Abosar

পরীক্ষিত সত্য

বিতান সিকদার

চাকরিপ্রার্থীর লিখিত উত্তরপত্রটা কিছু ক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে ভুরুদুটো কুঁচকে গেল সম্পাদক অলকেশ তালুকদারের। এদের ভাষাজ্ঞান দূরে থাক, সামান্য ব্যাকরণটুকু পর্যন্ত…

ছেলেটা তাঁর কেবিনের বাইরে নিউজ় রুমের চেয়ারে জড়সড় হয়ে বসে আছে। মৌখিক ইন্টারভিউটাও নেবেন ভেবেছিলেন অলকেশ। কিন্তু রিট্ন-এই যখন এই হাল, তখন…

প্রাচীনপন্থী অলকেশ গুগল খুলে রেখে কম্পিউটারে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া পছন্দ করেন না। “আহা, যুগ পাল্টেছে। কাজ তো করবে ওই গুপিযন্ত্রে বসেই আর সেই গুগল চালিয়েই। তা হলে আর…” এমন কথা উঠলে তিনি বরাবর বলে এসেছেন, “না না, ওটা কোনও কথা নয়। বানানটাও ঠিকমতো শিখেছে কি না, অন্তত সেটা তো দেখতে হবে…”

বিরক্তি চেপে বসে অলকেশের মনে। চতুর্দিকে সাংবাদিক হওয়ার হিড়িক। সব তাবড় তাবড় রেজ়াল্ট করে সটান চলে আসছে। অথচ লিখতে দাও এক পাতা… লবডঙ্কা!

বহু বছর ধরে এই খবরের কাগজে সাংবাদিক নিয়োগের সম্পূর্ণ ভার নিজের হাতে ধরে রেখেছেন অলকেশ। তাঁরই নিয়োগ অপূর্ব সমাদ্দার, নয়নতারা সেন, মিথিলা চ্যাটার্জি, শমীক সরকার ও আরও অনেকে, যারা সংবাদপত্রের জগতে আজ এক-একটা নাম। এমনকি কাল থেকে যার হাতে এই সংবাদপত্রের সম্পাদনার ভার ন্যস্ত হবে, সেই কুবলয় সোমও তাঁরই হাতে গড়া।

উত্তরপত্রটা বিরক্তিভরে এক পাশে সরিয়ে রাখেন অলকেশ। তার পর ছেলেটিকে ইশারায় ডেকে বলেন, “সামনের সপ্তাহে এইচ আর-কে ফোন করে জেনে নেবেন।”

শেষ দিনে আর কাউকে রিক্রুট করা গেল না। যাকগে, আজকের দিনে আর কারও ওপর রাগ করে থাকতে চান না তিনি।

আজ অলকেশ তালুকদার রিটায়ার করছেন।

অফিসে বিষাদ-মেদুর পরিস্থিতি। সম্পাদকের ঘরে বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে লোক আসা— কেউ ফুল, কেউ মিষ্টি, কেউ বা কার্ড নিয়ে…

হাউসকিপিং-এর সুজন কেবিন ঝাড়পোঁছে ব্যস্ত। সাহেবের বই, দরকারি ফাইল, কাগজপত্র, মেমেন্টো— সমস্ত জরুরি জিনিস তাঁর বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা 

করতে হচ্ছে।

“আমায় না দেখিয়ে কোনও কাগজ ফেলে দিয়ো না যেন…” বলার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও এখানে-ওখানে হাত লাগান অলকেশ। এই টেবিলের নীচের তাক, সেই বইয়ের ভেতর, ওই শেল্‌ফ থেকে কত পুরনো পুরনো কাগজ যে বেরোচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই। গাদাগুচ্ছের বাতিল হওয়া ডামি শিট, চার্ট পেপার, ম্যাপ, গ্রাফিক্স-এর খসড়া, আবেদনপত্র, অদরকারি লেসার… এমনকি চার বছর আগে পাওয়া চেম্বার অব কমার্সের আমন্ত্রণপত্রটা পর্যন্ত ফেলা হয়নি।

সামাজিকতা রক্ষার সঙ্গে তাই সময় কাটাতে সুজনকে একটু-আধটু সাহায্য করছিলেন অলকেশ। এরই মাঝে মাঝে লোকের আনাগোনা। বিজ়নেস হেড প্রান্তিকা বোস তো ঘরে ঢুকে বলেই বসল, “বস, একটা এক্সটেনশন কিন্তু নিতেই পারতেন।”

অলকেশ তখন কিছু বিদেশি বই সরিয়ে রাখছিলেন। প্রান্তিকার কথার উত্তরে প্রথমে একটু হেসে, তার পর একটা কপট রাগ দেখিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন, “তা হলে আর এত দিনে তোমাদের শেখালাম কী? এখনও বুড়োটাকে খাটাতে চাও?”

সম্পাদকমশাই কথা বলতে বলতেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে কাগজপত্র ঘেঁটে চলেছেন।

স্পেশ্যাল করেসপন্ডেন্ট ত্রিদিব দত্ত সাতটা নাগাদ দু’কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। তার পর একটা কাগজের কাপ অলকেশের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন, “রাত আটটার ফাইনাল মিটিং-এর আড্ডাটা তো আর হবে না। তাই ভাবলাম, চা-টা এখনই খেয়ে নিই।”

আর ঠিক এই সময়টাতেই…

অলকেশ একটু অন্যমনস্ক। অন্যান্য দিন হলে গম্ভীর ভাবে শুধু এক বার ‘একটু বিজ়ি আছি’ বলে দিতেন। তাতেই যে যা বোঝার বুঝে নিত। তবে, আজ দিনটা অন্য রকম। ফলে ত্রিদিবকে তেমন কিছু না বলতে পারলেও ভেতরের চাপা একটা অস্বস্তি বোধহয় প্রকাশ পেয়েই গেল। ত্রিদিবই জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার, অল ওকে?”

যেন সংবিৎ ফেরে অলকেশের। একটু হেসে বৃথা একটা অভিনয় করবার চেষ্টা করেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ। একদম! তার পর?”

ত্রিদিব কয়েকটা সাধারণ কথাবার্তা বলে তাঁকে ‘বেস্ট উইশেস’ জানিয়ে করমর্দন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। অলকেশ বসে থাকেন কয়েকটা কাগজ হাতে নিয়ে। বছর পনেরো আগের হাতে লেখা হলদেটে হয়ে যাওয়া কাগজ। বেরিয়ে এসেছে সেগুলো, অনেক কাগজপত্রের তলা থেকে, অনেক স্মৃতির আগল ঠেলে।

কিছু ক্ষণ এক মনে তাকিয়ে থাকেন সেগুলোর দিকে। চিন্তাটাকে গোছাতে যেন একটু অসুবিধে হচ্ছে তাঁর। ঠিক সেই সময়ই তিনি কেবিনের বাইরে কুবলয়ের গলার আওয়াজ পান। ডেপুটি নিউজ় এডিটর পারমিতা দত্তকে কয়েকটা ইনস্ট্রাকশন দিতে দিতে এই কেবিনের দিকেই এগিয়ে আসছে। চিফ সাব সব্যসাচী ঘোষাল, যে কিনা কুবলয়ের পেছন পেছন আসছিল, তাকে যেন একটু ধমকের সুরেই বলে ওঠে ভাবী সম্পাদক, “আশ্চর্য! নিজের রিপোর্টারকে বাদ দিয়ে এজেন্সির ওপর ভরসা করে বসে আছ? এ কী কথা!” তার পর দরজার নব 

ঘুরিয়ে শরীরের ওপরের অংশটা সম্পাদকের কেবিনে ঢুকিয়ে টেবিলের ও দিকে বসে থাকা অলকেশের দিকে তাকায় কুবলয়। হেসে জানতে চায়, “বস, রেডি?”

অলকেশ কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকেন কুবলয়ের দিকে। তার পর একটু হেসে হাতে ধরে থাকা হলদেটে কাগজগুলো ভাঁজ করে কোটের পকেটে ঢুকিয়ে নেন।

আজ রাতে ডিনারের আয়োজন এক পাঁচতারা হোটেলে। কুবলয় নিজে তার মেন্টরকে ড্রাইভ করে নিয়ে এসেছে।

অলকেশের গাড়ি এখন শুধু অফিস আর বাড়ি করতে ব্যস্ত। খেপে খেপে সাহেবের সমস্ত জিনিসপত্র বাড়িতে রেখে আসতে হচ্ছে। ড্রাইভার সুরেশকে বলা আছে, সব হয়ে গেলে যেন গাড়ি নিয়ে এই হোটেলে চলে আসে।

দিনের শুরু থেকেই পুরো এডিটোরিয়াল টিম অলকেশকে কোনও কাজ করতে দেয়নি। ভাবী সম্পাদকের অর্ডার ছিল, “আজ আর বসের ওপর কোনও খবর চাপিয়ো না। অন্তত একটা দিন ওঁকে একটু রিল্যাক্স করতে দাও।”

অলকেশও আর নিউজ়ের মধ্যে ঢোকেননি। সন্ধের পূর্বভাগটা মোটামুটি সামাজিকতার মধ্যে দিয়েই কেটেছে। শুধু অফিস থেকে বেরোবার আগে এক বার পেজ ওয়ানের লাইন-আপটা এক ঝলক দেখে নিয়েছিলেন। এত বছরের অভ্যেস তো…

এই ডিনারের আয়োজনও এডিটোরিয়াল থেকে করা। তবে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকেও লোকজনের উপস্থিতি দেখার মতো। আর সেটা হওয়ারই ছিল। অলকেশ তালুকদার সাংবাদিকতার জগতে এক কিংবদন্তি। তাঁর সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে শোনা যায়, “এ টি? ও কি মানুষ না কি? আমার-আপনার মতো দেখতে, এই মাত্র। আসলে তো ফেনোমেনন!”

সরকারি তরফ থেকেও নির্দিষ্ট কিছু হাই-প্রোফাইল লোকজন এসেছেন। স্বাভাবিক! অনেকেরই স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ার দিন আজ। প্রখ্যাত ইংরেজি সংবাদপত্রের ক্ষুরধার দৃষ্টির আঁচ বোধহয় অনেকটাই কম হল। অবশ্য সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ভাবী সম্পাদক কী ভাবে দায়িত্ব সামলাবেন তার ওপর।

বলতে নেই, কিছু অধস্তন কর্মচারীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। পেজের ফাইনাল প্রিন্ট-আউট দেখাতে গিয়ে রাত সাড়ে দশটার সময় আর ঝাড় খেতে হবে না। যদিও প্রত্যেকেই মানে, ওই বকুনিগুলো না খেলে সাংবাদিকতার আসল মানেটা জানা যেত না।

খাওয়াদাওয়া চলছে। ধোপদুরস্ত সাদা পোশাক পরা কয়েকজন বেয়ারা খাবার আর পানীয়ের ট্রে নিয়ে হলের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। মিহি করে সেতার বাজছে। সাহেবের প্রিয় বলে বিলায়েত চালানো হয়েছে। বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। পুরোটা দেখাশোনা করছে কুবলয়।

ঠিক ন’টা নাগাদ পরিস্থিতিটা পাল্টাল। বিলায়েত তখন রাগেশ্রীতে ঝালা ধরেছেন।

কিছু একটা ঘটেছে। অলকেশ লক্ষ্য করলেন, কুবলয় একটা ফোন পেয়ে খানিক ‘হম্‌’ ‘হ্যাঁ’ করতে করতে গম্ভীর মুখে তফাতে সরে গেল। কিছু ক্ষণ পর ফিরে এল ফোনটা কাটতে কাটতে। একটা চাপা অস্থিরতা লক্ষ করছেন অলকেশ। হুইস্কির গ্লাসে একটা চুমুক মেরে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার? এভরিথিং অল রাইট?”

নিমেষে চাপা উত্তেজনার অভিব্যক্তিটা মুখ থেকে সরিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিল কুবলয়, “অ্যাবসোলিউটলি বস!”

অলকেশ আর ঘাঁটালেন না। সংবাদপত্রের বাইরের জগৎ থেকে যারা তাঁকে ‘সি-অফ’ করতে এসেছে, হাসিমুখে তাদের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন।

কিন্তু ঘটনা যে আদৌ ‘অ্যাবসোলিউটলি অল রাইট’ নয়, সেটা আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই অলকেশ তালুকদার বুঝতে পারলেন। তাঁর গাট ফিলিং বলছে, কিছু একটা ডেভলপমেন্ট হয়েছে। কোথাও কোনও ব্রেকিং নিশ্চয়ই। এটা বুঝতে পারার কারণ আর কিছুই নয়। অলকেশ বেশ ভাল করেই লক্ষ করলেন, এডিটোরিয়ালের যারা এখানে এসেছিলেন, তাদের প্রত্যেককেই কুবলয় সময় সময় চাপাস্বরে কী বেশ বলে চলেছে। তার ওপর ফোনটা প্রায় সারা ক্ষণই তার কানে ধরা, আর তাতে মৃদু স্বরে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া চলছে।

হলে হাঁটাচলার আর মৃদু কথাবার্তার মধ্যেই অলকেশ কয়েকটা শব্দবন্ধ শুনতে পান যেগুলো এত বছর ধরে তিনি বলে এবং শুনে অভ্যস্ত— ‘করেসপন্ডেন্টকে ধর’, ‘ব্রিফ পাঠিয়েছে’, ‘কোনও ক্যাজ়ুয়াল্টি’, ‘অপোজ়িশন নেমে পড়েছে’ ইত্যাদি।

এই মুহূর্তে নিজের ফোনে যে কোনও নিউজ় এজেন্সিতে লগ ইন করলেই ব্যাপারটা অলকেশের কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। একটা স্বভাবজাত উত্তেজনা চলেও এসেছিল। ফোনটা কোটের পকেট থেকে বারও করে ফেলেছিলেন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তেই একটা কথা যেন তাঁকে থামিয়ে দিল। তিনি শুনতে পেলেন কুবলয় কাউকে ফোনে বলছে, “জাস্ট কিপ ইয়োর কাম। হয়ে যাবে। এটা কোনও ব্যাপার নয়। আর আমি তো ফোনে আছিই।”

কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন অলকেশ। তাঁর হঠাৎই যেন মনে হল— কিসের চঞ্চলতা! আর কেন? ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, আজীবন তিনি একটা পদ সামলে চলবেন। কাল থেকে তো এমনিতেই তাঁকে কোনও মিটিং-এও আসতে হবে না, কোনও এডিটোরিয়াল ডিসিশনও নিতে হবে না আর এডিশন ওভারসি করার ভারও বইতে হবে না। তা হলে এ অস্থিরতা কেন? ওদেরকেও তো জায়গা ছেড়ে দিতে হবে, কাজ করতে দিতে হবে।

আর ব্যাপারটা এমনও তো নয় যে, তাঁর অনুপস্থিতিতে কুবলয় আগে কখনও একা এডিশন সামলায়নি। সামলেছে, এবং দক্ষতার সঙ্গেই উতরে গেছে প্রতি বার।

অজান্তেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে অলকেশের। তিনি দূর থেকে লক্ষ রেখে চলেন কুবলয়কে, বা বলা ভাল, ভাবী সম্পাদককে। ছেলেটার পরিস্থিতি সামলানর দক্ষতা আস্তে আস্তে আবারও মুগ্ধ করে তাঁকে। তবু… তবু নিজের প্রতি একটা প্রশ্ন মনের কোনও এক কোণে যেন থেকেই যায়। ঠিক হাতেই তিনি ভার দিয়ে যাচ্ছেন তো?

তবে, এ দ্বন্দ্বও বেশি ক্ষণ থাকে না। অলকেশ নিজেই নিজেকে বোঝান, তিলে তিলে এতগুলো বছর ধরে তিনি এই ছেলেটাকে তৈরি করেছেন। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে সে আজ পূর্ণ।

রাত বাড়ে। একে একে বিদায় নেয় অনেকেই।

কয়েকজনের সঙ্গে কুবলয়ও অলকেশকে গাড়িতে তুলে দিতে আসে। এত ক্ষণ কোনও একটা এমারজেন্সির মধ্যে যেন অতি সন্তর্পণে সে সামলে নিয়ে চলেছিল তাঁর মেন্টরকে— যেন বিন্দুমাত্র উত্তেজনার আঁচ তাঁর মনে এসে না ঠেকে। গাড়ির দরজাটা নিজের হাতে খুলে ধরে কুবলয় বলে, “প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমি কিন্তু হানা দেব।”

অলকেশ কিছু ক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে কী বেশ একটা ভাবেন। তার পর একটু হেসে গাড়িতে উঠে পড়েন। কিছু বলেন না।

যেন অপরিসীম বিশ্রামের একটা সকাল। অলকেশ তালুকদার তাঁর একুশ তলার ফ্ল্যাটের পূর্ব দিকের বারান্দায় এসে নরম সূর্যটার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকেন। তার পর ডাইনিং-এ এসে চায়ের কাপের সঙ্গে খবরের কাগজটাও তুলে নেন হাতে।

ভুল ভাবেননি তিনি। গতকাল সন্ধেয় অফিস থেকে বেরোবার সময় পেজ ওয়ানের যে লাইন-আপ তিনি দেখে এসেছিলেন, তার সঙ্গে এই প্রথম পাতার কোনও সম্পর্ক নেই।

পোড়খাওয়া সাংবাদিকের কাছে ঘটনা এখানে গৌণ— তা রাজনৈতিকও হতে পারে, অপরাধমূলকও হতে পারে, অর্থনৈতিক কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও হতে পারে বা সামাজিক কিছুও হতে পারে। এই মুহূর্তে অলকেশের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে 

সে ঘটনার বিবরণ। পরিপূর্ণ কভারেজ, রিপোর্টিং-এ দক্ষতার নিদর্শন, অনবদ্য ভিস্যুয়ালস আর অতুলনীয় শিরোনাম।

মোবাইলে কুবলয় সোমকে ধরেন অলকেশ তালুকদার। ও পাশ 

থেকে সেই পরিচিত গলার আওয়াজ, “মর্নিং স্যর!”

অলকেশ বলেন, “ভাল কথা, বলতে ভুলে গেছিলাম। গতকাল যার আনসার শিটটা আমায় দেখতে দিয়েছিলে, তাকে রিক্রুট করে নিয়ো।”

কথাটা বলে ফোনটা কেটে প্রসন্নমনে ধীর পায়ে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে যান অলকেশ। দরজাটা খুলে সামনেই ঝোলানো কালকের পরা কোটের পকেট থেকে সেই হলদেটে হয়ে যাওয়া কাগজগুলো বার করে আনেন। তার পর সেগুলো ছিঁড়ে ঘরের কোণে রাখা ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দেন।

অলকেশ ভাবেন, পনেরো বছর আগের চাকরির আবেদনকারী কুবলয় সোমের উত্তরপত্রটা গতকাল তাকে না দেখিয়ে তিনি ভালই করেছেন।

ওই একটা চাকরির পরীক্ষাই সাংবাদিকতার শেষ কথা নয়।