Abosar

কাকজ্যোৎস্না

নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী



ঠোনে ফুটফুটে জোছনা ফুটেছে। শ্রাবণ মাস। অথচ আজ আকাশে এতটুকু মেঘ নেই। বৃষ্টি ধোয়া পরিষ্কার আকাশ বলেই বোধহয় জোছনার এমন ছটা! ইতির সে দিকে তাকিয়ে কেমন ঘোর লেগে গেল। তার হাতে জলভরা একটা মগ। রাতের খাবার খেয়ে আঁচাবে বলে সে উঠোনে এসেছে। এ বাড়িতে জায়গা কম। ঘরগুলো কেমন যেন ছোট ছোট আর ঠেসাঠেসি। ঘরের মধ্যে জামাকাপড় বোঝাই, সব কিছু অগোছালো। ঘাটের পুকুরের জলটাও একদম ঘোলা। তাদের বাড়ির পুকুরের জল কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ। এরা কি জলে চুনও দেয় না? আর রান্নায় কী ভীষণ মিষ্টি দেয় এরা! বাপ রে! এক দিনেই ইতির যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে।

আজ এই বাড়িতে তার দ্বিতীয় রাত্রি। আজ তার ফুলশয্যা। সে আঁচলের তলা থেকে সাবধানে ফোনটা বের করে আনল। এ বার রূপমকে ফোন করে ডেকে নিতে হবে। পথ বলা আছে। রাত হলেও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, চার দিক ফটফট করছে আলোয়। ফোনটা পুনির। টিউশনির টাকায় কেনা। একটু আগে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় দিয়ে গেছে তাকে। পুনি লেখাপড়ায় ভাল। বাবা বলেছে ওকে এর পর কলকাতার কলেজে রেখে পড়াবে। প্রথমে কি ফোন দিতে চায়! ইতি ওর হাত ধরে যখন মাথা নামিয়ে কাঁদছিল, দেখে বোধহয় মায়া লেগেছিল ওর। ফোন দিয়ে বলেছে, “সাবধানে থাকিস। রূপমদাদাকে আবার ফোন করিস না যেন। নতুন জায়গা, কে কখন কোথা থেকে দেখে ফেলবে! জানিস, রূপমদাদার মা আজ না তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল। অষ্টমঙ্গলায় গিয়ে ফোনটা আমায় ফেরত দিস। এই কয়েক দিন আমি ম্যানেজ করে নেব।”

পুনি জানে না, ইতির আর অষ্টমঙ্গলা হবে না।

ইতি মুখে জল নিয়ে ফুচফুচ করে কুলকুচি করে ফেলতে লাগল। জল সামনের লেবু ঝোপের উপরে গিয়ে পড়ছে। মুখ ধুয়ে ঝোপের দিকে মুখ করে দ্রুত একটা নম্বর ডায়াল করল সে। ধরছে না! আশ্চর্য ছেলে! ইতির চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে আর ইনি কি না ফোনটাও ধরছেন না!

রূপম ‘হ্যালো’ বলতেই, তাড়াতাড়িতে ইতি মুখের জলটা কোঁত করে গিলে ফেলল।

“কোথায় তুমি?”

“বাড়িতে।”

“মানে? আমাকে নিয়ে যাবে না? কত রাত হয়ে গেল, কখন আসবে?”

“দেখো ইতি, ভেবেচিন্তে যা করার তোমাকেই করতে হবে। তুমি এখন এক জনের বউ। আমি তোমায় নিয়ে এলে পুলিশ কেস হবে যে! তা ছাড়া মা-ও রাজি হবে না। তুমি তো জানো, আমি মায়ের মনে কখনও দুঃখ দিতে চাই না। এর চেয়ে তুমি ওখানেই মানিয়ে নাও। বিয়ে যখন হয়েই গেছে, তখন আর কিছু করা যাবে না।”

রূপমের এই অদ্ভুত নিস্পৃহ কথা শুনে ইতি পারিপার্শ্বিক ভুলে চিৎকার করে উঠল।

“বিয়ের আগে থেকে আমায় নিয়ে পালাবে বলে আসছ, এই করে করে শেষে বিয়েটা হল, এখন বলছ সংসার করো? শোনো, তুমি যদি না আসো, আমি আজ রাতেই বিষ খাব। বাবার বেগুনগাছের পোকা মারার বিষের প্যাকেট এখন আমার কাছে। আমি নিয়ে এসেছি। এখন আমার আর ফেরার পথ নেই। যা বলছি শোনো। এই বাড়িতে দু’টো বাথরুমই বাইরে, মানে উঠোনে। রাত দু’টো নাগাদ আমি উঠোনে বাথরুমে আসব। তুমি বাইরে অপেক্ষা করবে।”

“শোনো ইতি, তা হয় না।”

“আর একটাও কথা বলবে না তুমি। আমি ফোন রাখছি। সময়মতো চলে এসো।”

“কাকে তাড়াতাড়ি আইতে কইলে?” আচমকা প্রশ্নটা শুনে ইতি চমকে পেছনে তাকাল। কখন তার বর এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনে। একটু সরু আর মেয়েলি গলা লোকটার। গায়ের রং টুকটুকে ফর্সা। সারা মুখে ছোট ছোট তিলের দাগ। ধীরু পাণ্ডা। পাণ্ডাদের বেশ কয়েকটা পানের বরজ আছে। দুই ভাই মিলে ধানী জমি আর বরজ থেকে বেশ ভালই আয় করে। বাজারে একটা দোকানও ভাড়া দেয় ধীরু। দেখেশুনেই বাবা বিয়ে ঠিক করেছে ইতির। এরা এই গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার। দেনাপাওনাও তেমন কিছু চায়নি ওরা। ধীরুর মা খুব গরজ করে বিয়ে ঠিক করেছেন ছেলের। পুনি এক দিন বলছিল, “জানিস দিদি, তোর বরের নামে নাকি গ্রামে কী সব বদনাম রটেছে। কাদের বাড়িতে কোন এক বৌয়ের জন্য খুব যাতায়াত করে। তাই ওর মা ছেলের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায়। দেনাপাওনাও করেনি, খুঁজে খুঁজে এত দূরের পাত্রী আনছে। না হলে তেঁতুলিয়ার ছেলে আর সেই বটচড়ার মেয়ে!”

ইতি ধীরুর গলা শুনে ভয় পেয়ে গেল। বলল, “কই, কিছু বলিনি তো।”

মেয়েলি গলায়, মুখভর্তি পানের পিক নিয়ে ফোলা-ফোলা শব্দে ধীরু বলল, “যাঃ! আমি পস্টো শুনচি, তুমি ওউ কথা কউচো! তুমার হাতে কী একটা থাইল আমি দেখচি। মোব্বাইল? তাই না? তুমি কার সঙ্গে ফোনে কথা কইথল?”

ধীরুর মুখের সামনে শূন্যে হাত নাচিয়ে ইতি বলল, “আমি আবার ফোন কোথায় পাব?”

ধীরু হাসল। জোছনার আলোয় ওর চোখদু’টো যেন দপ করে জ্বলে উঠল। এক মুখ পানের পিক ছপ করে গাছের পাতার উপর ফেলে লোকটা ইতির হাতদু’টো মুচড়ে পেছনে নিয়ে, হঠাৎ ওর ব্লাউজ়ের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল। লাল দাঁত বের করে হাসছে লোকটা। ইতিকে প্রচণ্ড জোরে নিষ্পেষণ করতে করতে বলল, “ফুলশয্যা কি এঠিনু শুরু করবু?”

ইতি কাঁদছে। তার বমি পাচ্ছে। জর্দার তীব্র গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। এত জোরে কেউ প্রথম কাউকে চুমু খেতে পারে! ইতি ভাবতেই পারে না। তার রূপমের চুম্বন মনে পড়ছে। এক বারই তাদের দু’জনের ঠোঁট মিলেছিল। এ ছাড়া রূপম তাকে কখনও স্পর্শ করেনি। এক বার রূপমের সঙ্গে মৃদঙ্গভাঙা নদী দেখতে ওর সাইকেলে করে গেছিল ইতি। তখন প্রায় সন্ধে হয়ে আসছে। সারি সারি বাবলা গাছের পাশে পাশে বিরাট বিরাট মাছের ভেড়ি। সূর্যের লাল আলোয় ভেড়ির জল তখন লাল। ফাঁকা পথের ধারে হঠাৎ সাইকেল থামিয়ে দিয়ে রূপম আলতো করে ইতির ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছিল। খুব হালকা সিগারেটের গন্ধ ছিল রূপমের ঠোঁটে। আর এই লোকটার মুখে জর্দার শ্বাসরোধী গন্ধ। দাঁতগুলো লাল। ধীরু ইতিকে জড়িয়ে ধরেছে।

বিয়ে উপলক্ষে ঘরে অনেক আত্মীয়স্বজন আছে। কারা যেন হি হি করে হেসে হঠাৎ দৌড়ে পালাল। একটু দূরে পুকুরঘাটে হ্যাজাক লাগানো হয়েছে। কেউ ঘাটে ঝনঝন করে একগাদা এঁটো বাসন ফেলল। ইতির সায়ার ভেতর উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে ধীরু। আর তাতেই মোবাইলটা হাতে পেয়ে গেল সে। কিন্তু তার ইতিকে যন্ত্রণা দেওয়া বন্ধ হল না।

ধীরুর পীড়নে অসহ্য যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল ইতি। ইতির চিৎকারে ঘরের ভেতর থেকে ধীরুর মা এবং অনেক লোকজন ছুটে এল উঠোনে।
ধীরু ইতিকে ছেড়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় ঘোষণা করল, “এই দুশ্চরিত্তির মেয়েছেলে নিয়ে ঘর
করা যাবেনি।”



সকাল ন’টা। উঠোনের চার দিকে গোল করে চেয়ার পাতা হয়েছে। সেই রাতেই গাড়ি পাঠিয়ে ইতির বাবা ভবেশ মিশ্রকে ধরে এনেছে এরা। ইতি দেখল রাতে ঘুম না হওয়ায় বাবার চোখদু’টো লাল। তার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। ধীরু তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটা পেয়ে তখনই রূপমকে ফোন করেছিল। রূপম ফোন ধরে অবাক গলায় বলেছিল, “আবার কী হল ইতি? শোনো, আমি এখন কিছুতেই যেতে পারব না। ক’টা দিন তুমি এখন ওখানেই থাকো।”

ধীরু সালিশি সভা ডেকেছে। সভায় সবার সামনে বসে ইতি কেবল হু-হু করে কাঁদতে লাগল। ইতির ফোনে কথা বলা নিয়ে গ্রামের লোকজন নানা রকম কানাকানি করছে। ইতির বাবা এক পাশে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসে আছে। রূপমকে ভালবাসে, এ কথা ভয়ে বাবাকে কখনও বলতে পারেনি ইতি। ভবেশ মিশ্রকে বটচড়া গ্রামের সবাই মানে। ইতি আর পুনি তাদের বাবাকে বাঘের মতো ভয় করে। সেই বাবা কেমন অসহায়ের মতো উঠোনের এক কোণে বসে আছে!

একটা কাগজে লিখিত বয়ান দিতে হল ভবেশ মিশ্রকে। তার পর নিজের দুশ্চরিত্র মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে চলল সে। পাথরপ্রতিমা আর রামগঙ্গার মাঝখান দিয়ে বটচড়া নদী বয়ে গেছে। ভবেশ ভটভটি থেকে নেমে নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিরুত্তাপ শীতল স্বরে বলল, “বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব না তোকে। তুই এখন রূপমদের বাড়িতেই যা। ওরাও যদি তোকে না নেয়, বটচড়া তো আছে। ওখানে ডুবে মরিস। ওই মুখ আর আমাকে দেখাস না।”

ভবেশ চোখ মুছতে এক বার তার মাথাটা নামাতেই দেখল, সত্যিই রূপমদের পাড়ার দিকে হেঁটে যাচ্ছে ইতি। সে হতবাক হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে রইল।



অনেকটা পথ রোদে হেঁটে এসে ইতির মুখ কালো হয়ে গেছে। সকাল থেকে সে কিছুই খায়নি। অবশ্য কেউ তাকে খেতেও বলেনি। তার মুখে এখন একটু থুতুও নেই। সে শুকনো জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিল। রূপমের মা তার সামনে বিরক্তমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। গ্রামে বিদ্যুতের বেগে কুৎসা ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত ঘটনা তিনি আগেই শুনেছেন।

“রূপম আছে?”

“রূপমকে কী দরকার? রূপম ওর আড়তের জন্য ভেড়িতে মাছের অর্ডার দিতে গেছে। কখন ফিরবে ঠিক নেই। জানোই তো অনেক পয়সা খরচ করে রূপমের বাবা বাজারে ওই দোকানটা কিনেছেন।”

“আমি তা হলে এখানে একটু বসি। রূপম ফিরুক।”

কঠিন গলায় রূপমের মা বললেন, “না। এখানে তোমার জায়গা হবে না।”

ইতি একটু চমকে উঠল। সে আন্দাজ করেছিল, এমন কিছু একটা হতে চলেছে। কিন্তু তার কেমন জেদ চেপে বসেছে। সে গোঁয়ারের মতো বলে ওঠে, “ঠিক আছে, আমি বাইরে রাস্তায় বসছি। রূপম ফিরুক!”

ইতি মনে মনে ভেবেছিল বাইরে প্রচণ্ড রোদ দেখে মহিলার মন নরম হবে, কিন্তু মহিলার শক্ত চোয়াল, আর নিষ্ঠুর ভঙ্গি তাকে বুঝিয়ে দিল, এ বড়
শক্ত ঠাঁই।

ইতি রূপমদের বাড়ির সামনের জমির উপর বসে পড়ল। তার হাত-পা কাঁপছে, মাথা ঠিক করে কাজ করছে না। সে আবার রূপমকে ফোন করল। সকাল থেকে প্রায় পঞ্চাশ বার সে রূপমকে ফোন করেছে, ফোন সুইচ্ড অফ বলছে।

সন্ধের দিকে রূপমকে ফিরতে দেখল ইতি। রূপম চোরের মতো ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। ঝিমঝিম করে তখন বৃষ্টি নেমেছে। খেতের উপর বাদুলে পোকার দল ঘিরে ধরেছে ইতিকে। কটকট করে ব্যাঙ ডাকছে একটু দূরে। একটু পরেই সারা দিন ধরে বৃষ্টিতে ভেজা অভুক্ত ইতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল মাটিতে।

তাদের গ্রামের মেয়ে-বৌরা একটা ভ্যানে চাপিয়ে ইতিকে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। স্যালাইন চালিয়ে দিলেন প্রায় ইতিরই বয়সি এক জন লেডি ডক্টর। ইতির গল্পটা অনেকের কাছ থেকেই সবিস্তারে কানে এসেছে তাঁর। বিরক্তমুখে নাক কুঁচকে রইলেন তিনি। কোনও কথা বললেন না।

কয়েক ঘণ্টা পরে ইতি জল-বিস্কুট খেয়ে কিছুটা সুস্থ। ডাক্তার মেঘা রায় তার প্রেশার দেখতে দেখতে বললেন, “বিয়ে-সংসার ছাড়াও পৃথিবীতে অনেক কাজ আছে। ওই সব নিয়ে এক বার ভাবলেও তো হয়। তাই না!”

সেই রাতটা ইতিকে ভর্তি করে রাখলেন ডাক্তার মেঘা। ইতি হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়েই আকাশে চাঁদ উঠতে দেখল। আজও চার দিক জোছনায় ফটফট করছে। চাঁদের তীব্র আলো দেখে জানলার কাছে একটা বিরাট শেওড়া গাছে কাকেরা ভোর হয়েছে ভেবে কা কা করে ডেকে উঠল। এমন জোছনাকেই বলে কাকজ্যোৎস্না।

ইতি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে সে দিকে। সে দেখল, আকাশ থেকে সেই জোছনা গায়ে মেখে স্বচ্ছ ডানার এক পরি নেমে এসেছে তার কাছে। পরি ইতির হাত ধরে তাকে নিয়ে আকাশে উড়ে চলল, ইতি দেখল তারও পরির মতো সুন্দর এক জোড়া ডানা হয়েছে। সে নদীতে সাঁতার কাটার মতো করে আকাশের বুকে সাঁতার কাটতে কাটতে দুধের সরের মতো জোছনার সমুদ্র পেরিয়ে যেতে লাগল।

হঠাৎ ফিসফিস করে কে যেন তাকে ডাকতে লাগল। জানলার গায়ে টকটক করে কে টোকা দিচ্ছে? কে? ইতি অনেক কষ্টে তার চোখ খুলল। চোখ যেন আঠা লেগে জুড়ে গেছে। মাথাটা অসম্ভব ভারী। ইতি
চেয়ে দেখল, জানলার পাশে রূপম দাঁড়িয়ে আছে।

সে ফিসফিস করে বলে, “ইতি, বাড়ি ফিরে যাও। এ ভাবে আর আমার বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থেকো না। আমার মা খুব রাগ করছে।”

“আচ্ছা।”

“কাল হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেবে তোমায়, তাই না? তখন সোজা বাড়ি যেয়ো কিন্তু।”

ইতি উত্তর দিল না। হঠাৎ তার ভীষণ বমি পেল। বহু ক্ষণ খালি পেটে থেকেছে সে। সে ছুটে কলঘরের দিকে চলে গেল। তার পর সশব্দে উগরে দিতে লাগল পিত্ত, লালারস আর চোখের জল।

বিছানায় ফিরে এসে ইতি দেখল, জানলার পাশ থেকে রূপম কখন যেন চলে গেছে। মেঘা রাউন্ডে এসেছিল একটু আগে। গোটা ঘটনাটা সে দেখেছে। সে ইতির হাতদু’টো ধরে বলল, “আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিতে চাই। আমার মা-ও আমাকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। এখন আমি এখানে চলে এলে, মা একাই থাকেন। যদি তুমি রাজি থাকো, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে যেতে পারো। ওখানে গিয়ে তোমাকে আবার লেখাপড়া শুরু করতে হবে, আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। যে পুরুষকে এত দিন ভরসা করেছিলে, সে যে আসলে কাপুরুষ, এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ? তোমাকে নিজের জন্যই স্বাবলম্বী হতে হবে। কাল ভোর হলে তোমার বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।”

ইতি কথা বলতে পারে না। গলার কাছে কী যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। এত কষ্টের মধ্যেও আনন্দে তার চোখ ভিজে যায়। শেষ রাতের জোছনায় ভিজে ভিজে ও যে পরির স্বপ্ন দেখেছিল, তা এ বার সত্যি হতে চলেছে।