ঠিক এই জায়গাটাতেই ভবনাথবাবুর দেহ পড়ে ছিল। ঘন অন্ধকার। কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। একেই রাত্রিবেলা। ভাদ্র মাসের স্লেট রঙের আকাশ, কিন্তু সেই অন্ধকারেরও আলো ছিল। চকচকে লোহার হাতলে অল্প হাওয়ায় জাতীয় পতাকা মৃদুমন্দ উড়ছিল। ঠিক যেন ভবনাথবাবু শ্বাস নিচ্ছেন। সত্যিই তো তিনি মারা যাননি! স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু আর পাঁচটা সাধারণ মৃত্যুর মতো তো নয়! এই মৃত্যু মানুষকে অমরত্ব দেয়, পাপ থেকে মুক্ত করে…” এত ক্ষণ একটানা এই কথাগুলো বলে থামলেন বিজন চক্রবর্তী।
ঘোলাটে কাচের চশমা জলে ভিজে আরও অস্পষ্ট। মাটি ছুঁয়ে এক বার প্রণাম করে বললেন, “এই মাটি ভবনাথবাবুর রক্তে পবিত্র। সারা ভারতেই এই মাটি পাওয়া বিরল,” তার পর সমরেশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর তুমিও পবিত্র। তোমার শরীরেও রয়েছে সেই মানুষটির রক্ত।”
সমরেশ এ বার লজ্জাই পেল। তার প্রপিতামহ ভবনাথ সেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য শহিদ হয়েছিলেন। দেশের প্রতি তাঁর যে ভালবাসা, তার কতটাই বা সমরেশ উপলব্ধি করে। বাড়িতে কথায় কথায় তার প্রপিতামহের আদর্শ ঘুরে ঘুরে উল্লেখ হয় ঠিকই, দেশ বা দশ জনকে তাঁর এই আত্মত্যাগ কতটা উদ্বুদ্ধ করে তা তার জানা নেই। তবে তিনি যে সমরেশের এবং তার বাবার একমাত্র আদর্শ, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। ভবনাথবাবুর স্মৃতি কতটুকুই বা আঁকড়ে রাখতে পেরেছে সমরেশ বা তার পরিবার, তা তাদের পরিবারেরও জানা নেই। সত্যিকারের ভালবেসে গ্রামের বাসিন্দারাই তাঁদের বীর সন্তানকে নিয়ে বেঁচে আছেন।
সমরেশের বাবা অমলেশ সেন তাঁদের গ্রামের পৈতৃক বাড়ি ভবনাথবাবুর স্মৃতিরক্ষায় গ্রামের বাসিন্দাদের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন। তাঁরাই একটি ট্রাস্ট গড়ে বাড়িটা সংরক্ষণ করেন। ভেঙে পড়া বাড়িটা সারানো হয়েছে। বাড়ির সামনের ঘরটিতে ভবনাথবাবুর জীবন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি প্রদর্শনী। ছোটবেলা থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত ভবনাথবাবুর অনেক ছবি রাখা আছে সেখানে। প্রতি বছর ভাদ্র মাসে তাঁরাই ভবনাথবাবুর জন্মদিন পালন করেন। তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। আর এই দিনটিতেই তাঁর উত্তরপুরুষ সমরেশ পরিবারকে নিয়ে এক বার ঘুরে যায় এই গ্রামে। প্রতি বছরই একই অভ্যর্থনা, তবু তা পুরনো হয় না। কোথায় যেন আন্তরিকতার এক চোরা স্রোত সমরেশের শরীর এবং মনকে তৃপ্ত করে।
যত দিন সমরেশের বাবা বেঁচে ছিলেন, তিনি আসতেন। তাঁর মা-ও অনেক বারই এসেছিলেন। তাঁদের অবর্তমানে সমরেশ তার স্ত্রী পৃথা আর মেয়ে ঐশ্বর্যকে নিয়ে এসে বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করে। তাঁদের সঙ্গে আসেন গ্রামের সেই পুরনো বয়স্ক মানুষটি, বিজনবাবু। এত বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি পাল্টাননি। সেই খদ্দরের কোট। মাথায় গাঁধী টুপি। এখনও ঝোলা পাঞ্জাবির পকেটে রাখেন গীতা।
তিনি গ্রামেরই হাইস্কুলের মাস্টারমশাই ছিলেন। খুব ছোটবেলায় ভবনাথ সেনকে দেখেছিলেন। সম্ভবত তাঁর শেষ অবস্থায়। সেই কথাটা প্রতি বারই এমন ভাবে বলেন, শরীরের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে যায়।
সমরেশের পৈতৃক বাড়িটার ইট, কাঠ, সামনের জমির ঘাস, সবই তাঁর মুখস্থ। প্রায় আশি বছর আগে ওই সময়ে তাঁর স্মৃতিতে যে ভাবে যতটুকু বাড়িটাকে তিনি দেখেছিলেন, তা যেন এখনও অমলিন। এই বাড়িটার সামনে এসে এই দিনটিতে তিনি যেন স্মৃতির ছায়ায় আশ্রয় নেন।
বিজনবাবু বললেন, “যত দূর শুনেছি ভবনাথবাবু ফেরার ছিলেন অনেক দিন। সারা ভারত তখন বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে টগবগ করে ফুটছে। বাংলার তরুণরা দেশ থেকে ব্রিটিশ সরকারকে তাড়াবার জন্য ব্যস্ত। ইংরেজদের অকল্পনীয় অত্যাচার। ছোট হলেও মনে আছে, গোরা পুলিশ এলাকার এক যুবককে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে। তার কান্না আজও মনে পড়ে। আমার বাবাকে আমি দেখেছি, সেই সব যুবকদের জন্য চোখের জল ফেলতে। মাঝে মধ্যেই বলতেন, ‘আমরা তো রক্তমাংসের মানুষ। ওরা দেবোত্তম। পারলে ওদের দেখ। কিছু করার চেষ্টা কর।’”
একটু চুপ করে থেকে তিনি বলতে লাগলেন, “তখন ডোনাল্ড রুকহ্যাম বলে এক জন পুলিশ অফিসার আমাদের জেলায় এসেছিল। আমাদের এলাকার যে সমস্ত বাড়িতে যুবক-যুবতী ছিল, তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগলাজ করা ছাড়াও সারা বাড়ি তোলপাড় করে দেখত বাড়িতে কোনও বিপ্লবের চিহ্ন আছে কি না। ভবনাথবাবু মনে মনে সাঙ্ঘাতিক ইংরেজ-বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিলেন। এক জ্যোৎস্না রাতে সাহেব অফিসার বাড়ি বাড়ি টহল দিতে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় ওই বটগাছ থেকে ভবনাথবাবু সেই সাহেবকে গুলি করে। তার পর সেই যে গ্রাম থেকে ভবনাথবাবু পালিয়ে গেলেন, তাঁর আর খোঁজ নেই।
“প্রথমে ইংরেজরাও বুঝতে পারেনি, ভবনাথ সেন এই কাজ করেছেন। তবে ওরা পারত না, এমন কাজ নেই। চিহ্ন পেয়েছিল। ভবনাথ তখন কলেজ পাশ করে গ্রামেই একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কথা ভাবছিলেন। বিবাহও হয়েছিল। ভবনাথ ফেরার হওয়ার পর থেকেই পুলিশের আনাগোনা লেগে ছিল।
“সে দিন ভাদ্রের অমাবস্যা। বাড়ির সদর দরজা ফাঁক করে তাঁর স্ত্রী অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ছিলেন সন্তানসম্ভবা। হয়তো তাঁর স্ত্রীকে দেখতেই ইচ্ছে হয়েছিল। সে দিন তাঁর জন্মদিনও ছিল। ভবনাথবাবু যাতে অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে এসে খেয়ে যেতে পারেন সেই কারণেই পঞ্চব্যঞ্জন রান্না করে রেখে আসন পেতে বসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ভবনাথবাবু যখন এই মাঠ পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখনই পুলিশ পিছন থেকে এসে তাঁকে ধরতে যায়। ধরা দিতে বলে। তিনি রাজি না হওয়ায় ঘটনাস্থলেই গুলি করে তাঁকে খুন করে। শোনা যায়, গুলির শব্দ শুনে তাঁর স্ত্রী বেরিয়ে এসে দেখেছিলেন, রক্তস্নাত অবস্থায় ভবনাথ সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে রয়েছেন। স্বামী মারা যাচ্ছে দেখে ঘর থেকে ভারতের পতাকা এনে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী।”
এই সব স্মৃতিচারণের মধ্যেই সমরেশকে ঘিরে তত ক্ষণে গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা এসে দাঁড়িয়েছেন। বছরের এই দিনটিতে সমরেশও বাড়িতে তাঁর প্রপিতামহের ছবি ঝেড়ে মুছে মালা পরায়। চন্দন দেয়। বাটিতে পায়েস করে ছবির সামনে রাখে। কিন্তু জন্মভিটেয় না এলে বোঝাই শক্ত মানুযের এই ভাবাবেগ।
এই সময়টা পল্লিবাংলায় বর্ষার সময়। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। কত রকমের নাম না-জানা পাখি নানা সুরে ডাকতে ডাকতে এখানে উড়ে বেড়ায়। সত্যিই অপূর্ব। সমরেশ এবং তার পরিবারের সকলে এই দিনটিতে শহরের বাইরে নিরালা নির্জনে তাদের পৈতৃক বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে যখন বাড়ি ফেরে, তখন তার স্মৃতিটুকু দাগ রেখে যায়। সমরেশের নিজেকে এক অন্য গ্রহের মানুষ মনে হয়।
ওই গ্রামে গেলে বিজনবাবুর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। যথেষ্টই আদরযত্ন করে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। খাওয়ার সময়ে এ দিন এক খুব বৃদ্ধ এক ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। চোখেও ভাল দেখতে পান না। ক্ষীণ গলায় গলায় প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা ভবনাথবাবুর বংশধর কে আছেন?”
বিজনবাবুই উঠে গিয়ে তাঁকে দরজা থেকে ধরে নিয়ে এলেন সমরেশের কাছে। সমরেশের মাথার চুলে হাত রেখে তিনি বললেন, “বাবা, আমার নাম আমিরুদ্দিন হক। তোমার প্রপিতামহের প্রথম জীবনের ছাত্র। বহু বছর গ্রামের বাইরে ছিলাম, তাই দেখা হয়নি। সম্প্রতি ফিরেছি। আমাকে তিনি উচ্চারণ শিখিয়েছিলেন। আমার এখনও মনে আছে ‘নির্ভয়’ শব্দ উচ্চারণ করতে কী ভাবে শিখিয়েছিলেন। আমি পারতাম না। উনি কত বার যে বকেছেন। শুধু তাই নয়, উচ্চারণ নিয়ে ভবনাথবাবুর এক রকম বাড়াবাড়ি ছিল বললেও ভুল হবে না। তিনি বলতেন, যে কোনও মানুষকেই তার দেশকে ভালবাসার সঙ্গে সঙ্গে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য চাই স্পষ্টতা। নির্ভুল উচ্চারণ করতে করতেই মানসিক গঠন তৈরি হয়।”
সে দিন ফিরে আসার সময়ে বিজনবাবু বললেন, “তোমরা এই জায়গাটার দায়িত্ব নাও সমরেশ। এখানকার অবস্থা ভাল নয়। প্রোমোটার থাবা বাড়িয়ে আছে এই জায়গাটার দখল নেওয়ার। এখানে হয়তো বড় বহুতল হবে না, কিন্তু গুদামঘর হতেই পারে। আমরা অনেকে প্রতিবাদ জানাতে তারা আপাতত চলে গিয়েছে। তবে আবার আসতে কত ক্ষণ।”
কথাটা শুনে সমরেশের মন খারাপ হয়ে গেল। গাড়িতে ফিরতে ফিরতে সমরেশ ভাবছিল, তার বাবাও ওই ভাবে উচ্চারণে জোর দিয়ে পড়তে বলতেন। হয়তো বংশপরম্পরায় সেই শিক্ষাই বাড়িতে ঘুরছে। ওখান থেকে ফিরতে ইচ্ছে করে না সমরেশের। বাবা বলতেন, “শব্দ থেকেই তৈরি হয়েছে পৃথিবী। উচ্চারণের মাধ্যমে সেই শব্দকেই বশীভূত করে প্রকৃত মানুষ হতে হবে। সুন্দর উচ্চারণের মাধ্যমে মানুষের চরিত্রই শুধু নয়, সুন্দর শারীরিক গঠনও তৈরি হয়।”
ফেলে আসা পুরনো সময়ের বহু স্মৃতি, এক পূর্বপুরুযের আত্মত্যাগ, তাঁদের স্বপ্ন, বর্তমান পরিস্থিতি— সব কিছুই আলাদা। তবুও কোথাও একটা রক্তের ধারা বয়ে আসছে। সেই কারণেই হয়তো তার পরিবারের কোথাও কিছু খারাপ হলে তারও খারাপ লাগে। হয়তো সে সব ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে পারে না। সব কিছু জেনেশুনেও অনেক ক্ষেত্রে সে চুপ করে থাকে। তার রাগ উচ্চারিত হয় না। তবু সারা বছরে অন্তত এই একটা দিন তো তাকে সামান্য কিছু লোক হলেও শ্রদ্ধা জানায়। এটুকুই বা কত জন পায়!
সমরেশের জীবন খুবই নিস্তরঙ্গ ধরনের। তেমন উত্তেজনার অভিজ্ঞতা তার নেই।
ভাদ্র মাসের জন্মদিনটি অনেক দিন পেরিয়ে গিয়েছে। পুজোর মুখে এক দিন সমরেশকে বিজনবাবু ফোন করে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “বাবা! সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। কাল রাতের অন্ধকারে ভবনাথবাবুর বাড়িতে কেউ ঢুকে সব তছনছ করে দিয়েছে। আসলে ভয় দেখিয়ে এই জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা। থানায় জানিয়েছি, কিন্তু তোমারই তো পূর্বপুরুষের জায়গা। অন্তত এক বার নিজের চোখে দেখে যাওয়া দরকার।”
সমরেশ ফের গ্রামে গেল। এ বার অবশ্য একাই। কিন্তু তার কিছু করার নেই। জমি তো ট্রাস্টের হাতে। তারাই সব কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করে। থাকার মধ্যে শুধু প্রপিতামহের হাজারো স্মৃতি এবং জনশ্রুতি।
সে দিন বিরাট মিটিং বসল ওই বাড়িতে। পুলিশও ছিল। ঠিক হল, সরকারকে জানানো ছাড়াও শহিদ সম্মান অটুট রাখতে হলে কোনও ভাবেই প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে নিজেরাই পাহারা দিয়ে রক্ষা করা হবে ওই মাটি।
কথাবার্তা এক রকম শেষ হওয়ার পর সমরেশ হাঁটতে হাঁটতে একটি জলাশয়ের ধারে এসে দাঁড়াল। নিস্তব্ধ চার দিক। দমকা হাওয়ায় মাঝে মাঝে গাছের পাতা দুলছে। শরীরের মধ্যে কেমন যেন উত্তপ্ত অনুভূতি তার। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ঢিল নিয়ে পুকুরে ছুড়ে মারল। বেশ কয়েকটা বৃত্ত কেটে জলাশয়ের মধ্যে ঢিলটা মিলিয়ে গেল। সমরেশ বুঝল, তার মধ্যে এক তীব্র অস্থিরতা, কিছুতেই যেন নিজেকে বাগ মানাতে পারছে না সে।
সে ফের ফিরে গেল ওই বাড়িতে। তখনও অনেকেই মাঠে বসে জায়গাটি রক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন। কথাবার্তার ভিড়ে এক জন বললেন, “এলাকাটা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দিলে কেমন হয়?”
পাঁচিল, মানে আড়াল! দেশের জন্য বুক পেতে সাহেবের গুলি খাওয়া এক জন সংগ্রামীর শেষ স্মৃতিকে মুখ লুকোতে হবে কতগুলো লোভী শেয়ালের জন্য! নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না সমরেশ। নম্র মৃদুভাষী সমরেশের ভিতর থেকে যেন কথা বলে উঠল আর কেউ। তার ভিতরকার উত্তপ্ত অস্থিরতা তীব্র স্বরে বেরিয়ে এল। সে বলে উঠল, “পাঁচিল উঠবে না। কোনও রকম আড়াল বা ঘেরাটোপের প্রয়োজন নেই। আমি স্পষ্ট বলে যাচ্ছি, প্রয়োজনে মাটিতে বুক দিয়ে শুয়ে মারা যাব তা-ও ভাল। এই জমি কাউকে দেব না। তিনি দেশের মাটি রক্ষা করেছিলেন প্রাণ দিয়ে, তাঁর ভিটেমাটিটুকু রক্ষা করার প্রয়োজনে আমরাও তা-ই করব…”
কেটে কেটে স্পষ্ট উচ্চারণে বলা কথাগুলো গ্রামের আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হল।
সে দিন ফেরার পথে অনেকটা পথ পর্যন্ত তার কানে বাজছিল গ্রামবাসীদের মুগ্ধ বিস্ময়— এই হল প্রতিবাদী রক্ত। এক দিন না এক দিন নিজের জাত চেনাবেই।
ছোটবেলায় ‘বর্ণপরিচয়’ পড়ার সময় বাবা উচ্চারণ শিখিয়ে বলতেন, স্পষ্ট, স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ উচ্চারণ সময়ে-অসময়ে মানুষের প্রকৃতি চিনিয়ে দেয়। শব্দ উচ্চারণে সে কতটা পারদর্শী, তা জানা না গেলেও, তার অন্তর্গত রক্তস্রোত যে প্রতিবাদের উচ্চারণ ভুলে যায়নি, এত দিনে সমরেশ তা বুঝতে পেরেছে।