Abosar

গুপ্তধন

হিমি মিত্র রায়

জেম্মা, আর-একটা চিকেনের পিস দাও না! দেখো না, ভটকু শুধু আমার প্লেট থেকে তুলে নিচ্ছে!’’

‘‘জেম্মা, টুকুনদি মিথ্যে বলছে, আমি নিইনি, নিজেই সব সাবাড় করে আমার নামে দোষ দিচ্ছে!’’ 

‘‘বাবা! দু’জনের কথাই ঠিক, কেউ মিথ্যে বলছে না। হল তো?’’ চিকেনের হাড়ওয়ালা পিস টুকুনকে দিতে দিতে কথাগুলো বলল ইন্দ্রাণী। টুকুন সলিড মাংস খেতে পারে না। হাড় চিবোতে ভালবাসে।

‘‘কাকিসোনা, টুকুন কিন্তু সত্যি বলেছে, জানো? আমি দেখেছি ভটকু ওর প্লেট থেকে তুলে নিল।’’

‘‘থামবি তোরা? ছোট ভাই না তোদের? একটু দুষ্টুমি করলই বা, তাতে হয়েছেটা কী! এ বার তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর! বিকেলে কোথায় যাওয়া আছে খেয়াল আছে তো?’’ ইন্দ্রাণী ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল মুচকি হেসে।

 

‘‘এই  শাড়িটা পরি? দেখো তো!’’

ফাইল গোছাতে গোছাতে মুখ উঁচিয়ে নিবেদিতার দিকে ঘুরে শঙ্খ বলল, ‘‘না প্লিজ়, শাড়ি নয়, বম্বে থেকে যে  বেল বটম্সটা কিনে দিলাম, সেটা পরো। দারুণ লাগবে তোমায়! আর সিনেমা দেখতে দেখতে আমরা বেশ কলেজের মতো...’’

‘‘ধ্যাত! পাজি কোথাকার!’’  

বিছানা থেকে উঠে এসে পিছন থেকে নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরল শঙ্খ, বলল, ‘‘পরো না প্লিজ়, একদম কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের নিবেদিতা মনে হবে তোমায়।’’

‘‘ইস, তুমিও পারো! মা, বাপি, কাকিসোনা, ঠাম্মা, সবাই এক সঙ্গে যাচ্ছি, ভুলে যাচ্ছ? ওদের সামনে ও সবে আমি একদম স্বচ্ছন্দ নই। এটা কি শুধু দু’জনে যাচ্ছি না কি?

‘‘ওরা কি তোমায় বারণ করে কখনও?’’ 

‘‘উঁহু, উল্টে বলে সব রকম ড্রেস পরতে, শাড়ি পরার তো সময় পড়েই আছে। তবুও আমি চেষ্টা করি আমার কর্তব্য করতে।’’

‘‘জানি তো। তুমি সব রকম চেষ্টা করো, সকলে মিলে, সবার মন রেখে থাকতে!’’ বলে কানের পিছনে আলতো করে একটা চুমু দেয় শঙ্খ নিবেদিতাকে।

‘‘উঁহু, তোমরা সবাই এত ভাল, তাই আমাকে এত ভালবাস, এমন শ্বশুরবাড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, সকলের এ রকম ভাগ্য হয় না!’’ শঙ্খর দিকে ঘুরে ওকে কথাগুলো বলে হাসল নিবেদিতা।

‘‘আচ্ছা ম্যাডাম, এ বার রেডি হও। পাঁচটা থেকে শো, লেট করলে সিনেমা আরম্ভ হয়ে যাবে।’’

 

‘‘এই কাবেরী, চায়ের জল ফুটে গেল তো, শিগ্‌গির চা-পাতা দিয়ে দে!’’

‘‘দিচ্ছি দিচ্ছি! ছাদ থিকে নাবতেও দিবানা নে কি?’’

‘‘আহা রাগিস কেন রে? তোর মামা তখন থেকে চিৎকার করে চলেছে! বুড়োটা একটু আগেই ভাত খেয়ে উঠল, আবার এখুনি তার চা চাই। শান্তি করে একটু সিনেমায় যাব বলে শখ করে টুপসির দেওয়া বিষ্ণুপুরি সিল্কটা পরছি... তাও তাড়াহুড়ো!  দূর বাবা!’’

‘‘বড়দিভাই, তুমি টুপসির দেওয়া শাড়িটা পরছ? তবে আমি তাতাইয়ের দেওয়া শাড়িটা পরি, বলো? দারুণ হবে কিন্তু!’’

‘‘পর না, বেশ হবে! দেরি করিস না কিন্তু মেজো, শঙ্খ কিন্তু তাড়া দিয়ে রেখেছে। বুড়িসুড়ি মানুষ, অন্ধকারে সিনেমা হলে ঢুকতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ব, তারপর এক চিত্তির হবে! চল চল, রেডি হয়ে নে শিগ্‌গির!’’

‘‘শোন না বড়দিভাই, শঙ্খ বলেছে, খুব সুন্দর সেজেগুজে যেতে, ওখান থেকে বেরিয়ে সবাই গ্রুপ ফটো তুলব! প্রস্তাবটা অবশ্য নিবেদিতার!’’

 

‘‘ও বৌদি, তাড়াতড়ি করুন, ভাঙা বাড়িতে অন্ধকারে কী খুঁজছেন? সাপখোপ থাকতে পারে কিন্তু!’’ 

দৌড়ে গিয়ে ট্যাক্সিওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে এল শ্রীতমা, শ্রীতমা সেন। গ্রিলের বড় গেটটা শব্দ করে বন্ধ করে ঘাসজঙ্গল পেরিয়ে আবার সিঁড়ির তিন ধাপ উঠে হলঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথে। লোকজন রাস্তাঘাটে নেই প্রায়, আশপাশের বাড়িগুলোও চুপচাপ। লোকে দেখলেই নানা প্রশ্ন করবে, কী করতে এসেছে, কী এত খুঁজছে, উফ! অতিকষ্টে স্বামীকে ম্যানেজ করে এসেছে, ছেলে-বাপে হোটেলে বসে শেয়ার মার্কেটে ডুবে আছে, সেই ফাঁকে। ভাগ্যিস শান্তনুর একটা কাজ পড়েছিল শিলিগুড়িতে, নয়তো এটাও হত না।

রাতের ফ্লাইটে ওদের কলকাতা ফেরা, তার পর দুবাই। আবার কবে আসা হবে, আদৌ হবে কি না, জানে না শ্রীতমা। নিজের জায়গা ছেড়েছে প্রায় ত্রিশ বছর হল, সংসারের চাপে নিজের সত্তাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে ও। স্বামী বিজ়নেসম্যান, ছেলেও সেই পথেই হাঁটছে। মায়ের জন্য ভালবাসা গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ। স্ত্রী, মা কোনও দিকেই নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনি শ্রীতমা।

ভাঙা দরজাটা একটা শিকল দিয়ে আটকানো ছিল, ওটাকে খুলে ভিতরে ঢুকল শ্রীতমা। পা টিপে টিপে। মাথার উপরকার সিলিং এক দিকে ঝুঁকে পড়েছে। মেঝে একপাশে খুঁড়ে রাখা। শব্দ পেয়ে বাগানের ছোট্ট ঘর থেকে শীর্ণকায় এক বৃদ্ধ বেরিয়ে এল।

‘‘কারে চাই?’’

‘‘কাউকে না। আপনি কি কেয়ারটেকার?’’

চশমা ঠিক করে নিয়ে তাকে ভাল করে দেখে লোকটা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে, ‘‘আপনারে তো ঠিক ঠাহর করতে পারতেসি না, আসলে বয়স তো সত্তুর ছুঁইল প্রায়, চোখেও ছানি কাটানো হয় না। কে আপনি?’’

শ্রীতমা একটু চুপ করে থেকে বলে, ‘‘আমি এ বাড়ির মেয়ে। শেষ কবে এসেছিলাম মনে নেই। এ বাড়ি ভাগ হওয়ার আগে।’’

‘‘অ! আচ্ছা আপনি বলতে পারবেন, আমার এই মাসের বেতনটা এখুনো পাই নাই ক্যান? চোখটা বড্ড জ্বালাতন করতাসে, বুঝলেন দিদি, কী এক খান ডরপ চোখে দিতে কইসে ডাক্তারবাবু, সেইটা কেনার পয়সাও নাই। রাত-বিরাতে কারা কারা চুরি ছিনতাই করতে ঘরে ঢুইকে বড় উৎপাত করে, আমি কিছু করতে পারি না। শুনছি ফ্যালেট হবে এইখানে, চৌধুরীবাবু আমারে কাজে লাগায়ে দিলেন। কইলেন টাকা নিয়া সমস্যা হইব না, কিন্তু...’’ একটু চুপ থেকে তার পর বললেন, ‘‘আপনি কিছু করতে পারেন?’’

‘‘দেখছি!’’

দু’হাত জোড় করে নমস্কার করে বয়স্ক লোকটি। ফোকলা দাঁতে হাসে। বলে, ‘‘যান, ভিতরে যান, এই নিয়া যান টর্চ, ভিতরে অন্ধকার খুব।’’

টর্চ নিয়ে ভিতরে ঢোকে শ্রীতমা। ওর নিজের চোখে বেশ পাওয়ার। বয়স তো কম হয়নি, সামনের আশ্বিনে বাহান্ন পেরিয়ে যাবে।

 

‘‘এই টুকুন, শিগ্‌গির যা। রঞ্জা দাঁড়িয়ে রয়েছে কত ক্ষণ, আর সাজতে হবে না। তুই কলেজ যাচ্ছিস কিন্তু, ভুলিস না আবার!’’

‘‘যাচ্ছি মা, যাচ্ছি!’’

ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল ওরা।

 

এই তো সেই জায়গা, যেখানে কলেজে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে গিয়েছিল টুকুন। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেখতে পেল বাহান্ন বছরের শ্রীতমা সেন ওরফে টুকুন। 

কিন্তু ও একটুও মন খারাপ করবে না, ঠিক করে এসেছে। যেটা খুঁজতে এসেছে ওটা পেয়ে গেলেই জীবন সার্থক, আর কিচ্ছু চাই না। মধ্যবয়সে খুব প্রয়োজনেই ছুটে এসেছে এত দূর থেকে। বাইশ বছর বয়সে শান্তনুর হাত ধরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, কোনও পিছুডাক শোনেনি। তার পর পাড়ি দিয়েছিল দূর দেশে। কত বার ফিরে আসার কথা ভেবেছে, কিন্তু পারেনি। শান্তনুর সঙ্গেই রয়ে গিয়েছে বহু কষ্ট সয়ে। মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল বিয়ের ছ’-সাত বছর পর, মা চলে যাওয়ার পর সব ওখানেই থেমে গেল। বাড়ির সবাই আলাদা যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। ভটকু ভিয়েনাতে থাকে, শুনেছিল। শিনু কোথায় কিছু জানে না। জেম্মা, কাকিসোনা, মেজোমা, কেউ আর বেঁচে নেই। কাকিমণি আর শঙ্খকাকাও কোথায় কে জানে! তম্পা-ই জানিয়েছে বাড়ি ভাগের বিষয়ে। ওর সঙ্গেই একটু-আধটু যা কথা হয়, তাও খুব কম। দুই মেয়ে নিয়ে ওর সুখের সংসার।

 

ঝপ করে একটা টিকটিকি মাথায় পড়ল, চমকে গেল শ্রীতমা। নিঃশব্দ দেওয়ালগুলোও যেন ওর সঙ্গে সঙ্গে চমকাল। এ দিকে সূর্য প্রায় অস্তাচলে। নিভু-নিভু আলো গিয়ে পড়ল ও দিকের কাচ-বসানো কাঠের ভাঙা আলমারিটার উপর। ফাঁকা আলমারিটাই জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে শুধু, কী করে যে চুরি না হয়ে রয়ে গিয়েছে! শ্রীতমার চোখটা জ্বলজ্বল করে উঠল। ওর সেই দামি জিনিসটা, যেটা লুকিয়ে রেখেছিল ভাল করে, যাতে শান্তনুর সঙ্গে পালানোর সময় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হল যে, ওটা নিতে পারেনি। সেই জিনিসটা খুঁজতেই আসা। না! আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সময় এগোচ্ছে দ্রুত।

অতি সন্তর্পণে পাশের ঘরে গেল সে। হোঁচট খেল ভাঙা ইটে। ঘরের লাল মেঝেতে অনেক ফাটল, আগাছায় ভর্তি। সাবধানে পা ফেলতে ফেলতে সিঁড়ির পাশে ওদের দু’জনের ঘরের সামনে আসে, ও আর তম্পা যে ঘরে ঘুমোত। কেউ দেখতে না পায়, এমন জায়গায় লুকিয়েছিল জিনিসটা, হাতে পেয়ে গেলেই হল। চিন্তা নেই, বাকি জীবনে আর কোন আক্ষেপ থাকবে না। কাজ এখনও শুরু হয়নি বাড়ি ভাঙার, শুধু চিন্তা, এতগুলো বছর পর ওটা কি আর পাবে! চুরি হয়ে যায়নি তো?

সন্ধে হয়ে গিয়েছে। আশপাশের বাড়ি থেকে শাঁখ বাজানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। ওর মোবাইলও বেজে উঠল শব্দ করে।

‘‘কী হল মা, আর কত দেরি করবে? ফ্লাইট তোমার জন্য ওয়েট করে থাকবে না কি? বাপি কিন্তু রেগে আছে ভীষণ!’’

‘‘যাচ্ছি বাবা!’’ 

কেটে গেল ফোন।

‘তোর বাপির আমার উপর রাগ ছাড়া আর কী-ই বা করার আছে! সেটাই তো দেখে এসেছি, আর কিছু তো দেখিনি কখনও!’ মনে-মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রীতমা।  অন্যমনস্কতা কাটিয়ে আবার বাস্তবে ফেরে সে।

পা টিপে-টিপে ঢোকে, টর্চ জ্বালিয়ে চার দিক মন দিয়ে দেখে নিচ্ছে ও। কিছু দিনের মধ্যেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এ বাড়ি। তার জায়গায় উঠবে বহুতল। চাপা পড়ে যাবে মুখার্জিবাড়ির ইতিহাস।

খস করে দেওয়াল থেকে চাঙড় ভেঙে ওর পায়ের কাছে পড়ল। একটুর জন্য মাথায় পড়েনি।

ওখান থেকে সরে গেল শ্রীতমা। ঘরের পাশেই লাগোয়া ছোট্ট জায়গায় ছিল ঠাকুরের আসন। দুরুদুরু বুকে সেই জায়গাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ঠাকুরের আসনটা কংক্রিটেরই। বাড়ি তৈরির সময় একবারে বানানো হয়েছিল, দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো। শুধু সেখানকার ঠাকুরের মূর্তিগুলো নেই। শ্রীতমা চলে এসেছে একদম সামনে। দুর্মূল্য জিনিসটা নিয়ে নিতে পারলেই শান্তি।

পা ভাঁজ করে নীচে বসল ও। ধুলোর মধ্যেই। কোমরের ব্যথাটা কম, নীচে বসলেও কষ্ট হল না। আসলে ঝুঁকে পড়ে কোনও কিছু করতে গেলে মাথায় চক্কর হয়। সার্ভিকাল স্পন্ডিলাইটিসের রোগী। তার পর মাথা ঘুরেটুরে পড়ে গেলে আর দেখতে হবে না।

এখানে বসে ওরা ভাই-বোনেরা মিলে কত দুষ্টুমিই না করেছে! নাড়ু-মুড়কি চুরি করে খাওয়ার তো কম্পিটিশন চলত ওদের মধ্যে। মা কাকিমা, জেম্মারা যেই পুজোয় বসত, চোখ বন্ধ করলেই ঠাকুরের থালা থেকে উধাও হয়ে যেত সব প্রসাদ। মনে পড়তেই হেসে ফেলে শ্রীতমা।

 

টর্চ দিয়ে আসনের নীচে দেখছে ও। খুব সরু একটা ফাঁক। সবার নজর পড়ার কথা নয়। ওখানেই একটা খবরের কাগজে মুড়ে ওই জিনিসটা রেখেছিল সেই কবে। চুরি হয়ে যাওয়ারই কথা, তবে এই জায়গাটা সহজে বোঝা যায় না। ভয়ে আর টেনশনে ডান হাতের দুটো আঙুল ভিতরে ঢোকাল শ্রীতমা। অন্য হাত দিয়ে টর্চ ধরে রয়েছে। চোখ বুজে ফেলল ও। 

এই তো! কাগজের কিছু হাতে লাগছে! উফ! খুব সাবধানে টেনে বার করল কাগজে মোড়া জিনিসটা। শক্ত হয়ে আটকে ছিল। আনতে গিয়ে হলুদ হয়ে যাওয়া ধুলোর পরত পড়া কাগজের মোড়কটা টুকরো-টুকরো হয়ে ভাঁজে-ভাঁজে কেটে এল। 

হাত দিয়ে টুকরোগুলো সরিয়ে 

দিল শ্রীতমা। জ্বলজ্বল করছে ওর চোখের মণিদু’টো!

সুন্দর কাঠের নকশা করা ফ্রেমে বাঁধানো ওদের পরিবারের গ্রুপ ছবি।

চশমার কাচের মধ্যে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। শ্রীতমা তাড়াতাড়ি ওর ওড়নার 

খুঁট দিয়ে মুছে ফেলল। ঝাপসা চোখে ভাল করে দেখতে পাচ্ছিল না, 

চোখ মুছে টর্চের আলো ফেলল ছবিটার উপর।

অনেকটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছে, তবুও বোঝা যাচ্ছে ভালই। ওড়না দিয়ে ঘষে-ঘষে পরিষ্কার করল ছবিটা। সবার পিছনে বাঁ দিকে জেঠু, তার পর কাকাই, শঙ্খকাকা, বাপি, সামনে জেম্মা, কাকিসোনা, মা, কাকিমণি, তার সামনে বসে ঠাম্মা-দাদু, আর ওঁদের কোলে ঘিরে রয়েছে টুকুনরা অর্থাৎ ওরা। আহ! মনটা জুড়িয়ে গেল শ্রীতমার। কত বছর আগে সিনেমা দেখে ফিরে আসার সময় স্টুডিয়োয় তুলেছিল এই ফটো। মনের মণিকোঠায় সারা জীবনের জন্য জায়গা করে রাখা ওর পরিবারের সকলকে কাছে পেল শ্রীতমা। 

যে-কারণে শিলিগুড়ি আসা, খুঁজে পাওয়া গেল সেই গুপ্তধন!

 

ছবি: প্রীতম দাশ