টানা সাতটা ম্যাচে সিঙ্গল ডিজিটের পরে কোহালির ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির মতো সে আসছে। চিমানিমানি পর্বতমালা পেরোনোর পরে শঙ্করের প্রথম মানুষ দেখতে পাওয়ার মতো সে আসছে। কুইন্টাল ত্রিশেক কাঠকুটো জড়ো করে ফেলার পরে দেবসেনার কাছে জুনিয়র বাহুবলীর মতো সে আসছে।
আসছে এসএসসি-র ফাইনাল রেজ়াল্ট! লোডিং হচ্ছে আমার ল্যাপিতে। বাঙালি বেকারসমাজে এসএসসি মানে স্টাফ সিলেকশন কমিশন নয়, স্কুল সার্ভিস। সেই অতীতের দুর্গাপূজা থেকে বর্তমানে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হয়ে ভবিষ্যতে মহাকুম্ভ হয়ে ওঠার সগৌরব যাত্রাপথে এসএসসি আজ ফাইনাল প্যানেল বার করবে।
আমি নাকি পয়া। অন্তত অলির কাছে। সুপারস্টিশন যত…
এঁড়ে তর্ক করেছিল অলি, “এমএ-তে চান্স পেলাম কী করে? কী করেই বা সরকারি কলেজে বিএড করছি? থার্ডইয়ারে শিয়োর ব্যাক পেতাম, তুই ছিলি বলে এক্কেবারে ফার্স্ট ক্লাস হল!”
গ্র্যাজুয়েশন ফাইনাল এগজ়ামের দিন ভেনুতে অলিকে পৌঁছতে গিয়েছিলাম। ঢোকার সময় ঘ্যানঘ্যান করছিল, “কিচ্ছু হয়নি… ফেল করব… এ বারটা ড্রপ দিলে ভাল হত…”
তার পর হল থেকে বেরিয়ে তার উচ্ছ্বাস, “যেক্কটা করেছিলাম সব কমন, মায় এক নম্বরেরগুলো অবধি! তুই কি পয়া রে…”
তার পর সেই পয়াত্ব প্রমাণের জন্য বিএড-এর এগজ়ামগুলোয় মুখ দেখাতে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল। ভাগ্যিস আমার সায়েন্স, তাই ডেটগুলো আলাদা পড়েছিল।
এক বারই বিয়ে করেছিল অলির মা। কিম জং উনের ক্লোনকে। সেই কিম বলছে, “অতঃ কিম? বিএড তো হল, লেখাপড়া শেষ। এ বার বিয়ে…”
অলি বলে, “কিম জং! ইস…”
**
ভোটের সময় কামানির। টোটোওলা মাধাই গায় ‘এ শুধু ক্যাশের দিন, এ লগনো মাল কামাবার…’। সে সব দিকেই যায়, টোটোর চোঙা থেকে আওয়াজ ওঠে… ‘বন্ দে মাতরম’, ‘ই-ইন ক্লাব জিঞাবাদ… জিঞাব্বাদ জিঞাব্বাদ’, ‘ভারত মাতা কি… জঅঅঅয়’…কিন্তু আপাতত মাধাই ঘোর চিন্তায়। তার টোটোর উইন্ডশিল্ড ভাঙা। সারানোর পয়সা নেই।
আমি বলি, “ভেঙে তো দেবেই ভাই, রুলিং পার্টির বিল্টু রক্ষিত তোর দাদার কেসটার পর তোকে টোটোটা কিনে দেয়নি? সেই টোটো যদি অপোজ়িশনের হয়ে খাটে…”
“বাজারটুকু ঘুরলে দেড়শো কোন বাপ দেবে বল তো? স্ট্যান্ডে দাঁড়ানোর জন্য ডেলি পঞ্চাশ টাকা নেয় পার্টি। ভাড়া হোক বা না হোক। বিল্টুদাকে গাড়ি বাবদ দিনে আড়াইশো।”
“বিল্টুদাকে দিতে হচ্ছে মতলব? বিল্টুদাই তো টোটোটা তোকে কিনে দিয়েছে। গাড়ি তো তোর…”
“দেড় বছরে এক বার ব্যাটারি চেঞ্জ, তিরিশ হাজার। তার পর মেন্টেন্যান্স, খর্চা জানিস? তাই এই শিল্পবিপ্লব। প্রান্তিক কৃষকের মজুরে রূপান্তর, বুয়েচিস!”
মাধাই আমাদের হাইস্কুলে টেন অবধি পড়েছে। শিল্পবিপ্লব জানে শালা! ভাইয়ের নাম মাধাই হলে দাদার নাম জগাই হওয়াটাই নিয়ম, অন্তত ওদের টিনের চালের ক্লাসে। ওদের বাবা নিমাই। বোষ্টম ওরা। মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, রসুনে নেই। তমোগুণসম্পন্ন খাদ্যাভ্যাস মহাপাপ।
আগে কীর্তন করত নিমাই। ধুলোট-এ বাতাসা ছুড়ত মুঠো মুঠো। কীর্তনের মার্কেট খারাপ। চব্বিশ প্রহরের প্রথম ষোলো প্রহর ক্যাসেটেই বাজিয়ে নিচ্ছে। রোজগার কমছিল। বছরদশেক আগে বেশ দুটো পলিটিকাল পার্টি ছিল। নিমাই কেত্তনের দলটাকে দু’ভাগে ভেঙে দু’দিকে ঢুকিয়ে দিল। শুধু কড়া নির্দেশ থাকত, “ভান করবি, ভান। কথাম্মেত ইস্টাইল। ফোঁস করো, কামড়ো না।”
একই দলের লোক তারা। কোনখানে ছাড়তে হবে, কোথায় ধরতে হবে, সব বোঝে। এই যেমন ধরো এ দল ইটগুলো ফাঁকা দেখে মারল, যাতে কারও না লাগেটাগে। ও দল আবার নিমাইকে বাগে পেয়েও শাবলটা এমন ভাবে চালাল যেন গায়ে না লাগে। মোদ্দা কথা, কারও যেন ক্ষতি না হয়। দু’দিকেই নিজের লোক। আগে প্রেমপূর্ণ বাতাসা ছুড়ত, এখন বারুদপূর্ণ পেটো ছোড়ে। নেতারা অবশ্য কিছু জানত না।
সে দিন এক দলে বাবা নিমাই, অন্য দিকে বড় ছেলে জগাই। মাধাইকে নিয়ে যায়নি। তার মাধ্যমিক। পেটোটা নিমাইয়ের হাত ফসকে ভিড়ের মাঝে ছোড়া হয়ে গিয়েছিল। তাতে ক্ষতি কিছু হত না হয়তো। প্রচণ্ড আওয়াজ হত, হয়তো তাতে কেউ কালাটালা হয়ে যেত খুব বেশি হলে। কিন্তু এ পেটোগুলোর জাত আলাদা। লোকাল পেটোয় আওয়াজ বেশি। কিন্তু এগুলো বাইরের মাল। ভিতরে ভরা ছিল কাচের টুকরো, পেরেক, তাই তেজও বেশি। নিমাই জানত না। জানলে ব্যবহার করত না।
নিমাই হাসপাতালে ভর্তি হল। না, নিজের ছোড়া পেটোর স্প্লিন্টারে আঘাত লাগেনি তার। ফলিডলের শিশিটা তক্তপোশের তলাতেই ছিল। সেটা গলায় ঢালার পর কতই বা দূরত্ব বাপের সঙ্গে বড় ছেলের? হার্ডলি ফুটখানেক। মর্গে পাশাপাশিই শুয়ে ছিল মুখে গ্যাঁজলা তোলা নিমাই আর পেটোয় ছিন্নভিন্ন জগাই।
তার পর মন্ত্রী এল, ক্যামেরা এল, জার্নালিস্ট এল। ছোট ছেলে মাধাই অপোজ়িশনের নাম করল। টোটোর চাবি হাতে এসেছিল তাতেই। চাকরিও হত, মাধ্যমিকটা দিতে পারলে।
জগাই-মাধাইদের কিস্সা ঢোকাতে হল একটু সাবঅল্টার্নিজ়ম আনতে। এমনিতে এ লেখা বিশ্বভারতীর বইয়ের প্রচ্ছদের মতো বাহুল্যবর্জিত। দু’একটা ইজ়ম না ঢোকালে জাতে উঠবে কেন?
কামানির কথা হচ্ছিল। তখন সামনে ভোট, এ সময়টাই কামানির। চাষির লোন মকুব, কর্মচারীদের এক কিস্তি ডিএ। কোয়ালিফায়েড বেকারদের, অর্থাৎ আমাদেরও কামানির হাইওয়ে খুলল, টোল প্লাজ়ায় ইভিএম। নিউজ় পোর্টাল বলল, “স্কুল সার্ভিসে বিপুল সংখ্যায় নিয়োগ।” তার হিট বাড়ল, সঙ্গে বিজ্ঞাপনের কামানিও।
আমি আর অলি দু’জনেই ফর্ম ফিলআপ করেছিলাম। প্রথমে লিখিত টেট, টপকালে ইন্টারভিউ। টেটের রেজ়াল্ট বেরোল। নিজেরটা তো দেখলামই, অলিরও দেখলাম। কারণ আমি পয়া। দেখা গেল আমি অলির কাছে পয়া, নিজের কাছে নই।
অলির টেট হল, আমার হল না।
তার পর বহু কোর্টকাছারি পেরিয়ে আজকে সেই এসএসসি পরীক্ষার ফাইনাল প্যানেল বেরোচ্ছে। যথারীতি অলির রেজ়াল্ট দেখার দায় আমারই। তাই দেখতে বসেছি, নেট স্লো, রেজ়াল্ট লোডিং।
মেয়েদের চাকরিটা দরকার। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আমার মা-ও চাকরি পেয়েছিল একটা। বেসরকারি অফিসে ক্লার্ক। বাবা মায়ের কান বাঁচিয়ে গজগজ করেছিল, “মেয়েছেলেদের ও সব জায়গায় টিকে থাকতে গেলে বসের সঙ্গে কী করতে হয় আমরা জানি…”
আমার চার বছর বয়স তখন। বলেছিলাম, “মেয়েছেলে কী, বাবা? মা-তো মেয়ে, ছেলে হবে কী করে?”
“তোমার মা মেয়ে হয়েও ছেলেদের মতো চাকরি করবে তো! তাই তো মেয়েছেলে!” বাবা মাস্টার ছিল, সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিল।
শুনে ঠাকুমা থমথমে। মাসি-পিসিরা বুঝিয়েছিল, “ছেলেটা মানুষ হবে কী করে?” দিদিমাও বলল, “যদি শ্বশুরবাড়িতে না চায়…”
তবুও মা চাকরি নিতে চেয়েছিল। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে জয়েন করতে হত। কিন্তু আলমারির উপরের তাক থেকে হঠাৎ মায়ের মার্কশিট, সার্টিফিকেটের ফাইল হারিয়ে গিয়েছিল। ডুপ্লিকেট পেতে পুলিশে ডায়েরি চাই। কিন্তু বাড়ির কেউ ছত্রিশ ঘা খেতে চাইল না। ঠাকুমা-দিদিমারা বলল, “ভগবান যা করেন…”
সত্যিই ভগবান সে সময় মঙ্গল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বোধহয়। পরে যখন পৃথিবীতে নজর ফেরালেন তখন তিন মাস পেরিয়ে আরও দু’হপ্তা পার। তাঁরই কৃপায় ফাইলটা পাওয়া গেল যথাস্থানে, আলমারির উপরের তাকে। বাবা জিভ চুকচুক করে মাকে বলেছিল, “ভাল করে খুঁজবে তো, খামোকা অপরচুনিটিটা গেল…”
টেট কোয়ালিফাই করে অলি যেন কিছুটা কুণ্ঠিতই ছিল। অপরাধী-অপরাধী ভাব। বলেই ফেলল, “ইস, আমার না হয়ে যদি তোর হত রে…”
“চাকরিওয়ালা বৌয়ের যা মাইনে, চাকরিওয়ালা বরেরও তাই…”
“দেখিস, আসছে বার তুই শিয়োর পাবি। তখন আমি চাকরিটা ছাড়ব।”
“দূর খেপি! আগে ইন্টারভিউটা টপকা! আগে থেকেই হাওয়ায় তাজমহল বানাচ্ছে। পেলে যোগ্যতায় চাকরি পাবি, ছাড়বি কেন খামোকা?”
অলি চাকরিটা পাক। না, এই জন্য নয় যে, অলির বাবা এস্ট্যাবলিশড মেয়ের জোর করে বিয়ে দিতে পারবে না। চালচুলোহীন মেস-শাবক আমি। চাইছি আমার মায়ের জন্য। মা পারেনি, প্রেমিকা তো পারুক!
তমাল অবশ্য মানে না এ কথা। চায়ের দোকানের আড্ডায় চিৎকার করে, “কোনও চাকরিওয়ালা মেয়ে, বেকার তো দূরে থাক, তার নিজের চেয়ে নিচু পোস্টে কাজ করা ছেলেকে বিয়ে করবে না! অথচ চাকুরে ছেলেরা হামেশাই বেকার মেয়ে বিয়ে করছে!”
আমি বলি অভ্রদা-সুতনুকাদির কথা। অভ্রদা স্কুলটিচার, কিন্তু সুতনুকাদি প্রফেসর। তমাল বলে ও সব এক্সসেপশন।
হয়েছে! হয়েছে-এ-এ-এ…
অলির নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ‘এমপ্যানেল্ড’। তক্ষুনি অলিকে ফোন লাগাই। লাগে না, নেটওয়ার্ক বিজ়ি।
থাকগে, অলি না-হয় পাঁচ মিনিট পরই খবরটা পাবে, কিন্তু আগামী পাঁচ বছর আমি কী করব? নেক্সট রিক্রুটমেন্ট তো তার আগে হবে বলে মনে হয় না। কেন? পড়ব! ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সব আনইনস্টল করে জি-জান লাগিয়ে পড়ব।
হঠাৎ মনে পড়ে যায়, টেট-এর রেজ়াল্ট বেরোনোর পরে একটা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিবাদে বেকাররা রাস্তায় নামে। আন্দোলনে-ফান্দোলনে যেতে চাইনি আমি। অলিই জোর করে পাঠিয়েছিল, বলেছিল, “নিশ্চয় ঘাপলা হয়েছে। নইলে তোর মতো ছেলের হয় না!” তমাল সেই সময় দুর্নীতির অভিযোগে টেট বাতিলের দাবিতে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেয়। অলি তাতে অ্যাংরি রিঅ্যাক্ট করেছিল।
টেট-এ দুর্নীতির প্রশ্নে অলির ‘গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়?’ সমবেদনা জিনিসটা কি তবে সম-এর জন্য বেদনা? আমি বেকার, ফালতু। অলির সমকক্ষ নই। পুরোটাই মিথ্যে?
অবশ্য মিথ্যে আমিও বলেছি তমালকে। তর্কে জিততে একটা কথা লুকিয়েছি। অভ্রদা-সুতনুকাদির সেম-এজ রিলেশন। সুতনুকাদির বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। তাই অভ্রদা রিসার্চ ছেড়ে স্কুলের চাকরি নিয়েছিল সুতনুকাদিকে বিয়ে করতে। বিয়ের পর সুতনুকাদি পিএইচ ডি কমপ্লিট করে চাকরি পায়। বিয়েটা বেকার সুতনুকার সঙ্গে স্কুলটিচার অভ্রর হয়েছিল। প্রফেসর সুতনুকার সঙ্গে নয়।
তবে কি তমালই ঠিক! আচ্ছা যখন অলির কোলিগরা জিজ্ঞেস করবে ‘বয়ফ্রেন্ড কী করে?’ অলি কী বলবে? স্পষ্ট বলবে ‘বেকার’? না কি উত্তরটা পালিশ-প্যাকেজিং করে বলবে ‘স্কুল সার্ভিস অ্যাসপিরেন্ট’। ইস, এ কী সব উল্টোপাল্টা ভাবছি আমি! অলি মোটেও…
কিন্তু বাসে সিট পাওয়া ভীষণ ঝামেলার এখন। তাই যদি অলির জন্য সিট রাখে কোনও ছোকরা মাস্টার? সেও অলির সঙ্গে জয়েন করেছে হয়তো। ফর্সা পেটানো চেহারা। গ্রিক গড। অলির কাঁধ ঠেকে যাচ্ছে তার কাঁধে। উড়ো চুল ছুঁয়ে যাচ্ছে তার কোহালি-স্টাইল দাড়ি। আমার মুখের উপর ধোঁয়া ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বাস। উইন্ডো সিটে দু’জন হাসছে।
রাগ হয়। জান্তব রাগ। শালা, চাকরি পেয়ে আমাকেই লেঙ্গি! খুন করতে থাকি সেই গ্রিক গড-কে। কল্পনায় খুন করার একটা ভীষণ সুবিধে হল, যখন যা খুশি অস্ত্র হাতের কাছে পাওয়া যায়। প্রথমেই একটা কাটারি দিয়ে হাত-পাগুলো কেটে দিই ছেলেটার, তার পর সাঁড়াশি দিয়ে চোখগুলো উপড়ে নিই। এর পর কুড়ুল দিয়ে কোপাতে থাকি। শুয়োরের বাচ্চাটা চিৎকার করে। আমি শুষে নিই তার আর্তনাদ। আমার মনখারাপের শৈত্য পালায়। আমি চিৎকার করি “আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…”
**
চেনটা বেচব। পাক্কা দেড় ভরি। পোস্টম্যানকে খাওয়াতে হবে। আমার ঠিকানায় অলির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আসবে কারণ অলি আমার মেসের অ্যাড্রেসে ফর্ম ফিল-আপ করেছিল। ফোন নম্বর, মেল-আইডি সব আমার। কারণ, আমি পয়া।
চিঠিটা কুচিয়ে ফেলে দেব। ব্যস… কিন্তু তার আগে এখন অলিকে ফোন করে বলা ‘না রে! তোর হয়নি… সরি!’
অলির মায়েরও একটা দেড় ভরির চেন ছিল। বিয়েবাড়িতে খোয়া যায়। অলির গলা থেকেই। তার দিনপনেরো বাদে ভ্যালেন্টাইন্স-ডে তে অলি আমায় এই হারটা গিফট করে। চোখ বুজে চেনটায় হাত বুলোতে থাকি। কালশিটের মতো মনে হয়, চেনটা হারানোর পর অলির পিঠে যেমন দেখেছিলাম। অলির বাপ এক্স-আর্মি। রাগলে জ্ঞান থাকে না।
মাস্টাররাই বা আর্মির থেকে কী কম! সেই কালশিটেটা মায়ের হাতেও ছিল। জয়েনিং-এর ডেট পেরিয়ে যাওয়ার পরে মার্কশিটের হারানো ফাইলটা যখন খুঁজে পাওয়া গেল, বাবা বলেছিল “ভাল করে খুঁজবে তো, খামোকা অপরচুনিটিটা গেল…” মা হাতটা বাবার দিকে তুলে বলেছিল, “চোর!”
ছেলেটাকে খুন করতে চাই আমি, অলিকে বলতে চাই ‘…তোর হয়নি”। কিন্তু কালশিটেটা আটকায়।
অলি যখন ফোনটা তোলে, আমার হয়ে কালশিটেটাই বলে ওঠে, “কনগ্র্যাচুলেশনস…”