Abosar

নির্বাচন

বিপুল রায়

ভোটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নির্বাক বসে রইলেন শ্যামল দত্ত। এত চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ! ত্রিদিব মণ্ডল যে  কথা দিয়েছিলেন!

মাথার উপর পাখাটা আস্তে ঘুরছে। কাল রাতে খুব ঝড়জল হয়েছে। গুমোট উধাও। চার তলায় জানলার পাশে শ্যামলের বসার চেয়ার। ফুরফুরে হাওয়া আসছে।

আজ অফিস জমজমাট। এস্টাবলিশমেন্ট সেকশন থেকে হাসি, তামাশা, হা-হুতাশ ভেসে আসছে। শ্যামলের ঘর এখন ফাঁকা। তাঁর বাঁ পাশে বসেন সলিল সেন, ডান পাশে সামসুল হক। ওঁরা এখন বড়বাবুর ঘরে। সলিলের ভোটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আসেনি। সামসুলের এসেছে পোলিং অফিসার হিসেবে। কিন্তু শ্যামলের দায়িত্ব পড়েছে একেবারে প্রিসাইডিং অফিসারের।

ঘরে হাঁপাতে হাঁপাতে ঢুকলেন সামসুল। পাখার রেগুলেটর বাড়িয়ে দিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, ‘‘বেঁচে গিয়েছি। প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পড়েনি। পোলিং অফিসারের কাজ অনেক কম। প্রিসাইডিং অফিসারের ঘাড়ে চেপে ঠিকই ইলেকশন পার করে দেব। শ্যামল, শুনলাম তোকে না কি প্রিসাইডিং অফিসার করে দিয়েছে?’’

প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি না পড়ায় দৃশ্যতই পুলকিত সামসুল।

শ্যামল দত্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার খুললেন। প্রথম ট্রেনিং সামনের বুধবার। আজ শুক্রবার। হাতে মাত্র পাঁচ দিন।

অফিস ঘরের বাইরে এসে ফোন করলেন ত্রিদিব মণ্ডলকে। তিনি ধরলেন না। রিডায়াল করলেন। এ বার পরিসীমার বাইরে।

অফিসের কাজে মন বসল না শ্যামলবাবুর। মাথায় ঘুরছে ভোটের দায়িত্ব। এখন উপায়? ভোট করার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

গত ভোটে ফার্স্ট পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পড়েছিল। প্রথমে বাসে করে একটি গ্রাম, তারপর মোরামপথে এক কিলোমিটার হাঁটা। পরের দিন প্রথমে সুষ্ঠু ভাবেই ভোট শুরু হয়েছিল। ঠিক এগারোটার পর সাত-আট জন যুবক ঢুকে পড়ল বুথে। ব্যালট পেপার কেড়ে নিল। প্রিসাইডিং অফিসার মধুসূদনবাবু কাতর গলায় বলেছিলেন, “আপনারা ব্যালট পেপার ফিরিয়ে দিন। দয়া করে নিজেরা ছাপ মারবেন না।"

কে কার কথা শোনে! ওরা ব্যালট পেপারে ছাপ মেরে বাক্সে ফেলে দিয়ে চলে গেল। প্রিসাইডিং অফিসারকে শাসাল, “কোনও রকম খারাপ রিপোর্ট করবেন না। লিখবেন একেবারে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয়েছে।"

সেকেন্ড পোলিং অফিসার ব্যালট পেপার দিতে চায়নি। এক যুবক তার গালে সপাটে চড় কষিয়ে সব কেড়ে নিয়েছিল। পুলিশ ছিল ঠিকই, কিন্তু কার্যকালে কাউকে দেখা গেল না।

সেই ভয়াবহ স্মৃতি শ্যামলকে আজও তাড়া করে।

বাড়িতে ফিরে শ্যামলবাবু স্ত্রী সুচরিতাকে বললেন ভোটের ডিউটির কথা। সুচরিতার এক দূরসম্পর্কের মামা সুশান্ত দে ডি এম অফিসে চাকরি করেন। সুচরিতা দেবী শ্যামলবাবুকে এর আগে বেশ কয়েকবার ভোটের ডিউটি এড়ানোর জন্য মামার কাছে যেতে বলেছিলেন। শ্যামলবাবুর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ত্রিদিব মণ্ডল নিশ্চিত তাঁর ডিউটি যাতে না আসে সেই ব্যবস্থা করতে পারবেন।

সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে স্কুটারে চেপে সুচরিতা দেবীর মামার বাড়িতে হাজির হলেন শ্যামলবাবু। দুশো টাকার মিষ্টিও নিলেন।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের কপিটা হতে নিয়ে সুচরিতার মামা পিঠ
চুলকে বললেন, ‘‘আগে এলে সহজেই করা যেত। এখন কাটানো খুব কঠিন। তুমি ট্রেনিং নাও, আমিও চেষ্টা করছি।"

সুচরিতা দেবী মামার গা ঘেঁষে বসে বললেন, ‘‘মামা, এই তো দু’মাস আগে ওর বুকে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। হাই প্রেশার, তার সঙ্গে শুগার। এমন মানুষকে কেন ভোটের ডিউটি দেওয়া? তোমাকে ওর ডিউটি ক্যানসেলের ব্যবস্থা করতেই হবে।"

তেমন কোনও আশার কথা শোনালেন না সুচরিতার মামা। সারাটা রাত জেগে কাটালেন শ্যামলবাবু। পরের দিন অফিসে এসে একটা আবেদনপত্র লিখলেন। উনি যে অসুস্থ এবং মাত্র মাসদুয়েক আগে তাঁর বুকে স্টেন্ট বসেছে, সেই সব উল্লেখ করলেন। সঙ্গে দিলেন সব প্রেসক্রিপশন এবং শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট। নিজে জমা দিতে গেলেন ইলেকশন অফিসে।

সেখানে গিয়ে একবার অফিসের ঘরগুলো ঘুরে দেখলেন শ্যামলবাবু, যদি পরিচিত কারও দেখা মেলে।

দেখা পেলেন। তনয়া মিত্র। এত কাছের একজন রয়েছেন, তা হলে কি কিছু একটা সুরাহা হবে না?

প্রায় তিন দশক আগের কথা। এই মেয়েটির সঙ্গে শ্যামলবাবুর প্রেম ছিল। প্রেমটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। শ্যামলই তনয়াকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। তনয়া অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তনয়ার স্বামী ছোট ব্যবসায়ী।

দীর্ঘ দিন তনয়ার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আজ তনয়ার সামনে যেতে তাঁর দ্বিধা হচ্ছে। নিজেকে বোঝালেন শ্যামলবাবু। প্রয়োজনটা তাঁর। অতীতে যা-ই হয়ে থাকুক, কবর খুঁড়ে স্মৃতি তুলে আনার সময় এটা নয়।

তনয়ার টেবিলে অনেক ফাইল। একটা ফাইলে চোখ আটকে গেল শ্যামলবাবুর। লেখা আছে,  ‘ক্যানসেলেশন অব ইলেকশন ডিউটি’।

তনয়া মাথা নামিয়ে ফাইল খুলে একমনে লিখে চলেছেন। শ্যামলবাবু যে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে, সে দিকে খেয়াল নেই।

শ্যামলবাবুর একটু নার্ভাস লাগছে। তবু যথাসম্ভব মোলায়েম গলায় বললেন, ‘‘এত কাজে মন! খুব ভাল, খুব ভাল। দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় সবাই যদি এমন করে নিজেকে নিয়োজিত করত... ’’

মাথা তুললেন তনয়া। তাঁর দৃষ্টি নির্বিকার। তাঁর কাছে এখন অনেকেই এমন কাতর চাহনি নিয়ে দাঁড়ায়। শ্যামলবাবু যে সরকারি চাকরি করেন, তা তনয়ার অজানা ছিল না।  সুতরাং তাঁরও ইলেকশন ডিউটি পড়েছে। তিনি তাই এতগুলো বছর পর তনয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

শ্যামলবাবু সামনের চেয়ারে বসলেন। তনয়াকে বহুদিন পর আবার এত কাছ থেকে দেখছেন। একটু ভারী হয়েছেন তনয়া। বেশ লাগছে তাঁকে। গায়ের রংটাও আরও উজ্বল হয়েছে । তনয়া সুখেই আছে সম্ভবত।

তনয়া একবার শ্যামলকে দেখেই আবার কাজে ডুবে গিয়েছেন। শ্যামলবাবু মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘‘তোমার তা হলে এখন অনেক দায়িত্ব। ইলেকশন অফিসারের সঙ্গে নিশ্চয়ই সম্পর্ক খুব ভাল তোমার। আমি জানি কোনও দায়িত্ব নিলে তুমি তা ঠিকমতো পালন করো। আমি তো...’’

কথা শেষ করতে পারলেন না শ্যামলবাবু। মোটা একটা ফাইল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন তনয়া। ক্লান্ত গলায় শ্যামলবাবুকে বললেন, ‘‘আমি খুব ব্যস্ত। এখন কথা বলার সময় নেই।’’

‘‘আমি বসছি, তুমি কাজ সেরে এসো বরং...’’ শ্যামলের গলায় সংযত ভদ্রতা।

কিছুটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তনয়া বললেন, ‘‘ইলেকশনের ডিউটি এসেছে তো? করতে হবে। আমার কিছু করার নেই। এ বার খুব কড়াকড়ি।’’

বুকের বাঁ দিকের ব্যথাটা হঠাৎ চাগিয়ে উঠল শ্যামলবাবুর। তনয়াকে লক্ষ করে চলেছেন উনি। ঠিক এ ভাবেই তো তনয়ার কাছ থেকে পনেরো বছর আগে সরে এসেছিলেন উনি। অনেকটা এমন ভাবেই বলেছিলেন, ‘‘কিছু করার নেই তনয়া, আমি নিরুপায়। বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকেই...’’

বাইরে কড়া চৈত্রের রোদ। সঙ্কীর্ণ রাস্তা দখল করে বসেছে সেলের বাজার। শত শত মানুষ নেমেছে পথে। শ্যামলবাবু সাইকেল চালিয়ে ফিরছেন। আস্তে আস্তে ভোটের ডিউটি থেকে নাম বাদ যাওয়ার আশা কমে আসছে।

বাড়ির পথে কিছুটা যাওয়ার পর শ্যামলকে সাইকেল থেকে নামতেই হল। বর্ণাঢ্য বিশাল এক রাজনৈতিক মিছিল। ঢাউস মালা গলায় সামনে ভোটপ্রার্থী। স্লোগান, জয়ধ্বনি, হুঙ্কার। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল তাঁর। চোখের সামনে ভেসে উঠল গত ইলেকশনের ছবি। সেই সব যুবকের শাসানি। এ বার তো তিনি নিজেই প্রিসাইডিং অফিসার। তাঁর উপর গোটা বুথের দায়িত্ব।

নিরাপত্তা রক্ষীরা পাশে থাকবে তো?

টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া, খবরের কাগজে খবর, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর দাবিতে ভোটকর্মীরা সোচ্চার হচ্ছে। শ্যামলবাবু ভাবেন, এ কি ইলেকশন ডিউটি, না
যুদ্ধে যাওয়া?

দিন কেটে যায়। ভোটের ট্রেনিং নেন শ্যামলবাবুর। ডায়াসে এসে দাঁড়ান ট্রেনাররা। গোটা হলঘর জুড়ে ইভিএমের আওয়াজ ঘুরপাক খায়। ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়।

ভোটকর্মীরা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। কেউ কেউ টাকার অঙ্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে। আবার কেউ কেউ শূন্য চোখে ইভিএমের দিকে চেয়ে থাকে। এ সব বোঝার দায় যেন তাদের নেই। কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহী। নেড়ে চেড়ে ব্যালট এবং ভোটার ইউনিট দেখে। নোট লেখে। মোবাইলে ছবি তোলে। গালে হাত রেখে ভাবে।

অফিসে শুধুই ভোটের আলোচনা। চুপচাপ শোনেন শ্যামলবাবু। ভোটের সাত দিন আগে বিকাশ তার কাছে এসে দাঁড়াল। ছেলেটা সদ্য চুক্তির ভিত্তিতে
গ্রুপ-ডি’র চাকরি পেয়েছে। খুব করিৎকর্মা। এর আগে বৌয়ের ডিজিটাল রেশন কার্ড ওর জন্য সহজেই পেয়েছেন শ্যামলবাবু।

শ্যামলবাবুর ঘর ফাঁকা। সামসুল আসেননি, সলিল বাইরে গিয়েছেন। বিকাশ বলল, ‘‘দাদা কিছু করা গেল? না, ডিউটিতে যেতেই হচ্ছে? এ বার যা পরিস্থিতি... অশান্তি হবেই... তেমনই খবর আছে আমার কাছে।’’

শ্যামলবাবুর মাথা ঠিক নেই। অফিসের বড়বাবু ইতিমধ্যে ভোটের ডিউটি কাটিয়ে ফেলেছেন। শ্যামলবাবুর কানে এসেছে, বিকাশই নাকি সব ব্যবস্থা করেছে।

শ্যামলবাবু বিকাশকে হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলেন, ‘‘বিকাশ আমার এই উপকারটা কর না ভাই! তোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমি নিশ্চিত তুই পারবি।’’

বিকাশকে একটা সিগারেট দেন শ্যামলবাবু। তৃপ্তি করে কয়েকটা টান দিয়ে বিকাশ চোখ ছোট করে বলল, ‘‘হয়ে যাবে দাদা। আপনি তো আমায় না বলে অনেক ক্ষমতাওয়ালাদের পিছনে ঘুরলেন। কেউ পারল আপনার নাম কাটাতে? তবে এ সব কাজে খরচা আছে।’’

কোথায় যেন একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বিকাশ ঠিকই বলেছে। এখনকার দিনে টাকা ছাড়া কে আর কোন কাজ করে।

পকেট থেকে একটা পাঁচশো টাকার নতুন নোট বের করে বিকাশের সামনে ধরলেন শ্যামল। বিকাশ টাকাটা মুহূর্তের মধ্যে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল, ‘‘কথা দিচ্ছি, হয়ে যাবে কাজ। তবে এত কমে হবে না। ডিউটি ক্যানসেল হলে দাদা, আরও একটা পাঁচশোর পাত্তি ছাড়তে হবে।’’

মনটা একটু ভাল হল শ্যামলবাবুর। তাঁরই মস্ত ভুল হয়েছিল। আগে থেকে বিকাশকে টাকা দিয়ে হাত করলে হয়তো ভোটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটাই তাঁর নামে আসত না।

আস্তে আস্তে ভোটের দিন এগিয়ে আসে। বিকাশ শ্যামলবাবুকে আশ্বস্ত করে চলে। চোখ ছোট করে হাসি মুখে বলে, ‘‘একেবারে চিন্তা করবেন না। আমি কথা দিচ্ছি, ভোটের ডিউটি আপনাকে করতে হবে না।’’

প্রতিবার বিকাশ শ্যামলবাবুর কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অন্য ঘরে চলে যায়।

ভোটের দু’দিন আগে বিকাশকে ফোন করেন শ্যামলবাবু। বিকাশের মোবাইল সুইচ্ড অফ।

 

ভোটের আগের দিন সকালে হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে বেরোন শ্যামল। সুচরিতা সব গুছিয়ে দিয়েছেন। মেডিসিনের একটা আলাদা প্যাকেট করে দিয়েছেন।

ডিসি আরসি-তে এসে শেষ বার খবর নিলেন, তার নামটা আছে না বাদ পড়েছে। নাহ্, পরিষ্কার লেখা শ্যামল দত্ত, প্রিসাইডিং অফিসার, বুথ নম্বর দু’শো বারো।

শ্যামলবাবু প্রশস্ত মাঠের এক পাশে গিয়ে ছায়ায় বসলেন। গোটা মাঠের মধ্যে এই একটিই বড়, ঝাঁকড়া গাছ। বৈশাখ মাসের চাঁদিফাটা গরমেও এখানটা বেশ ঠান্ডা। হালকা হওয়া দিচ্ছে। ভোটকর্মীতে জমজমাট ডিসি আরসি।

কিছুটা আত্মমগ্নতায় ডুবে গিয়েছিলেন শ্যামলবাবু। হঠাৎ তার সংবিৎ ফিরল। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, ‘‘দু’শো বারো নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার শ্রী শ্যামল দত্ত, আপনি যেখানেই থাকুন, এনকোয়ারি কাউন্টারের সামনে চলে আসুন। আপনাকে আপনার পোলিং অফিসাররা খুঁজছে।’’

আর বসে থাকা যায় না। গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ পরীক্ষার তিনিও একজন সৈনিক। ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারে এসে দাঁড়ান শ্যামলবাবু। এক জন মহিলাকর্মী শ্যামলের হাতে ধরিয়ে দিলেন ইভিএম মেশিন, ইলেকটোরাল রোল বা নির্বাচনী তালিকা, হ্যারিকেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-ভর্তি দু’টো ব্যাগ। এতটা অবধি স্বাভাবিক। কিন্তু শ্যামলবাবু অবাক হলেন যখন কর্তব্যটুকু করার পর সেই মহিলাকর্মী তাঁর বিষণ্ণ চোখ তুলে বললেন, ‘‘চেষ্টা করেছিলাম। হল না।’’

অন্যমনস্ক থাকায় প্রথমে খেয়াল করেননি শ্যামলবাবু, মহিলাকর্মী আর কেউ নন, শ্যামলবাবুর এক সময়ের প্রণয়িনী তনয়া মিত্র।  আজ থেকে পনেরো বছর আগে সম্পর্ক বাঁচাবার একটু চেষ্টা না করেই যার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এত বছর পরও, সে চেষ্টা করেছিল শ্যামলবাবুর জন্য!

নিজেকে বড্ড ছোট মনে হল শ্যামলের। প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি করার বিড়ম্বনাটা আর টের পাচ্ছেন না শ্যামলবাবু। তার জায়গা নিয়েছে একটা চোরা কষ্ট। যার কথা কাউকে বলা যাবে না কোনও দিন।