বুঝলি বাবলু, আমি নিউ ইয়র্কের ল’ ফার্মে চাকরি পেয়েছি। স্যালারি কত জানিস?” জিজ্ঞেস করল চিত্রা।
আমি বোকার মতো ঘাড় নাড়লাম। চিত্রা মুচকি হেসে টাকার যে অঙ্কটা বলল, সেটা সারা জীবন চাকরি করলেও আমি উপার্জন করতে পারব না।
ভয়ে ভয়ে বললাম, “এটা কি তোর সারা বছরের রোজগার?”
“না বৎস,” করুণার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চিত্রা বলল, “এটা এক মাসের মাইনে। সারা বছরের মাইনে শুনলে তুই অজ্ঞান হয়ে যাবি।”
কালীপুজো উপলক্ষে মাইকে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’-র গান বাজছে। শাহরুখ খানের এই ছবিটা সদ্য রিলিজ় করেছে। এবং দেশ জুড়ে রমরমিয়ে চলছে। এমনকি আমাদের এই দাশনগরেও চলছে।
দাশনগর শহর, গ্রাম বা মফস্সল নয়। আসলে দাশনগর হল শহরতলি। প্রদীপের নীচে যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনই আলো ঝলমলে কলকাতার ঠিক নীচে রয়েছে কুলি টাউন হাওড়া। তারই অন্ধকার কোণ হল দাশনগর। ঘরে ঘরে লেদ মেশিনের ঘর্ঘর, বাতাসে মাত্রাছাড়া দূষণ, রাস্তা উপচে যাওয়া বাস,
ট্রাক, ট্যাক্সি আর রিকশা, সরু সরু রাস্তার দু’পাশে প্রাসাদোপম বাড়ি আর বস্তির সহাবস্থান।
সেই রকম দু’টো পেল্লায় বড় বাড়িতে থাকে অভিজিৎ আর চিত্রা। আমি থাকি পাকা বস্তিতে।
চিত্রার বাবা মার্চেন্ট নেভির অফিসার। মা গৃহবধূ। প্লাস টু পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো রেজ়াল্ট করে কেডিয়া কলেজ অব কমার্সে ভর্তি হয়েছিল, কারণ এখানকার বি কম কলকাতার সেরা। আর আমি ওই কলেজেই ঢুকেছিলাম ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকে যা নম্বর পেয়েছিলাম, এর বেশি কিছু জুটত না।
অভিজিৎ আর আমি একই বাংলা মাধ্যম স্কুলের সহপাঠী। অভিজিতের বাবা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। মা অধ্যাপনা করেন। এই রকম ছেলেরা উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম কুড়ি জনের মধ্যে না ঢুকে থামে না। অভিও থামেনি। তার পর ফিজ়িক্সে অনার্স নিয়ে পড়তে ও প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছে।
আমরা তিন জনেই দাশনগরের বাসিন্দা হলেও আমি আর অভি চিত্রাকে চিনতাম না। চিত্রাও চিনত না আমাদের। অভি আর চিত্রার প্রেমটা হয়েছিল কলেজে ঢুকে। কী ভাবে, আমার জানা নেই। ওরা দুজনেই বইপোকা টাইপ। লেখাপড়ার বাইরে কিছু বোঝে না। চিত্রা পরে জেনেছে যে, আমি অভির স্কুলমেট এবং ছোটবেলার বন্ধু। শুধুমাত্র এই কারণেই চিত্রা আমাকে একটু-আধটু পাত্তা দেয়। না হলে আমার মতো বিলো অ্যাভারেজ ছেলের সঙ্গে কথা বলতে ওর বয়েই গিয়েছে।
আমার বাবা বেকার। মা আয়ার কাজ করে সংসার চালায়। আমার একমাত্র লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকা রোজগার করা। বি এ পড়ার পাশাপাশি চেষ্টা চালাচ্ছি আর্মির চাকরির জন্যে। বাবা বলে আমার ছ’ফুট হাইট, ষাঁড়ের মতো চেহারা আর গাম্বাট মাথা নাকি আর্মির
জন্যেই উপযুক্ত।
ডিগ্রি কোর্সের রেজ়াল্ট দু’সপ্তাহ আগে বেরিয়েছে। আমি কোনও মতে পাশ। অভি আর চিত্রা ফার্স্ট ক্লাস। এই ক’দিন ওদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। চিত্রা বস্তার বেড়াতে গিয়েছিল। অভি বেঙ্গালুরু গিয়েছে কাজে। চিত্রা আজ ফিরেই আমেরিকায় চাকরি পাওয়ার খবরটা দিল।
মাইনের পরিমাণ শুনে আমি চুপ করে রয়েছি দেখে চিত্রা বলল, “চাকরিটা নিলে আমার আর দেশে ফেরা হবে না।”
“ফিরিস না!” বললাম আমি, “অভিও ওখানে চলে যাবে। আমাদের দেশে এত পলিউশন আর করাপশন। ফেরার কোনও মানে হয় না।”
“মুশকিল আছে রে! আমার আর অভির ব্যাপারটা দু’জনের বাড়ির লোকেরা জানে না। ইন ফ্যাক্ট তুই ছাড়া কেউই জানে না। এই সিচুয়েশনে কী করা উচিত বল তো?”
“অভির সঙ্গে কথা বল।”
“কিন্তু ও তো এখন বেঙ্গালুরুতে। ওখানকার ফোন নম্বর নেই বলে যোগাযোগ করতে পারছি না। ও যদি এক আমাদের বাড়িতে ফোন করত, তা হলেও হত। সেটাও করছে না।”
“অভি পনেরো দিনের মধ্যে ফিরছে। তার আগে নির্ঘাত তোকে ফোন করবে।”
“তোদের বাড়িতে ফোন আছে?” জিজ্ঞেস করল চিত্রা।
আমি ঘাড় নাড়লাম। ও সব বড়লোকি আমাদের মানায় না।
“আমি এ দিকে ভিসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব…” বিড়বিড় করে চিত্রা। পাশঝোলা থেকে কী একটা বার করে আমার দিকে মুঠো বাড়িয়ে বলে, “এই নে। কচ্ছপ।”
আমি বললাম, “মুঠোর মধ্যে কচ্ছপ কী করে ধরবে? কচ্ছপ তো বেশ বড় হয়। অনেক বছর বাঁচেও।”
“তুই ঈশপের গল্পের কচ্ছপই রয়ে গেলি,” দাঁত খিঁচোয় চিত্রা, “খরগোশ হওয়া এ জীবনে আর হল না। সেই জন্যেই ডোকরার কচ্ছপ এনেছি তোর জন্যে। নে।”
চিত্রার হাত থেকে পুঁচকে একটা সোনালি রঙের কচ্ছপ নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বললাম, “আমাকে একটা ট্র্যাকস্যুট দিলে পারতিস। রোজ সকালে হাফপ্যান্ট পরে দৌড়তে যেতে অস্বস্তি হয়।”
“এই হল মুশকিল!” দীর্ঘশ্বাস ফেলল চিত্রা, “গরিব হওয়াটা দোষের নয়। কারণ তাতে কারও হাত নেই। কিন্তু হাভাতেপনাটা দোষের। ট্র্যাকস্যুট নিজে অর্জন কর। ভিক্ষে চাইছিস কেন? আমি বস্তার থেকে তোর আর অভির জন্যে মেমেন্টো নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে ট্র্যাকস্যুট আসছে কোথা থেকে? নেহাত তুই অভির ক্লোজ় ফ্রেন্ড, তাই টলারেট করি। না হলে…”
কথা শেষ না করে হাঁটা লাগিয়েছে চিত্রা। আমি চুপটি করে দাঁড়িয়ে নিজের হাভাতেপনার কথা ভাবতে লাগলাম।
**
অভি লাফাতে লাফাতে এসে বলল, “কী ব্যাড লাক মাইরি! নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে চিত্রা আমার সঙ্গে এক বার দেখা পর্যন্ত করে উঠতে পারল না। কিন্তু ঠিক মনে করে আমার জন্যে মেমেন্টো রেখে গিয়েছে।”
অভির হাতের তালুতে রাখা ডোকরার খরগোশটা দেখতে দেখতে বললাম, “চিত্রার সঙ্গে যে দেখা হয়নি সেটা জানি। কথাও হয়নি?”
“কথা হয়েছে। আমি ওর বাড়িতে ফোন করেছিলাম। কী করবে
বুঝতে পারছিল না বেচারি। আমিই বললাম, গ্র্যাব দি অপরচুনিটি। তার পর অন্য কথা।”
“তোর কথা মেনে নিল?”
“আমাদের মধ্যে এইটুকু আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে রে গাম্বাট! লাভ ইজ় নট এ ম্যাটার অব জোক! তার জন্যে অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়!” আমার মাথায় গাঁট্টা মেরে বলল অভি, “এ দিকে আমি পড়েছি বিপদে। বাবার বেঙ্গালুরু ট্রান্সফার অর্ডার এসেছে। আমিও বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সে এম এসসি করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছি। কী যে করি!”
“এই নিয়ে এত ভাবার কী আছে?” বলি আমি।
“তোর মাথায় কি সব কিছু গজাল মেরে ঢোকাতে হবে?” খচে গিয়েছে অভি, “বাবার এই বয়সে ট্রান্সফার হচ্ছে। এর মানে হল, বেঙ্গালুরুতেই রিটায়ার করবে। আমার এম এসসিতে চান্স পাওয়ার খবর শুনে মা অলরেডি রাজেন্দ্রনগরে বাড়ি খোঁজা শুরু করেছে। দু’জনেরই প্ল্যান শেষ বয়সে ওখানে সেটল করবে।”
“তোরা দাশনগর ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিস?” বেকুবের মতো প্রশ্ন করলাম। অভি চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব।
“তোর কোনও চিন্তা নেই!” আমার পিঠ চাপড়ে দিল অভি, “তোর জন্যে না হলেও, চিত্রার জন্যে আমি ফিরব। আগামী তিন-চার বছর খুব ডিফিকাল্ট যাবে। চিত্রা নতুন দেশে চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। আমি নতুন শহরে লেখাপড়া নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ মেনটেন করা খুব শক্ত।”
মাইকে শোনা যাচ্ছে ডিডিএলজে-র হিট গান, “ঘর আ জা পরদেশি, তেরে দেশ বুলায়ে রে!” আমার হাতে ডোকরার খরগোশটা দিয়ে অভি বলল, “বাই দ্য ওয়ে, তোর কী প্ল্যান?”
“একটা কাজ জোটানো ছাড়া আমার কোনও প্ল্যান নেই!” হতাশ হয়ে বললাম, “বেঙ্গালুরুতে কোনও কাজের সন্ধান পেলে খবর দিস।”
“দেব। এখন চলি রে! অনেক কাজ আছে,” বাড়ির দিকে হাঁটা লাগাল অভি।
আমিও বাড়ির দিকে এগোলাম। চিত্রার দেওয়া কচ্ছপের পাশে অভির দেওয়া খরগোশটাও থাক। দু’-চার দিন বাদে এগুলো বেচে যে ক’টা টাকা পাব, তাই দিয়ে ডিম কিনে খাব। সামনেই আর্মির পরীক্ষা। ফিজ়িক্যাল ফিটনেসের জন্যে ভাল খাওয়াদাওয়া করা খুব জরুরি।
**
“ডাক্তার ডিম খেতে বারণ করেছে।” বললাম আমি।
আমার কথা শুনে হা হা করে হাসছে অভি। টকাটক দু’টো সিঙ্গল মল্ট গলায় ঢেলে চিত্রাকে বলছে, “বাবলু ছোটবেলায় রাক্ষসের মতো ডিম খেত। আর এখন বলছে…”
“বেড়াল বলে মাছ খাব না!” মুখঝামটা দিল চিত্রা।
ফোর্ট উইলিয়ামের ‘সঙ্গম’ ব্যাঙ্কোয়েট এলাকায় আয়োজন করেছি আমার পঁচিশ বছরের বিবাহবার্ষিকীর। আমি এখন ইন্ডিয়ান আর্মির উঁচু পদে আছি। এইটুকু করার হক আছে।
আর্মি ব্যান্ড একের পর এক হিন্দি গান পরিবেশন করছে। ওয়েটাররা সার্ভ করছে স্টার্টার আর ড্রিঙ্ক। ওয়েটারের কাছ থেকে হাঁসের
ডিমের বড়া তুলে আমার প্লেটে দিচ্ছিল মাতাল অভি। আমি আপত্তি করলাম। হাজার হোক, বয়স বেড়েছে। পঁচিশ বছর পেরিয়ে আগের শরীর আর নেই।
পঁচিশ বছর! গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সেই সময় চিত্রা চলে গিয়েছিল নিউ ইয়র্ক। অভি বেঙ্গালুরু। আমি সেই বছরই আর্মির পরীক্ষায় চান্স পেয়ে গেলাম। তার পর থেকেই সারা ভারত দৌড়ে বেড়ানোর শুরু। সময় বদলাতে লাগল দ্রুত। অভির সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ ছিল না। স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসার পরে আবার যোগাযোগ হল। অভি এখন ওয়াশিংটনে থাকে। চাকরি করে নাসা-য়।
অভিকে বললাম, “চল! তোকে গাড়িতে তুলে দিই।”
“আর মদ খেতে দিবি না?” গাঁকগাঁক করে চেঁচাচ্ছে অভি, “তোদের সঙ্গে দেখা করব বলে স্পেশাল ছুটি নিয়ে সপরিবারে ইন্ডিয়া এসেছি। আর তুই চলে
যেতে বলছিস?”
অভির মেয়ে লজ্জিত মুখে আমাকে বলল, “বাবা এমনিতে খুব ভাল। কিন্তু মদ পেটে পড়লেই পুরনো কথা ভেবে হাঁউমাউ করে কাঁদে আর ভুলভাল বকে।”
মাতাল অভি টলতে টলতে বেরিয়ে যাচ্ছে ‘সঙ্গম’ ছেড়ে। সঙ্গে যাচ্ছে ওর মেয়ে আর মেমবৌ। আমেরিকান মেয়েটি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো হাসছে আর সবাইকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলছে।
আমি চিত্রার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও অন্য দিকে ফিরে কান্না চাপার চেষ্টা করছে।
আমি মৃদু হাসলাম। পঁচিশ বছর আগে অভি আর চিত্রা দাবি করেছিল, আগে ভালবাসা, তার পরে কেরিয়ার। কেউই কথা রাখতে পারেনি। চিত্রা বিয়ে করেছিল এক আমেরিকান উকিলকে। পাঁচ বছর পরে ডিভোর্স হয়ে যায়। ও এতটাই ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল যে চাকরি ছেড়ে, গ্রিনকার্ডের মায়া ত্যাগ করে ফিরে আসে দাশনগরে। আমি তখন আর্মিতে চাকরি করছি। ছুটিতে বাড়ি ফিরে দেখি চিত্রা আমাদের ফ্ল্যাটে বসে রয়েছে। ও! বলতে ভুলে গিয়েছি। চাকরি পাওয়ার পরে আমি হেস্টিংসে নতুন ফ্ল্যাট কিনে বাবা-মাকে নিয়ে উঠে এসেছিলাম।
দাশনগরে ফিরে চিত্রা জানতে পেরেছিল যে অভিও বিবাহিত। বেঙ্গালুরুতে গিয়েই মেমসাহেব সহপাঠিনীর সঙ্গে প্রেম। বিয়ের পরে মিঞাবিবি নাসা-য় চাকরি পেয়ে ওয়াশিংটন পাড়ি দিয়েছে।
আমার মা চিত্রাকে প্রস্তাব দেয়, আমাকে বিয়ে করার জন্যে। চিত্রা রাজিও হয়ে যায়। ও আমাকে চেনে। অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হবে না। তা ছাড়া এখন আমি আর্মির অফিসার। যথেষ্ট যোগ্য পাত্র।
দাশনগরের লোকেরা ঝেঁটিয়ে এসেছিল বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে। বস্তির ছেলে আর বড়লোকের মেয়ের বিয়ে মানে আমজনতার ইচ্ছেপূরণের গল্প। পাবলিক এ সব খুব খায়।
সত্যি কথাটা এবার বলেই ফেলি? আমি বরাবরই চিত্রাকে ভালবাসতাম। কিন্তু কখনও প্রকাশ করিনি। ওদের প্রেমের গল্পে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনি। পরে দেখলাম, এরা ভালবাসা কাকে বলে জানে না। এরা শুধু নিজেদের ভালবাসে। নিজেকে ভাল রাখার জন্যে কখনও প্রেম বেছে নেয়, কখনও কেরিয়ার। ভালবাসলে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কষ্ট পেতে হয়, কিছু পাওয়ার আশা না করে শুধুই দিয়ে যেতে হয়, এরা জানে না।
আমি চিত্রাকে ভালবাসি। এটা জেনেই বাসি যে ও আমাকে ভালবাসে না। ও ভালবাসে আর্মি অফিসারের সামাজিক আর আর্থিক নিরাপত্তা। ভালবাসে গাড়ি-বাড়ি, শাড়ি, গয়না, টাকা আর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স।
কোটের বাঁ পকেট থেকে ডোকরার কচ্ছপটা বার করলাম। চিত্রা জানত না যে এটা এত দিন আমার কাছে যত্ন করে রাখা ছিল। ওর কাছে গিয়ে বললাম, “এই নাও। অ্যানিভার্সারি গিফ্ট।”
চোখে জল আর মুখে বানানো হাসি নিয়ে চিত্রা দেখল, পঁচিশ বছরের বুড়ো কচ্ছপ তার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
আর্মি ব্যান্ড অব্যর্থ মুহূর্তে গাইতে শুরু করল, “লে জায়েঙ্গে লে জায়েঙ্গে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে।” গানের তালে তালে অতিথিরা নাচছেন। তাঁদের অনুরোধে আমি চিত্রার গালে চুম্বন করলাম।
সবাই চুমুটাই দেখছে। কেউ জানে না যে কোটের ডান পকেটে রাখা ডোকরার একটা খরগোশ আমি মুঠোয় চেপে ধরে আছি। যে আমার পঁচিশ বছরের সঙ্গী।
শুনতে পেলাম সহকর্মীরা চেঁচিয়ে বলছেন, “হ্যাপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি!”