মিডিয়ামের পক্ষ নিয়ে বুলি আওড়াক এখানকার লোকজন, মনে মনে প্লাবন-সহ অনেকেই জানে এ স্কুলে ঢুকতে পারার ক্যারিশমা। কী করে যে এরা এত ভাল রেজ়াল্ট করে! অদ্ভুত লাগে। শহরে চারটে সরকারি স্কুল। তার মধ্যে এ স্কুলকে মধ্যগগন ছুঁতে দেখছে এখানকার মানুষজন। সংস্কৃতি, সাহিত্য, লেখাপড়া, বিজ্ঞান নিয়ে সেমিনার, কুইজ় কোথায় এরা এগিয়ে নেই! সকলেই এখানে মেয়েকে ভর্তি করার বাসনা মনে মনে পোষণ করে।

আশাটুকু সম্বল করে কত কী ঘটিয়ে ফেলছে মানুষ। সঙ্গে ইচ্ছের জোর। প্লাবনও লাইন দিয়ে একশো জনের পিছনে দাঁড়িয়ে ফর্ম তুলেছে। সেনগুপ্ত পদবি। জেনারেল কাস্ট। সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ওর চেনা অনেকেই কী করে এসসি কিংবা ওবিসির নকল প্রমাণপত্র জোগাড় করেছে। ওদের দলে ও নেই, যা হবে যেমন হবে হোক। বাবি, ওর মা শ্যামলী সকলেরই চোখ চকচক করছে ফর্ম নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই। ড্রেস কী হবে, কেমন কাটের, কে করবে, সরকারি স্তর থেকে ড্রেস দেবে কি না, সবই আলোচনায় চলে আসে। আশপাশে শহর জুড়ে অনেকেই ফর্ম তুলেছে।

প্লাবন ক’দিন কেটে যাওয়ার পর থেকেই ভিতরে ভিতরে অস্থির। ঠিকমতো হবে তো! অবশ্য চোখের সামনেই সরল পদ্ধতিতে লটারি হবে। রেশিয়ো অনুযায়ী কাস্ট কোটা ভাগ হয়ে যাবে, তাও জেনারেল ক্যান্ডিডেট হিসেবে আশা রাখতেই হবে।

 

আজ ছিল সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন। বাবির ফর্ম নম্বর ১৩। এই নম্বরে লটারি খেলা হবে, তাই মনটা কেমন খুঁতখুঁত করেছে ক’দিন।

কলকাতায় থাকলে এ সব ভাবনা ছিল না। কারণ, নামীদামি ইংলিশ মিডিয়াম সেখানে অ্যাডমিশন, ইন্টারভিউ নিয়ে ছাত্রী আর অভিভাবককে ভর্তি করার প্রলোভন দেখিয়েই রেখেছে। মেয়েকে বাংলা মিডিয়ামে ভর্তির ব্যাপারে অপর্ণা একটু খুঁতখুঁত করছিল, কিন্তু এ সিটি টাউন যতই মফস্সলের হোক, সারা রাজ্যে নামকরা, অসাধারণ রেজ়াল্ট। এ স্কুলের ইংরেজি শিক্ষারও যথেষ্ট সুনাম আছে। প্লাবন ঈশ্বরকে ডেকেছে মনে মনে ক’দিন। অপর্ণাও এ স্কুলের পরিকাঠামো দেখে এখানে ঝুঁকেছে। ইংলিশ মিডিয়ামের নামে একটু আর্থিক সঙ্কোচ আছে প্লাবনের। করে কেরানির চাকরি, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে আকাশকুসুম কল্পনা তার আসে না। তবে এ তল্লাটে সুভাষিণীতে ভর্তি করতে পারলে আর কথা নেই। বাবিও কী বুঝেছে কে জানে, সেও মাঝে মাঝে জোড় হাতে মনে মনে কী সব প্রার্থনা জানাচ্ছে মা-বাবার দেখাদেখি।

 

ঠিক বারোটায় লটারি শুরু। একেবারে সাজ-সাজ রব। অভিভাবকদের ঢোকানো হল বারোটার পাঁচ মিনিট আগে। যা সিট রাখা হয়েছে হল-এ, তার চেয়ে ঢের বেশি অভিভাবক এসেছেন। সঙ্গে পালা করে আরও দু’-তিন জন। যেমন প্লাবন-অপর্ণা দু’জনেই এসেছে বাবির সঙ্গে। অনেকে দাদু-ঠাম্মাকেও সঙ্গে এনেছে। কিন্তু প্লাবনের কেমন শরীর খারাপ লাগছে টেনশনে। সে স্কুল বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। প্রধান ফটকের উজ্জ্বল হলুদ সবুজের তোরণের উপর প্রদীপের উজ্জ্বল শিখা। রাত্রিবেলা আলোয় যেমন ঝলমল করে, আজ রোদেও তেমনই ঝলমল করছে। প্লাবনের বুকের ভিতর ছায়া-ছায়া মেঘ নামে। বাইরে অনেকেই পায়চারি করছে। এ বার গেটে সব ভিআইপি-দের গাড়ি এসে থামছে। সরকারি আমলা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিনিধি, ডি আই প্রতিনিধি, প্রাইমারি কাউন্সিলের চেয়ার পার্সন আর অন্যান্য স্কুল প্রধানেরা এসে পড়েছেন মঞ্চে।

অভিভাবকদের দুরুদুরু বুকে অতিথিদের ভাষণ ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। প্লাবনের কানে তো কিছুই ঢুকছে না। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অভিভাবকদের চোখের সামনে ঘটবে। তার আগে যাদের লটারিতে নাম উঠবে তাদের শুভেচ্ছা আর যাদের নাম এখানে দুর্ভাগ্যবশত উঠবে না, তারা অন্য স্কুলেও যে সমান সুযোগ পেয়ে লেখাপড়া করতে পারবে, এ কথা জানাতে ভুলছেন না মাননীয় অতিথিরা।

এ সব কথায় কি আর মন মানে? এ স্কুল সবারই ফার্স্ট প্রেফারেন্স। তার পর দেখা যাবে অন্যগুলোর খবরাখবর। তবে ফর্ম ভরে আবেদন করা পাঁচশো অভিভাবক লড়ছেন মাত্র একশোটি সিটের জন্য। সুতরাং বেশির ভাগই ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরে যাবে। তার উপর সংরক্ষিত আসন যারা পাবে, তারাও জেনারেলের নম্বরের সঙ্গেই লটারিতে আসবে। তার পর ভাগের খেলা। প্লাবনের পদবি সেনগুপ্ত বটে, কিন্তু দু’বছর আগে অপর্ণা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে খুব চেষ্টা করেছিল ওবিসি সার্টিফিকেট বার করার। এ মিথ্যাচার মানতে পারেনি প্লাবন। সে পুকুরচুরি হয়ওনি। বাবির নাম জেনারেলের লটারিতেই খেলবে। আর কী হবে ভেবে…আনলাকি থার্টিন নম্বরটা নিয়েই যা মনটা একটু খুঁতখুঁত করছে।

প্রথম লটারি হবে জেনারেল ক্যাটেগরির। আশা-নিরাশার দোলায় প্লাবন যেমন, সঙ্গে অন্যরাও। মুখ শুকিয়ে পাংশু। মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম জপ শুরু।

০০১, ০০৫, ০০২… এ ভাবে বড় এক বালতির মধ্যে কাগজ ভাঁজ করে ফেলা হচ্ছে। এক সময় গোনা শেষ। এ বার বালতি ধরে প্রবল ঝাঁকুনি। এলোমেলো করে দেওয়া কাগজ ভরা বালতির মুখ বড় টাওয়েলে ঢাকা দিয়ে প্রথম টিকেট তুললেন চেয়ারপার্সন মালতী শর্মা। যিনি মাইক নিয়ে আছেন ঘোষণা করলেন জেনারেল ০০৪… নথিভুক্ত হয়ে গেল চার জায়গায়। একেবারে পাকা কাজ। যার হল, তার উজ্জ্বল মুখচ্ছবি দেখতে দেখতে প্লাবনেরও কেমন আনন্দে চোখে জল আসে। এই জেনারেল ক্যাটেগরির খেলায় ক’টা আর জেনারেল উঠবে! বড়জোর পঞ্চাশের মধ্যে পঁচিশ…আর সব অন্যান্য। বাবির ফর্ম নম্বর আসেনি। মনটা ফুৎকারে দমে যায় প্লাবনের। অপর্ণার চোখের দিকে তাকালে ভারী মেঘ দেখতে হবে, তাই তাকায় না সে। এ পর্যায় শেষ। এ বার দশ জন ওয়েটিংয়ের নম্বর তোলা হবে। লটারি হচ্ছে।…কী লাভ! ওয়েটিং ওয়ান, টু এ ভাবে সিরিয়ালি নামবে। তেমন কপাল কি করেছে বাবি! তার উপর তেরোর গেরো তো আছেই।

হেডমিস্ট্রেস প্রথম টিকেট নম্বর তুললেন। ভাঁজ করা কাগজ। প্লাবন এখনও কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ফর্ম নং ০১৩, জেনারেল ওয়েটিং ওয়ান। আরেব্বাস! তা হলে কি এতটুকু আশার জন্ম হল! অপর্ণার দিকে পূর্ণ চোখে তাকায় প্লাবন। তবু তো একটু আশার আলো। বাবিও বেঁকে যাওয়া পিঠ সোজা করে এ বার। চিলতে হাসি ফোটে মুখে। উঠে বসে। প্লাবন নতুন আশায় বুক বাঁধে।

প্রায় সন্ধে হয় হয়। কোল্যাপসিব্ল গেটের বাইরে থেকে উজ্জ্বল আলোয় কালো ব্ল্যাকবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে লটারিতে চান্স পাওয়া নম্বরগুলো। প্লাবনও খানিকটা নীচে বাবির ফর্ম নম্বর তেরো-র দিকে তাকিয়ে থাকে অনেক ক্ষণ। আগামী সোম, মঙ্গল, বুধ ভর্তি। তার মানে শেষ দিনের অপেক্ষায় বুক বেঁধে থাকতে হবে তীর্থের কাক হয়ে। ধর্না দিতে হবে প্লাবনকে… টু বি অর নট টু বি। যদি কেউ ভর্তি না হয় তবেই…

বুকের ভিতর বহু কু-ইচ্ছা মুহূর্তে ঘুরপাক খায়। মনে মনে বিজাতীয় প্রার্থনাও করে বসে। পর ক্ষণেই শিউরে উঠে ঈশ্বরের কাছে মাপ চায়। না না! এ সব কী ভাবছে সে! সব শিশুই তো বাবির মতো। কী যে ভাবছে… ছি! পাগল আর কাকে বলে!

 

ভর্তি চলছে। পর পর তিন দিন। না, নর্মাল ভর্তির দিনগুলোয় এসে লাভ নেই। একেবারে বুধবারই যাবে, ভেবে রেখেছে প্লাবন। মনের ভিতর অসম্ভব যন্ত্রণা। অপর্ণা মানসিক উৎকণ্ঠায় কাহিল। ইংলিশ মিডিয়াম নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে আবার। প্লাবন অবসাদে চলে যাচ্ছে আবার। গত দু’দিন ওই স্কুলের নানা জনের কাছে ফোন করে খবর নিয়েছে সবাই ভর্তি হল কি না। একটা ফাঁক… অন্তত এক জন কেউ না ভর্তি হলেই ওর মেয়ের নাম আসবে। কী প্রশান্তি! স্বপ্ন দেখে প্লাবন।

ওদের অফিসের ডিএম সাহেবের পিএ-র মেয়েটার একবারে হয়ে গিয়েছে। দশ-এগারো নম্বরে বোধহয় নাম। ওর ভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হয় প্লাবন। অকারণে মাথা গরম করে। বাবির করুণ মুখ লক্ষ করে সংযত করে নিজেকে। মনে স্থায়ী অস্থিরতা। সুভাষিণী গার্লসের শীলামিসকে ফোন করে।

‘‘…হ্যালো কে…’’ এ বার ফোন কেটে দেন কর্তৃপক্ষ। কত বার আর এহেন প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায়। সব শিক্ষিকা তো আর ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত নন। কিন্তু প্লাবন তো অস্থিরতায় উন্মত্তপ্রায়!

রাত পেরিয়ে শেষ দিন। ভর্তি কমপ্লিট। আজ এই একটু আগে

একটা ফোনে পরিবেশ, মন সব এক লহমায় বদলে গিয়েছে। দৌড় দৌড়, সাজ সাজ! বাবিকে অপর্ণা বেশ ঝুমঝুমে ফ্রিল দেওয়া সাদা ফ্রক পরিয়ে দিয়েছে। খুব হালকা আর ফুরফুরে লাগছে।

‘‘কোথায় যাচ্ছি, বাবা?’’

‘‘স্কুলে।’’

‘‘কেন, আমি কি ভর্তি হব?…মাঝখানে কেউ এক জন ভর্তি না হলে আমার হবে, মা বলেছে।’’

‘‘থাক। তোমাকে এত কিছু ভাবতে হবে না। চলো তো, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস ডেকে পাঠিয়েছেন। কেন দেখে আসি।’’

তিনটে বেজে গিয়েছে। ওই সময়ই উপস্থিত থাকার কথা। বাইকটা যখন স্কুল গেটে পৌঁছয়, তেমন ভিড় নেই। প্লাবন বাইরে থেকেই অসীমা ম্যাডামকে ফোন করে।

‘‘ম্যাডাম, ডেকেছিলেন… নিয়ে এসেছি মেয়েকে।’’

‘‘মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট সঙ্গে  এনেছেন তো?’’

‘‘হ্যাঁ,’’ এক বুক আশা নিয়ে বলে ওঠে প্লাবন।

‘‘ঢুকে যান তাড়াতাড়ি।’’

এ বার বুকের ভিতর দ্রিমি দ্রিমি আওয়াজ শুনতে পায় প্লাবন। অপর্ণার মুখটাও উজ্জ্বল লাগছে। মেয়েটা কেমন হতভম্ব জড়োসড়ো। তবু বুঝতে পারে সব। বাবার হাত ধরে গেট পেরিয়ে যায়। ভারী নীল পর্দাটা বাতাসে দুলছে। একটু আগেই এক পশলা অকাল শীতছোঁয়া বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। ঠান্ডা ফেলছে আরও। নীল পর্দার ও পারে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে।

‘‘হুঁ, আসুন। প্লাবনবাবু তো? দেখুন এক জন ভর্তি হয়নি। তার ফর্ম ক্যানসেল করা হল মাত্র। মানে আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে। মানে স্যাড কেস। মেন লিস্টের ০১১ নং ফর্ম। টাকাগাছ এলাকায় থাকে। বাবার সঙ্গে বাইকে আসছিল। পিছন থেকে গাড়ির ধাক্কায়…’’

আর শুনতে পাচ্ছে না প্লাবন।…এক্সপায়ার্ড কি?

কিছু ক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে প্লাবন। কী করবে এখন! ওয়েটিং-এ এক নম্বরে থাকা আদরের কন্যা বাবির মুখের দিকে তাকাতে পারছে না ও।

অসীমা ম্যাডাম বলছেন শুনতে পাচ্ছে প্লাবন, ‘‘বুঝতে পারছি, আপনার কষ্ট হচ্ছে। এ ভাবে… সুযোগ ঘটে যাওয়া! আমাদেরও খারাপ লাগছে। কিন্তু এটা তো নিয়তি বলুন!’’

প্লাবন বুকের শব্দ টের পায়। দু’হাতে আগলে থাকে বাবিকে। চোখের অস্বচ্ছ পর্দায় ঝাপসা হয়ে আসা অপর্ণাকে দেখে। অসীমাদির দিকে এগিয়ে দিচ্ছে বাবির বার্থ সার্টিফিকেট। বাবি এনরোল্ড। ভাগ্যচক্র গিরগিটির মতো রঙ পাল্টে রক্তবর্ণ এখন। পুরনো লাল ইটের প্রাচীরে সত্যি লালরঙা গিরগিটিটা তখন স্থির। মাথা তুলে আছে।

প্লাবন যন্ত্রের মতো কলম হাতে তোলে। এখনই অভিভাবকের স্বাক্ষর করতে হবে তাকে। নীল পর্দার ও পাশ থেকে হাড়-হিম-করা এক ঝলক বাতাস ঢুকে আসে ঘরের ভিতর।