Abosar

প্রতিবিম্ব

ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়

চারু তাড়াতাড়ি বাসনগুলো মেজে জল ঝরতে দিয়ে ঝাঁটা হাতে সুমিতার বেডরুম ঝাঁট দিতে শুরু করল। সুমিতা স্নান সেরে বেরিয়ে চারুর সঙ্গে প্রায় ধাক্কা খেতে খেতে বাঁচল। ‘‘আজ আবার তাড়া কিসের? রোজই কিছু না কিছু লেগে আছে।’’ বলল সুমিতা।

‘‘বরকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেচে বৌদি, শাশুড়ি ফোন করেচিল।’’

‘‘মদ খেয়ে মারপিট করবে আর ধরবে না! এই নিয়ে অনেক বার তো হল... এ বার তোর শাশুড়িকে বল ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে।’’

‘‘তাই যদি হত বৌদি... এ দিকে সারা ক্ষণ তো আমায় দোষ দেয়, আমার জন্যই নাকি ও মদ গিলে
পড়ে থাকে।’’

‘‘বর তো তোর টাকায় বসে খায় আর তোকেই মারধর করে। এ বার ওকে ছাড়।’’

‘‘মনের কথা বলেছ। এখন তো অন্য মেয়ের দিকেও ঝুঁকেছে। রোজই ভাবি, দেব এ বার ছেড়ে শালাকে।’’

‘‘এই... মুখ খারাপ করবি না, তিন্নি আছে না?’’ সুমিতার কথা শুনে জিভ কাটল চারু। কাজ শেষ করে লিফ্‌টে করে নেমে ঝড়ের বেগে পিউয়ের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। পিউ এক মিনিট থমকে দেখে লিফ্‌টে উঠে বোতাম টিপল। পিউয়ের সঙ্গে রোহিত হাতে সুটকেস নিয়ে লিফ্‌টের ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘চারু না ওটা? দুলটা চুরি করল কিন্তু তাও তুমি কোনও স্টেপ নিলে না।’’

পিউ ঠান্ডা গলায় বলে, ‘‘এ বার ভাবছি সিসি ক্যামেরা বসাব, চোর ডাকাত সবই ধরতে হবে।’’ দশতলায় নেমে ফ্ল্যাটে ঢুকতে যাবে, তখনই পাশের ফ্ল্যাটের আভা বেরিয়ে এল, ‘‘পিউ তোমরা ছিলে না, তখন এই চিঠিগুলো এসেছে। ধরো।’’ চিঠিগুলো হাতে ধরিয়েই দরজা বন্ধ করে আভা গজগজ করে, ‘‘এ সব হ্যাপা আর ভাল লাগে না। আজকালকার ছেলে মেয়ে এই শুনি আলাদা এই আবার একসঙ্গে... তবে বরটা পাজি। চোখ-মুখ দেখলেই বোঝা যায়।’’ কথা বলতে বলতে স্বামীর ছবির সামনে এসে দাঁড়ায় আভা, ‘‘কি গো ঠিক বলিনি? দেখেছ আজ আবার চারু ডুব মারল। এ বার আমি ওকে ছাড়াবই।’’

******

‘‘মাথাখানা ঠান্ডা করো এ বার, আমি বারবার পারবনি থানায় যেতে,’’ চারু রাতের খাবার শেষ করে বাসন গোছাতে লাগল, ‘‘এক পয়সা সংসারে দাও না। লোকের টাকায় মদ গেলো কেন? আর পারচিনে...’’

‘‘তা গিলবে না, বিয়ের এত বচরেও একটা ছেলে দিতে পারলিনে, বংশ নিব্বংশ হল তোর জন্য। কী মরতে যে রাখাল তোকে বে করল। একটা হাবা মেয়েকে জন্ম দিলি মুখপুড়ি,’’ সরলা চিৎকার করতে থাকে। চারু সে দিকে মন না দিয়ে বাসন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

******

পিউ কানে ফোন নিয়ে টিভির সাউন্ড কমিয়ে চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে হুঁ-হা করতে থাকে। ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, যে ফোন করেছে তার কোনও কথাই শুনছে না পিউ। রোহিত পিউয়ের কান থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দেয়। ‘‘কথা বলতে এত বিরক্তি তো বলো কেন? শাশুড়ির সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে হয়, বাপের বাড়ি থেকে শেখায়নি?’’

‘‘তোমার মাকেও তো তার বাপের বাড়ি থেকে শেখায়নি যে বাচ্চা না হলে শুধু বৌকে দোষারোপ করতে নেই, গলতি ছেলের মধ্যেও থাকতে পারে।’’

কথাটা শুনে রোহিত রিমোট ছুড়ে মারে পিউকে। পিউ আর্তনাদ করে কপাল চেপে ধরে।

পার্ক টাওয়ার্স আবাসনের ভিতরে আছে সুইমিং পুল, জিম, বাচ্চাদের খেলার জায়গা। সুমিতা রোজ বিকেলে তিন্নিকে নিয়ে নামে ঘণ্টাখানেকের জন্য। আজও তাই। নেমেই তিন্নি হাত ছাড়িয়ে স্লিপের দিকে এগিয়ে যায়। সুমিতা খপ করে তিন্নির হাত ধরে ফেলে, ‘‘বল স্লিপ ডাউন। বল... স্লিপ ডাউন।’’

তিন্নি হাত ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতে কাঁদে। কিছু বলে যার কোনও মানে নেই। মায়েরা গা ঠেলাঠেলি করে মুচকি হাসে। এক জন বলল,  ‘‘এই শুরু হল।’’

‘‘এবিসিডি বলতে পারে না বেচারা সে কিনা স্লিপ ডাউন বলবে।’’

তিন্নিকে খেলতে পাঠিয়ে সুমিতা দলের মধ্যে এসে বসে। বাকিরা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেও রীতা পারে না। ‘‘সুমিতা, তুমি অন্যায় করছ তিন্নির সঙ্গে, ওকে এই ভাবে...’’

‘‘ডাক্তার বলেছে বলেই শোনাচ্ছি।’’

‘‘কিছু বাচ্চা থাকে যাদের কথা বলতে সময় লাগে, তুমি যদি সারা ক্ষণ ওকে কথা বলানোর জন্য চাপাচাপি করো, ফল উল্টো হতে পারে।’’

‘‘না রীতা, তিন্নি বলছে কথা...’’

‘‘বলছে না। তুমি যতই বলো ও স্লিপ ডাউন বলেনি।’’

সুমিতা বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘কী আশ্চর্য আমি কি মিথ্যে বলছি?’’

‘‘সুমিতা, আমার ছেলেও চার বছরে কথা বলতে শুরু করেছিল।’’

‘‘আমার মেয়ে তোমার ছেলের মতো নয়।’’

‘‘ইউ আর মেকিং আ ফুল অব ইয়োরসেল্ফ সুমিতা।’’

সুমিতা উঠে পড়ে, ‘‘না, তোমাদের সঙ্গে আর বসা যাবে না। আমি অনেক দিন ধরে লক্ষ করছি, তোমরা আমার মেয়েকে নিয়ে হাসাহাসি করো।’’

‘‘মেয়ে নয়, তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে সবাই। তুমি পাগলামি করছ।’’

সুমিতা তিন্নিকে টানতে টানতে বাড়ি ঢোকে। ‘‘সারা দিন হাবিজাবি কী সব কথা বলিস, পরিষ্কার করে একটা কথাও বলতে পারিস না? কেন? কেন?’’

সুমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে পাশের ঘর থেকে আলোক ছুটে এসে বলে,  ‘‘সুমিতা, তিন্নিকে দয়া করে একটু রেহাই দাও। ওর যখন কথা বলার তখন বলবে।’’

‘‘না।’’ চিৎকার করে ওঠে সুমিতা, ‘‘ওকে আজই বলতে হবে। এই আমার দিকে তাকা।  বল ‘মা’ বল। তোর জন্য আমায় সবাই পাগল ভাবে, হাসে... আজ বলতেই হবে... বল ‘মা’ বল।’’ উত্তেজিত হয়ে তিন্নির গালে একটা চড় মারে সুমিতা।

******

চারু ময়নাকে নিজের দু’পায়ের মধ্যে বসায়, ‘‘এক বার ‘মা’ বলে ডাক না আমায়। বল ‘মা’ বল।’’ ময়না একমুখ হাসি নিয়ে চারুর দিকে তাকায়। চারু ময়নাকে জড়িয়ে ধরে, ‘‘আমি না থাকলি তোর কী হবে রে সোনা?’’

ময়না কিছু বোঝে কি না বোঝা যায় না। শুধু চারুর গলাটা আরও জোরে জড়িয়ে ধরে।

******

তিন্নিকে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে আলোক সুমিতার সামনে এসে দাঁড়াল। ‘‘কাল থেকে তিন্নির সব দায়িত্ব আমার।’’

সুমিতা অবাক হয়ে তাকায়।

‘‘তোমায় যদি তিন্নির ধারেকাছেও দেখি তা হলে আমি মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাব।’’

সুমিতা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, আলোক মুখের উপর দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।

******

আভা আইহোলে চোখ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ‘‘এই আবার। পিউ নেই, অন্য একটা মেয়ে নিয়ে বরটা ঢুকছে। কী করব? পিউকে বলে দেব এ বার? যতই হোক এ তো ধোঁকা। লাস্ট উইকে একটা অন্য মেয়ে নিয়ে এল।’’ কথাটা বলতে বলতে আভা ছুটে চলে যায় বরের ছবির কাছে, ‘‘কি গো বলব? কী বললে? বলব না? উফ তোমার সেই এক কথা, অন্যের বিষয়ে মাথা ঘামিও না। কেন ঘামাব না? একটা মেয়েকে দিনের পর দিন ঠকাচ্ছে, আমি জীবনে কাউকে ঠকিয়েছি বলো?’’ বলেই আভা চুপ করে যায়, চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে, ‘‘ঠকিয়েছি। অনেক বার। তুমি জানতেও পারোনি। যত বার বলতে একটা বাচ্চা এলে ভাল হয়, তত বার আমি ওষুধ খেয়ে নিয়েছি। বলেছি তোমার মধ্যে গন্ডগোল তাই বাচ্চা হয় না। তুমি বিশ্বাস করে টাকা রাখতে দিতে। আমি তার থেকে সরিয়ে দিয়ে বলতাম তুমি কম দিয়েছিলে।’’

আভা ছবির সামনে থেকে সরে আসে। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে ধপ করে বসে, ‘‘লোকের সামনে বেঁটে বর বলে ঠাট্টা করেছি। বলেছি আমার পাশে দাঁড়াবার যোগ্যতা নেই। তার শাস্তি পাচ্ছি এখন। এই ১৪০০ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটে ভূতের মতো বসে আছি। যে সব বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকতাম তারা সবাই আমায় তোল্লাই দিয়ে এক সময় কেটে পড়েছে।’’ আভা ধীর পায়ে ছবির সামনে গিয়ে দাড়ায়, ‘‘এখন সারা দিনে ফোনটাও এক বার বাজে না। আমার বেঁচে থাকার কোনও উদ্দেশ্য নেই। পাঁচ বছর অনেক শাস্তি পেলাম, চোখের জলও শুকিয়ে গেছে।  এ বার ডেকে নাও, প্লিজ।’’ আভা বেডরুমের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

******

রাখাল পায়রাকে নিয়ে ঘরে ঢোকে, ‘‘আজ জলদি পালিয়ে যাবার ধান্দা করলে মেরে পা ভেঙে দেব।’’

পায়রা রাখালের গলা জড়িয়ে ধরে, ‘‘বৌটাকে বিদায় করো মেয়ে সমেত। তাইলে সারা জেবন থাকব।’’

রাখাল গ্লাসে মদ ঢালে, ‘‘ওকে তো বেদায় করব খুব তাড়াতাড়ি, তার পর তোকে...’’

‘‘ধুর তোর এ সব বুকনি জানা আছে। কোনও দম নেই তোর ভেতর।’’

রাখাল আগুনচোখে তাকায়। এক চুমুকে গ্লাসটা শেষ করে, ‘‘মাথা গরম করাস নে পায়রা। অপেক্ষা করছি ওর কী এলআইসি না কী একটা পাবে তার জন্য। টাকাটা পেলেই দুজনে মিলে লাথি কশাব।’’

‘‘দূর বোকা, তার চেয়ে আমার বুদ্দি নে...’’ পায়রা রাখালের গলা জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু বলে। রাখালের চোখ চকচক করে ওঠে।

চারু আভার বাড়ি কাজ শেষ করে বেরোতে যাবে, হঠাৎ মনে হল মাসিমা আজ সকাল থেকে চুপচাপ, কোনও কথাই বলছে না। বেডরুমে উঁকি মেরে দেখে, আভা চোখ বুজে শুয়ে আছে। ‘‘ও মাসিমা। শরিল খারাব না কি গো?’’

আভা মাথা নাড়ে।

‘‘রোজ এত কথা বলো, আজ কী হল?’’

‘‘কিছু না। তুই যা।’’

‘‘হুঁ, যাই লোকের বাড়ির কাজ শেষ করে এ বার নিজের বাড়িরটা শুরু করি। জানো মাসিমা, আমার এলআইসির টাকাটা ভেঙে গেছে, এ বার মেয়েকে ভাল ডাক্তার দেখাব।’’

আভা তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে, ‘‘টাকাটা কোথায় রেখেছিস?’’

‘‘বাড়িতে... এমন একটা জাগায় আচে কেউ পাবে না।’’

‘‘তোকে বিশ্বাস নেই... তুই আমার কাছে রাখ।’’

******

‘‘নে নে জলদি কর, মুখপুড়ি কাজ থেকে ফিরল বলে,’’ সরলা এ দিক-ও দিক দেখে বলে, ‘‘পায়রা তুই রাখালকে নিয়ে পালা, আমি অন্য রাস্তা দিয়ে বেরোচ্ছি।’’

পায়রা রাখালের হাত ধরে এগোতে যাবে, সামনে ময়না। ওদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, ‘‘এই যাহ্‌! বেড়াল রাস্তা কাটল রে।’’

রাখাল ময়নার হাত ধরে সরিয়ে দেয়, ‘‘ভাগ এখেন থেকে... এই দেখ তোর মায়ের টাকা নিয়ে পালাচ্ছি... তুই তো আবার বলতেও পারবিনে,’’ রাখাল আর পায়রা হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়। সরলা এগোতে যাবে, ময়না ওর আঁচল টেনে ধরে। সরলা এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

******

রোহিত এক মুহূর্ত দেরি করে না। পিউ বাথরুমে ঢুকতেই ডুপ্লিকেট চাবি বার করে পিউয়ের লকার খোলে, ‘‘নতুন হার তো তোমায় দিতে পারব না সোনা... এই পুরনো গয়না দিয়েই কাজ চালাও।’’ কথাটা বলতে বলতে  হারটা পকেটে ঢুকিয়ে লকার বন্ধ করে রোহিত হেঁকে বলে, ‘‘বেরোলাম, ফিরতে রাত হবে।’’ ঠিক তখনই পিউ বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে মোবাইলে ডায়াল করে, ‘‘পিউ দত্ত রায় বলছি। প্রমাণ আছে হাতে। হ্যাঁ সিসি ক্যামেরায় সব ধরা পড়েছে।’’

******

চারু ঘর থেকে হাতে কাটারি নিয়ে বেরিয়ে আসে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। এ দিক-ও দিক দেখে নিয়ে কোমরে আঁচলটা গুঁজে দৌড়োয়, ‘‘আজ তোর এক দিন কি আমার এক দিন রাখাল হালদার...’’ আশেপাশের ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে আসে। চারুর রুদ্রমূর্তি দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। ময়না কিছু না বুঝে মায়ের পিছনে দৌড়োতে থাকে। বড় রাস্তায় ভুতোর সঙ্গে ধাক্কা খায় চারু। ভুতোর গলায় কাটারি ঠেকিয়ে বলে, ‘‘বল, বল রাখাল আর পায়রা কোথায় গেছে নইলে এক কোপে নামিয়ে দেব।’’

******

বেলের শব্দে পিউ দরজা খুলে দেখে, আভা। ‘‘পিউ, হেল্প করবে প্লিজ!’’

‘‘কী হয়েছে আভা আন্টি?’’

‘‘চারু ওর বরকে কুপিয়েছে, চারুকে থানায় নিয়ে গেছে। এক বার আমার সঙ্গে যাবে?’’

******

সুমিতা আস্তে দরজা ঠেলে দেখে, তিন্নি আলোকের পিঠে চেপে ঘোড়া-ঘোড়া খেলছে। আলোক এক সময় ওকে পিঠ থেকে খাটে ফেলে চট করে কোলে তুলে নেয়। তিন্নি বাবার গলা জড়িয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। আলোকও হেসে বলে, ‘‘তিন্নি মা এখন কার কোলে?’’ তিন্নি জড়ানো উচ্চারণে বাবা বলার চেষ্টা করে। আলোক থমকে যায়, ‘‘কী বললি?’’ তিন্নির মুখটা শুকিয়ে যায়। সেটা লক্ষ করে আলোক তিন্নিকে বুকে জড়িয়ে ধরে, ‘‘না মা আর বলতে হবে না। কোনও জোর নেই তোমার উপর। আবার যখন ইচ্ছে হবে বলো।’’ তিন্নি আলোকের গলা দু’হাতে জড়িয়ে গালে আলতো করে চুমু খায়। সুমিতা দরজাটা ভেজিয়ে ছুটে বারান্দায় আসে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।

******

চারু চুপ করে বসে আছে, সামনে অফিসার। আভা পিউয়ের দিকে তাকায়, পিউ বলে, ‘‘স্যর আপনি তো সবটা শুনলেন।’’

 ‘‘কিন্তু রাখালের অবস্থা ভাল নয়। যদি এ দিক-ও দিক কিছু হয়ে যায়, তা হলে চারুকে বাঁচানো মুশকিল।’’

‘‘আমার যা হয় হোক, ময়নার যে কী হবে! হাবা মেয়ে আমার কথা কইতে পারেনে, কে দেখবে বলো দেখি...’’ চারু ডুকরে কেঁদে ওঠে।

আভা ময়নাকে ঘুম পাড়িয়ে স্বামীর ছবির সামনে এসে দাঁড়ায়, ‘‘এখন আমার অনেক কাজ বুঝলে? সেগুলো সারার আগে তোমার কাছে যেতে পারব না, দুম করে আবার ডেকে নিও না।’’