Abosar

বন্ধ দরজা

প্রচেত গুপ্ত

শিবনাথ দাঁড়িয়ে আছে বড় সাহেবের ঘরের সামনে। দরজা বন্ধ। কুলকুল করে ঘামছে সে। এই ঘাম গরমের নয়, ভয়ের।

পকেট থেকে রুমাল বের করে শিবনাথ মুখ মুছল, গলা মুছল। রুমালটা স্নেহার তৈরি। কোনায় লাল সুতো দিয়ে কাঁপা হরফে লেখা ‘শিস’। শিবনাথের ‘শি’, স্নেহার ‘‌স’। বউয়ের তৈরি রুমাল সঙ্গে নিয়ে ঘোরা আজকাল হাসিঠাট্টার জিনিস।

বেশি বয়সে বিয়ে করলে অনেক হাসিঠাট্টার জিনিস মেনে নিতে হয়। শিবনাথও মেনে নিয়েছে। তবে আর পাঁচ জনের মতো জোর করে নয়, সে মেনেছে পছন্দ করে। বিয়ের অল্প ক’দিনেই সে বুঝেছে, স্নেহা এক জন ভাল মেয়ে। ‘‌করব না, করব না’‌ করেও শিবনাথ যখন বেশি বয়সে বিয়েতে রাজি হয়েছিল, শর্ত ছিল একটাই, মেয়ে যেন সহজ-‌সরল হয়। অল্পে যেন সন্তুষ্ট থাকে। গ্রামের মেয়ে স্নেহা সে রকমই। শুধু সহজ-‌সরল নয়, বরের প্রেমে ডগমগও বটে। বিয়ে করে শিবনাথ খুশি।‌

কিন্তু এ কী কাণ্ড শুরু হয়েছে!‌ সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? পাগল মানু্ষ উলটোপালটা শোনে, উলটোপালটা দেখে। যা দেখা যায় না, তা দেখতে পাওয়া তো উলটোপালটাই হল। ‌

এই নিয়ে দু’দিন ঘটল। প্রথমটা হয়েছে সোমবার।

সকালে বাজার সেরে ফেরার পথে শিবনাথ গিয়েছিল তারকমাস্টারের বাড়ি।  তারকমাস্টার এই ছোট্ট টাউনে খাতিরের মানুষ। সবাই শ্রদ্ধা করে। এ বছর তাকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ঠান্ডা মাথার ভদ্রলোক। কারও সঙ্গে গলা তুলে কথা বলেন না।

দু’দিন আগে শিবনাথ খবর পেয়েছিল, মাস্টারের জ্বর। আজ ভাবল, এক বার দেখে যাই। দু’টো আপেল, একটা নাশপাতি নিল।

গেট খুলে তারকমাস্টারের বাড়িতে ঢুকে বন্ধ দরজার কড়া নাড়তে গিয়ে ঘটনা ঘটে নিঃশব্দে। শরীর ঝনঝন করে উঠল। বিস্ফারিত চোখে দঁাড়িয়ে থাকে শিবনাথ। এ কী দেখছে!‌ কী দেখছে এ সব!‌

সম্বিৎ ফিরতে মুহূর্ত খানেক সময় লেগেছিল। নাকি তার থেকেও কম?‌ এক রকম ছুটেই গেট খুলে বেরিয়ে পড়ে সে। ছিছি, অমন এক জন ভদ্রলোককে জড়িয়ে এ সব কী দেখল!‌

আজ দ্বিতীয় বার ঘটল। বড়সাহেবের ঘরের সামনে। ফাইল দেখাতে গিয়েছিল।

ঘোরের মধ্যে নিজের টেবিলে ফিরে এল শিবনাথ। কপালের দু’পাশের রগ টিপে, মাথা নিচু করে বসে রইল। পাশের টেবিল থেকে প্রশান্ত বলল,‘‘‌কী হল শিবদা?‌ শরীর খারাপ নাকি?‌’’

শিবনাথ মাথা না তুলে বলল, ‘‘‌না, ওই একটু ধরেছে।’‌’

উলটো দিকে বসে দেবরঞ্জন। ঠাট্টার সুরে বলল, ‘‌‘অত ঘন ঘন বড়সাহেবের ঘরে যাবেন না। মাথা আরও ধরবে।’’

ও পাশ থেকে বিদ্যুৎ ঠোঁট উলটে বলল,‘‌‘সে আর কী করা যাবে? বসের পেয়ারের লোক। বস যে শিবনাথ বলতে অজ্ঞান। চচ্চড়ি ফাইল এলেই ডাক পড়ে।‌‌’‌’

‘‌‌চচ্চড়ি ফাইল’ হল সাংকেতিক নাম। যে ফাইলে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ থাকে তাকে  অফিসে বলা হয় ‘‌‌চচ্চড়ি ফাইল’। এ সব ফাইলে টেন্ডার, অর্ডার, বিলের ছাড়পত্র থাকে। সই করলে লাখ টাকার ব্যাপার। এই ধরনের ফাইল ডিপার্টমেন্টে ঢুকলে টেবিলে টেবিলে ফিসফিসানি হয় ।

‘‌‘দেখিস ভাই, ভাল করে কেটেকুটে, মাখো-মাখো করে রঁাধিস। টেস্ট যেন ঠিক হয়।’’

এর মানে হল, ‘‌ঘু্ষ’-‌এর‌‌ পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। এক বছর হল নতুন বড়সাহেব এসে ব্যবস্থা কড়া করেছেন। ‘‌চচ্চড়ি’‌‌ ধরনের ফাইল তিনি নিজে দেখছেন। এই কাজে সঙ্গে নিয়েছেন শিবনাথকে। এমনি নেননি, খোঁজখবর নিয়ে নিয়েছেন। খবর পেয়েছেন, এই লোককে সহকর্মীরা আড়ালে ডাকে ‘‌সৎনাথ’‌ বলে। পনেরো বছরের কর্মজীবনে পনেরো পয়সা ঘুষ না নেওয়ার ‘‌অপবাদ’ রয়েছে শিবনাথের‌। শুধু অফিসে নয়, এই লোক বাইরেও ‘‌সৎনাথ’‌। বিয়ের সময় বারণ করা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ি থেকে সাইকেল দিয়েছিল। জামাই অফিস যাবে। শিবনাথ সেই সাইকেল নিজে চালিয়ে শালার হাতে তুলে দিয়ে এসেছে। শুধু তুলে দিয়ে আসেনি, হাতলের কাছে কটা নাটবল্টু ঢিলে ছিল, নিজের খরচে সেগুলো টাইট করে দিয়েছে। বলে এসেছে, তার নিজের সেকেন্ড-হ্যান্ড সাইকেলটি এখনও বেশ চলছে।

বড় সাহেব খবর পেয়েছেন আরও। শিবনাথ এই অঞ্চলের তিনটে ক্লাবের ট্রেজারার। সারা বছরের হিসেব তো রাখতেই হয়, অনেক সময় ক্যাশও রাখতে হয়। ক্লাবের ছেলেরা বলে, ‘‌‘ব্যাংকের হিসেবে গোলমাল হতে পারে, শিবনাথদার সুটকেসের হিসেবে কোনও গোলমাল হবে না।’‌’

সব জানবার পর, তবেই শিবনাথকে সঙ্গে নিয়েছেন বড়সাহেব। চচ্চড়ি ফাইলের ‘‌‌টেস্ট’  কমানোর‌ কাজ সহজ নয়। একা হয় না, সঙ্গে লোক লাগে।

সহকর্মীদের কথায় কান দিল না শিবনাথ। ঘুষ বন্ধ হওয়ার পর থেকেই তারা খেপে আছে। রোজই কিছু না কিছু টেরাবেঁকা কথা শুনতে হয়।

সে বাথরুমে গেল। চোখেমুখে জল ছেটাল। একটু ভাল লাগছে। নীচে নেমে গণেশের দোকান থেকে চা খেল। মনে মনে বলল, দূর, কী হাবিজাবি ভাবছি! যা হয় না, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়?‌ তাও মাথা থেকে ঘটনা ঝেড়ে ফেলতে পারল না।

সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে ঘর অন্ধকার করে বসে ছিল। মন অস্থির। মাথা না চোখ, কোনটা গোল পাকাল?‌ না কি সবই মনের ভুল?‌ বন্ধ দরজার বিভ্রম?‌ স্নেহা এসে পাশে বসল।

‘‘‌অ্যাই, কী হয়েছে তোমার?‌ শরীর খারাপ?‌’‌’

আহ্‌! বউয়ের গায়ের গন্ধে মন ফুরফুর করে উঠল শিবনাথের। স্নেহা গালে হাত বুলিয়ে বলল,‘‘‌বলো না, কী হয়েছে?‌ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?‌’‌’

বউয়ের নরম তুলতুলে হাতে গাল পেতে শিবনাথের মনের ভার অনেকটা কেটে গেল। হাত বাড়িয়ে স্নেহার থুতনি ধরল সে। হেসে বলল,‘‘‌জানো স্নেহা, আমার একটা মজার ব্যাপার হয়েছে।’‌’

স্নেহা কাছে ঘেঁষে গাঢ় স্বরে বলল, ‘‌‘কী মজা?‌’‌’

শিবনাথ বউয়ের পিঠে হাত নামিয়ে বুঝল, স্নেহা গা ধুয়ে এসেছে। তার গা ঠান্ডা এবং খালি। সে ফিসফিস করে বলল, ‘‘‌আমি একটা ক্ষমতা পেয়েছি।’‌’

‘‘‌ক্ষমতা!‌ কী ক্ষমতা গো?’‌’

শিবনাথ বউকে কাছে টানল। কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলল‌, ‘‘পাগলা ক্ষমতা।’‌’

স্নেহা গায়ের কাপড় আলগা করে হেসে বলল,‘‘সত্যি তুমি ‌পাগল একটা। অ্যাই জানো, আজ আমার এক দাদা এসেছিল। আমাকে একটা দারুণ জিনিস দিয়ে গিয়েছে। তুমি রাগ করবে না তো?‌’‌’

শিবনাথ বলল,‌‘‌‘রাগ করব কেন?‌ তোমার দাদা তোমাকে কিছু দিলে আমি রাগ করবার কে?‌ তা ছাড়া তুমি তো চেয়ে নাওনি।’‌’

স্নেহা বলল, ‘‌‘ও মা! চাইব কেন? দাদা জোর করে দিল।’‌’

শিবনাথ নিজেকে ধন্যবাদ দিল। ভাগ্যিস বিয়ে করেছিল, নইলে স্নেহার এই সুন্দর মন আর সুন্দর শরীর তার অজানাই থাকত। স্নেহা কাপড়ের ভিতর থেকে একটা  মোবাইল ফোনের বাক্স বের করল। উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,‌‘‌‘এই দেখো, খুব দামি।’‌’

ফোন দেখেই শিবনাথের মনে পড়ে গেল, অফিস থেকে ফেরার সময় ফোন করেছিলেন পঞ্চানন নায়েক। এখানকার পুরপিতা। সজ্জন ব্যক্তি। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। ভালমানুষদের নিয়ে চলাফেরা করেন। ক’দিন পরে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিলির অনুষ্ঠান হবে। সেই ব্যাপারে কথা বলতে শিবনাথকে সন্ধেবেলা পার্টি অফিসে যেতে বলেছিলেন।

শিবনাথ বউকে সরিয়ে ধড়ফড় করে উঠে পড়ল। ছিছি, পঞ্চাননবাবুর কথাটা একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। বেরোবে না কেন?‌ মাথার কি আর ঠিক আছে?‌

সাইকেল চালিয়ে পার্টি অফিসের সামনে আসতে দশ মিনিটের বেশি সময় লাগেনি। দরমা বেড়ার ঘরের দরজা বন্ধ। সাইকেল রেখে এগিয়ে গেল শিবনাথ। বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে দঁাড়াল। ভিতরে পঞ্চাননবাবু কি ব্যস্ত?‌

মুহূর্তের মধ্যে কেঁপে উঠল শিবনাথ।

 

*****

ডাক্তারবাবু শান্ত ভাবে বললেন, ‘‘শিবনাথবাবু, ‌আপনি কি আর এক বার বলবেন‌, তিনটে ঘটনা ঠিক কী ঘটেছিল?’‌’

কাঁপা গলায় শিবনাথ বলল‌, ‘‌‘প্রথম দিন তারকমাস্টারের বাড়িতে ঘটল। আমাদের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান উনি। জ্বর হয়েছে জেনে ফলটল নিয়ে দেখতে যাই। দেখি, তক্তপোশের ওপর সাজানো নানা রকম অস্ত্র। খানকতক রিভলভার, পাইপগান, ছুরি। দেখেই বোঝা যায়, চোরাই অস্ত্র সব। তারকমাস্টার মুখ তুলে দরজার দিকে তাকালেন। সম্ভবত আমার পায়ের আওয়াজ পেয়েছিলেন। তার পর দ্রুত হাতে একটা বাক্সে অস্ত্রগুলো ঢোকাতে থাকেন।’‌’

কাউকে না জানিয়ে শিবনাথ এসেছে কলকাতায়। নিজের এলাকায় চিকিৎসা করাতে গেলে জানাজানি হয়ে যেতে পারে, তাই দূরে আসা। স্নেহাকেও বলেনি। বেচারি ভয় পাবে। কাউকে যদি মুখ ফসকে বলে ফেলে সেটাও বিপদ। বলেছে, অফিসের কাজ নিয়ে কলকাতায় হেড-অফিস যাচ্ছে। ফিরতে দু’দিন লাগবে।

এই ডাক্তারবাবু মাথার চিকিৎসা করেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট এক দিনেই হয়ে গেল। মন দিয়ে এক বার সব শুনেছেন। আবার শুনতে চাইলেন।

ডাক্তারবাবু বললেন, ‘‌‘দ্বিতীয় ঘটনাটা ঠিক কী যেন ছিল?‌’‌’

শিবনাথ গলা আরও নামিয়ে বলল, ‘‘‌সেটা হল অফিসে। বড়সাহেবের ঘরের সামনে। দেখলাম, আমাদের এক সাপ্লায়ারের হাত থেকে উনি নোটের বান্ডিল নিচ্ছেন। ছিছি। যে মানুষটা অফিসে এসে ঘুষের কারবার বন্ধ করে দিয়েছেন, তাকেই লুকিয়ে ঘুষ নিতে দেখলাম!‌ ডাক্তারবাবু, নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে আমার।’’

ডাক্তারবাবু আরও শান্ত ভাবে বললেন, ‘‘‌আর তিন নম্বর?‌’‌’

শিবনাথ একটু চুপ থেকে বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘‘‌পঞ্চানন নায়েকের পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। দেখলাম, এলাকার সবচেয়ে বড় গুন্ডা, দু’টো খুনের আসামি মানুর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছেন উনি। কথা বলতে বলতে সামনে রাখা প্লেট থেকে একটা সন্দেশ তুলে তার মুখে পর্যন্ত পুরে দিলেন। তার পর পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দিলেন।’’

এ বার প্রায় কেঁদে ফেলল, শিবনাথ, ‘‘‌ডাক্তারবাবু, এ সব আমার কী হচ্ছে?‌ আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?‌ দয়া করে আমাকে ভাল করে দিন। আমার ভয় করছে। দুনিয়ার সব ভালমানুষকে আমি এই ভাবে.‌.‌.‌ উফ্‌!‌’‌’ শিবনাথ দু’‌হাতে মুখ ঢাকল।‌

‌ডাক্তারবাবু একটু চুপ করে ভাবলেন। বললেন, ‘‘‌শিবনাথবাবু, আমি ইচ্ছে করেই ঘটনাগুলো দ্বিতীয় বার শুনলাম। এই তিনটি ঘটনা যখন ঘটে, আপনি তখন কোথায় ছিলেন?‌ ঘরের ভিতরে?‌’’

‘‌‘না ডাক্তারবাবু। ঘরের বাইরে। বন্ধ দরজার সামনে।’‌’

ডাক্তারবাবু মৃদু হেসে বললেন, ‘‘‌বন্ধ দরজার ভিতরে কী ঘটছে, তা কি কখনও দেখা যায় ‌‌শিবনাথবাবু?‌ যায় না। সেই কারণেই তো মানু্ষ দরজার বাইরে এক রকম, ভিতরে আলাদা। যাতে কেউ দেখতে না পায়। আপনিও দেখতে পাননি। ও সব আপনার মনের ভুল। আপনি অতিরিক্ত ভালমানুষ বলেই এই ভুল আপনার হয়েছে। আপনি নিজে ভাবছেন, বন্ধ দরজার ভিতরে কী ঘটে, তা দেখতে পাওয়ার কোনও ক্ষমতা আপনি অর্জন করেছেন। যে ক্ষমতা খুবই কষ্টকর। ক্ষমতাটা সত্যি নয়, কিন্তু কষ্টটা সত্যি।’‌’

শিবনাথ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ডাক্তারবাবুর দিকে। তিনি সুন্দর করে হাসলেন। বললেন, ‘‘‌‌এই কষ্ট থেকে বেরনোর পথ আপনাকেই বের করতে হবে ‌‌শিবনাথবাবু। এর কোনও ওষুধ নেই। চিন্তা করবেন না, আমার বিশ্বাস, বহু মানুষের মতো আপনিও পথ খুঁজে পাবেন। আমি শুধু আপনাকে একটা হালকা ঘুমের ওষুধ লিখে দিচ্ছি।’’

রাত দশটার একটু পরে বাড়ির সামনে এসে থমকে দঁাড়াল শিবনাথ। ট্রেন এক ঘণ্টা লেট করেছে। সে কলকাতায় থেকে যায়নি। বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরেছে বিকেলেই। সবটা ভাল করে না বুঝলেও ডাক্তারবাবুর কথায় তার মন হালকা হয়েছে। নিজেই পথ পাওয়ার বিষয়টা একটু ধঁাধার মতো বটে, কিন্তু শুনতে খুব একটা মন্দ নয়।

শিবনাথ গেট খুলে বাগানে ঢুকল। স্নেহা যেমন চমকে যাবে, তেমন খুশিও হবে। সেই কারণেই স্নেহাকে ফোন করে ফেরার কথা জানায়নি। ভালবাসার মানু্ষকে চমকে দিতে ভাল লাগে।

ঘরে আলো জ্বলছে। শিবনাথ বন্ধ দরজার সামনে দঁাড়াল, আর তখনই নিজের ঘরটাকেই দেখতে পেল ছবির মতো!‌ এমনকী শুনতেও পেল, অচেনা এক যুবকের কঁাধে মাথা রেখে স্নেহা হাসছে।

‘‌‘জানো, ওকে বলেছি, মোবাইলটা দিয়েছে আমার এক দাদা। ও বিশ্বাস করেছে। এই তুমি এ বার আমাকে সোনার দুল দেবে। দেবে তো?‌ ‘হ্যঁা’ বললে আলো নেভাব। নইলে না।‌’‌’

 

*****

অফিসে ‘‌চচ্চড়ি ফাইল’-‌এর ‘‌স্বাদ’‌‌ বাড়ানোর‌ দায়িত্ব শিবনাথ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে। বড়সাহেব থেকে শুরু করে প্রশান্ত, দেবরঞ্জন, বিদ্যুৎ— সকলেই ভাগ-বাঁটোয়ারায় খুশি। রাঁধুনি হিসেবে ‘‌সৎনাথ’ যে এত পটু, কে জানত!‌ শিবনাথও নিজে কি ছাই জানত?‌ পরশু স্নেহাকে সোনার দুল কিনে দিয়েছে।

শিবনাথ এখন আর বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়ালে ভিতরের কিছু দেখতে পায় না। কষ্ট থেকে বেরনোর পথ নিজেই বের করে নিয়েছে।

যদিও এখন তার অন্য কষ্ট শুরু হয়েছে। নিজেকে ঘেন্না করার কষ্ট। সে কষ্টের কথা কাউকে বলা যায় না।