Abosar

ইস্কুলবাড়ি

নবনীতা দত্ত

ফুলকিদের বাড়ির বেড়ার দরজা খুলে ঢুকলেন গৌরকাকা। সামনেই দালানে ছক কেটে এক্কা-দোক্কা খেলছে ফুলকি।

ফুলকিকে দেখে গৌরকাকা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী রে, ফুলকি! তোর আজ ইস্কুল নেই? সাতসকালে এক্কা-দোক্কা খেলচিস যে!’
ফুলকি খেলা থামিয়ে গৌরকাকার দিকে তাকিয়ে অবাক মুখে বলল, ‘ওমা! ইস্কুল তো বন্ধ। এখন গরমের ছুটি চলছে যে!’

‘এখনও গরমের ছুটি। তা কদ্দিন চলবে তোদের ছুটি? এবার তো বর্ষা নামি যাবে।’

‘শুধু এই হপ্তাটাই। পরের সোমবার থেকেই তো ইস্কুল শুরু।’

‘অ!’ বলে ভিতরবাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন গৌরকাকা। দালানের পাশে রান্নাঘরের কাছে উঁকি দিলেন, ‘অ পরানের বউ, তুই কী করচিস?’

‘আসি গৌরদা। এই সকালের ভাত চাপিয়েছি।’ রান্নাঘর থেকেই মুখ বাড়িয়ে সাড়া দিল মিনতি।

‘শোন, কতা আচে। বাইরে আয়। তোরই কাজে লাগবে।’

‘আসি! আপনি একটু বসেন।’ বলেই গলা চড়াল মিনতি, ‘অ্যাই ফুলকি, গৌরকাকাকে চাটাই পেতে বসতে দে।’

ভাতের হাঁড়ির মুখের চাপাটা আলগা করে এক ঘটি জল ঢেলে দিয়ে উঠে এল সে, ‘হ্যাঁ গৌরদা, বলেন।’

‘পরানটা থাকলে তো কোনও চিন্তা ছিল না। পুরুষমানুষ, কিছু না কিছু রোজগার তো করত। কিন্তু এখন তোদের চলছে কী করে?’

‘সে কথা কি আর আপনি জানেন না! কোনও রকমে ঠেকান দিয়ে রাখছি। এ মাসে আমি ব্লাউজের অর্ডার নিয়েছি বেশি করে। ব্লাউজের মেকিং-এ দশ টাকা বাড়াতে বলেছি। তো ওরাও রাজি হয়েছে। ফুলকিকেও তো কাজ ধরিয়েছি। আস্তে-আস্তে দুজনে মিলে যদি কাজ করতে পারি, রোজগার বাড়বে তাইলে।’

‘তোর ব্লাউজে আর কত টাকা জোটে! মাসে হাজার দুয়েক। তার বেশি তো নয়? ফুলকিই বা কত টাকা আনবে? শোন, আমি একটা ভাল চিন্তা করেই আসছি। মাসে ছ’ থেকে সাত হাজার টাকা রোজগার হবে তোর। তার উপর পুজোপাব্বণে উপরি। তোর, ফুলকির কাপড়চোপড় সবই পাবি।’

‘মানে!’ মিনতি আগ্রহ দেখিয়ে পা গুটিয়ে বসল।

‘শোন। আমি তো প্রতি হপ্তায় কলকেতায় যাই জড়িবুটি বেচতে। ট্রেনে দেকিচি, লেডিস কামরা জুড়ে শুধু আয়া যায়। কলকেতার লোক অলস। কোনও কাজ-কাম করে না। ওদের বাড়ির রান্নার কাজ, ঝাড়পোঁছ, বাসন মাজার কাজটা করে দিবি’খন। দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে রোজগার আচে। আয়া সেন্টারে আমি কতা কয়েই রেকিচি। ওরাই তোকে কাজ দেবে। যে বাড়িতে কাজ পাবি, তারা যা টাকা দেবে, তার  থেকে প্রতিদিন কুড়ি টাকা করে শুধু দিতে হবে আয়া সেন্টারে। বাকি টাকা তোর। বুঝলি? তা এটা লাভের কি না বল?’

‘কিন্তু কলকেতা তো অনেক দূর গো! এখান থেকে ট্রেনে তো প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগে যাবে। তার উপর লোকের বাড়ি খুঁজে যাওয়া। অনেক সময়ের ব্যাপার।’

‘আহ্‌! লোকের বাড়ি কি রোজ খুঁজতি হবে? এক দিন গেলেই তো রাস্তা চিনে যাবি। যাতি-আসতি তিন ঘণ্টা আর কাজ করবি ছ’সাত ঘণ্টা। দশ ঘণ্টা বাইরে থাকতে পারবি নে!’

‘কিন্তু ফুলকি! ও একা কী করে থাকবে এত ক্ষণ বাড়িতে? ও তো এখনও অতটা বড় হয়নি।’

‘ন্যাকাপনা করিসনি তো! আর বচ্ছরখানেক পরেই বিয়ে দেওয়ার বয়স হয়ে যাবে। ন’-দশ বছর তো হবে ফুলকির। একা থাকতে পারবে না? তা ছাড়া সারা দিন কি আর একা থাকছে সে! সকালে তো খেয়েদেয়ে ইস্কুলে যাবে। বাড়ি ফিরবে সেই বিকেলে। ভোর-ভোর বেরিয়ে পড়বি, তাহলে সন্ধে হওয়ার আগে তুইও ফিরে আসবি।’

‘তা বটে! কিন্তু ও তো রাঁধতে-বাড়তে পারে না। স্কুল যাওয়ার আগে আমি যে ওকে ভাত ফুটিয়ে দিই...’ আমতা-আমতা করল মিনতি, ‘একটু ভাবতে লাগবে গো দাদা...’

‘ভাব গে বসি তাইলে। এই জন্যি লোকের ভাল করতি নেই,’ বলে গজগজ করতে-করতে বেরিয়ে গেলেন গৌরদা।

 

দুপুরে পুঁইশাক দিয়ে ভাত মাখতে-মাখতে কথাটা পাড়ল ফুলকি নিজেই, ‘মা, তুমি কলকেতার কাজখান ধরে নাও না কেন? আমার কোনও অসুবিধে হবে না।’

‘পাকা পাকা কথা কোস না। যেমন চলছে চলতি দে। গৌরদারই বা অত দরকার কিসের! উনি কি আমাদের পেট টানছেন? ভগবান অ্যাদ্দিন যখন অন্ন জুগিয়েছেন, বাকি দিনগুলোও জুটে যাবে।’

‘মা, কলকেতায় গেলে যে রোজগার বাড়বে। আমিও বড় হলে তোমার সঙ্গে কাজ করব। আমাদের যখন অনেক টাকা হবে, তখন আমরা টিভি লাগাব ঘরে। পিঙ্কিদের বাড়িতে আর টিভি দেখতে যেতে হবে না। আর ওই সিরিয়ালের মেয়েটার মতো আমিও ঘেরওলা জড়িবসানো সালোয়ার কিনব। তোমায় সিল্কের শাড়ি কিনে দেব। সন্ধেবেলা চাউমিন কিনে খাব।’

মিনতিও যেন মুখের ভাতে চাউমিনের স্বাদ পেল। কত্ত দিন চাউমিন খায়নি। স্টেশনে এখন বড্ড দাম বাড়িয়েছে চাউমিনের। ভেজ চাউমিনই প্রায় ৩০ টাকা, প্রায় ওর একটা ব্লাউজের মেকিং চার্জ।

মেয়ের কথার কোনও উত্তর করল না বটে। কিন্তু সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই ব্লাউজ সেলাই করতে বসল মিনতি। বিকেলের মধ্যে তিনটে ব্লাউজ শেষ করতে হবে। বিকেলেই আসবে রত্নাবউদি। টাকা দিয়ে অর্ডার নিয়ে যাবে। দেরি করলে আবার টাকা কাটবে। তাড়াতাড়ি মেশিনে পা চালাতে লাগল।

কিন্তু তাড়াতাড়ি কাজ করেও লাভ হল না। বিকেলে রত্না বউদির সঙ্গে ব্লাউজের মেকিং চার্জ নিয়ে এক প্রস্থ ঝামেলা হয়ে গেল। ব্লাউজের মেকিং-এ যে দশ টাকা বাড়ানোর কথা ছিল, সেটা নাকি এখন বাড়ানো যাবে না। মিনতি রাগের মাথায় চেঁচিয়ে বলেই দিল, ‘আর তোমাদের অর্ডার নেব না। অন্য লোক দেখে নাও। এত কম মজুরিতে কাজ হবে না,’ বলে গজগজ করতে-করতে ব্লাউজগুলো প্যাকেটে পুরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সপাটে। কিন্তু তার সঙ্গে-সঙ্গে যে নিজের রোজগারের দরজাটাও খানিকটা বন্ধ হয়ে গেল। স্টেশনপাড়ের রফুচাচার ব্লাউজের অর্ডার শুধু রইল পড়ে। রত্না বউদিই ওকে বেশি ব্লাউজ দিত। সারা রাত চিন্তাভাবনা করে কলকাতায় চাকরির পথটাই বেছে নিল মিনতি। কী জানি, ভগবান হয়তো ওই দিকেই পথ দেখাচ্ছেন। না হলে সব কথা হয়ে যাওয়ার পরও ব্লাউজের মজুরি কেন বাড়াল না!

সকালে উঠে গৌরদার কাছে গেল মিনতি, ‘গৌরদা, ভেবে দেখলাম, কলকাতার কাজটা নেব।’

‘এই তো পথে এয়েছিস তাহলে। প্রথমেই বললাম, তোদের ভালটা ভেবেই কতাটা বলচি।’

‘তা কবে যেতে হবে সেখানে? আপনে গিয়ে কথা কয়ে আসেন, আমায় ঠিকানাটা দিয়ে দেবেন। আমি নাহয় খোঁজ করে চলি যাব।’

‘আজই তো আমার কলকেতায় যাওয়ার দিন। আজ বিকেলের দিকে গিয়ে বরং কথা কয়ে আসব। কিন্তু একটা কতা মিনতি। আমার মুখ পোড়াবি না! তোর জন্য সেধে কতা কইতে যাব, তার পর কাজ করব না বলে বেঁকে বসলি চলবে না।’

‘আরে না গো! আমি অনেক ভেবেচিন্তেই তোমার কাছে আসছি। আমি কেন বেঁকে বসব? কেউ নিজের পায়েই কুড়ুল মারে নাকি!’’

‘তা হলে ওই কথাই রইল। আমি তোকে কাল সকালে খবর দেব’খনে,’ গামছা কাঁধে নিয়ে স্নান করতে চলে গেল গৌরদা। মিনতি গৌরদার স্ত্রীর সঙ্গে খানিক ক্ষণ কথা বলে বাড়ি ফিরল।

ফুলকি রান্নাঘরের উনুনে হাওয়া দিয়ে আগুন বাড়াচ্ছে। মেয়েটাও দেখতে-দেখতে কেমন বড় হয়ে গেল। এই তো বছর দুয়েক আগেই ওর বাবা মারা গেল, তখনও কতটুকুন ছিল। পরান মারা যাওয়ার তিন দিনের দিন মিনতির কাছে গিয়ে ফুলকি জানতে চেয়েছিল, ‘মা, বাবা কি ক’মাস পরে ফিরবে?’

ওইটুকু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে মিনতি সত্যি কথাটা বলতে পারেনি সে দিন। ব্যবসার কাজে যেমন মাসকয়েক বাইরে থাকে পরান, সে রকমই একটা অজুহাত দিয়ে আঁচলে চোখের জল মুছেছিল। পরে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে ফুলকিও বুঝতে পেরেছে, মরে যাওয়া মানে ঠিক কতটা দূরে চলে যাওয়া।

এই মেয়েটাকে একা বাড়িতে রেখে সারা দিন বাইরে কী করে থাকবে, সেটা ভাবতেই পারছে না মিনতি। কিন্তু ওদের নিজেদের জন্য, ফুলকির ভবিষ্যতের জন্যই ওকে এই কাজটা নিতে হবে। এখন থেকে টাকা না জমালে ফুলকির বিয়ে দেবে কী করে! না জানি মেয়েটার কত স্বপ্ন!

 

পর দিনই গৌরকাকা তাঁর ছেলেকে দিয়ে ঠিকানা পাঠালেন, কোথায় যেতে হবে। সব কথা হয়ে গিয়েছে। পরের সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু।

সোমবার সকালে উঠে কোনও রকমে ভাতের হাঁড়িটা নামিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল মিনতি। বেরনোর সময় মেয়েকে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে, খেয়েদেয়ে দরজা দিয়ে কী ভাবে সে বেরোবে। ফুলকি বাড়ি ফেরার আগেই আজকে সে বাড়ি ফিরে আসবে। গৌরদা তো বলেইছেন, প্রথম দিন বাড়ি চিনিয়ে আর কাজ বুঝিয়ে ছেড়ে দেবে।

স্টেশনে পৌঁছতেই ট্রেন পেয়ে গেল। ট্রেনে চেপে একটা সিট পেয়েছিল, কিন্তু বসা হল না। সিটটা নাকি বলা আছে, পরের স্টেশন থেকে এক জন উঠবে, তার। একটা স্টেশন বড়জোর সে বসতে পারে। ট্রেনেও আবার গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপের সঙ্গে ভাব জমাতে পারলে তবেই বসার জায়গা পাবে, সেটা সে প্রথম দিনেই বুঝে গেল। আজ সে নতুন এই দলে, তাই বাকিরা তাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে লাগল।

জানালার পাশের এক মহিলা জিজ্ঞেস করল, ‘তা কলকাতায় যাওয়া হচ্ছে নাকি?’

মিনতি ঘাড় নাড়ল।

‘আয়ার কাজ?’

‘এই আজ থেকেই শুরু করব।’

‘অ! নতুন। তা কত দিচ্ছে তোমায়? কত ঘণ্টার কাজ?’

‘সে সব তো জানি নে। আজ যেতে বলেছে, গেলে কথা হবে।’

‘কোন পাড়ায়? স্টেশনের সামনে না দূরে?’ আর এক জন পাশ থেকে প্রশ্ন করল।

‘সেটাও তো জানি না। স্টেশনের কাছের সেন্টারে যাব, ওরা নিয়ে যাবে।’

‘অ!’ বলে সে মুখ ঘোরাল।

অন্য আর এক জন এ বার গম্ভীর মুখে তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তা বাড়িতে কে আছে?’

মিনতি বুঝতেই পারছে, আজকে এরা সকলে মিলে তাকে জেরা করবে, উত্তর না দিয়ে উপায় নেই। কাঁচুমাচু মুখে একবারেই পুরো উত্তরটা দিয়ে দিল, ‘আমার একটাই মেয়ে। আমি আর সে মিলেই সংসার।’

‘ওমা! মেয়েটারে কার কাছে থুয়ে এলে? ঘরে সে একা না কি?’

সামনে-পিছনে ঘাড় নাড়়াল মিনতি।

ভদ্রমহিলা গালে হাত দিয়ে চোখ বড়-বড় করলেন, ‘উরেব্বাবা! তোমার তো খুব সাহস? দিনেদুক্কুরে একন কেমন ধস্সন হচ্ছে, দেখতি পাচ্ছ নে! এই তো সে দিন বারাসতে বাড়ি থেকে মেয়ে়ডারে টেইনে নে গেল পুরনো ইস্কুলের ভিতরে। মেয়েডার মায়ের পাতানো ভাই ছিল, ওরা চিনত যে! তাই তো মেয়েটাকে ডাকতেই তার সঙ্গে চলে গেছল, তার পর পাঁচ-পাঁচটা ছেলে মিলে.... ইস!’ চোখ বুজল মহিলা।

পাশের জন বলে উঠল, ‘উফ! সে কতা আর বোলো না। আমার ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। মেয়েটারে শেয়াল-কুকুরের মতো ছিঁড়ে খেলে...’

আর এক জনও আলোচনায় যোগ দিল, ‘মেয়েটারে নাকি খুব মেইরেছিল। ও সব জাগা তো একদম ফালাফালা....’

মিনতি আর শুনতে পারল না এ সব কথা, সরে এল ট্রেনের দরজার কাছে। চলন্ত ট্রেনের দরজায় মানুষের ভিড়ে চেপে যাচ্ছে সে। নাকে-মুখে এসে লাগছে ঘামের গন্ধ। গা গুলিয়ে বমি উঠে আসছে। পরের স্টেশন আসতেই ভিড়ের ধাক্কায় নেমে গেল সে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রইল কিছু ক্ষণ, বোকার মতো। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ফুলকিকে একা বাড়ি রেখে এসেছে। আর গৌরদাই বা ওর কাজের জন্য এত তাড়া দিচ্ছিল কেন? ওনার কী স্বার্থ আছে ওদের সংসার ভাল চলায়? গৌরদা আবার কিছু...

বুকটা কেঁপে উঠল ফুলকির জন্য। গৌরদাও তো ওর চেনা। সে-ও যদি গৌরদার ডাকে কোথাও...

না না, চোখ বুজল মিনতি। দরকার নেই তার কলকাতার কাজে। উলটো দিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরল। স্টেশনে নেমে প্রায় ছুটতে শুরু করল বাড়ির দিকে। কিন্তু বাড়িতে এসে হাজার ডেকেও সাড়া পেল না ফুলকির। সে বাড়ি নেই। বাড়ির উঠোনে বসেই ডুকরে কেঁদে উঠল। কোনও রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে  উঠে আবার দৌড় মারল বড় রাস্তা ধরে। থানায় যেতে হবে এক্ষুনি। কিন্তু তার আগেই বড় স্কুলের গেটের কাছে এসে থেমে গেল।

ওই তো ফুলকি! হাঁপ ছাড়ল মিনতি। শ্বাস নিল বুক ভরে।

ফুলকি ওর স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে, ওকে ঘিরে রয়েছে ওর স্কুলের বন্ধুরা। ও এক-একটা বয়াম থেকে এক-এক রকমের আচার বের করে তুলে দিচ্ছে বন্ধুদের হাতে। চেটেপুটে খাচ্ছে সকলে। ওর স্কুলের বন্ধুরা ওকে খুব ভালবাসে। বাপটা মরে না গেলে স্কুলটা ছাড়তে হত না মেয়েটাকে।

মিনতি উঠে দাঁড়াল। না, আর আচার বিক্রি করতে দেবে না মেয়েকে। আবার স্কুলে ভর্তি করবে। কলকাতার কাজটার খুব দরকার, ফুলকির বিয়ের জন্য নয়, ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য। হাতের ফুটিফাটা ছাতাটাই মাথার উপর মেলে ধরে পা বাড়াল সে স্টেশনের দিকে। ছাতার ফুটোগুলো দিয়ে ছেঁড়া-ছেঁড়া রোদ এসে পড়ছে ওর চোখেমুখে।