আমাদের গল্পের নায়ক এক জন বয়স্ক মানুষ। আজকালকার প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের কাছে বয়স হলেই শখ-আহ্লাদ জলাঞ্জলি দেবার কনসেপ্ট তামাদি হয়ে গেছে। তা ছাড়া এখন সহজে বুড়োই বা হচ্ছে কোথায় মানুষ! আমাদের নায়কের বয়স যেমন তেষট্টি প্লাস, তা বলে কি তিনি বুড়ো? মাথার চুল ঘনত্ব হারালেও কলপের স্পর্শে দিব্যি কুচকুচে। সারা জীবন যোগব্যায়াম করার সুফল—ভুঁড়িটুড়ি নেই, ছিমছাম গড়ন। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে চেহারাটা ফিটফাট রেখেছেন অযুতানন্দ নন্দী। পাঠক যদি নামের ধাক্কা সামলে উঠে থাকেন, তবে জানাই ভদ্রলোকের নামটি সন্ন্যাসঘেঁষা হলেও তিনি কিন্তু শতকরা একশো ভাগ গৃহস্থ মানুষ। যথাকালে বিয়ে-থা, সন্তানাদি উৎপাদন করে আগাগোড়া সংসারী। নামের জন্য তো আর তিনি দায়ী নন, দায়ী তাঁর পিতৃদেব। পিতৃদেব যৌবনে ধর্মভাবাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তস্য পিতা কান ধরে তাঁকে বিবাহের পিঁড়িতে বসিয়ে ছাড়েন। সে বেচারা ফাঁদে পড়ে এক বছরের মধ্যেই জ্যেষ্ঠ সন্তানের আবির্ভাবকে ঈশ্বরের আশীর্বাদই ভেবে থাকবেন হয়তো বা! আসলে সন্ন্যাসমোহে আচ্ছন্ন পিতৃদেবটি সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন ও বিযুক্ত থাকার সুপ্ত বাসনাটি চাপিয়ে দেন অযুতানন্দর ঘাড়ে, তার নামকরণের মাধ্যমে। পরবর্তী সন্তানদের নামকরণের ক্ষেত্রে ভাগ্যিস তিনি পত্নীর কঠোর হস্তক্ষেপের কাছে হার মেনেছিলেন!
অযুতানন্দকে আদ্যন্ত সফল মানুষ বলা চলে। লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন। হায়ার সেকেন্ডারিতে স্ট্যান্ড। কমার্স লাইনে ফাটাফাটি রেজ়াল্ট। ব্যাঙ্কে মোটা মাইনের চাকরি। ভাল ছেলের তকমা-আঁটা সিরিয়াস প্রকৃতির মানুষ। কর্মক্ষেত্রে সুনাম ও যশ লাভ। মায়ের পছন্দমতো সুন্দরী, শিক্ষিতা নিবেদিতাকে স্ত্রী হিসেবে বিনা দ্বিধায় বরণ করে নেন। সন্তানের ক্ষেত্রেও পারফেক্ট কম্বিনেশন! একটি ছেলে, একটি মেয়ে— হম দো, হমারা দো! ছেলেমেয়ে দু’জনেই সাফল্যের অঙ্ক মিলিয়ে বিদেশে সংসার-জীবনে থিতু। অযুতানন্দ জীবনে একটাই মার খেয়েছেন। স্ত্রীর অকালবিয়োগের ব্যথা তাকে বহু বছর ধরে কষ্ট দিয়েছে। সময় ও কাজের চাপ কিছুটা মলমের কাজ করেছে। এই অবধি ঠিকই ছিল, অবসর-জীবনের প্রথম ধাপটি সামলাতে একটা হোঁচট খেলেন। অবসরের একাকিত্বের অস্থিরতা তাঁকে ব্যাকুল করে তুলল।
এমন পরিস্থিতিতে এসে পড়ল বসন্তকাল। প্রকৃতির তো রিটায়ারমেন্টের সুযোগ নেই, সে তার কাজে ফাঁকিও দেয় না। পলাশ-অশোক-শিমুল গাছের ডালে-ডালে ভয়ঙ্কর লাল আগুনের বন্যা ছুটল। বারান্দায় বসে সুগন্ধি চায়ে চুমুক দিয়ে ভোরের ঘোমটার আড়াল থেকে আধফোটা আলোর রহস্যময় লুকোচুরি খেলা আর গাছেদের হোলির রঙে রাঙিয়ে ওঠা দেখলেন বিস্মিত অযুতানন্দ। আলো-আঁধারে থোকা থোকা ফুল, যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। এ সব আগে কোনও দিন খেয়াল করার মতো সময় হয়নি। স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে মুগ্ধই হয়ে গেলেন একটু। আজকাল ঘুম কমে গেছে, সাতসকালে উঠে পড়েন। ভোরের ভিজে বাতাসে বাঙালির রেকর্ড ব্রেক করে জীবনে কোনও দিন কবিতার ধার-কাছ না মাড়ানো নীরস অযুতানন্দ কেমন ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলেন। নিবেদিতার অভাবটা আজ বড্ড বুকে বাজল।
হঠাৎ জাগা মুগ্ধতা আর ভাবুক-মুড স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বিদঘুটে হু-হু করা শূন্যতায় অযুতানন্দকে ছেয়ে ফেলল। আচমকা অনুভব করলেন, “যাঃ! সব শেষ! বেলা গেল!” না, লালাবাবুর মতো বিষয়-আশয় জলাঞ্জলি দিয়ে ঈশ্বরচিন্তায় ডুব দেওয়ার সদিচ্ছে হল না। হলে হয়তো স্বর্গত পিতার আত্মা তৃপ্তি পেত খানিক। কেসটা বরং উল্টো দিকে মোড় নিল। আমগাছের ঘন কালো পাতার আড়ালে কোকিলটাও তখনই মধুর সুরে সঙ্গিনীকে প্রবল ডাকাডাকি শুরু করায় মিহি একটা বেদনা বুকে ছড়াতে লাগল অযুতানন্দর। তাঁর মনটা কেমন অচেনা অভাববোধে হাহাকার করে উঠল যেন! হায় রে! জীবন শেষ হতে চলল কিন্তু তিনি প্রেমের স্পর্শ পেলেন না। ধরে-বেঁধে দেওয়া বিয়েতে প্রেম ছিলই বা কোথায়? সেই অনির্বচনীয় থরোথরো গোপন অনুভূতি জানা হল না তো তাঁর! বন্ধুবান্ধবদের কম তো দেখেননি ধপাধপ প্রেমে পড়ে নাকানি চোবানি খেতে! তখন তো মনে হত যত সব ফালতু দুর্বলতা! মনে মনে এত কাল করুণাই করতেন বেচারা প্রেমের ভিকটিমদের। আজ ছবিটা পাল্টি খেয়ে নিজেকেই করুণার পাত্র মনে হচ্ছে যেন সঙ্গীহীন অযুতানন্দের।
অযুতানন্দের অবসাদ কমল না। তিতকুটে স্বাদে মনটা কষাটে, সেই সঙ্গে একটা পরাজয়ের গ্লানি! ছোঃ! তাঁর সেক্রেটারি মোটা কালো বাসু, এমনকি দারোয়ান গোবিন্দটা অবধি প্রেম করে বিয়ে করেছে শুনেছেন! অথচ তিনি বঞ্চিত রইলেন সেই সুধারস থেকে! অন্যায় নয়? ভেবে-ভেবে সিদ্ধান্তে আসেন যে, প্রেমে না পড়ার এক নম্বর কারণ তার মা! রাতদিন মায়ের ভ্যানভ্যানানি— পড়! পড়! অঙ্ক গুলে খা। বেধড়ক পড়ার চাপ! একশোতে একশো পেয়ে ধেইধেই নৃত্য! ক্লাসে ফার্স্ট হবার ইঁদুরদৌড়ে পাঁইপাঁই করে ছুটেছেন! বইয়ের অক্ষরগুলোর বাইরে দুনিয়াটা চেয়ে দেখলেনই বা কোথায়? পাড়ার মেয়েগুলোকে কারা লুঠপাট করে নিল, সে খেয়াল রাখতে পেরেছিলেন নাকি কখনও! মণি নামের একটা কটা চোখের মেয়ে এক বার প্রেমপত্রও তো বারান্দায় ছুড়ে দিয়েছিল! পড়বি তো পড় সেটা মায়ের নজরেই পড়ে গেল। মায়ের সে কী ফোঁসফোঁসানি! কটা চোখের মেয়ে নাকি অলক্ষ্মী! আর যে মেয়ে আগ বাড়িয়ে চিঠি ছোড়ে, সে যে বিতিকিচ্ছিরি রকমের বেহায়া, সে বিষয়ে অযুতানন্দকেও নিঃসন্দেহ করে ছাড়লেন। মোটে চব্বিশে বিয়ের পিঁড়িতে ঠেলে দিয়ে সংসারের জিলিপি প্যাঁচে পাকিয়ে প্যাঁকাটি করে ছাড়লেন। ইতিউতি তাকানোর আর চান্সই পেলেন না অযুতানন্দ।
এর পর রাগ গিয়ে পড়ল বাবার উপর। ছিঃ! কী মিসলিডিং নামকরণ! এই নামের ধাক্কায় মেয়েরা যে ছিটকে যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী! অযুত, অর্থাৎ মুক্তপুরুষ, তার সঙ্গে আবার নন্দ-টন্দ যোগ করে সাধু-সন্নিসি বানিয়ে ছেড়েছেন! নামের ধাক্কায় ধরাশায়ী মেয়েরা আর কি ধরা দেয়? একাকী বিষণ্ণ অযুতানন্দ বিমর্ষতায় ক্রমশ মিইয়ে যেতে লাগলেন।
বন্ধুদের আড্ডায় গম্ভীর অযুতানন্দকে দেখে অনিল এক দিন বলেই ফেলেন, “তোর কী হয়েছে রে! সারা ক্ষণ পেঁচার মতো মুখ করে থাকিস?”
“দূর, ভাল লাগে না কিছু, কাঁহাতক আর একা থাকা যায়?” ভেঙেই পড়েন অযুতানন্দ।
“তোর আগেই আর একটা বিয়ে করা উচিত ছিল!” অনিলের খেদোক্তি।
“বড় বড় ছেলে মেয়ে ছিল, অফিসের কাজ ছিল…”
“দিনকাল পাল্টে গেছে রে অযুত, এখনও অসম্ভব নয়!”
“বিয়ে?”
“হোয়াই নট? অ্যাট লিস্ট প্রেম তো করতে পারিস! চেহারা তো দিব্যি ডাগরডোগর আছে এখনও!” বলে অনিল বিশ্ববিখ্যাত বুড়ো-প্রেমিক ও তাঁদের প্রেমিকাদের লিস্টি পেশ করলেন। বাব্বা! শুনে অযুতানন্দর মনে হল পৃথিবীটা বড় দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিবাহিত, অবিবাহিত, ডিভোর্সি কেউই আর পিছিয়ে নেই! বুক ফুলিয়ে খুল্লমখুল্লা সবাই চালাচ্ছে। এর পর আর এক বন্ধু অজিতের কথা শুনে তো তিনি থ! ইন্টারনেটের অ্যাপে না কি প্রেমের ডেটিং হয়! সর্বসমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি বটে আজকের ইন্টারনেট! অজিতই সন্ধান দিলেন এমন একটা অ্যাপের, নাম ‘চকমকি’, সুন্দর নাম! ঘষলেই স্ফুলিঙ্গ! বাপ রে!
পরদিনই অযুতানন্দ কৌতূহল বশে ঘাঁটাঘাঁটি করে পেয়েও গেলেন ‘চকমকি’। ভগবানের নাম করে ইনস্টল করে এন্ট্রি নিয়েই ঘাবড়ে গেলেন। এ যে মণিমুক্তোর ছড়াছড়ি! তাড়াহুড়ো আর নার্ভাসনেসে— যাঃ! দিয়েছেন ক্লিক করে এক ললনার প্রোফাইলে! মেয়েটি কিন্তু বেশ, ঢলঢলে। ও মা, তার পর ও পক্ষও রাজি? কী কেলেঙ্কারি! মন্দ কী? দেখাই যাক না! ভাবলেন উত্তেজিত অযুতানন্দ। শনিবার বিকেল পাঁচটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট! উত্তেজনায় বুড়ো-বুক ধকধক করে… হাত কাঁপে… প্রেমের গোপন সুখ কি একেই বলে?
নির্দিষ্ট সন্ধ্যায় সাজুগুজু করে অযুতানন্দ কফি শপে হাজির। দুরুদুরু বক্ষে আরামদায়ক সোফায় শরীর ডুবিয়ে অপেক্ষা! তখনই ব্রাউন টপ আর কালো স্কার্টে ঢুকল টিনা। এ দিক ও দিক দেখছে, হাত তুলে ‘হাই’ বললেন অযুতানন্দ। টিনা চোখ সামান্য কুঁচকে এগিয়ে এল। বসল এবং বলল, “আপনি? ছবিতে তো একদম ইয়াং ছিলেন?”
“এ মা তাই তো! আসলে ফেসবুক প্রোফাইলের ইয়াং এজের ছবিটাই ‘চকমকি’তেও দিয়ে ফেলেছি!” ছি ছি… এমন বিচ্ছিরি ভুল কী করে হল অযুতানন্দর! লজ্জা, লজ্জা!
“আশ্চর্য!” রাগ আর হতাশা মেশে বিরক্ত টিনার গলায়, “এটা কিন্তু চিটিং!”
“না-না! চিটিং নয়, অন গড! ভুল করে, বিশ্বাস করুন! প্রথম বার তো! তাই নার্ভাসনেসে…” কাঁচুমাচু স্বীকারোক্তি অযুতানন্দর।
“প্রথম তো আমারও! না হলে বোকার মতো শুধু ছবি দেখেই দুম করে রাজি হলাম? ছিঃ! ম্যারেড?”
“বিপত্নীক… কুড়ি বছর।”
“জানতাম! বন্ধুরা সাধে আমায় বোকা বলে? কী রকম ঠকবাজের পাল্লায় পড়লাম!”
“এ মা, না না! আমি খারাপ লোক নই!” কী কেলেঙ্কারি! বিপন্ন অযুতানন্দ পালাতে পারলে বাঁচেন।
“সাইটে বাজে লোকও থাকে জানি… কিন্তু কী করব? পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে গেছি, মা বিদঘুটে সব সম্বন্ধ আনছেন! সাহস করে তাই… আমার তিনটে বন্ধুর এই অ্যাপে বিয়ে হয়েছে…” টিনা কাঁদো-কাঁদো।
কী গেরো! মেয়েটার কি তাঁর চেয়েও ডেসপারেট কেস?
অযুতানন্দ সমবেদনার গলায় বলেন, “তোমারও হবে! কেন হবে না? বাবা কী করেন?”
“নেই, দশ বছর হল।”
ইস! বড্ড দুঃখী তো মেয়েটা!
“দাঁড়াও! কফি খাও আগে,” কন্ট্রোল ফিরে পেতে গার্জিয়ানসুলভ দায়িত্ববোধে মাখো-মাখো হন তিনি।
“হবে বলছেন আঙ্কল?”
আঙ্কল বলে ডাকল? টিনার ছেলেমানুষিতে হাসেন অযুতানন্দ। মেয়েটা সরল প্রকৃতির। রাগ হয় না অযুতানন্দর। ঝটপট কফি আর স্যান্ডুইচ পেয়ে টিনাও শান্ত হয়।
“আপনি কেন পে করবেন— বড্ড দাম এখানে, হিজ়-হিজ় হুজ়-হুজ় হোক,” প্রস্তাব দেয় টিনা।
“থামো তো! ‘আঙ্কল’ বলেছ যখন, তখন খাওয়ালে দোষ কী?” মৃদু ধমকের সুরে বললেন অযুতানন্দ, “তা এত দিন সিঙ্গল কেন? দেখতে ভাল, বড় চাকরি…”
“বাবা মারা যেতে চাপে পড়ে গেলাম। লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দরকার ছিল…”
গল্পে-গল্পে খানিক সময় গেল।
এক সময় অযুতানন্দ বললেন, “শঙ্খ নামে আমার ডিপার্টমেন্টের গেজেটেড অফিসার ছেলেটির বিয়ের চেষ্টা চলছে। আমাকে খুব ভালবাসে, সম্মান দেয়। এখনও যোগাযোগ রাখে। হ্যান্ডসাম, তোমারই বয়সি। ফোন নম্বর দিচ্ছি। বাড়ি গিয়ে মাকে যোগাযোগ করতে বোলো। আর, আজই বাড়ি ফিরে উড়িয়ে দেব এই ‘চকমকি’ অ্যাপটা— বাপ রে! এ সব কি আমার কম্মো?”
“তবে আঙ্কেল, বয়সকালে যা অক্ষয় কুমারের মতো হ্যান্ডসাম ছিলেন, তখন হলে আপনার সঙ্গেই ডেটিং করতাম শিয়োর!” টিনা মুচকি হাসে। অযুতানন্দ হাসেন প্রাণ খুলে।
একেই বলে যোগাযোগ! শঙ্খ আর টিনার বিয়েটা হয়ে গেল বেশ ঘটা করেই। কিছু দিন বিয়ের হুল্লোড়ে দিব্যি সময় কাটল অযুতানন্দর। তিনি তো আবার ‘বরের ঘরের পিসে আর কনের ঘরের মেসো’ বলে কথা। টিনার মা যূথী অযুতানন্দর পরামর্শ ছাড়া এক পা ফেলেননি। মাত্র কয়েক মাসে টিনা মেয়েটাও কেমন আত্মীয়তার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে তাকে। বিয়ে মিটে গেলে আবার পুরনো রুটিনমাফিক একঘেয়ে জীবনে ফিরে এসেছেন অযুতানন্দ।
হঠাৎই এক দিন টিনার ফোন, “আঙ্কল, আজ আমাদের সেই কফি শপে চলে এস, সন্ধে ছ’টায়। অফিসফেরত আমরাও আসব।”
ফোনে টিনার নিমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হন অযুতানন্দ। মেয়েটা বোঝে তাঁর একাকিত্ব। যথাসময়ে সেজেগুজে কফি শপে গিয়ে সে দিনের টেবিলটাই পেয়ে গেলেন। একটু পরেই অবাক অযুতানন্দ দেখেন, অনভ্যস্ত জড়তায় ভিতরে এলেন টিনার মা যূথী।
“আরে আসুন আসুন, আপনি আসবেন বলেনি টিনা।”
“আমাকেও তো বলেনি আপনার কথা…”
তাতে অবশ্য অসুবিধে হয় না দু’জনের। শঙ্খ-টিনার অপেক্ষায় না থেকে সোৎসাহে অযুতানন্দ কফি নিয়ে এলেন, তার পর দু’জনে মেতে উঠলেন টিনাদের বিয়ের গল্পে আর টিনার শ্বশুরবাড়ির প্রশংসায়। কখন যে ক্রমশ গল্পের পরিধি বিস্তৃত হয়ে তাঁরা অতীতের পাতায় চলে গেলেন, খেয়ালই রইল না দু’জনের। জমাট নিঃসঙ্গতার কুয়াশা ক্রমশ অনেকটাই পাতলা হয়ে এল কি?
“আরে আটটা বেজে গেল! কই ওরা তো এল না!” যূথী সচকিত হন।
“আমার ধারণা ওরা আসবে না।”
“কী ফাজিল দেখেছেন!”
“আমাদের তো ভালই লাগছে, আমরা কিন্তু ওদের আগেই ফোন করতে পারতাম! তাই না?”
যূথী লাজুক চোখে তাকান, “ভুলেই গেছিলাম। দাঁড়ান ফোন
করি…”
“একদম না। করলেও আসবে ভেবেছেন? প্ল্যান করেই তো করেছে কাণ্ডটা!” বলেন অযুতানন্দ।
“ছিঃ!”
“ছিঃ কেন? আপনার-আমার সময়টা দারুণ কাটল কি না?”
অক্ষয় কুমারের মতো দেখতে মানুষটা, ভাবলেন যূথী। যূথীর গালের মিষ্টি টোলটা নজর এড়াল না অযুতানন্দর।