ঝোপের আড়ালে হাঁটু মুড়ে বসে ছিল রমাপদ। এক মাথা ঝাঁকড়া চুল। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। গায়ের রং পোড়া তামার মতো। এক সময় ভাল স্বাস্থ্য ছিল, এখন চোয়াড়ে রোগা চেহারা। চোখেমুখে উচ্ছৃঙ্খল জীবনের ছাপ স্পষ্ট।
অনেক ক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে রমাপদ। ডান দিকে মজা পুকুর, ঝোপঝাড়, তার ও পারে রেললাইন। আরও দূরে বাগমারা গ্রাম। লোকে বলে অনেক বছর আগে জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে ওই গ্রামে ঢুকে পড়েছিল, আর পালাতে পারেনি। গ্রামের লোকেরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল। তাই ওই নাম।
রমাপদর কাজ ওই গ্রামে। যখন ছোট ছিল, তখন ওখানে দু’-চার বার গিয়েছিল। তার পর কুড়ি বছর আর এক বারও যায়নি। তবে মহিম ওকে সব বলে দিয়েছে। ছোট কাজ। নগদ দু’হাজার টাকা। পাঁচশো টাকা আগেই দিয়েছে, কাজ শেষ হলে বাকিটা। আগেকার দিন হলে দু’বার ভাবত, এখন আর ভাবে না। টাকা পেলে সব পারে ও। তার পর কয়েকটা দিন বোতলের পর বোতল টেনে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে।
অনেক ক্ষণ বসে থেকে ঘুম পায়। চার দিকে নরম ঘাস। পা দু’টো ছড়িয়ে ঘাসে শরীর মেলে দিল ও। আশপাশে আগাছা, বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড়। ও সব নিয়ে মাথা ঘামায় না রমাপদ। হাসতে হাসতে বলে, ‘‘ওদের দশ গুণ বিষ আমার শরীরে। আমাকে কামড়ালে ওরাই মরবে।’’
পাশে রাখা ঝোলাটা পিঠের তলায় টেনে নিল রমাপদ। ঝোলার জিনিসপত্র মহিমের দেওয়া। বার বার বলেছে, ‘‘খুব সাবধানে কাজ করবি, কেউ যেন কিছু টের না পায়। ধরা পড়লে আমার কিন্তু কিছু করার থাকবে না।’’
তামাক খাওয়া, ছোপ-ধরা দাঁত বার করে চাপা গলায় রমাপদ জবাব দিয়েছিল, ‘‘রমাপদর ডান হাতের কাজ বাঁ হাত জানতে পারে না।’’ কাজ নিয়ে ভাবনা নেই রমাপদর। ও সব অন্যের ভাবনা। তার একটাই ভাবনা— টাকা। ওই টাকার জন্যই তো বেঁচে থাকা। টাকা ছিল না বলেই চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। পুরনো দিনের কথা মনে করতে চায় না রমাপদ। যে ঘা শুকিয়ে গিয়েছে, কী লাভ তাকে নতুন করে খুঁচিয়ে তুলে? শুধু যন্ত্রণা পাওয়া।
চোখ বুজে ছিল রমাপদ। দূরে পাখির ডাক ছাড়া চার দিক শান্ত। গাছের পাতায় কোনও দোলাচল নেই। এখনও কাজের সময় হয়নি। রাত বাড়লে চার দিক নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাবে, ওই পাখিদের মতো সবাই ঘরে ঢুকে পড়বে, তখন কাজ শুরু হবে। সেই রকমই বলেছে মহিম।
দূর থেকে ট্রেনের শব্দ আসে। তাড়াতাড়ি উঠে বসল রমাপদ। ওই ছুটে চলা ট্রেন দেখতে খুব ভাল লাগে তার। কোনও দিন ট্রেনে চড়েনি। অনেক দিন আগে এক বার যাওয়ার কথা হয়েছিল। তার পর সব ওলট-পালট হয়ে গেল। ট্রেনটা তার চোখের সামনে দিয়ে দৈত্যের মতো গর্জন করতে করতে দূরে মিলিয়ে গেল। আবার সব শান্ত। প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। আরও অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। আবার ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল রমাপদ।
চোখের সামনে গোটা আকাশখানা ভেসে উঠেছে। একটা-দু’টো করে তারা ফুটছে। আর অল্প কিছু পরেই সারা আকাশ তারায় তারায় ভরে যাবে। রমাপদর মনে পড়ে, ছোটবেলায় তারা দেখতে কী ভাল লাগত! ওর বন্ধু তারিক বলত, ‘‘মানুষ মরে গেলে তারা হয়ে যায়।’’ রমাপদ জিজ্ঞেস করেছিল, ‘‘আমি মরে গেলে তারা হব?’’ তারিক গম্ভীর মুখে বলেছিল, ‘‘আব্বা বলে সবাই এক দিন তারা হয়ে যায়।’’ সেই তারিক হঠাৎ মরে গেল। তার পর অনেক দিন আকাশের দিকে তাকিয়ে তারিককে খুঁজেছে রমাপদ।
হঠাৎ কারও পায়ের শব্দ। মুখ ফেরাল রমাপদ। দু’জন লোক মাথায় কাঠের বোঝা নিয়ে হেঁটে চলেছে। হামাগুড়ি দিয়ে একটা ঝোপের পাশে লুকিয়ে পড়ল ও। জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে ঘরে ফিরছে লোক দু’জন। নিজের মনেই চলেছে ওরা। রেললাইন পার হয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ল। অন্ধকারে আর ওদের দেখা গেল না। সারা দিন কাজের শেষে ঘরে ফিরে ওরা বিশ্রাম নেবে। বুকের ভিতরটা টনটন করে ওঠে। তারও একটা ঘর ছিল, ভালবাসার মানুষ ছিল। সব হারিয়ে গেল। চাঁপা আর খোকা থাকলে জীবনটা অন্য রকম হত। শুধু ক’টা টাকার জন্য এত নোংরা কাজ করতে হত না। নোংরা লোকগুলো বুঝে নিয়েছে, দু’বেলা খেতে না পাওয়া রমাপদর সামনে এক টুকরো মাংস ঝুলিয়ে যা হুকুম করা হবে, সে তা-ই করতে বাধ্য। আজ যার বাড়িতে আগুন লাগাবে সে কে, ভাল লোক না খারাপ, কিছুই জানার দরকার নেই। শুধু জানে, সে অন্য দলের। ভোট আসছে, তার আগেই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তা হলে জয়ের রাস্তা পরিষ্কার। হুকুম তামিল করাই রমাপদর কাজ।
উঠে দাঁড়াল রমাপদ। কোমর টনটন করছে। পাকা খবর, লোকটাও কয়েক দিন হল কোমরের ব্যথায় উঠতে পারছে না। আর দেরি করে না সোজা হাঁটতে আরম্ভ করল ও। হাতের থলেটা শক্ত করে ধরা। এর মধ্যেই তার অস্ত্রশস্ত্র। চার দিকে অন্ধকার। ভাল করে কিছু দেখা যায় না। টর্চ জ্বালায় না। সাবধানের মার নেই। অন্ধকারের মধ্যে সামান্য আলোও দূর থেকে চোখে পড়ে। ঝুঁকি হয়ে যাবে। মাটিতে পা ঘষে এগিয়ে চলে রমাপদ। একটা সরু নালা লাফিয়ে পার হয়। সামনে রেললাইন অন্ধকারেও চকচক করছে। লাইন পার হয়ে ফাঁকা জমি। সামনে একটা পুকুর, তার পাশে পাকুড় গাছ। মহিম বলেছে, পুকুরের আশপাশে একটাই বড় গাছ। তার তলা দিয়ে পায়ে চলা রাস্তা।
বেশি রাত হয়নি। শুনশান চারদিক। বড় পুকুর পেরিয়ে গ্রাম। বেশি হলে তিরিশ-চল্লিশটা ঘর। সকলেই চাষি। যে লোকটার ঘর পোড়াতে যাচ্ছে, তার উপর রাগ হয়। ভালই তো ছিলি! চাষবাস করছিলি! গরু-ছাগল পালতিস। ভোটের দলে নাম লিখে নেতা হওয়ার শখ কেন? একেই বলে গরিবের ঘোড়া রোগ।
গ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছে। সাবধান হল রমাপদ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাড়িঘর। বাবাঠাকুরের থান। ঠিক তার ডান দিকের বাড়িটাই রমাপদর লক্ষ্য। একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখে নিল ও। অন্ধকার হয়ে আছে বাড়িটা। আশ্চর্য! বাড়িতে কি মানুষজন নেই? কান খাড়া করে ও শোনে, আশপাশে কোথাও গান হচ্ছে। এই সময় অনেক গাঁয়ে নাম-সঙ্কীর্তন হয়। এখানেও হচ্ছে। নিশ্চয়ই বাড়ির লোকজন সেখানে গিয়েছে। কে কখন ফিরবে ঠিক নেই। অত ক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। এ সব কাজ যত তাড়াতাড়ি শেষ করে পালিয়ে যাওয়া যায়, তত ভাল। অপেক্ষা করবে না রমাপদ। তার বাড়িতে আগুন লাগানোর কথা, সে তা-ই করবে। ঘরে কে ছিল, কে ছিল না, ওর জানার কথা নয়।
এক দিকে ভাঙা মাটির দেওয়াল। এক সময় ঘর ছিল। এখন কিছু নেই। তার পাশে বসে পড়ল ও। পিছনের দিকটায় বাড়িঘর নেই। নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। খানিকটা নিশ্চিন্ত, এ দিকে কেউ আসবে না। থলে থেকে কেরোসিনের বোতল বার করে ও। আর কয়েকটা কাপড়ের টুকরো। বোতলের মুখ খুলে কাপড়গুলো জবজবে করে ভেজায়। দেশলাই জ্বালায়। ভিজে কাপড়গুলো দলা পাকিয়ে দেশলাই কাঠি ছোঁয়াতেই করে দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। রমাপদ জানে, আগুন সহজে নিভবে না। একটা শুকনো কাপড় দিয়ে আগুন-ঝরা কাপড়গুলো এক সঙ্গে চেপে ধরে ও ছুড়ে দিল ছাদের উপর। মাটির দেওয়াল, তার উপর খড়ের ছাউনি। আগুন গিয়ে পড়লে চালের মাথায়। এক পলক দেখে নিল রমাপদ। সামনে থেকে আগুন এখনই কারও চোখে পড়বে না। গোটা বাড়ি জ্বলতে আরম্ভ করলে আগুন চোখে পড়বে। থলেটা তুলে নিল রমাপদ। কেউ যেন বুঝতে না পারে কেমন করে আগুন লাগল। আর অপেক্ষা করার সময় নেই। যে দিক থেকে এসেছে সেই দিক দিয়ে পালাতে হবে। যখন লোকজন আসবে, তত ক্ষণে ও জঙ্গল পেরিয়ে বাড়ির রাস্তায়।
দশ-বারো পা গিয়েই থমকে গেল। সামনে কয়েকটা গাছ। সেখানে কিছু দাঁড়িয়ে। নিজের অজান্তে কেউ যেন তাকে সতর্ক করে দিল। পাথরের মতো স্থির হয়ে গেল রমাপদ। অনেক ক্ষণ অন্ধকারে থেকে চোখের দৃষ্টি আগের চেয়ে স্পষ্ট। অনেকগুলো জন্তু কিছু খাচ্ছে। মাথা নিচু করে মাটি খুঁড়ছে। এক মুহূর্তে বুঝে নিল রমাপদ। বুনো শুয়োরের পাল গ্রামে ঢুকে পড়েছে। পলকে বুকের ভিতর কাঁপন। যারা জঙ্গলে ঘোরে, তারা জানে, বুনো শুয়োর কতখানি ভয়ানক। মুখ ফিরিয়ে পিছনে তাকাল। আগুনের আভা আকাশে উঠছে।
লোকজনের চিৎকার শুরু হয়ে গিয়েছে। পাঁচিলের পাশ দিয়ে কেউ ছুটে যায়। আকাশ জুড়ে লকলকে আগুনের শিখা। গ্রামের লোক কীর্তন শুনতে গিয়েছে। ফিরে আসার আগেই পালাতে হবে। পাঁচিলের গা ঘেঁষে এগিয়ে গেল রমাপদ। একটা ডোবা, আর এগোনোর জায়গা নেই। কেরোসিনের বোতলটা ছুড়ে দিল ডোবার মধ্যে। সন্দেহ করার কিছু থাকবে না। চিৎকার করতে করতে এক দল লোক ছুটে আসছে ।
একটু ভেবে নিল রমাপদ। এত মানুষ সবাই এই গ্রামের নয়। আশপাশের গ্রামের মানুষও আসছে। লোকজনের ভিড়ে মিশে গেলে কেউ কিছু বুঝতে পারবে না। চট করে বেরিয়ে এল রমাপদ। কয়েক জন বয়স্ক মানুষ আসছিলেন। পাঁচিলের পিছন থেকে বেরিয়ে তাদের সঙ্গে হাঁটতে আরম্ভ করল। কারও নজর পড়ল না তার দিকে। মনে মনে ঠিক করে নিল, ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে ওই রেললাইন পেরিয়ে তাকে পালাতে হবে। এত মানুষের সাড়া পেয়ে শুয়োরের পাল আর ওখানে থাকবে না। মানুষের মতো ওদেরও প্রাণের ভয় আছে।
বাড়ির পিছনের দিক থেকে আগুন সামনের দিকে এসে পড়েছে। গ্রামের লোক পাগলের মতো ছোটাছুটি আরম্ভ করে দিয়েছে। একটা বাড়ি থেকে গোটা গ্রামে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাড়িটা পেরিয়ে যেতেই থমকে গেল রমাপদ। থোকা থোকা জ্বলন্ত আগুন ঝরে পড়ছে ঘরের সামনে। কেউ সাহস করে ঢুকতে পারছে না। কয়েক জন বালতি করে জল ছুড়ে দিচ্ছে আগুনের দিকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা বৌ চিৎকার করছে। কয়েক জন তাকে জাপটে ধরে আছে। এত মানুষ তবু ধরে রাখতে পারছে না।
‘‘কী হয়েছে?’’ চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে রমাপদ।
‘‘লক্ষ্মী ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে কীর্তন শুনতে গিয়েছিল।’’
‘‘কত বড় ছেলে?’’
‘‘এক বছর।’’
মুহূর্তে কেমন যেন হয়ে যায় রমাপদ। সবার চিৎকার ছাপিয়ে উঠছে লক্ষ্মীর আর্তনাদ, ‘‘আমার খোকা! আমার খোকা!’’
সবাই লক্ষ্মীকে নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামের লোকজন চিৎকার করছে। জল নিয়ে আসছে। রমাপদ ভেবে নিল, এই সুযোগ। কেউ তাকে নজর করবার আগেই পালিয়ে যেতে হবে। ভিড় এড়িয়ে সোজা পুকুরের পাশ দিয়ে পাকুড় গাছটার দিকে এগিয়ে গেল। আগুনের শিখায় গোটা আকাশ লাল। এত দূর থেকেও লক্ষ্মীর কান্না শোনা যাচ্ছে। মায়ের কান্না। কয়েকটা মুহূর্ত। এগিয়ে যেতে গিয়েও থমকে গেল রমাপদ। নিজের অজান্তেই কত দিন আগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠল। ছেলেটার পেটে ব্যথা। তিন দিন ধরে কমছিল না। শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। অপারেশন করাতে হবে। পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। পাঁচশো টাকাও ছিল না। চোখের সামনে একটু একটু করে মরে গিয়েছিল ছেলেটা। ঘরের দাওয়ায় বসে মরা ছেলেটাকে বুকে নিয়ে এমনি করেই কাঁদছিল চাঁপা। অসহায় রমাপদ গুমরে গুমরে কেঁদেছিল। কত দিন পর সেই দৃশ্য। বুকের মধ্যে যন্ত্রণা উথলে ওঠে। সে খুব খারাপ মানুষ। বাড়িতে আগুন দিয়েছে, কিন্তু মায়ের কোল থেকে সন্তানকে কেড়ে নিতে চায়নি।
কান্নার শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। লক্ষ্মী নয়, চাঁপাই যেন চিৎকার করে কাঁদছে— ‘‘আমার খোকা! আমার খোকা!’’
বুকের মধ্যে তোলপাড় হয় রমাপদর। কেউ এখানে নেই। নিশ্চিন্তে লাইন পেরিয়ে জঙ্গলের রাস্তা ধরে বাড়ি পৌঁছে যাবে। তার পর মহিমের থেকে পাওয়া যাবে কড়কড়ে অনেকগুলো টাকা। সামনের দিকে পা ফেলে কয়েক পা গিয়েই থমকে গেল। মায়ের কান্নার শব্দটা কানে এসে বাজছে। বোধহীন যন্ত্রণা। নিজেকে বড় অসহায় লাগে ঠিক সেই দিনটার মতো। সে দিন তার কিছু করার ছিল না। আজ? সে নিজেই একটা শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল। আকাশের দিকে মুখ তুলে চায়। মাথার উপর পাশাপাশি দু’টো তারা জ্বলজ্বল করছে। ওরাই হয়তো খোকা আর চাঁপা। আকাশ থেকে সব দেখছে।
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না রমাপদ। বাড়ির ছাদ থেকে আগুন ঝরে পড়ছে। দরজার সামনে এত আগুন, এগোনো যায় না। কিছু ভাবে রমাপদ, অপেক্ষা করার সময় নেই। হয়তো চেষ্টা করলে এখনও বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারবে। আর কিছু না ভেবে এক জনের হাত থেকে জলের বালতি কেড়ে নিয়ে সে চকিতে বালতির সব জলটুকু মাথা থেকে গায়ে ঢেলে নিল। তার পর পা বাড়াল।
কেউ চেঁচিয়ে ওঠে, ‘‘কী করছ? ও দিকে আগুন। কোথায় যাবে?’’
মুখ ফেরাল রমাপদ। মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘খোকাকে ফিরিয়ে আনতে।’’
আগুনের বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে রমাপদ এগিয়ে গেল ঘরটার দিকে।
ছবি: বৈশালী সরকার