গলায় সোনার চেন, ভুঁড়িওয়ালা লোকটা বসে ছিল আমায় পছন্দ করার জন্য। লোকটার বুকের কাছে শার্টের দু’টো বোতাম খোলা। লোকটাকে একটুও ভাল লাগেনি আমার। ভুঁড়ি থাক, ক্ষতি নেই। কিন্তু লোকটার কথাবার্তা, চেহারায় অর্থ-প্রতিপত্তির নির্লজ্জ গন্ধ। তবুও বিয়ের জন্য মন তৈরি করেছিলাম। প্রথম কারণ, আমি টেনেটুনে মাধ্যমিক পাশ মেয়ে, দ্বিতীয়, চাকরিবাকরি করি না, তিন নম্বর, প্রতিরোধের সাহস ছিল না।
উনিশ বছরের সুখ-ধুলো ঝেড়ে তপেন্দুর বাড়িতে পা রাখলাম। তপেন্দু ওই লোকটার নাম। বৌ হয়ে বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে ওর ব্যবসায়ী-পার্টনারদের জন্য চাট সহযোগে মদের গেলাস সাজিয়ে দিতে হল আমাকেই। আমার এ-সবের অভ্যেস ছিল। মদের আসর বাবাও নিয়মিত বসাত।
প্রথম রাতে তপেন্দু ভোঁসভোঁস করে ঘুমোল। আমি গয়নাগাঁটি খুলে ফ্যানের হাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। ঘরময় কাঁচা রঙের গন্ধ। যেমন-তেমন করে সাজানো আসবাব ও শৌখিন দ্রব্যে ঘর ভর্তি। তপেন্দুর গলায় তখন দু’টো সোনার চেন। দ্বিতীয়টা বাবার করে দেওয়া।
একতলা বাড়ি। অনেকগুলো ঘর। বাড়িতে আর কেউ নেই। আমার মতো যোগ্যতার মেয়ের কাছে এ তো সাম্রাজ্যেরও বেশি।
মাছের ভেড়ি আর গাড়ির ব্যবসায় নিত্যদিন টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি। সন্ধেয় মদের আসর। রাতে বিছানায় বরের স্বামিত্ব। এই সংসার-চক্রে আবর্তিত হতে হতে এক সময় হারিয়ে গেলাম বিনা প্রতিরোধে। জাগতিক কোনও ভোগ্যপণ্যের অভাব রাখেনি তপেন্দু। কিন্তু পানের লাল ছোপ ধরা ওর দেঁতো হাসি দেখলে এখনও আমার পিত্তি জ্বলে যায়, বিয়ের এই পনেরো বছর পরেও। এখন আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে, শাপলা। আমি নাম রেখেছি।
*****
“কোচিংয়ে সায়েন্সটা পড়ায় না ঠিকমতো। ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে টিচারকে কিছু বলতেও পারে না মেয়েটা। এক জন প্রাইভেট টিউটর দেখলে হত না?” আমার এ কথা শুনে তপেন্দু কমবয়সি একটি ছেলেকে ঠিক করল। বাড়ি এসে মেয়েকে পড়াবে। ক্লাসপ্রতি চারশো টাকা।
এই শহরতলির দিকেও বাড়িতে কাজের লোক পাওয়া যায় না আজকাল। অনেক সাধ্য-সাধনা করে সকালবেলা দু’ঘণ্টার জন্য ঝি পাওয়া গিয়েছিল। বাকি দিনের কাজের ভার আমার উপর। সকালটুকু সামলে নিতে পারতাম। বাড়িতেই থাকি সারা দিন। টিভি দেখতে ভাল লাগে না, বই পড়ার অভ্যেস নেই, চর্চা করার মতো বাগান নেই, আদর করার মতো পোষ্য নেই। মেয়ের স্কুল থেকে ফিরতে-ফিরতে বিকেল শেষ। কখনও-কখনও টিউশন পড়ে ফিরতে সন্ধে কাবার। বয়ঃসন্ধির উড়ে-উড়ে বেড়ানো মেয়ে। কাছে থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তপেন্দুর বাড়িতে থাকার নির্দিষ্ট সময় নেই। সাংসারিক কাজকর্ম, গয়নাগাঁটি পরে আয়নায় দেখা, আবার খুলে বাক্সবন্দি করা, দীর্ঘ দুপুরে ফোন করে বাবা-মায়ের খোঁজখবর— এ ভাবেই একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই।
যে-কথা বলছিলাম, কাজের লোক না রাখলেও চলে। কিন্তু স্টেটাস বজায় রাখার জন্য তপেন্দু অনেক খুঁজে মেয়েটাকে পেয়েছে। তপেন্দু বলে, “জীবনের চালচলন একটা বড় কথা, বুঝলে না... ব্যাঙ্কে কত জমালে, কেউ হিসেব নেবে না। লোকে মাপবে তোমার রোজকার জীবনযাপন।’’
স্থানীয় নেতা মোহনের সঙ্গে তপেন্দুর খুব দহরম-মহরম। ওই নেতার জন্য গেলাস তৈরির সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। উনি বিধানসভার টিকিট পেতে পারেন। মেয়েটার স্কুলের অ্যাডমিশন করিয়ে দিয়েছেন মোহন‘দাদা’। না-হলে শাপলার মতো ছাত্রী ওই নামী স্কুলে সুযোগ পেত না। ‘দাদা’-র সুপারিশে কয়েক লক্ষ টাকার প্রণামী বেঁচে গিয়েছে। আমি সরকারি স্কুলে পড়ানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু তপেন্দুর ‘জীবনের চালচলন’ বজায় রাখার ব্যাপারটা ছিল।
শাপলার নাইন চলছে। প্রাইভেট টিউটর ছেলেটি এল এক মঙ্গলবারে। মঙ্গল ও শনি— দু’দিন পড়াবে। বছর সাতাশ বয়স। ফিজ়িক্সে মাস্টার্স ডিগ্রি করে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চাকরির জন্য। প্রথম দিন একটু আগেই এসে বসেছিল। শাপলা তখনও ফেরেনি স্কুল থেকে। কথা না বললে অভদ্রতা হবে, তাই আলাপ-পরিচয় করলাম।
রাতে বিছানায় তপেন্দু জানতে চাইল, “অতন্দ্র ছেলেটাকে কেমন দেখলে? মেয়ে কী বলছে?”
আমি শুয়ে-শুয়ে ভাবছিলাম, কাজের মেয়ে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ঠিক তেরো দিনে। প্রাইভেট টিউটর পাওয়া গেল এক দিনেই! তপেন্দুর কথার উত্তরে অন্যমনস্ক ভাবে বললাম, “ভালই তো!”
তপেন্দু বলছিল, “মাস্টার যেমন খুশি হোক। মেয়ে নিজের ইচ্ছে মতো পড়ুক। বেশি চাপ দেওয়ার দরকার নেই। টাকার অভাব নেই আমার, মেয়েরও হবে না।’’
শনিবারে অতন্দ্র শাপলাকে পড়াচ্ছিল। শাপলা গোল-গোল চোখ করে অতন্দ্রর পড়ানো দেখছিল, শুনছিল। রান্নাঘর থেকে শাপলার ঘর দেখা যায়। জলখাবার তৈরি করার মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছিলাম। চা-জলখাবার নিয়ে যেতে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট্ট করে হাসল অতন্দ্র। আমার ইচ্ছে হল, একটু কথা বলার।
“চাকরির জন্য এত উৎকণ্ঠা কেন? কতই বা বয়স?”
“আপনার বয়স যখন আমার মতো ছিল, এই শাপলা বোধহয় স্কুলে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে!” একটু হেসে বলল সে।
“আমি টেনেটুনে মাধ্যমিকে পাশ। তার পর পড়িনি আর। বাড়িতে বসে কী করতাম?’’
“আসলে কী জানেন, চাকরির বাজারে কম্পিটিশন দিন-দিন বাড়ছে। ভয় হচ্ছে, বার বার পিছিয়ে না পড়ি। এক ধরনের বিপন্নতাবোধ কাজ করছে। তাই তাড়াহুড়ো করছি।’’
অতন্দ্রকে সান্ত্বনা দিয়ে ফিরে এলাম। শাপলাকে মৃদু তিরস্কার করছিল অতন্দ্র। মেয়েটা উপযুক্ত শিক্ষক পেয়েছে। আমার ছাত্রীবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু স্বপ্ন দেখানোর মতো কেউ ছিল না। শাপলা যেন আমার মতো খুঁটিতে বাঁধা না পড়ে যায়।
অনেক দিন পরে নিজের কিশোরীবেলায় ফিরে যাচ্ছিলাম। অকৃত্রিম প্রসন্নতা আমার গায়ে-গায়ে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছিল।
*****
শিক্ষক দিবসে অতন্দ্রকে তপেন্দু বলছিল, “চাকরির দরকার হলে বোলো, বুঝলে না মাস্টার... এই হাত অনেক লম্বা।’’
অতন্দ্র ফিরিয়ে দিয়েছিল, “ধন্যবাদ স্যর। আশা করি তেমন দিন আসবে না। এলেও আপনাকে কষ্ট দেব না। বাড়িতে ফুল চাষ করব। আপনার ফুল-টুল লাগলে দ্বিধা করবেন না। কমে করে দেব।’’
তপেন্দু সেই হাড়জ্বালানো লালচে হাসি হাসল। আমার গা শিরশির করে উঠল। অতন্দ্রর শারীরিক উচ্চতা কম, কিন্তু অস্তিত্বের গভীরতা অনেক বেশি। তপেন্দু সে-গভীরতার তল পাবে না। জলখাবার তৈরি করতে করতে বার বার উঁকি মেরে দেখছিলাম ওদের। প্রতি মঙ্গল-শনিতে উনিশে ফিরে যেতে ইচ্ছে করত। বালিকাসুলভ চপলতা হানা দিত না-জানি কোথা থেকে!
শিক্ষক দিবসের ফেরত-উপহার হিসেবে অতন্দ্র একটা লাল রঙের ছোট্ট ডায়েরি দিল শাপলাকে। শাপলা বলল, “আমি নিয়ে কী করব? কিছুই লিখি না আমি।’’
অতন্দ্র আমার হাতে সেই ডায়েরি দিয়ে বলল, “আপনিই তবে লিখুন না।’’ অতন্দ্র জানে আমার বিদ্যেবুদ্ধির পরিসর। তবুও ওর চোখে কৌতুক দেখলাম না। বরং কোনও এক অসম্ভব-সাধনের প্রত্যয়ে সে-চোখ জ্বলজ্বলে। আমিও শাপলার মতোই উত্তর দিলাম। অতন্দ্র আশ্বাস দিল, “দেখুন, আপনি তো বাঙালি মেয়ে। বাংলা লিখতে পারবেন না, তা কখনও হয়? টুকটাক টিভি, খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপ নিশ্চয়ই আছে। এক লাইন, দু’লাইন করে লিখতে শুরু করে দিন। অসুবিধে হলে আমি আছি!”
অতন্দ্রর সেই বিশ্বাসে কেমন যেন চট করে জারিত হলাম আমি। লাল ডায়েরি, নাকি জাদু-আয়না? ডায়েরি খুললেই নিজেকে নানা রঙে রঙিন করে দেখতে পেতাম। ডায়েরি ভরে উঠতে লাগল। ভাষা হয়তো মাধ্যমিক পাশ-করা মেয়ের মতোই, কিন্তু অতন্দ্রর কাছে তা-ই তারিফযোগ্য।
পুজো আসছে। এই সময়ে আমি, শাপলা, তপেন্দু— তিন জনে মিলে বাবা-মায়ের বাড়ি যাই। সে-ব্যাপারে এক শনিবারে আলোচনা করতে গিয়ে তপেন্দু চড়ই মেরে বসল আমাকে। “পার্টনারদের বৌ-বাচ্চার বেলায় খরচ করা পোষায় তোমার, আমার বাবা-মায়ের বেলায় যত কিপ্টেমি!”— এই ছিল আমার দোষের বুলি। চড়চাপড় খাওয়াটা নতুন নয়। মায়ের শিক্ষা, “বর চড় মারলে, মুখ ভার করিস, চোখে জল আনিস। বর আদর করে বুকে টেনে নেবে। কিন্তু খবরদার! মুখে-মুখে জবাব দিস না।’’ কিন্তু সে দিন আমার আদর খাওয়ার ইচ্ছে করল না। তপেন্দুর অসভ্যের মতো মদ গেলা, রেপিস্ট মোহনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, পার্টনারদের বৌদের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা ইত্যাদি হরেক প্রসঙ্গ ইচ্ছে করে টেনে বের করলাম। চড়ের বদলি ফিরিয়ে দিলাম সুদে-আসলে। তপেন্দু মারতে এল। মৃদু ঠেলা দিতেই লোকটা বিছানায় তলিয়ে গেল। এমনিতেই মঙ্গল-শনিবারে আমার ভিতরের আকাশ ঝলমল করে, আজ দ্বিগুণ প্রসন্নতা ঘিরে ধরল।
নিত্যদিনের ঠাকুর-পুজোর অভ্যেস নেই আমার। মহালয়ার দিন শুধু দুর্গার পটের সামনে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতাম বছর-বছর, এক দিন বড় করে পুজো দেব ভেবে। এ বারে হিসেব করে দেখলাম, দশ হাজার জমে গিয়েছে! আমি ভাবছি, পুরো টাকাটা অতন্দ্রকে দিয়ে দেওয়া যায় না পুজোয়? একটাই জামা দিনের পর দিন পরে আসে ছেলেটা। ও নিজের মতো করে যা হোক কিছু কিনে নেবে! জামাকাপড়ের চেয়ে ওর আবার বই বেশি পছন্দ। তা বই-ই কিনুক অন্ততপক্ষে! ছেলেটার আবার আত্মসম্মানবোধ প্রখর। টাকাটা
নেবে তো?
*****
আমার নিজস্ব একটা অস্তিত্ব আছে, তার শিরায়-শিরায় কতশত সূক্ষ্ম অনুভূতি বাসা বাঁধতে পারে— এ আমার ধারণার বাইরে ছিল। এখন একাকিত্বের সময়গুলোকে অলস লাগে না। আমি ডায়েরি খুলে বসি। অনেক না-দেখা স্বপ্ন নতুন করে দেখি। শাপলা-তপেন্দুর উপস্থিতি বরং বিরক্তির উদ্রেক করে। ডায়েরি হাতে করে যুগ-যুগ কাটাতে পারি। বাপ-বেটিতে প্রায়ই গজগজ করে এ নিয়ে। কিন্তু আমি তখন ভেসে বেড়াচ্ছি আমার জগতে, সম্পূর্ণ নিজের এক দুনিয়ায়। সেখানে প্রত্যেকটা রং আমার পছন্দ করা, প্রত্যেকটা
মানুষ আমার মনের মতো করে
তৈরি, প্রত্যেকটা ঘটনা আমার ইচ্ছেমতো চিত্রিত।
শনিবারে বিনা মেঘে বজ্রপাত। দুপুরে তপেন্দু এসে সোফায় আছড়ে পড়ল। সর্বনাশ ঘটে গিয়েছে। সব কিছু শেষ। মাছের ব্যবসা লাটে। মাছে রাসায়নিক মেশানোর খবর কী করে যেন ছড়িয়ে গিয়েছে। মিডিয়ার ভিড়, স্থানীয় লোকেদের বিক্ষোভ। এ দিকে আবার মোহন বিধানসভার টিকিট পাচ্ছে না। রেপিস্টের তকমা লেগে যাওয়ায় পার্টির বিরাগভাজন। ফলাফল রাজনীতি থেকে অবসর। তপেন্দুদের মাথার উপর থেকে ছত্রছায়া সরে যাওয়ায় ম্যাসাকার সমস্ত কিছু। পার্টনারদের মধ্যে খেয়োখেয়ি শুরু। সব মিলিয়ে মহাপ্লাবন। তবুও গাড়ির ব্যবসাটা আছে, পথে বসতে হবে না। এটুকুই যা সান্ত্বনা।
বিকেলে অতন্দ্র এল নিয়ম মতো। আমি ভুলে গেলাম তপেন্দুর বিপর্যয়ের কথা। শাপলাকে পড়াতে লাগল অতন্দ্র। আমি জলখাবার করলাম। তপেন্দু দিনের বেলাতেই আজ মদ খেয়ে বেহুঁশ। পড়ানো শেষ করে ধীরেসুস্থে চা-জলখাবার খেল অতন্দ্র। নতুন পোশাক ওর গায়ে। আমার জন্য এনেছে রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ’। আমার আশঙ্কা সত্যি করে আমার দেওয়া পুজোর টাকা ও প্রত্যাখ্যান করেছিল মৃদু হেসে। অথচ আমার জন্যই আজ উপহার এনেছে। কোনও ফেরত-উপহার নয়। তবু বিস্ময়ের বাঁধ উপচে প্রাপ্তিসুখের ঢেউ আছড়ে পড়ল আমার মনের বেলাভূমিতে। এক অজানা ঝড়ের পূর্বাভাস টের পেলাম বুকের ভিতরে।
ইতস্তত করে নিলাম বইটা। ভিতরের জগৎটা বোধহয় আমার চোখে-মুখে উদ্ভাসিত হচ্ছিল। অতন্দ্র অপলক চেয়ে রইল কিছু ক্ষণ। তার পর ধীরে-ধীরে স্পষ্ট গলায় বলল, “আমি চলে যাচ্ছি। রাঁচিতে। রেলের চাকরি হয়েছে।’’
আমি থমকে গেলাম। প্রজাপতিগুলোকে বোতলবন্দি করে কে যেন অনেক দূরে ছুড়ে দিয়েছে। আমার মধ্যে কোনও রকম বোধ তৈরি হচ্ছে না আর। বইটা হাত থেকে খসে পড়ল।
অতন্দ্র ধীরে-ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। পিছন থেকে দেখছি ওকে। অন্ধকার ঘর থেকে আলোর শিখা দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ। বাক্রহিত আমি কিছুক্ষণ পরে চেতনা ফিরে পেলাম। মঙ্গল-শনির খুশির ভাবটা আর উনিশ বছরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না আমাকে। যদিও এখন সে-প্রসন্নতার কারণ আর অজ্ঞাত নয়। কিন্তু আমাকে ফিরে যেতে হবে সেই ঘরে, যেখানে ভুঁড়িওয়ালা একটা লোক বেসামাল মদ খেয়ে নাক ডাকাচ্ছে। তবে আমার জাদু-আয়না ভেঙে যায়নি। চিড় ধরেছে সামান্য, বাকি জীবন জুড়ে ধূসর কিন্তু উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখাবে।
ছবি: প্রীতম দাশ