Abosar

নিভৃতবাসের গল্প

গৌতম দে সরকার

নিভৃতবাসের নিয়ম এখন শিথিল। তবু কলকাতার রাস্তাঘাট যথেষ্ট ফাঁকা। রেড রোডে ময়দানের পাশ দিয়ে গাড়ি বিনা বাধায় ছুটছে। আকাশে মেঘ। বৃষ্টি নামবে।

অতিমারির জন্য দীর্ঘ দিন গৃহবন্দি থাকার পর আজ একটু বেরিয়ে ভাল লাগছে সুতনুকার। বর্ষার জল পেয়ে ময়দানের ঘাসগুলো উজ্জ্বল সবুজ। চার পাশের পরিবেশ বড় নির্মল। গাড়িতে বসেই মোবাইলে ফোনে সবুজ নির্জন ময়দানের কয়েকটি ছবি তুলে নিল সে। ড্রাইভার বিশু বলল, “ম্যাডাম, গাড়ি থামাব?”

সুতনুকা বলল, “না, না, চলো। বৃষ্টি নামবে আবার।”

বিশু বলল, “সেভেন পয়েন্ট হয়ে মা ফ্লাইওভার হয়ে বাইপাস ধরব। তাড়াতাড়ি হবে।”

“যে ভাবে সুবিধে হয়, চলো। তুমি তো আগেও রাজডাঙায় সুভাষিণীর বাড়ি এসেছ।”

“হ্যাঁ ম্যাডাম। দু’বার।”

সুতনুকা কয়েকটি সামাজিক পরিমণ্ডলের সঙ্গেও যুক্ত। আজ দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর সারা দিনের খবরে চোখ বোলাচ্ছিল, তখনই সুভাষিণীর ফোন এল।

“হ্যাঁ বল, সুভাষিণী! কত দিন পর ফোন করলি বল তো!”

“কেমন আছিস তুই তনু?”

“ভাল আছি রে। তোর হঠাৎ মনে পড়ল?”

“কী যে বলিস! রোজই সবার কথা মনে করি। তুই তো কত সংগঠনের কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকিস।”

“তা ঠিক। তুইও আয় না! তুই তো খুব ভাল আবৃত্তি করতিস। এক দিন আয় আমাদের কালচারাল ফোরামে। তোর ভাল লাগবে।”

“এখন সে সবও ভাল লাগে না আর। একা থাকতে থাকতে জীবনটাই ক্রমশ নিঃশব্দ হয়ে পড়েছে। সে ভাবে আর আলাপের মানুষজন কোথায়! কে-ই বা আমাদের মতো বৃদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলবে বসে বসে।”

“বৃদ্ধা?” বলেই হাসল সুতনুকা।

সুভাষিণী বলল, “আমি রিটায়ার করে গেছি দু’বছর হল। ফিফটি এইট-এ। এখন প্রবীণ নাগরিক।”

“আমি কিন্তু সে ভাবে ভাবি না। বয়সের কথা ভাবিই না।”

সুতনুকাও রেলের উচ্চপদে চাকরি করেছে। রিটায়ার করল এ বছর। এখনও নিয়ম করে স্পা-তে যায়। রূপচর্চা বাদ পড়ে না। রান্না-বান্না ঘরের কাজ মিনতি এসে করে দেয়। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সারা দিন। অবসর সময় কাটে বই পড়ে।

তবুও জীবনের কোথাও যেন খামতি থেকে গেছে। স্রোতের বিপরীতে চলা খুব কঠিন। আজীবনের লড়াই। নিজের সঙ্গে নিজেরই।

মেয়ে রিয়াকে নিয়েই কাটছিল ‘সিঙ্গল মাদার লাইফ’। শূন্যতা টের পেল রিয়ার বিয়ের পরেই।

রিয়াও কখনও বাবার কথা সে ভাবে জানতে চায়নি। জেনেছিল, মায়ের সঙ্গে বাবার বিয়ে হয়নি শেষ পর্যন্ত। মায়ের নিতান্ত এক ব্যক্তিগত মুহূর্ত, আবেগ বা যন্ত্রণায় তার আগমন। পিতার স্পর্শ ব্যতীত আর কিছুতেই অপূর্ণ নেই রিয়া।

এখন বিয়ের পর স্টেটসে আছে। কাজেই সুতনুকার হাতে এখন অনেক সময় নিজের জন্য। সময়গুলো বিভিন্ন অনুপাতে ভাগ করে নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখে বিভিন্ন কাজে।

সুভাষিণী বলল, “আজ সন্ধ্যায় কী করছিস রে?”

সুতনুকা একটু ভেবে নিয়ে বলল, “ফাঁকাই আছি।”

“তবে একটু আয় না রে আমার এখানে। জমিয়ে আড্ডা মারি। প্লিজ়… তা ছাড়া আজ মিতিনের জন্মদিন।”

“কে মিতিন?” সুতনুকা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল।

সুভাষিণী একাই থাকে সেই কবে থেকে। হঠাৎই বর মারা গেল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে। তখন ওর কত কম বয়স। ছেলেমেয়েও নেই। নিজে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করত। তাই মিতিন বলে কাউকে মনে করতে পারল না সুতনুকা।

সুভাষিণী বলল, “সব জানবি। সন্ধ্যায় আয়।”



সুতনুকা এ নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি। মনে মনে ভাবল কোনও চাইল্ড অ্যাডপ্ট করল কি না! কিন্তু এই বয়সে এসে! করলে আরও আগেই উচিত ছিল। জিজ্ঞেস করল, “আর কেউ আসবে?”

“শ্যামা আসবে।”

“ও, শ্যামা! কোথায় থাকে ও?”

“ও থাকে গড়িয়ায়। রাণুও আসবে বলেছে।”

“হ্যাঁ রাণু! ফার্স্ট হত।”

“হ্যাঁ। কিন্তু মাধ্যমিকে তুই-ই হায়েস্ট পেয়ে স্কুলে ফার্স্ট হয়েছিলি।”

“এত বছর পরেও তুই কী সুন্দর সব মনে রেখেছিস সবাইকে।”

সুভাষিণী ফোনের ও পারে ম্লান হাসল, “আমার আর কী কাজ। তাই খুঁজে খুঁজে বার করি সবাইকে।”

“ভাল করিস। যাব। গিয়ে আরও কথা হবে।”

তখন গাড়ি মা ফ্লাইওভার বেয়ে ছুটে চলেছে। রাস্তার সাদা দাগগুলো ঝড়ের গতিতে সরে সরে যাচ্ছে। এখান থেকে শহর কলকাতাকে অন্য রকম লাগে। চার পাশে দ্রুত বাড়ছে হোটেল, শপিং মল। অথচ এই রাস্তার দু’পাশ কী রকম ফাঁকা ছিল আগে।

আকাশ মেঘলা বলেই সন্ধ্যা নেমে এল তাড়াতাড়ি। শহরের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে। দিন ও রাতের সন্ধিক্ষণে একটি দু’টি করে আলো জ্বলে ওঠার মুহূর্তটি বেশ উপভোগ্য। এখনও দিনের সব আলো মুছে যায়নি। দূরের আকাশের প্রেক্ষাপটে হাইরাইজ় টাওয়ারগুলোয় জ্যামিতিক বিন্যাসে আলো জ্বলে আছে জানলায় জানলায়।

বাইপাসেও গাড়ি কম। রাস্তা ফাঁকা থাকলে গাড়ি ছুটিয়ে মজা। বিশু সহজেই পৌঁছে গেল রুবি হসপিটালের সামনে। সেখান থেকে ডান দিকে টার্ন নিয়ে অল্প এগিয়ে বাই-লেনের ওপর সুভাষিণীর বাড়ি।

সুভাষিণীর বাবার বাড়ি। এক মেয়ে ও। বর মারা যাওয়ার পর বাবা-মায়ের কাছেই ফিরে এসেছিল। সেখানে থেকেই অফিস করেছে। তারা বলেছিল সুভাষিণীকে আবার বিয়ের জন্য। সায় দেয়নি মন তখন। তার পর অফিসের কাজের চাপ সামলে, অফিস আর বাড়ির ছোট্ট গণ্ডির মধ্যেই কত বছর কেটে গেল। বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সুভাষিণী এত বড় বাড়িতে একাই।

আসলে খুব নীরবতার মধ্যেই নির্বিবাদে থাকতে চেয়েছে সুভাষিণী। এত দিন তো অসুবিধে হয়নি। ইদানীং মনে হচ্ছে জীবনের একাকিত্বটিই প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। ঘরের দেওয়ালে উজ্জ্বল রঙের প্রলেপ দিয়েও সেই বিষণ্ণতা কাটানো যায়নি।

নীচের ঘরেই অপেক্ষা করছিল সুভাষিণী। শ্যামাও এসেছে। ওর ছেলে গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেছে।

সতনুকাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরল সুভাষিণী। স্কুলে ও-ই ছিল প্রিয় বন্ধু। ইলেকট্রিক সল্ট মিশিয়ে বিলিতি আমড়া খেতে খেতে বাড়ি ফেরা। কখনও শালপাতায় আলুকাবলি। আর কত যে গল্প, শেষই হত না।

বার্ধক্যে এসে সেই দিনগুলো বড় বেশি করে মনে পড়ে। সুভাষিণী বলল, “কী সুন্দর আছিস তুই! সেই একই রকম গ্রেসফুল!”

“বলছিস?”

সুতনুকাকে সেই স্কুল থেকেই এমন কথা বলে ওরা। নিজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখত। সে যে দিন দিন আরও রূপসী হয়ে উঠছে, তা উপভোগ করত।

আশুতোষ কলেজের মেধাবী ছাত্র সমরেশ তখনকার ছাত্র-রাজনীতির উজ্জ্বল মুখ। সুতনুকার সহপাঠী। গড়ে উঠেছিল সম্পর্ক। ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল মাত্র। রাজনীতির উত্তাল সময়ে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায় সমরেশ। তখন থেকেই জীবনের লড়াই শুরু হয়ে গেল। রিয়া প্রাণ পেতে শুরু করেছিল সুতনুকার শরীরের ভিতর। একার লড়াই আরও বেড়ে গেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে সব সমস্যা নিজেই সামলে নিয়েছে।

সুতনুকা শ্যামাকে দেখে বলল, “কেমন আছিস, শ্যামা! কত দিন
পরে দেখা!”

শ্যামাও হেসে বলল, “ভাল আছি রে। তোকে দেখে খুব ভাল লাগছে।”

“তাই! আর খবর বল, বাড়ির সবার কথা?”

“দুই ছেলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরও বিয়ে দিয়েছি। নাতিনাতনি নিয়ে চলছে সংসার।”

“চমৎকার! তোর বরের খবর বললি না তো! তিনি ভাল আছেন?”

“তিনিও ভালই আছেন। এখনও ব্যবসা-কাজ সমান তালে করছেন।”

শ্যামার গায়ের রং কালো। কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর। টানা চোখ, সুচারু নাক। যাকে বলে ব্ল্যাক বিউটি। রাস্তায় সুন্দরী অনেকই দেখা যায়, কিন্তু ব্ল্যাক বিউটি কদাচিৎ মেলে। শ্যামা এই রকমই। খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে, চিরদিনই কম কথা বলে।

শ্যামা অনেক আগে এসেছে। ওর ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকআপের জন্য নাম লেখানো আছে। সুতনুকার জন্যই অপেক্ষা করছিল। কিছু ক্ষণ থেকে বেরিয়ে গেল।

সুতনুকা বললো, “রাণু আসবে বললি যে!”

সুভাষিণী বলল, “প্রথমে তো বলেছিল। তার পর ফোন করে জিজ্ঞেস করল কে কে আসছে। আমি তোর কথাই বললাম। শুনে ও বলল, ও আসতে পারছে না।”

বাইরে বৃষ্টি এল ঝেঁপে। বর্ষার বৃষ্টি বরাবরই ভাল লাগে সুতনুকার। বৃষ্টির শব্দে বেশ রোমাঞ্চ লাগে।

সুতনুকা বলল, “কার জন্মদিন বললি? ভাল করে বুঝলাম না।”

“সে বলছি। আজ থাকবি? ক’দিন এসে তো থাকতেও পারিস এখানে!”

“হ্যাঁ রে। তুইও তো পারিস আমার ওখানে গিয়েও থাকতে। খুব ভাল লাগবে।”

“কী ভাল হত, যদি আমরা সব বন্ধুরা এক সঙ্গে থাকতাম!”

“তাই কী হয়। সকলে কি আমাদের মতো একা! শ্যামার সুন্দর ভরা সংসার, শুনে খুব ভাল লাগল।”

“রাণুও খুব ভাল আছে।”

“রাণু এল না কেন বল তো?”

“বলল তো কী যেন দরকারে আটকে গেছে।”

“মোটেই না। আমার জন্যই ও এল না। ও সব মনে রেখেছে। মাধ্যমিকে আমার রেজ়াল্টটা ও মেনে নিতে পারেনি।”

“হতে পারে। সবাই ভেবেছিল ও-ই হায়েস্ট নম্বর পাবে। কিন্তু সে সব তো কত কাল আগের কথা!”

“এক দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এসপ্লানেডের সিগনালে। আমি গাড়ির কাচ নামিয়ে দেখি ও পাশের ট্যাক্সিতে। আমি খুব উৎসাহ নিয়ে কথা বললেও দেখলাম ওর আগ্রহ খুব কম। ওইটুকু সময়েও মুখ ঘুরিয়ে পাশের জনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিল। যাক সে সব কথা, তোর মিতিন কোথায়? আমি ওর জন্য গিফট এনেছি।”

গাড়ি থেকে গিফট-এর ঢাউস প্যাকেটটা এনে দিল বিশু।

“ও মা! তুই আবার এ সব এনেছিস কেন?”

“তুই যে বললি মিতিনের জন্মদিন!” অবাক হয় সুতনুকা।

“আমার বলাটাই ভুল হয়েছে। আয় ওপরের ঘরে।”

সিঁড়ি দিয়ে ওরা ওপরের ঘরে গেল। সুন্দর আসবাব দিয়ে সাজানো ঘর। দেওয়ালে ছবি আঁকা। সুভাষিণী বলল, “এটাই মিতিনের ঘর।”

সাত-আট বছর বয়সি একটা বাচ্চা মেয়ের সমান মাপের পুতুলের কাছে গিয়ে বলল, “এই হল মিতিন।”

সুতনুকা অবাক হল পুতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখ পিটপিট করছে পুতুলের। মুখে হাসি। খুব দামি গোলাপি রঙের একটা ফ্রক পরিয়েছে সুভাষিণী। সুতনুকা ওর দিকে তাকাতেই সুভাষিণী বলল, “ওর যে কত জামাকাপড় আমি কিনে রেখেছি! রোজ আলাদা করে পরাই। ওকে নিয়েই আমার এখন সময় বেশ কেটে যায়। আজকের দিনেই গত বছর ওকে কিনে এনেছিলাম।”

কী বলবে কয়েক মুহূর্ত ভাবল সুতনুকা। তার পর বলল, “আমি ভাবলাম কোনও চাইল্ড তুই অ্যাডপ্ট করলি কি না!”

“কেন ছোটবেলায় আমরা পুতুল খেলতাম না? তখন ছিল ছোট পুতুল। এখন বড় বেলায় বড় পুতুল। পুতুলের বিয়ে দিতাম। বরযাত্রী আসত। সবই তো মিছিমিছি। আমি পায়েস করেছি। খেয়ে যাবি। আয়, এ ঘরে আয়।”

এই ঘরে দু’টি পূর্ণ মানুষের মতো দীর্ঘ পুতুল। একটা পুরুষ, অন্যটি স্ত্রী। সুভষিণী বলল, “মিতিনের বাবা-মা।”

দামি স্যুট আর শাড়িতে মিতিনের কল্পিত পিতার-মাতার মূর্তিগুলো বড় বড় জামাকাপড়ের দোকানে দেখা যায়। শো-কেসে সাজানো থাকে। এক বার গড়িয়াহাটের এক দোকানের সামনে এই রকম একটি স্যুট-পরা মূর্তি দেখে অনেক ক্ষণ তাকিয়েছিল।

দোকানের মালিক এসে বলেছিল, “ম্যাডাম, ভিতরে আসুন। কী চাই বলুন।”

সুভাষিণী জিজ্ঞেস করিছিল, “এই মূর্তিগুলো কোথায় পাওয়া যায়?”

দোকানদার নিউ মার্কেটের দোকানের সন্ধান দিয়েছিল। সেখান থেকে দুটি বিগ সাইজ়ের পুতুল আর ওদের পোশাক কিনে এনেছে। নিজের একাকিত্বের ঘর পূর্ণ করতে চেয়েছে এ ভাবেই। আপন মনেই তাদের সঙ্গে কথাও বলে সুভাষিণী।

পরে গিয়ে ওদের কন্যাকেও এনেছে। নিজেই নাম দিয়েছে, মিতিন।

সুভাষিণী বলল, “মিতিন নামটা খুব মিষ্টি না! আমারই দেওয়া নাম।”

সুতনুকা ওর মুখের দিকে তাকাল। সুভাষিণী বলল, “কী দেখছিস? ভাবছিস, মাথার গোলমাল হল কি না? একেবারেই না। নিজের একাকিত্ব কাটাতেই একেবারেই নিজের টোটকা।”

অনেক গল্প হল। ভাল লাগল খুব। এ ভাবে যে কত দিন কাটানো হয়নি। ফিরে আসার সময় সুভাষিণী জিজ্ঞেস করল, “তোর মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল, দেখে মনে হচ্ছে?”

সুতনুকার অন্যমনস্কতা ভেঙে গেল, বলল, “কই না তো!”

“আমার সন্ধেটা দারুণ কাটল।”

“আমারও খুব ভাল লেগেছে।”

“তা হলে তোকে দেখে এমন লাগছে কেন?”

“আমার সঙ্গে এক দিন নিউ মার্কেটে যাবি? আমিও এমন একটি বিগ সাইজ়ের পুতুল কিনব। শুধু পুরুষ। আমার ঘরে সাজিয়ে রাখব।”

খুব উৎসাহিত হয়ে বলল সুভাষিণী, “বেশ তো কালই চল না!”

তার পর বলল, “সমরেশের কথা তোর খুব মনে পড়ে, তাই না?”

গাড়িতে ফিরতে ফিরতে ভাবছিল সুভাষিণীর শেষ কথাটি।

হঠাৎ নিজের মনেই বলে উঠল, “না, সমরেশ নয়।”

এত দিনে সমরেশ অনেক আবছা হয়ে এসেছে। প্রয়োজন এক বিমূর্ত পুরুষের, যে পূর্ণ করবে সুতনুকাকে।