Abosar

তারা ও আমি

সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ সকালে সবে চা-টা খাচ্ছি, কাগজটা সামনে খোলা, একটা ফোন এল। ফোনটা করেছিলেন অনুপম রায়। ওঁকে এ তল্লাটের সবাই চেনে। ওকালতি করে পয়সা করেছেন, কোল্ড স্টোরেজও আছে। এ ছাড়াও বিখ্যাত এক ছেলের বাবা। ছেলে এখন আমেরিকায় থাকে। ডাক্তার।

উনি ফোনে আমায় বললেন, “তোমার বাড়িতে কী কাগজ নাও?”

নাম বললাম। শুনলেন বলে মনে হল না। উত্তেজিত গলায় বললেন, “বিদেশের পাতাটা খোলো।”

“খুলেছি।”

“খবরটা দেখেছ?” 

“কী খবর?”

“আরে আমার ছেলে একটা তারা কিনেছে। খবরটা দিয়েছে সব কাগজে। মানে ইংরেজি কাগজে। তোমারটা কি বাংলা কাগজ?”

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলি, “হ্যাঁ। বাংলা। আমরা তো বাংলাই পড়ি। কিন্তু ‘তারা কিনেছে’ মানে? কোন তারা? কেমন তারা?”

অনুপম রায় বিরক্ত হয়ে নাক ঝাড়ার মতো একটা শব্দ করেন, “আরে কোন তারা আবার কী? আকাশের তারা। মানে যাদের আমরা আকাশে মিটমিট করতে দেখি, সেই তারা। বুঝেছ? এখন রাখছি। না বুঝলে একটা ইংরেজি কাগজ কিনে বুঝে নিও।”

উনি ফোন রেখে দেন। আমি ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা গলা দিয়ে নামাতে নামাতে প্রাণপণে বাংলা কাগজটা হাঁটকাই। সকালের পটির বেগ গ্রাহ্য করি না। আসলে তখন দু’টো ব্যাপার আমার মাথায় কাজ করছে। 

এক,  ‘তারা কেনা’ মানে কী?

দুই, তারা কিনে কী হবে?

অনেক দিন হয়ে গেল আমার একটা কোলাপুরি চটি কেনার ইচ্ছে। আমার বৌয়ের একটা সোনার নাকছাবি, মানে ছবিপিসিমার বেয়ানের মতো নাকছাবি কেনার ইচ্ছে। আমার ছেলের একটা ফাইভ পকেটওয়ালা জিন্‌সের প্যান্ট আর আমার মেয়ের একটা লেহেঙ্গা কেনার ইচ্ছে। কিন্তু তারা কেনা! মানে এ রকম একটা বাসনা মানুষের কেন হয়, মানুষ একটা আস্ত আকাশের তারা কখন কী ভাবে কিনে ফেলে? আমি ঠিক বুঝতে পারি না। 

কবিরা পাহাড় কিনতে চান, অরণ্য কিনতে চান, তার একটা মানে বুঝি। কারণ কবিতায় ওসব কল্পনার কথা তাঁরা লিখে গিয়েছেন। ‘তারা’ কিনে কী হবে কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমি চলে গেলাম আমাদের অফিসের লিলির কাছে। লিলির একটা ভাল মোবাইল আছে। সেটায় গুগল সার্চ করে ও সব বলতে পারে। তাই অফিসে যার যা জানার দরকার  হয়, লিলির কাছে চলে যায়। লিলি ওর টাইট কামিজের ওড়না ঠিকঠাক করে নিয়ে, চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে, কখনও কখনও আবার একেবারে না তাকিয়ে বলে, “কী চাই?”

আসলে আমার লম্বা ফোন, কী বলে যেন, টাচফোন নেই। মান্ধাতার আমলের একটা ছোট ফোন আছে, যেটায় কল করা, কল ধরা আর মেসেজ করা যায়। আমার বৌ শিপ্রা অনেক দিন ধরে বলছে, “আমাকে একটা টাচফোন কিনে দেবে?” আমি পারিনি। কেরানির মাইনেতে এত কিছু হয় না। শিপ্রা বলেছিল, “তোমার ওই পেয়ারা পাড়ার ঢেলা-মার্কা ফোনটা ঠিক এক দিন কাগজওলার কাছে বেচে দেব।”

আমার ছেলে বলেছিল, “ও নেবে না মা। ওরও টাচফোন আছে। তা ছাড়া নিরানব্বই সালের ওই ফোনটার আর কোনও মার্কেট ভ্যালু নেই।”

আমি এ সব কথা শুনি না। একটা কোলাপুরি চটি, ব্যস আমার আর কোনও চাহিদা নেই। বিয়েবাড়িতে আমার বন্ধু হরিকে এক বার পরতে দেখেছিলাম ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর কোলাপুরি চটি! সেই থেকে ইচ্ছেটা চোখে লেগে আছে। 

 

কিন্তু আজ অনুপমবাবুর ছেলের কথা শুনে সকাল থেকেই বেশ ঘাবড়ে আছি। তাই লিলির কাছে আসা। লিলি আমার কথা শুনে এই প্রথম অবাক হল। আমার সামনেই গুগল সার্চ করল। বলল, “না, কিছু দিচ্ছে না তো! আপনি ঠিক জানেন, কেউ সত্যি সত্যি তারা কিনেছে?”

আমি বললাম, “সত্যি কিনেছে বলেই তো জানি। ইংরেজি কাগজে খবরটা বোধহয় পাওয়া যাবে।”

আমাদের ছোট অফিস। সবচেয়ে কম দামি বাংলা দৈনিকটা রাখা হয়। ওখানে খবরটা যথারীতি ভেরিফাই করা গেল না। তবে এই প্রথম অফিসে আমার চাহিদা বেড়ে যেতে দেখলাম। টয়লেটে, ক্যান্টিনে যে যেখানে যাক না যাক, আমার টেবিলের সামনে একটা হল্ট দিচ্ছিল। এমনকি বিশ্বপাকা শুভেন্দু পর্যন্ত আমার টেবিলের সামনে থমকে দাঁড়িয়ে মুখের সবজান্তা ভাবটা মুছে ফেলে বেশ বোকা-বোকা ভাবেই বলল, “আচ্ছা দত্তদা, তারা কেনার ব্যাপারটা... মানে, খবরটা সত্যি

না কি?”    

“আমাদের অফিস বা বাড়ির কাগজে খবরটা ছাপেনি দেখলাম। আসলে ওরাও আমার মতোই ছোটখাটো লোকেদের কাছে খবর বেচে তো। ‘তারা কেনা’ খবরটার মাহাত্ম্য ঠিক বুঝতে পারেনি।’’ 

অফিসে বড়সাহেব ঢোকেন বারোটায়। আবার পাঁচটায় বেরিয়ে যান। ওঁর অ্যাটেনডেন্স নিয়ে সবাই কানাঘুষো করে। তবে লিলিম্যাডামের কান বাঁচিয়ে। সবাই বলে লিলি ওঁর গুপ্তচর। কথাটা যে ভুল নয়, তার প্রমাণ হাতেনাতে পেলাম।

টিফিনের ব্রেকের পরেই বড়সাহেবের ঘরে আমার ডাক পড়ল। এত দিনের চাকরিতে এই নিয়ে মোট তিন বার আমি ওই ঘরে ঢুকছি। তবে এ রকম দুশ্চিন্তা আগে কখনও হয়নি। স্পষ্ট শুনতে পেলাম ঘোষবাবু মিত্তিরবাবুকে বলছেন, “এ বার বুঝবেন বাছাধন। যেমন কর্ম তেমনি ফল। কী আস্পর্ধা! বলে কিনা তারা কিনেছে ওঁর পাড়াতুতো ভাইপো! এক্ষুনি চাকরি নট হয়ে যাবে, আর উনি সপরিবারে তারা হয়ে যাবেন।”

এই প্রার্থনা শুনতে পেলে ভগবান কী করতেন জানি না। তবে এ যাত্রা আমায় বাঁচিয়ে দিলেন। বড়সাহেব আমায় সামনের চেয়ারে বসিয়ে কত দিন সার্ভিস হয়েছে জানতে চাইলেন। বললাম, “স্যর, প্রায় বাইশ বছর।”

“এনি ইনক্রিমেন্ট?”

“ওয়ান টাইম স্যর।” 

আমার বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে। তা হলে কি চাকরি গেল না? না কি গেল?

পরের প্রশ্ন শুনে আমি বুঝলাম, তারা কেনা হোক না হোক এই অফিসে আমার তারা হয়ে যাওয়ার চান্স নেই।

উনি বললেন, “আর ওই তারা কেনার খবরটা...?”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “সত্যি স্যর।”

উনি গলা নামিয়ে শুধু বললেন, “তারার দামটা জেনে আসতে পারবেন? আমার ছেলেও তো আমেরিকায় থাকে। মানে ওকে তা হলে বলতে পারি। যদি কেনে... মানে কী ভাবে? কোথা থেকে? এই ধরনের পারচেজ় একদম রেয়ার কি না!”

আমি ঘাড় কাত করে বললাম, “চেষ্টা করব।”

আমায় সে দিন উনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার অনুমতি দিলেন। আমি ঘোষ মিত্তিরদের পাশ দিয়েই ব্যাগ নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। জানি ওরা দেখবে আর জ্বলবে। আমার তাতে কাঁচকলা!

 

আসলে আমি বরাবরই একটু বোকা। কম পয়সার, কম বুদ্ধির মানুষ। আমার সঙ্গে ওই অনুপমবাবু, মানে তারার মালিকের বাবার দেখা হওয়ারই কথা নয়, মেলামশা তো দূরের কথা। কিন্তু হয়ে গিয়েছে। আসলে বিপদের সময় বড়লোক গরিব লোকের বাছবিচার থাকে না। ওঁকে আমি বাঁচিয়েছিলাম। অন্তত ওঁর সে রকমই ধারণা। পাড়ার সুইমিং পুলে এক বার উনি ডুবে যাচ্ছিলেন। আমি তখন পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। ওঁকে ডুবতে দেখে চেঁচাই। পুলের লোকজন ওঁকে বাঁচায়।

কী ভাবে যেন খবরটা ওঁর কানে ওঠে। তার পর থেকে এই খাতিরদারির সূচনা। অসময়ের আম, সময়ের ইলিশ মাছ, বড় বড় গলদা চিংড়ি উনি আমার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আমি জানি, শিপ্রার সঙ্গে দেখা হলে উনি একটা টাচফোনও ওকে দিয়ে দিতেন। দেখা হয়নি বলেই রক্ষে!

তবে এর বদলে আমাকেও কিছু দিতে হয়। সেটা হল অসীম আনুগত্য! মুখে আঙুল দিয়ে ওঁর সব কথা শোনা এবং না বিশ্বাস হলেও বিশ্বাসের ভাব দেখানো। আসলে এই সত্তর বছর বয়সে পৌঁছে উনি বড় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। ওঁর কথা শোনার তেমন লোক নেই। আর স্ত্রীরা তো নিঃশর্তে সব কথা শুনতে চান না। আমাকে উনি খুব ভরসা করেন।

তবে এই তারার ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। ওঁর পুত্রের অসম্ভব সব জিনিস কেনার একটা অভ্যেস আছে। সে আমি অনেক দিনই জানি। তবে 

নক্ষত্র কেনার ব্যাপারটা আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

ছোটবেলার বিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম তারা এবং গ্রহের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। তারারা নিজের আলোয় আলোকিত আর গ্রহেরা তারা বা নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত হয়। যেমন পৃথিবী একটি গ্রহ আর সূর্য একটি নক্ষত্র। মহাকাশে আরও অনেক  তারা আছে। অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা তাদেরও আলোকরশ্মি আবিষ্কার করেছেন।

কোনও কালেই আমি বিজ্ঞানে ভাল ছিলাম না। আমার দাদা শিখিয়েছিল বিজ্ঞান আর অঙ্ক তেড়ে মুখস্থ করতে। ত্রিশ পেলেই পাশ করা কেউ আটকাতে পারবে না। আমি দাদার কথা শুনি। তবে হাফ-ইয়ার্লিতে মুখস্থ করেও তারার জায়গায় গ্রহ আর গ্রহের জায়গায় তারা লিখে মাস্টারমশাইয়ের বকুনি খাই। ফাইনালে অবশ্য আর ভুল হয়নি। সেই থেকে গ্রহ-নক্ষত্রের পার্থক্যের মতো শক্ত ব্যাপারটা আমার মগজে চেপে বসে আছে।

সেই আমি অনুপমবাবুর ছেলের তারা কেনার রহস্য এত সহজে বুঝব কী করে? ছেলেটার প্রচুর পয়সা 

আছে জানি। ওর বাড়ির ছবি অনুপমবাবু আমায় দেখিয়েছেন। সে সব ঝাড়লণ্ঠন, কার্পেট, সোফাসেট দেখে আমি বুঝেছিলাম, আমার রাহুলের কোনও দিন ক্ষমতা হবে না এ সব কেনার।

রাহুল আমার ছেলে, প্রিয়ঙ্কা আমার মেয়ে। ওদের মা এ সব নামকরণ করেছে। ভোটের সময় অবশ্য ওদের ওই নামে ডাকাডাকি করতে বারণ করেছিলাম। কারণ আমাদের পাড়ার অপোনেন্ট পার্টির লিডার আমাকে এক বার বলেছিল, “আর নাম পেলে না! দু’টো নামই তো ইন্দিরার নাতি-নাতনির। তা তুমি কি ওই পার্টির?”

এ সব ঝামেলা আমার বৌ শিপ্রার জন্য হয়। ও বড় টাচফোন চায়, ছবিপিসিমার বেয়ানের মতো নাকছাবি গড়াতে চায়। নেতাদের বাড়ির ছেলেপুলেদের নামে নিজের রোগা কালো ছেলেমেয়ের নাম রাখে আর অনুপমবাবুকে এক দিন নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে চায়। বলে, “রোজ রোজ ওদের পাঠানো খাবার খাই। এক দিন ওঁকেও খেতে বলো না। এ বারের গণেশজননীর মেলায় দুটো কাচের প্লেট আর ছ’টা কাচের বাটি কিনেছি। বেশ তোমরা দু’জন আমার হাতে সেলাই করা আসনে বসে খাবে আর আমি পরিবেশন করব।”

আমি ওকে এক বার বোঝাব ভাবছি। বলব, “শোনো শিপ্রা, তারা কেনে যার ছেলে, তার সঙ্গে আমার পাশাপাশি বসে খাওয়া ঠিক নয়। দেখো, গ্রহ কেনা মেয়ের বাবা, ওঁর সঙ্গে মহাকাশে, আর দু’দিন পরেই চেয়ার-টেবিলে বসে খাবেন। তোমার অন্য আবদারগুলো তবু এক রকম। এটা একেবারে বেমানান।”

শিপ্রা আমার কথাটা না বুঝতেও পারে। ও আবার প্রাইমারি পাশ কি না! বিজ্ঞান বই কখনও খুলে দেখেনি। তাই এ সব ওর জানার কথা নয়। আর তারা কেনার ব্যাপারটা ওকে আমি বলিনি। আমি নিজে যা ভাল বুঝতে পারি না, তা ওকে বলি না। কারণ কিছু বললেই ও অনেক প্রশ্ন করতে শুরু করে। আর এ ক্ষেত্রে কোনও জবাবই আমি দিতে পারব না।

 

এই তারা কেনার সঙ্গে আমার যোগাযোগটা কী ভাবে যেন চারদিকে রটে গিয়েছে।

সবাই আমার  কাছে জানতে চাইছে, “তারার দাম কত?”

এই উত্তরটা যে আমি সত্যি 

জানি না, সেটা কাউকেই বোঝাতে পারছি না।

সে দিন লিলি আমাকে বলল, “আপনি তারার দামটা জানতে পারলেই আগে আমাকে বলবেন। আমি মোবাইলে সেভ করে রেখে দেব। গুগলে সার্চ করে পাইনি তো, তাই আর কী।”

বড়সাহেব আবার তাঁর চেম্বারে ডেকে চা খাইয়েছেন। সে দিন থেকে অফিসের পিওন মুরারি, যার কাছ থেকে অসময়ে টাকা ধার নিই, আমাকে খুব খাতির করছে। আসলে বড়সাহেবের ঘরে ও-ই চা এনে দিয়েছিল তো!

চা খেলেও সাহেবকে আমি তারার দাম বলতে পারিনি। অনুপমবাবু নিজেও জানেন না বোধ হয়। আমি জানতে চাওয়ায় আমাকে খেঁকিয়ে উঠে বললেন, “তোমার আস্পর্ধা দেখি দিন-দিন বাড়ছে। আজ তারার দাম জানতে চাইছ, কাল আমার গিন্নির দাম জানতে চাইবে। এখন যাও। নেক্সট মান্থেই আমার ছেলে ওই ‘তারা’ ভিজ়িটে যাবে। তখন ছবি পাঠালে তোমাকে দেখাব।” 

তারা কেনার বিশদ-বৃত্তান্ত আমার আর জানা হয় না। 

আমি সে দিন বাড়ি ফিরেই একটা ডিসিশন নিই। না, আমার কেনাকাটাটা আর ফেলে রাখা ঠিক হচ্ছে না। পরের দিন ছিল রবিবার। ইনক্রিমেন্টের বাড়তি টাকা আর ভাঁড়ের জমানো টাকা জড়ো করে ওই দিন আমি একটা কোলাপুরি চটি, ছেলের জিন্‌সের ফাইভ পকেট প্যান্ট, মেয়ের লেহেঙ্গা চোলি কিনে ফেলি। শিপ্রা উত্তম জুয়েলার্সে সেই বিশেষ ডিজ়াইনের নাকছাবি গড়াতে দেয়। সবসুদ্ধু আমার পাঁচ হাজার ন’শো  পঞ্চাশ টাকা খরচ হয়। মেয়ে আমার গালে চুমু খায়। ছেলের চোখ চকচক করে। ওদের মা সেই মেলায় কেনা কাচের প্লেটে ভাত বেড়ে আমায় পরিবেশন করে খাওয়ায়। আর বলে, “ধোঁকার ডালনা কেমন খেলে? ডাল বেটে রান্না করেছি। আর শোনো, তোমার অনেক খরচ হল তো। আমার আর টাচফোন লাগবে না।”

অনুপমবাবু এখানে নেই। এখন আমেরিকায় ছেলের কাছে। তারা কেনার  উৎসবে যোগ দিতে যাওয়া ছেলে-বৌয়ের বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন।

আমি ছাদে উঠে ওই কিনে নেওয়া তারাটা খুঁজছিলাম। দেখলাম আমি চাইতেই, ওটা আমার হাতের নাগালে এসে গিয়েছে। খুব আলতো করে ওটাকে এক বার ছুঁলাম। তার পর ঠেলে পাঠিয়ে দিলাম মহাকাশে।