Abosar

কাঁটাতার

দিলীপ মাশ্চরক

তুমি এটা কী এঁকেছ নিশা?” টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করল বিদিশা।

“আমি স্বপ্ন এঁকেছি, মা।”

“স্বপ্ন?”

“হ্যাঁ। আমি স্বপ্নে যা দেখি, তাই আঁকি।”

অনেক রকম রং দিয়ে আঁকা জিনিসটা বুঝতে পারল না বিদিশা। নিশা আঙুল দিয়ে বলল, “এটা মেঘ।” মেঘ যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা দেওয়াল, তার মাঝখানে একটা জানলা। জানলার ও পারে উঁচুতে একটা প্রজাপতি আর নীচে একটা বেলুনওয়ালা। তার হাতে উড়ছে অনেকগুলো বেলুন, সবগুলোই টকটকে লাল। বিদিশা ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল।

নিশা হোমটাস্কের খাতা খুলেছে। ন’টার মধ্যে হোমটাস্ক শেষ করতে হবে। আজ বিদিশার ইস্কুল ছুটি। না হলে প্রতিদিনই সে ছ’টার সময় বেরিয়ে যায়। তখন নিশা ওঠে না। নিশার স্কুল দশটায়। বাড়িতে নিশা পড়ে অপরাজিতা ম্যামের কাছে। লেখাপড়ায় একটু-আধটু সাহায্য করলেও এর আগে বিদিশা কখনও নিশার আঁকা ছবি খুঁটিয়ে দেখেনি।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে অনুপমকে কথাটা বলল বিদিশা। শুনে অনুপম হাসল, “স্বপ্ন আঁকে? ভারী অদ্ভুত তো!” তার পর আবার হাতের আইপ্যাডে ডুবে গেল।

অনুপমের ড্রাইভার আসে আটটায়। একটা বড় কর্পোরেট হাউসের মার্কেটিং ম্যানেজার অনুপম। তার কাজ কখনও শেষ হয় না। আজকাল আলাদা ঘরে শোয়। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করে। অফিসে যায় সাড়ে আটটায় কিন্তু ফেরার কোনও ঠিক নেই।

বিদিশার মর্নিং স্কুল। ও যখন বেরিয়ে যায়, তখন দু’জনের কেউই ঘুম থেকে ওঠে না। সাতটায় মালিনী আসে। ওর কাছে চাবি থাকে। ঘর খুলে অনুপমের চা আর নিশার ব্রেকফাস্ট তৈরি করে। অনুপম বেরিয়ে যায় আটটায়। মালিনীই নিশাকে বাসে তুলে দেয়। বেশির ভাগ দিনই মালিনী বাজার করে, ফিরে এসে রান্না চাপায়। বিদিশা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই ফেরে, বারোটার সময় রান্না শেষ করে মালিনী চলে যায়। আবার দুপুরের পর আসে।

দুপুরে খাওয়ার পর আর এক বার ছবিটা দেখল বিদিশা। মেয়েটা একেবারে পাগল, বলে নাকি স্বপ্ন এঁকেছে! কিন্তু সত্যিই ভারী অদ্ভুত ছবিটা! এত রং কেন? স্বপ্নের মধ্যে কি কোনও রং থাকে? না কি ছোটবেলার স্বপ্নে রং থাকে, যত বয়স বাড়ে স্বপ্নেরা ধূসর হয়ে যায়!

তিনটের সময় একটা মিটিং আছে। এখন একটা পাঁচ, তাড়াতাড়ি নতুন প্রোজেক্টের কাজটা গোছাচ্ছিল অনুপম, এমন সময় ইন্টারকম বেজে উঠল। 

“হ্যালো…”

“স্যর, সেনম্যাডাম এসেছেন।”

“পাঠিয়ে দাও,” বলেই আবার যোগ করল অনুপম, “এখন আর কাউকে টাইম দিয়ো না।”

“ওকে স্যর।”

দশ সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে ঢুকে এল অগ্নিমিত্রা। কপালে, নাকের পাশে ঘাম। উল্টো দিকের চেয়ারে বসেই বলল, “এসিটা বাড়িয়ে দাও।”

অনুপম একটু হেসে বলল, “বাইরে থেকে এলে, এই টেম্পারেচারটাই ঠিক আছে। একটু বোসো, এখনই ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

ইন্টারকমে ঠান্ডা জল আর কফি দিতে বলল অনুপম। তত ক্ষণে ব্যাগ থেকে দুটো পাসপোর্টই বার করেছে অগ্নিমিত্রা। হাঁপ ছাড়ার ভঙ্গিতে বলল, “দু’জনেরই ভিসার কাজটা কমপ্লিট হয়ে গেল। ট্র্যাভেল এজেন্সির সঙ্গে সব কথা বলা আছে, সামনের সপ্তাহেই টিকিট কনফার্মড।”

“এত তাড়াতাড়ি?” হাতের পেনটা টেবিলে স্ট্যান্ডে রেখে দিয়ে হাসল অনুপম।

“তাড়াতাড়ি কোথায়? তুমি তো নতুন প্রোজেক্টের কাজটা নিয়েই যাবে, কথা ছিল। তোমার তিন বছরের ভিসা। আমার চাকরিটা পার্মানেন্ট নয়, এক বছরের ভিসা পেয়েছি। সব ওখানে গিয়ে এক্সটেন্ড করতে হবে। আমার বন্ধু অনন্যা, স্টেটসে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে আছে। বলেছে, হয়ে যাবে।”

অনুপম চিন্তিত ভাবে বলল, “কোনও কিছু ব্যবস্থা নেই, ওখানে গিয়ে উঠব কোথায়?”

অগ্নিমিত্রা টেবিলের ওপর ঝুঁকে এল, “তোমার কোনও অসুবিধে নেই। অনন্যা আটলান্টাতেই থাকে, তোমার তো ওখানেই অফিস। আমরা অনন্যার কাছেই উঠব, ওর ফ্ল্যাট বেশ বড়। তার পর তোমার অ্যাপার্টমেন্ট ও-ই খুঁজে দেবে। আমার অফিস অবশ্য ডেকাটুরে। এটা আটলান্টার একটা সাবার্ব। আমি ডেকাটুরেই থাকব, তবে উইকএন্ডে আমরা এক সঙ্গে থাকতে পারব।”

অনুপম মাথার ঘন চুলে এক বার হাত চালিয়ে বলল, “তার পর?”

“তার পর তোমার প্রোজেক্ট শেষ হওয়ার আগেই তুমি একটা অন্য জব খুঁজে নেবে। তোমার যা কোয়ালিফিকেশন, কোনও অসুবিধে হবে না। তত দিনে আমার চাকরিটাও পার্মানেন্ট হয়ে যাবে।”

বেয়ারা কফি আর জল রেখে গেছে। অনুপম বলল, “বাহ্! সবই ভেবে রেখেছ দেখছি। এখনকার চাকরিটা ছেড়ে দিলে?”

“হ্যাঁ, আজই রেজ়িগনেশন লেটারটা দিয়ে এলাম। একটু গাঁইগুঁই করছিল, সার্ভিস বেনিফিট বোধ হয় বিশেষ কিছু পাব না। আমিও আর ইনসিস্ট করিনি।” 

টেবিলের ওপর রাখা অগ্নিমিত্রার বাঁ হাতের দিকে তাকিয়ে ছিল অনুপম। ফর্সা, লম্বা আঙুলগুলো মোটা থেকে আস্তে আস্তে সরু হয়ে গেছে। এ রকম সুন্দর আঙুল শিল্পীদের হয়।

অনুপম খুব মৃদু গলায় বলল, “আর অনির্বাণ?” 

অগ্নিমিত্রা মাছি তাড়ানোর মতো একটা ভঙ্গি করল, “ওর কথা বাদ দাও, সারা দিন নাটক নিয়ে পড়ে আছে। ক্লার্কের চাকরি করে, ভাড়া বাড়িতে থাকে, হি ইজ় নট মাই ম্যান।”

অনুপম কফির কাপে আস্তে আস্তে চুমুক দেয়। এক গাল দাড়ি, প্রাণোচ্ছল অনির্বাণের মুখটা মনে পড়ে। অগ্নিমিত্রার সঙ্গে একটা নাটক দেখতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল।

“আচ্ছা অগ্নি, কলেজ লাইফে তুমি ওর গ্রুপেই নাটক করতে না?” 

“ও সব কথা ছাড়ো। কম বয়সে ও রকম খেয়াল সবারই থাকে। তা বলে জীবনটা তো আর নাটক নয়। ও সব কথা থাক, তুমি বলো, তুমি সব গুছিয়ে নিয়েছ তো? সামনের সপ্তাহে ফ্লাইটে কোনও অসুবিধে হবে না?”

অনুপম টেবিলে আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে বলল, “এখনও কাউকে কিছু বলিনি, বলবও না। বিদিশা জানে প্রোজেক্ট নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে, তার পর দেখা যাবে…” 

অগ্নিমিত্রা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে তার চেয়ে বয়সে সাত-আট বছরের বড় এই কৃতী, সৌম্যকান্তি পুরুষটির দিকে। কানের পাশে কয়েকটা সাদা চুল যেন আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন, তার পর সে পুরোপুরি নিজের করে পাবে এই পুরুষটিকে।

কপালের ওপর থেকে চুল সরিয়ে অগ্নিমিত্রা একটু হেসে অনুপমকে বলে, “কী ভাবছ?”

কাচের টেবিলে কাটাকুটি করতে করতে অনুপম বলে, “কী আর ভাবব? তুমিই তো সব ভেবে রেখেছ!”

অগ্নিমিত্রা একটু ঝুঁকে অনুপমের হাতে হাত রাখে, আশ্বাস দেওয়ার মতো করে বলে, “এখন একটু এ রকম লাগবে। ওখানে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার যা কোয়ালিফিকেশন, এই কোম্পানিতে তোমাকে মানায় না।”

অনুপম অপলকে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনও এয়ারওয়েজ়ের ছবি, বিরাট আকাশের নীচে নীল পাহাড়। প্লেনটাকে একটা পাখির মতো লাগছে। সকালে বিদিশা কী যেন বলছিল, নিশা স্বপ্ন আঁকে। আমরা সবাই কি আসলে স্বপ্ন আঁকি?

আজ সকালে অফিস গেল না অনুপম। অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিল, ঘরেই প্রোজেক্টের কাজ করবে। বিদিশা সকালেই বেরিয়ে গেছে। কী একটা কারণে নিশাদের স্কুল ছুটি। অনুপম ঠিক করল, আজ নিশার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাবে।

নিশার টেবিলের পাশে একটা টুল নিয়ে বসল অনুপম। ড্রয়িংবোর্ডে নিশা একটা ছবি এঁকে রেখেছে। অনুপম মন দিয়ে ছবিটা দেখল। ছবিটার বাঁ দিকে মেঘ, একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে ডান দিকে, আর ডান দিকে একদম ধারে একটা কাঁটাতারের বেড়া। তার দু’পাশে দু’জন সৈনিক, হাতে রাইফেল।

অদ্ভুত এই ছবিটার কোনও মানে বুঝতে পারল না অনুপম।

“এটা কী এঁকেছ নিশা?”

নিশা বড় বড় চোখ মেলে বাবাকে বোঝাতে বসল, “এই দেখো বাবা, এই পাখিটা উড়ে একদম আকাশ যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে গিয়ে দেখে একটা কাঁটাতারের বেড়া। আর তার দু’দিকে দুই সিপাই, হাতে বন্দুক।”

“এই বার বুঝতে পেরেছি,” নিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অনুপম, “এটা হল আমাদের দেশের সীমান্ত। দু’দিকে সেপাইরা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে।”

“সীমান্ত কী বাবা?”

“যেখানে একটা দেশ শেষ হয়ে আর একটা দেশ শুরু হয়।”

“ও, আমাদের দেশ এখানে শেষ, ও পারে নতুন দেশ শুরু হয়েছে?”

“ঠিক তাই।”

“ওদের হাতে বন্দুক কেন?”

“ওরা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে।”

“আচ্ছা বাবা, আমাদের দেশের মানুষ আর ওদের দেশের মানুষ কি আলাদা?”

“না না, সব একই মানুষ।”

“তা হলে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া কেন?”

অনুপম একটু চুপ করে থাকে। তার পর বলে, “আসলে এ পারের মানুষ ও পারের মানুষকে বিশ্বাস করতে পারে না, তাই কাঁটাতার।” 

ব্যাপারটা বেশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে অনুপম বলে, “চলো, আমরা বারান্দায় গিয়ে গল্প করি।”

সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে। বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে অনুপম একটা সিগারেট ধরায়। নিশা বলে, “তুমি অনেক দিন গল্প বলোনি, একটা গল্প বলো বাবা।”

অনুপম একটু ভেবেচিন্তে শুরু করে রাপুনজ়েলের গল্প। নিশা অবাক হয়ে শোনে। তার হরিণকালো চোখের পলক পড়ে না।

গল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিশা অনুপমের একটা হাত ধরে বলে, “আচ্ছা বাবা, তুমি না কি আমেরিকায় চলে যাবে?”

“হ্যাঁ মা, অফিসের কাজের জন্য।”

“তা হলে তার পর আমায় গল্প বলবে কে?”

“মা তোমায় আরও ভাল ভাল গল্প বলবে।”

নিশা একটু চুপ করে থাকে। তার পর বলে, “আচ্ছা বাবা, আমেরিকা অন্য একটা দেশ, তাই না?”

“হ্যাঁ, অনেক বড় একটা দেশ।”

“ওখানকার মানুষরা আলাদা?”

“হ্যাঁ মা, ওখানে সবাই সাহেব, তারা খুব ফর্সা।”

“মা-র মতো?”

“মা-র চেয়েও ফর্সা।”

“আচ্ছা বাবা, তুমি আমেরিকা থেকে আমার জন্য কী নিয়ে আসবে?”

অনুপম একটু ক্ষণ চুপ করে থাকে। তার পর অন্যমনস্ক ভাবে আস্তে আস্তে বলে, “অনেক গিফ্‌ট নিয়ে আসব।”

নিশা অপলক তাকিয়ে আছে। অনুপম চোখ সরিয়ে নেয় টবের চন্দ্রমল্লিকার দিকে।

এখন রাত সাড়ে দশটা। বিছানায় চুপ করে বসে আছে অনুপম। পাশে খোলা সুটকেস। জামাকাপড় বিদিশাই গুছিয়ে দিয়েছে। অনুপম শুধু প্রোজেক্টের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিল। পরশু রাত দশটায় ফ্লাইট। আজ তাই ছুটি নিয়েছিল অনুপম।

মাথার ভেতরটা কী রকম ভার হয়ে আছে। প্রেশার? ভিসার হেল্‌থ চেকিংয়ের সময় ধরা পড়েছিল প্রেশার সামান্য বেশি। একটা হাল্কা ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার। আজ সকালে ব্রেকফাস্টের পর ওষুধটা খেয়েওছে অনুপম। তা হলে?

তবে কি মন খারাপ? ফ্ল্যাটটা তো রইলই, বিদিশা যা চাকরি করে তাতে নিশাকে মানুষ করতে কোনও অসুবিধে হবে না। দূরত্ব তো অনেক দিনই বেড়েছে, বিদিশা অগ্নিমিত্রা সম্পর্কে কিছুটা জানে। মেয়েদের এ সব ব্যাপারে আলাদা সেন্সর মেকানিজ়ম থাকে। যেতে হলে এখন যাওয়াই ভাল, প্রোজেক্টের কাজটা হাতে রয়েছে। না হলে অনেক কথা বানিয়ে বলতে হয়।

একটা সিগারেট ধরাল অনুপম।

মাথার চাপ ভাবটা কাটছে না। এক কাপ কফি খেলে ভাল হত। অনুপম বিছানা থেকে উঠল। রান্নাঘরে মালিনীকে কফি করতে বলে ফেরার সময় নিশার টেবিলের দিকে চোখ পড়ল অনুপমের। নিশা আজকেও একটা ছবি এঁকে রেখেছে। টেবিলের পাশে একটু দাঁড়াল অনুপম। 

ছবিটার বাঁ দিকে একটা ছোট্ট ফ্রক পরা মেয়ে। তার মাথার চুলে লাল রিবন, হাতে এক গোছা টকটকে লাল ফুল। ডান দিকে লম্বা একটা লোক, তার দু’হাতে অনেকগুলো লাল-নীল ফিতে দিয়ে বাঁধা রংচঙে উপহার। কিন্ত আশ্চর্য! দু’জনের মাঝখানে একটা লম্বা কাঁটাতারের বেড়া। দু’জনেই স্থির হয়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে।

খোলা তারে হাত লাগার মতো একটা ঝাঁকুনি লাগল অনুপমের। ধমনীর রক্ত যেন ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল হৃৎপিণ্ডের দেওয়ালে। মাথাটা একটু টলে উঠল। বসে পড়তে যাচ্ছিল অনুপম, ঘরের মধ্যে টুংটাং করে বেজে উঠল সেলফোন।

ছবিটা হাতে নিয়ে ঘরে এসে অনুপম দেখল, স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে অগ্নিমিত্রার নাম। এক বার থেমে আবার বাজতে লাগল। হাত বাড়িয়ে ফোনটা তুলে নিল অনুপম।

“হ্যালো, তোমার সব লাগেজ গোছানো হয়ে গেছে? কাগজপত্র সব ঠিক করে নিয়েছ? তোমায় এক বার কাল মানি স্কোয়ারে আসতে হবে, আমার কিছু শপিং বাকি আছে। সাড়ে এগারোটার মধ্যেই চলে এসো প্লিজ়, লাঞ্চ বাইরেই করে নেব।” 

অনুপম একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে নিশার আঁকা ছবিটার দিকে। ছবির কাঁটাতার এখন বাড়তে বাড়তে অনুপমের ভেতর দিয়ে ঘর ছাড়িয়ে চলে গেছে বারান্দায়…

ও পাশ থেকে অগ্নিমিত্রার উদ্বিগ্ন গলা ভেসে এল, “কী হল? অনুপম? কথা বলছ না কেন?”

অনুপম বহু ক্ষণ চেপে রাখা একটা শ্বাস ফেলল। বুকটা এ বার খালি খালি লাগছে। হঠাৎ তার মনে হচ্ছে, কিছু মায়া বড় অবুঝ, কিছু টান বড় নাছোড়। 

খুব আস্তে আস্তে অনুপম বলল, “আমি যাচ্ছি না, অগ্নিমিত্রা…”