Abosar

গুপিনাথ

বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়

হঠাৎ করেই সজাগ জগন্নাথের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। এক বার তাকিয়েই নানা তরঙ্গের যাতায়াত টের পেলেন মস্তিষ্কে। গুরুত্ব না দিতে চাইলেও দিতে হল। চোখ ফেরালেই মস্তিষ্কের উসকানি। অস্থির তরঙ্গ স্থির থাকতে দেয় না। শেষমেশ বাধ্য হলেন জরিপে।

টাকা দিয়ে যায় না কেনা সুখ। সত্যিই কি যায় না? টাকা থাকলে অনায়াসেই একটা বাচ্চা দত্তক নেওয়া যায়। আর তা হলেই সংসার সুখের। অন্তত জগন্নাথ মণ্ডলের ক্ষেত্রে তেমনই। বিস্তর ডাক্তার-বদ্যি করেও যখন বাচ্চার সম্ভাবনা দেখা দিল না, তখন দত্তক নেওয়াই স্থির হল। কিন্তু বিধি বাম। বেসরকারি কোম্পানির সামান্য চাকুরেকে কোনও সংস্থাই দত্তক দিতে রাজি নয়। যাদের নিজের ভবিষ্যৎই টলোমলো, তারা গড়বে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ! বয়সও থেমে থাকল না। তবুও কমলিনী নাছোড়। মানসিক রোগীই প্রায়। আধুনিক চিকিৎসার খরচ সাধ্যাতীত। তাই দেবস্থানে সঙ্গ দেওয়াই সঙ্গত মনে হল জগন্নাথের। খরচও সাধ্যের মধ্যেই। 

স্বামী-স্ত্রী-সন্তান, সুখী পরিবার। তবুও কেন তরঙ্গায়িত হচ্ছে মস্তিস্ক? কখনও-সখনও এমন হয় জগন্নাথের। যেন ধরে ফেলেন প্রকৃতি-সঙ্কেত। ফলও মিলেছে অনেক বার। তাই জরিপের মাত্রা বাড়ালেন। উদাস দৃষ্টিতে বাচ্চা কোলে মা। হাসিমুখের জটলায় বেমানান ওই উদাস দৃষ্টিই কি তরঙ্গের উৎস? বাচ্চাটি কি অসুস্থ? সাহায্য প্রয়োজন? কিছু টাকা দেবেন? সঙ্কোচ হল জগন্নাথের। টাকার হয়তো প্রয়োজনই নেই। অসুখটা হয়তো দুরারোগ্য, তাই মানত করতে চলেছে দেবস্থানে। নিশ্চয়ই তাই। তাই তো বাচ্চাটির বাবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। চঞ্চল দৃষ্টি এ দিক-ও দিক। যেন খুঁজছে ঈশ্বর। দেখা পেলেই জানাবে প্রার্থনা।

নৌকো ঘাটে লাগতেই হুড়োহুড়ি। ভিড় সামলে কমলিনীকে নামালেন জগন্নাথ। সুখী পরিবারটি বাদে বাকি যাত্রীরা তত ক্ষণে পাড়ে। ভুরু কুঁচকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে দৌড়ে চলা মানুষগুলোর দিকে তাকালেন জগন্নাথ, নিজের মনেই বললেন, ‘‘শ্রাদ্ধ দেখতে এত উৎসাহ!’’

জগন্নাথকে দেখে মায়া হয় কমলিনীর। মানুষটাকে কত কষ্টই না দিচ্ছে। কিন্তু সে কষ্ট কি ইচ্ছে করে দেওয়া? বিয়ের পর থেকে অভাব গায়ে মাখেননি কোনও দিন। যেটুকু সম্বল, সেটুকু নিয়েই সুখে থাকতে চেয়েছেন। চাহিদার মধ্যে ছিল শুধু একটা সন্তান। এখনও আছে। উপায় নেই জেনেও আছে। থাকবে না-ই বা কেন? ধন নয়, মান নয়,  শুধুই তো একটা সন্তান। বেশি চাওয়া হল? এইটুকুও পূরণ করবেন না বিধাতা? তবে যে লোকে বলে তিনি করুণাময়? ভেঙে পড়েও মন শক্ত করেন কমলিনী। লোকে পাগল বললেও আমল দেন না। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ান মন্দির-মসজিদ।

   

বৃন্দাবনে চলেছেন মহাপ্রভু। অন্য পার্ষদদের সঙ্গে গোবিন্দ ঘোষও। মহাপ্রভুর নির্দেশে সংসারধর্ম পালনের জন্য কাটোয়ার কাছে অগ্রদ্বীপে রয়ে গেলেন গোবিন্দ। গঙ্গাস্নানের সময় খুঁজে পেলেন কষ্টিপাথর। দাঁইহাটের কারিগর কষ্টিপাথরের উপর হাতির দাঁতের চোখ বসিয়ে তৈরী করল গোপীনাথ, অপরূপ কৃষ্ণমূর্তি। স্ত্রী আগেই গত হয়েছিলেন। একমাত্র ছেলেও যখন মারা গেল, তখন বন্ধ করে দিলেন গোপীনাথের সেবা-পুজো। এক দিন স্বপ্নে গোপীনাথ জানতে চাইলেন, ‘‘এক ছেলের জন্য অন্য ছেলেকে কষ্ট দেওয়া কি উচিত?’’ গোবিন্দর পাল্টা প্রশ্ন, পারবেন গোপীনাথ, ছেলের দায়িত্ব পালন করতে! করবেন নিজের হাতে বাপের শ্রাদ্ধ! অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন ভগবান। গোবিন্দ ঘোষের ছেলে বেঁচে থাকলে, সে যত বছর বাঁচত, তত বছরই বাবার শ্রাদ্ধ করত। কিন্তু মানুষের বিশ্বাসে পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে ভগবানের এই শ্রাদ্ধক্রিয়া। চলবেও অনন্তকাল। মেলার তোরণে বড়-বড় করে লেখা থাকবে, ‘গোবিন্দ ঘোষের পারলৌকিক ক্রিয়া উপলক্ষে অগ্রদ্বীপের মেলা’।

 

“তোমার বাচ্চা কি অসুস্থ?”

প্রশস্ত আমবাগানে মানুষজন বিশ্রামে। তারই মধ্যে একাকী বাচ্চা কোলে মেয়েটি। জগন্নাথের প্রশ্নের উত্তর দিল না। মাসপাঁচেকের বাচ্চাটিকে আঁচলে মুড়ল।

“দেখো, এ সব ধর্মস্থানে হত্যে-টত্যে দিয়ে কিছু হয় না। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাও। নইলে রোগ তো সারবেই না, হাবিজাবি চরণামৃত খেয়ে আরও বাড়বে।’’

এ বারও উত্তর নেই। দমে গেলেন জগন্নাথ। গায়ে-পড়া আচরণ হয়তো পছন্দ করছে না মেয়েটি। কথাগুলো শুনছে কি না, তা-ও বুঝতে পারলেন না। বুঝতে পারলেন না, আগ বাড়িয়ে কেনই বা বলতে এলেন। সহানুভূতি, নাকি মস্তিষ্কতরঙ্গের উদ্দীপন? আর কথা না বাড়িয়ে মন্দিরের দিকে পা বাড়ালেন। গোপীনাথ দর্শনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে কমলিনী।

সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। হলে কি সমুদ্রগড়ের নিশ্চিনপুর গাঁ থেকে এই অগ্রদ্বীপে আসতে হয়? দীর্ঘশ্বাস ফেলল মালতী। অথচ এক সময় কত কী-ই না ভেবেছিল। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল নাগালেই। হঠাৎ দমকা হাওয়া, তার পর ঝড়। সেই যে সংসার-খুঁটি ওপড়াল, হাজার ঠেকনো দিয়েও আর খাড়া করা গেল না। এখন তো হারাতে হবে সবেধন নীলমণিও। প্রথম পরিচয়েই এই সব বলা যায়? বলে লাভও তো নেই। ভগবান যার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন, তার জন্য কে কী করতে পারে? তবে সামনে যে বিপদ আসছে, তা থেকে উদ্ধার করতে পারে ভগবান নন, কোনও মানুষই। উদাস মনে অলীক আশায় মালতী। মিলবে দেখা সেই মানুষের?

“এই কড়া রোদ আর লাগিও না। ছায়ায় এসে একটু বোসো, দর্শন তো পরেও করা যাবে।’’

“খেপেছ! এই লাইন এক বার ছাড়লে আর পাব? অত দূর থেকে এসে গুপিনাথকে মনোবাঞ্ছা জানাব না?” কমলিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গোপীনাথ আজ স্বরসঙ্গতিতে ‘গুপিনাথ’।

“তা হলে তুমি দাঁড়াও, আমি একটু মেলা ঘুরে দেখি।’’

খই, চিঁড়ে, মুড়কি, মঠ, কদমা, কলার সরা নিয়ে মানুষের ঢল আসছে তো আসছেই। কীর্তন গাইতে-গাইতে কেউ হরিনামে বিভোর, কেউ দু’হাত তুলে নাচতে ব্যস্ত। তারই মধ্যে জগন্নাথের চোখে পড়ল মেয়েটির স্বামীকে। সাধুদের আখড়ায় বসে ছিলিমে টান মারছে।

“আপনি তো অদ্ভুত! বাচ্চা অসুস্থ আর আপনি গাঁজা টানছেন?”

“আপনিও তো টেনেছেন।’’

“মানে?”

“আমার বাচ্চার শরীর খারাপ আমি জানি না, আপনি কী করে জানলেন স্যার?” ছ্যাতলা-পড়া হলদে দাঁতে দেঁতো হাসি।

“লজ্জা করে না আপনার...” মেজাজ হারালেন জগন্নাথ।

“লজ্জা সবাইকে মানায় না স্যর। পেটে ভাত জুটবে না,” দেঁতো হাসি কখন যেন বাঁকা।

গেঁজেলের সঙ্গে তর্ক বৃথা। গঙ্গার দিকে পা বাড়ালেন জগন্নাথ। খোলা হাওয়ায় মন শান্ত করতে চাইলেন।

গঙ্গার দিকে তাকিয়ে বুকটা হু-হু করে উঠল মালতীর। নিঠুর নিয়তি না দেবে মরতে, না দেবে বাঁচতে। আনমনেই চোখে জল। সুবল বেঁচে থাকলে এই দিন কিছুতেই দেখতে হত না। বৌ বলতে ছিল অজ্ঞান। সেই মানুষটা বলা-কওয়া ছাড়াই হঠাৎ করে চলে গেল। জমির বিবাদ সালিশিতেও সমাধান হল না। প্রথমে লুটপাট, তার পর জ্বলল বাড়ি। রেশ কাটতে না-কাটতেই নিশির ডাক। সেই যে বেরল, ফিরল পর দিন লাশ হয়ে। 

মেয়েটিকে আবার দেখতে পেলেন জগন্নাথ। টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে বাচ্চাটার চোখে-মুখে দিচ্ছে। বাচ্চাটা তা হলে অসুস্থই। এত ক্ষণে বোধগম্য হল মস্তিষ্কতরঙ্গের রহস্য। দৌড়ে গেলেন।

“ওর কি শরীর খারাপ লাগছে?”

“হ্যাঁ, দেখুন না... বেশ ছিল, হঠাৎ করেই কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ছে!”

“খিদে পেয়েছে বোধ হয়,” সস্নেহে বলেন জগন্নাথ। মেলায় আজ চিঁড়ে মহোৎসব। কিন্তু বিতরণ শ্রাদ্ধক্রিয়ার পরে। মেয়েটিও হয়তো অভুক্ত। কাছে নিশ্চয়ই টাকা নেই। গেঁজেল স্বামীটাকেও দেখা যাচ্ছে না।

“না, না... খেতেও চাইছে না! কী যে করি! কোনও ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে পারেন?” ভরসা করতে চাইল মালতী। মেলায় এত মানুষ, কেউ খোঁজ নেয়নি এই মানুষটা ছাড়া।  তা হলে এই মানুষই কি ‘সেই’ মানুষ? 

“মেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলেছে। চলো ওখানে নিয়ে যাই।”

চৈত্র সংক্রান্তির রোদ সহ্য করা সহজ নয়। হঠাৎই শরীরে আনচান শুরু হল কমলিনীর। একটু জলের জন্য যখন জগন্নাথকে খুঁজছেন, তখনই গুঞ্জন। তার পরেই লাইন ছত্রখান। সকলের সঙ্গে কমলিনীও লাইন ছেড়ে দৌড়ে গেলেন গুপিনাথ মন্দিরের পাশে গোবিন্দ ঘোষের সমাধিমন্দিরের সামনে। ভক্তের কাছে আসছেন ভগবান। গুপিনাথের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে পিণ্ড আর কুশ। খসে পড়লেই প্রতিশ্রুতি পালন।

দৌড়চ্ছেন জগন্নাথ। মানুষজন, দোকানপাট, কিছুই তোয়াক্কা করছেন না। তোয়াক্কা করছেন না নিজের বয়সও। হাঁপ ধরলেও তাই বিশ্রামের কথা মাথাতেই আসছে না। দৌড়, শুধুই একবগ্গা দৌড়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছতে হবে গুপিনাথ মন্দিরে।  

গুপিনাথ আসছেন। কাছা পরে ভক্তদের কোলে চড়ে। মন্দির থেকে বেরতেই দু’হাত উঁচিয়ে গর্জে উঠল জনতা, ‘জয় গুপিনাথ’। শুরু হল এক বার ছোঁয়ার জন্য আকুলিবিকুলি। যেন নিজের সন্তান।

“হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

“হাসপাতাল! কেন?’’

“স্যালাইন দিতে হবে। যা গরম, সহ্য হয় এইটুকু বাচ্চার!” জগন্নাথের প্রশ্নে ডাক্তারের সিদ্ধান্ত।

“চলো, হাসপাতালে নিয়ে যাই,” কিছু করার জন্য জগন্নাথ ব্যাকুল।

“না!” আচমকাই মালতী কঠোর।

দৌড়ে চলেছেন জগন্নাথ। পৃথিবী উপেক্ষা করে দৌড়ে চলেছেন। সারা জীবন তো অস্তিত্ব রক্ষার দৌড়ই দৌড়েছেন। বিনিময়ে মিলেছে কোনও মতে টিকে থাকার ছাড়পত্রটুকু। সুখের সিকি ভাগও জোটেনি। কিন্তু এই দৌড় একেবারেই অন্য রকম। শেষ করতে পারলেই আজীবন সুখের চাবিকাঠি। 

এগিয়ে আসছেন গুপিনাথ। ‘জয় গুপিনাথ’ ধ্বনিতে মুখরিত সমাধি প্রাঙ্গণ। মানুষজন বাঁধভাঙা আবেগে বেসামাল। এক বার ছুঁতেই হবে পরম প্রিয়কে। কেউ হুমড়ি খেয়ে মাটিতে। কেউ শাড়ি ছিঁড়ে, চটি হারিয়েও ভ্রুক্ষেপহীন। দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে কমলিনী। সাধের দেবতা সাধ্যের মধ্যে, বিশ্বাস হয়!

“তা হলে তুমিও চলো ওর সঙ্গে।”

“না দাদা, সে হয় না।”

“কেন হয় না? দু’টো পেট চালাতে পারলে তিনটেও পারব। তার পর তোমাকে কোনও কাজ খুঁজে দেব,’’ জগন্নাথ অধৈর্য। জানা হয়ে গিয়েছে গেঁজেলের পরিচয়। প্রমাণ না থাকলেও, ও-ই মালতীর স্বামীর খুনি। এখন তার নজর মালতীর দিকে। পুলিশ, নেতাদের সঙ্গেও ভাল খাতির। আড়কাঠির সঙ্গে সাঁট করে মেলায় আসা। উদ্দেশ্য, বাচ্চা বিক্রি। রোজগারও হল, ঝাড়া হাত-পাও হওয়া গেল।

“আমাকে না পেলে শ্বশুর-শাশুড়িকে ভিটেমাটি ছাড়া করবে ওই শয়তান। তখন কোথায় যাবে বুড়ো-বুড়ি? সুবলের ফেলে যাওয়া দায়িত্ব যে আমিই নিয়েছি দাদা,’’ হঠাৎ করেই মালতী যেন গ্রহান্তরের।

“আমাকেই কেন দিচ্ছ এই কঠিন দায়িত্ব? আমি কি পারব?” আকস্মিক ঘটনায় জগন্নাথ বিহ্বল।

“আপনিই তো পারবেন। মানুষ চিনতে আমার ভুল হয়নি দাদা,” মালতী ম্লান হাসে। এইটুকুই আশা, যদি নীলমণি পায় নিরাপদ আশ্রয়।

“তোমার কষ্ট হবে। মা কখনও থাকতে পারে সন্তান ছাড়া?” মরিয়া চেষ্টা জগন্নাথের। অন্যের সন্তানকে কেড়ে নিতে মন চায় না।

“ও আর আমার নয় দাদা। এখন থেকে আপনার। আমার তো সাধ্য নেই ওকে একলা মানুষ করার। তাই বিক্রিতে সায় দিয়েছিলাম। তবুও ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কার না কার হাতে পড়ে! এখন আর সে ভয় নেই। আপনার কাছে মানুষ হবেই,” মায়ের আশা, সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।

“বাচ্চা না পেলে তো খেপে উঠবে শয়তানটা। তখন কী করে সামলাবে তুমি?’’ জগন্নাথের আশঙ্কা। 

“যেমন করে পারি সামলাব। কিন্তু আপনি আর দেরি করবেন 

না দাদা। শয়তানটা চলে আসার আগেই পালান। অনেক পুণ্যি করেছিলাম তাই...” উল্টো মুখে হাঁটা লাগাল মালতী। এড়াতে চাইল দু’চোখের জল।

গুপিনাথ এগিয়ে আসছেন দুলকি চালে। প্রায় হাতের নাগালে। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কমলিনী। দু’চোখ ভরা জল। দেবতা-সান্নিধ্য এতই সহজ? এ যে কল্পনাতীত!

আপ্রাণ ছুটছেন জগন্নাথ। দ্রুত পৌঁছতে হবে কমলিনীর কাছে। সাত রাজার ধন এক বার কমলিনীর হাতে তুলে দিতে পারলেই নিশ্চিন্তি। সারা জীবনের অপ্রাপ্তি পুষিয়ে দেবেন এক লহমায়। তার পর দ্রুত ছাড়বেন মেলা। পৌঁছবেন হাসপাতালে। বাচ্চা বুকে দৌড়ে চলেছেন জগন্নাথ। দৌড়তে-দৌড়তেই বলে চলেছেন, “তোমার কিচ্ছু হবে না... কিচ্ছু হবে না... হাসপাতালে গেলেই তুমি ভাল হয়ে যাবে গুপিনাথ!’’