Abosar

কৃপণ

সপ্তর্ষি বসু

যখন খবর পেলাম যে ব্যয়কুণ্ঠ শশধরজেঠু আর নেই, তখন আমি বিশুদার মেসের দু’নম্বর পট্টির বাইরে চার নম্বরে লাইনে দাঁড়িয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করছি। হঠাৎই বন্ধু অসীমের ফোনটা আসে। প্রথমে কলটা ধরিনি, কারণ সকাল-সকাল খুব প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে বকতে ভাল লাগে না। কিন্তু চার বার টানা ফোন বেজে যাওয়ার পর প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়েই ফোন রিসিভ করেছিলাম। তখনই জানতে পারলাম যে, আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ কাজের মাসি ঝুমা অনেক ডাকাডাকির পরও ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ পায়নি। তখন পাড়ার ছেলেদের দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। ঢুকে দেখে খাটের উপর বুড়ো পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কাছে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করার পরও সাড়া না পেয়ে নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে নিশ্চিত হতে হয় যে, চুরাশি বছর বয়সে অবশেষে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।

অসীম অনেক করে যেতে বললেও আমি তেমন পাত্তা না দিয়ে ‘‘একটা জরুরি ফোন আসছে, তোকে পরে করছি...’’ বলে কাটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কোথাও যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। সেই থেকেই হয়তো ডিঙ্কিকে ব্যাপারটা বলে ফেলেছিলাম। ও তো শুনেই আমাকে তৎক্ষণাৎ গ্রামে যাওয়ার কথা বলে। চেষ্টা করেছিলাম ওকে বোঝাতে যে, আমি ওখানে অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু ওর পাপ-পুণ্য, দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে মিনিট পাঁচেকের জ্ঞান আমাকে কেমন যেন বাধ্য করল, অফিস না গিয়ে মাজদিয়ার টিকিট কাটতে।

এ বার একটু শশধরজেঠুর কথা বলা দরকার। তিন দিনের অজানা জ্বরে মা, তার পরের বছরই আচমকা ম্যাসিভ ব্রেন স্ট্রোকে বাবা চলে যেতে অনাথ আমার ঠাঁই হয়েছিল শশধর মজুমদারের কাছে। তিনি বাবার বড়মাসির ছেলে। উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, অবিবাহিত, গম্ভীর ভদ্রলোক আমার দায়িত্ব পেয়ে প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, বুঝতে পেরেছিলাম। তাই ওঁর কাছে তেমন ঘেঁষতাম না। উনিও আমার বিশেষ খোঁজখবর রাখতেন না, শুধু বছরে এক বার স্কুলের অ্যাডমিশন ফিজ় জমা দেওয়ার সময় ডাকতেন। হাতে ভর্তির টাকা গুঁজে দিয়ে দ্রুত স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘ এক বক্তৃতা দিতেন, আমার কাছে যার গূঢ় অর্থ ছিল, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের রাস্তা দেখো বাবা শুভ।’’

এ ভাবে বছরদুই কাটার পর নবম শ্রেণিতে উঠলাম। হরমোনের কারসাজিতে পিঠে দু’খানা বড়-বড় পাখা গজাল। নিষিদ্ধের অমোঘ আকর্ষণে আমারও বন্ধুদের মতো ধূমপান, গঞ্জিকাসেবন, স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মাল। কিন্তু শুধু ইচ্ছে থাকলেই তো হবে না, টাকা চাই। কিন্তু দেবে কে? শশধরবাবু? তিনি যে বেজায় কিপটে! আজ পর্যন্ত কখনও পাড়ার পুজোয় চাঁদা দেননি, জীবনে নেমন্তন্ন খেয়েছেন অনেক, কিন্তু কোথাও কিছু উপহার দিয়েছেন বলে বদনাম নেই, রংচটা ফতুয়া, রিফু-করা প্যান্ট আর আদ্যিকালের লুঙ্গি ছাড়া কিছু পরেন না। মাংস খান না, বলেন বয়সের জন্য কিন্তু আসলে কিনতে হবে তাই। পাশের পাড়ার ডোবায় গিয়ে ছিপ ফেলে মাছ পেলে খান, না হলে নিজের ছোট্ট বাগান থেকে তোলা কুমড়োর ঘ্যাঁট আর উচ্ছেসেদ্ধ। এমন মানুষের থেকে যে কিছুই পাওয়া যাবে না, তা বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি। তাই নিজের ফুর্তির জন্য নিজেই বন্দোবস্ত করতে হল। উচ্ছন্নে যাওয়া কয়েক জন বন্ধুর পাল্লায় পড়ে জুয়া খেলতে শুরু করলাম। মায়ের দু’-তিনটে যে ছোটখাটো সোনার গয়না ছিল, তাই বেচে শুভারম্ভ করেছিলাম। সে সব ফুরোতে ইশকুল শিকেয় তুলে খাল কাটার কাজ, ধান কাটার কাজ এ সব করে চালাতাম। লাভের টাকা থেকে নেশার খরচ সরিয়ে রেখে স্টেশনে গিয়ে ফাস্ট ফুড খেতাম। পছন্দের জামা-প্যান্ট কিনতাম। তখন আর ছোট-হয়ে-যাওয়া জামা-কাপড় পরে টিটকিরি শুনতে হত না, দিনের পর দিন কুমড়োর ঘ্যাঁট আর উচ্ছেসেদ্ধ খেতে হত না— তাস-মদ-গাঁজা-সিনেমা-নতুন জামাকাপড় নিয়ে তখন আমার বিন্দাস জীবন।

সাময়িক আনন্দের বহরে যে আমার ভবিষ্যৎ ধীরে-ধীরে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, তা বোঝার বয়স তখনও হয়নি। তা বুঝিয়ে দিতে পারত, এমন কেউ আমার চারপাশে ছিল না। এক জন গৃহশিক্ষকও যদি থাকতেন, হয়তো কিছুটা গাইডেন্স পেতাম। কিন্তু মাধ্যমিকের টেস্টে কাউকে আটকানো হয়নি বলে মাধ্যমিক পরীক্ষার সেন্টার পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম, গণ্ডি আর টপকানো হয়নি। আটে আট— মানে ঐচ্ছিক ছাড়া সব ক’টায় ফেল করে একটা ছোটখাটো রেকর্ড করে ফেলেছিলাম।

এর পর স্বাভাবিক ভাবেই জেঠু আর পড়াতে চাননি। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখানে থাকতে হলে এ বার থেকে নিজের যাবতীয় খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। পড়তে আমিও আর চাইনি, কিন্তু নিজেকে নিজে টানব এমন কাজ যা জানতাম তা তখন আর করার উপায় ছিল না। থানার নতুন এস পি তত দিনে আমাদের ঠেক গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। মাটি কাটা, ফসল কাটার কাজ তো সারা বছর থাকে না। থাকলেও সেই রোজগারে নিজের এনজয়মেন্ট মিটিয়ে সংসারে টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না।

জেঠু আমার সমস্যাটা বুঝেছিলেন। তাই তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে আমাকে বগুলায় একটা রঙের কারখানায় লেবারের কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন টিকতে পারলাম না। এক দিন একটা ভুল কাজের জন্য বিহারি ম্যানেজার মরা বাপ-মা তুলে এমন গালাগালি দিল যে, মাথার ঠিক রাখতে না পেরে সোজা মুখে এক ঘুসি মেরে দিয়েছিলাম, ফলে...

জেঠুকে চাকরি ছাড়ার কারণ বলতে উনি খুব রেগে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমার মতো মাধ্যমিক-ফেলুর সঙ্গে লোকে নাকি চিরকাল ও রক‌ম ভাবেই কথা বলবে। উনি আরও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন। আমি রাজি হইনি। আমার বন্ধু সেন্টুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছিল, স্টেশনে সিডি-ডিভিডির  দোকান করব। বলেছিলাম, তখনকার মতো ওই হাজারকুড়ি টাকা ধার দিলে, আস্তে-আস্তে শোধ করে দেব। টাকার কথা শুনে যতটা আশা করেছিলাম, তার চেয়েও জঘন্য প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। একটাও টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে কঠিন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, আমার মতো গর্দভ, মাথামোটাকে দিয়ে কোনও দিনই ব্যবসার মতো কিছু করা সম্ভব নয়। 

কোনও সাহায্য করবে না, উল্টে ইনসাল্ট! মানতে পারিনি। রাগের মাথায় যা মুখে এসেছিল, বলে দিয়েছিলাম। শেষে বলেছিলাম, ‘‘আপনার মতো কিপটের জাশু আমি জীবনে দেখিনি।’’ সন্তানের মতো এক জন, যাকে উনি শেষ দু’বছর বিনা স্বার্থে ভরণ-পোষণ করেছেন, তার মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। হাতে ধরা রেডিয়োটা আমার দিকে ছুড়ে মেরে, চিৎকার করে গালাগাল করতে করতে আমায় বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমিও ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, বেরিয়ে যাচ্ছি, জীবনে আর কখনও আপনার মুখদর্শন করব না,’’ বলে সেই রাতেই সোজা আগরপাড়ায় মাসির বাড়ি চলে এসেছিলাম। মেসো একটা জুতো কারখানায় কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই থাকতাম আর রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে পড়তাম। ওখান থেকে পাশ করে, নেতাজি ওপেনে বি কম পড়তে পড়তে ডিঙ্কির সঙ্গে আলাপ, প্রেম। সে দিন থেকেই নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে দু’জনের একটা রেস্তরাঁ খোলার স্বপ্ন দেখা শুরু।

‘‘দাদা, ও দাদা, টিকিটটা দেখি!’’

‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ...’’

চেকারের মৃদু ঝাঁকুনিতে তন্দ্রা কাটতে, তড়িঘড়ি বুকপকেট থেকে টিকিটটা বার করে ওঁর হাতে দিলাম। তার পর পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম আড়ংঘাটা স্টেশন আসছে। ফাঁকা ট্রেনে জানলার ধারে সিট পেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও, ভাগ্যবশত স্টেশন পেরিয়ে যাইনি।

অসীমের সঙ্গে হওয়া কথা অনুসারে স্টেশন থেকে সোজা শ্মশানে পৌঁছলাম। দেখলাম, জেঠুর চিতা সাজিয়ে জনাপাঁচেক লোক, অসীম আর শশধরজেঠুর আপন ভাইয়ের মেয়ে রিমলিদি। আমার অপেক্ষা করছে। দাহকার্য শুরু না করার কারণ জানতে চাইলে, রিমলিদি বলল, আমাকেই নাকি মুখাগ্নি করতে হবে। আমি তো শুনেই নানা ছুতোনাতায় প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সরাসরি দিদি কিংবা অসীমকেই সৎকার করে দিতে বললাম। অসীম আমার কথা শুনে নিরুত্তর থাকল। দিদি এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বলল, ‘‘দেখ শুভ, আমার বিয়ের সময় জেঠুর কাছে বাবা হাজারবিশেক টাকা চেয়েছিলেন। কিচ্ছু দেননি। বাবার অসুস্থতার সময় মা গিয়ে সাহায্য চেয়েছিল, তাও পায়নি, বাবা মারা গেলেন। তাই যখন ক’মাস আগে বাইক দুর্ঘটনায় তোর জামাইবাবুর কোমরের নীচ থেকে অসাড় হয়ে গেল, টাকার জন্য আমি লোকের দরজায়-দরজায় প্রায় ভিক্ষে করেছি, কিন্তু জেঠুর কাছে আসিনি। জানতাম কোনও লাভ হবে না। এত কিছুর পরও আমি আজ এসেছি, কারণ হাজার হোক, রক্তের সম্পর্ক তো আছে। কিন্তু মুখাগ্নি করতে পারব না। কারণ নতুন চাকরি সামলে, তোর অসুস্থ জামাইবাবুর সেবাযত্ন করে, নিজের ছোট বাচ্চা সামলে, এত নিয়মকানুন মানা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তুই একান্ত না চাইলে অসীম করবে, কিন্তু সেটা তো বেওয়ারিশ লাশ পোড়ানোর মতো ব্যাপার হবে রে!  নিজের লোক থাকতে কি সেটা ঠিক হবে?’’ 

এ সব কথা শোনার পর আর কিছু বলার থাকতে পারে না। আমিও কিছু না বলে চিতার দিকে এগিয়ে গেলাম।

দাহকার্য শেষ করে চলেই আসছিলাম, কিন্তু অসীমের বাবা, এলাকার একমাত্র উকিল নিখিলকাকু রাতটা ওঁর বাড়িতে আমাকে আর রিমলিদিকে বিশেষ দরকার আছে বলে থেকে যেতে বললেন। ডিনার শেষে উনি আমাদের কুশল সংবাদ নেওয়ার পর একটা চিঠি দিদির হাতে ধরিয়ে দিয়ে, ‘‘শশধরবাবুর শেষ ইচ্ছে অনুসারে, এই চিঠিটা তোমরা এক সঙ্গে পড়ো, তার পর আমি বাকি কথা বলছি...’’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। দিদি আমাকে চিঠিটা দিয়ে বলল, ‘‘দেখ তো, কী লেখা আছে।’’ 

আমি মৃদু গলায় পড়তে শুরু করলাম —

 

‘‘প্রিয় শুভ আর রিমলি, 

ঈশ্বরের অপার করুণায় তোরা ভাল আছিস, এই বিশ্বাস নিয়েই, তোদের সঙ্গে হওয়া কিছু ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর প্রথম এবং শেষ চেষ্টা হিসেবে এই চিঠিটা লিখছি। আশা করি, তোরা দু’জনে ধৈর্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়বি।

প্রথমে রিমলিকে বলছি—

১। তোর বিয়ের টাকাটা আমি দিতে চাইনি, কারণ যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আমি কখনও সমর্থন করতাম না।

২। তোর বাবার অসুস্থতার সময় যখন তোর মা আমার কাছে এসেছিল, তখন সব রিপোর্ট দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, যতই খরচা করা হোক, ভাই আর বেশি দিন নেই। তাই, এখন টাকা দেওয়া মানে কেবল ডাক্তারের উদরপূর্তির বন্দোবস্ত করা, কিন্তু সে কথা তোর মাকে বোঝানো সম্ভব ছিল না, তাই...

এ বার শুভ—

তোর যা সঙ্গ ছিল তাতে তুই টাকা পেলেও যে, কোনও ব্যবসাই করতে পারতিস না, তা বোঝার বয়স আশা করি আজ তোর হয়েছে। তুই যদি আবার পড়াশোনা করতে চাইতিস, তা হলে খুশি হতাম। কিন্তু তুই তো...

খুব ছোটবেলায় পিতৃহীন হওয়ায় খুব কাছ থেকে চরম দারিদ্র দেখতে হয়েছে। মনেপ্রাণে বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল, টাকাই সব। ওটা থাকলেই সব হয়। তাই হাজার ব্যঙ্গ কিংবা অপমান সত্ত্বেও আমি কখনও মা লক্ষ্মীকে আগলে রাখার আদর্শ সরিনি। হয়তো ঠিক ছিলাম, হয়তো ভুল। কিন্তু, শেষের এই ক’বছর তোদের দু’জনকে খুব মনে পড়ত। ভাবতাম একদিন হয়তো তোরা এই বুড়োটার খবর নিতে আসবি।

কিন্তু না, তোরা আসিসনি। আর তার জন্য আমিই দায়ী। আমিই তোদের ঠিকমতো বুঝতে চাইনি। নিজেকেও ঠিক মতো বোঝাতে পারিনি। তোদের সঙ্গে তোদের মতো করে মিশতে পারিনি। পারলে তোরা এই কিপটে বুড়োটাকে একটু বোঝার চেষ্টা করিস।

চিঠির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে তোদের আর বিব্রত করব না। আশীর্বাদ রইল, তোরা অনেক বড় হোস। ভাল থাকিস।

ইতি আশীর্বাদক

শ্রীশশধর মজুমদার

 

‘‘না, না... আমার আজই ডেলিভারি লাগবে, আর হ্যাঁ, বিলটা ‘শশধর রেস্তরাঁ অ্যান্ড কেটারিং সার্ভিস’-এর নামেই হবে। রাখছি।’’ 

ফোনটা রেখে ডিঙ্কি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘কী হল, কী দেখছ?’’

‘‘শশধর রেস্তরাঁর মালকিনকে। কী মিষ্টি দেখতে!’’ আমি একটু রোম্যান্টিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। ডিঙ্কি মোটেই আমল দিল না। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখেই প্রশ্ন করল, ‘‘রিমলিদি ফোন করেছিল? বিতানদা অফিস জয়েন করেছে আজ?’’

‘‘হ্যাঁ, করেছে,’’ আমি নির্লিপ্ত উত্তর দিয়ে ক্যাশ গুনতে লাগলাম।

‘‘যাক বাবা! তোমার জেঠুর রেখে যাওয়া দিদির ভাগের টাকা সত্যিই কাজে এল। পরিবারটা বেঁচে গেল। কী বলো?’’

‘‘হ্যাঁ, একদম।’’

‘‘একটা কথা বলব?’’ জিজ্ঞেস করল ডিঙ্কি।

‘‘কী?’’

‘‘শশধরজেঠু সারা জীবন কিপ্টেমি করেছিল বলেই কিন্তু তোমার দিদির সংসার বেঁচে গেল আর তোমার স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেল, তাই না? জেঠুর সম্পত্তির ভাগ না পেলে আমাদের রেস্তরাঁ কবে হত, আদৌ হত কি না কে জানে!’’ 

সে বিশ্বাস এখন আমিও করি। মাঝে-মাঝেই ভাবি সারা বিশ্বে 

এই কৃপণ মানুষগুলো কত সংগ্রাম করে, কত কটু কথা শুনে একটা-দুটো করে পয়সা বাঁচাচ্ছে, শুধুই কি 

নিজের স্বার্থে? 

‘‘কী হল, আবার কী ভাবতে 

বসে গেলে?’’ 

ডিঙ্কির কথায় সংবিৎ ফিরল, ‘‘কই, কিছু না তো!’’ আমি তড়িঘড়ি উত্তর দিলাম।

‘‘এই, শোনো না,’’ ডিঙ্কির গলায় আবদার, ‘‘শাহিদের নতুন মুভিটা এসেছে, আজ যাবে, নাইট শোয়ে?’’

‘‘আরে না! আজ তো হবেই না, কাজের হেভি চাপ! আর তা ছাড়া রিভিউ পড়োনি? একদম বাজে মুভি! ক’দিন পরই টিভিতে দিয়ে দেবে...’’ আমি সাততাড়াতাড়ি বলে উঠি।  

‘‘ছাড়ো, বুঝেছি। আর এক্সকিউজ় দিতে হবে না, কিপটে কোথাকার!’’