ডেলা আর জিমের কাছে তেমন কিছু অপশন ছিল না। মুশকিলটা হল, আমার কাছে অপশনের কোনও কমতি নেই।
আরে, জিম আর ডেলাকে মনে নেই? ও’ হেনরির ‘দ্য গিফ্ট অব দ্য ম্যাজাই’-এর নায়ক-নায়িকা। বড়দিনের গিফ্ট দিতে হবে। এ দিকে হাতে মাত্র একটা দিন। তার থেকেও বড় কথা, দু’জনের কারও কাছেই টাকাপয়সা নেই! ডেলা নিজের চুল বেচল। যা পেল, তা দিয়ে জিমের ঘড়ির চেন কিনল। আর জিম এরই মধ্যে নিজের ঘড়িটাই বেচে দিয়ে ডেলার জন্য চিরুনি কিনল। কী সারপ্রাইজ় মাইরি! চোখের সামনে জ্যান্ত গিফ্ট। অথচ ব্যবহার করার উপায় নেই!
তাও তো জিম ডেলার জন্য কিছু একটা কিনেছিল। আমি বিপাশার জন্য কী কিনি? ওর যে কী দরকার তাই তো জানি না। যা-ই জিজ্ঞেস করি, বলে, ‘‘সায়ন্তন, আই হ্যাভ দ্যাট। জানিস না? নেক্সট?’’ আমি বলি, ‘‘চল, তিন-চারটে টপ কিনে দিই।’’ বিপাশা বলে, ‘‘তা হলে কিন্তু একটা আলমারিও দিতে হবে অন টপ অব দ্য টপস। জানিস না, আমার ওয়ারড্রোবটা জাস্ট ফেটে পড়ছে জামাকাপড়ে?’’ আমি জানি। বিপাশার থেকেই জেনেছি, ও নাকি রিপিট না করে টানা চার মাস ড্রেস করতে পারে। টপের প্রস্তাবটা শুনে হেসে আরও বলেছিল, ‘‘সানু, কী মনে হচ্ছে আমার জানিস? তুই না অ্যাকচুয়ালি ক্যারিং কোল্স টু নিউকাস্ল।’’ আমি একটু বোকার মতো হাসলাম। তার পর, ‘‘দাঁড়া একটু ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসি,’’ বলে টুক করে গুগল করে নিলাম। ছোটবেলায় এটা পড়েছিলাম ইংরিজি গ্রামারে। একটা প্রোভার্ব। মানে অনেকটা ওই কয়লাখনিতে কয়লা নিয়ে যাওয়ার মতো আর কী। আপনাদের মধ্যেও যাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন আমার মতো, তাঁদের আরও এক বার মনে করিয়ে দিলাম। আমি বললাম, ‘‘বিপস্, ভি-ডে’র আর মাত্র চারটে দিন বাকি। জাস্ট নাইনটি সিক্স আওয়ার্স। তা হলে চল একটা ফোন নে।’’ এটা শুনে বিপাশা আরও হাসতে শুরু করল। বলল, ‘‘আবার? আবার? ইউ মাস্ট বি জোকিং সায়ন্তন।’’ নিজের ফোনটা প্যান্টের পকেট থেকে বার করে বলল, ‘‘এটা দেখ। এ দিকে ষোলো জিবি। ও দিকে দু’শো ছাপ্পান্ন জিবি। ক্যাটরিনাকে ফেয়ারনেস ক্রিম দিচ্ছিস? হাউ ফানি! চল, ফোন যখন বললি, একটা সেলফি তুলে নিই কুইক।’’ আমার কাঁধে হাত রাখল, মুখে একটা পাউট দিল আর চল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যে ফেসবুকে ছবিটা পোস্ট হয়ে গেল ক্যাপশন-সহ— ‘‘হাবি টেন্সড ফর ভি-ডে গিফ্ট। কী আছে আমার জন্য? হোয়াট’স ইন স্টোর ফর মি? গাইজ়, কিপ গেসিং।’’ তার পর সেকেন্ডে-সেকেন্ডে নোটিফিকেশনের টুং-টাং বাজতে থাকল ফোন থেকে। বিপসটাকে নিয়ে আর পারি না। সব জিনিস এত সহজে আর এত তাড়াতাড়ি পাবলিক করে দেয় না, ভাল্লাগে না! আমি বললাম, ‘‘হুমম, তা হলে একটা কাজ করি। একটা ভাল দেখে ঘড়ি নে। গর্জাস।’’ ও বলল, ‘‘স্যর, নাইন্টিন অ্যান্ড কাউন্টিং।’’ আমি বললাম, ‘‘সানগ্লাস?’’ বিপাশা বলল, ‘‘নিতে পারি, বাট আরও চারটে চোখ গিফ্ট কর আমায়।’’
কী যে মুশকিলে পড়েছি! এমন একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করি, যার সব আছে। এক বার দু’টো ইম্পোর্টেড কোন আইসক্রিম খেতে খেতে বিপাশাকে নিয়ে মোহরকুঞ্জে হাঁটছিলাম কোনও একটা উইকএন্ডের সন্ধেবেলা। জয়ওয়াক আর কী। ওখানে যে মঞ্চটা আছে, সেখানে এক জন আর্টিস্ট গান করছিল, ‘আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারিনি তোমারে নাথ...’ খুব সম্ভবত কবিপক্ষ-টক্ষ কিছু একটা চলছিল তখন। বিপাশা কোন-এর বাইরের ক্রাম্বটা হালকা করে কামড়ে চিবোতে চিবোতে বলল, ‘আমার যা আছে সব নাথকে দিয়ে দিলে নাথ খুব প্রবলেমে পড়ে যাবে রে সানু। নিয়ে যেতে পারবে না। ব্যাগেজ-এর কস্টটাই পোষাবে না নাথের!’’ বলে নিজেই হা-হা করে হাসতে শুরু করল। আমিও হাসলাম। যাই বলুন, জোকটা কিন্তু খুব ইনোভেটিভ ছিল। আমার বিপাশাই পারে।
সে যাক গে। কিন্তু কী দিই বলুন তো? এক বার মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম, ‘‘একটা ক্লাসি বুকস্টোরে চল। দশটা ভাল দেখে বেস্টসেলার কিনে দিই। গুগল করে লাস্ট পাঁচ বছরের নোবেল, বুকারগুলো দেখে নে। ওইগুলোই দেব। যাই বলিস, গুড শো-পিস ইয়ার। একটা তাকে পাশাপাশি সব ক’টা রাখবি। ইট উইল লুক গ্রেট, যা-ই বলিস।’’ বিপাশা বলেছিল, ‘‘প্লিজ় সায়ন্তন। স্পেয়ার মি। আমার ঘরে আমি কোনও জাঙ্ক অ্যালাউ করি না।’’ আমি চুপ করে গেলাম। ঠিকই তো বলেছিল অবশ্য।
আমিও মাঝে-মাঝে চোখ বুজে ভাবি। রাত্রিবেলা এসিটা সতেরোতে করে দিয়ে, ব্লুটুথ স্পিকারটায় হাল্কা করে কেনি জি চালিয়ে, প্লাগ পয়েন্টে অ্যাকোয়া ব্রিজ গন্ধ লাগানো অ্যারোম্যাটিক ডিফিউজ়ারটা অন করে দিয়ে, চোখ বুজে ভাবি— আমার কী চাই। ভাবি আমার কী দুঃখ। অনেক ক্ষণ ধরে ভাবি। ভাবতেই থাকি। উত্তর পাই না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। বিপাশাকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি। ও বলেছে, ওরও একদম এই ফিলিংটা হয়। আমি বলি, ‘‘বিপ্স, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল ইয়ারে তো উঠে গেলাম। প্লেসমেন্টের চিন্তা হয় না?’’ বিপাশা চোখ দু’টো বড়-বড় করে, মুখে একটা দুষ্টু ইমোজির মতো হাসি মাখিয়ে বলে, ‘‘সানু সত্যি কথা বল তো? তোর হয়?’’ আমি বলি, একটু লজ্জাই করে বলতে অবশ্য, তবু বলে ফেলি, ‘‘হয় না রে।’’ বিপাশা বলে, ‘‘আমারও হয় না। বাট কিছু তো একটা করতে হবে। এতগুলো ড্রেস পড়ে রয়েছে বাড়িতে, রেগুলারলি না বেরোলে তো ওগুলো পরাই হবে না। প্লাস ড্রাইভারটাও বসে থাকবে। ওটাই প্রবলেম। মা-বাপি বেরিয়ে যাওয়ার পর খুব বোরিং লাগবে আমার।’’ আমারও ঠিক এটাই সমস্যার জায়গা। কিছু তো একটা করতে হবে। না হলে সময় কাটবে কী করে? এটা একটু সিক্রেট। তবে এতগুলো কথা যখন আপনাদের বলেই ফেললাম, এটাও বলে দিই। যা পকেটমানি মা-বাবা দেয়, তা ওই প্লেসমেন্টে চাকরি হলে যা মাইনে হবে, তার থেকে বেশি না হলেও খুব একটা কমও হবে না। বিপাশাকে প্রথম এ কথাটা যখন জানিয়েছিলাম ফিসফিস করে, ও আরও ফিসফিস করে আমার কানে কানে বলেছিল, ‘‘আমারও ওই একই কেস, সানু। হাউ লাকি উই আর, বল!’’ খবরের কাগজে যখন মাঝে মাঝে দেখি, আনএমপ্লয়মেন্ট, মানে বেকারত্ব সহ্য না করতে পেরে, অভাবে লোকজন আর কমিটিং সুইসাইড, তখন খুব আনইজ়ি লাগে। ও সব খবর পড়ি না। আমি জানি, বিপাশাও পড়ে না। আমাদের মধ্যে অনেক মিল। কলেজে বন্ধুরা বলে, আমরা নাকি এমন একটা কাপ্ল, মেড ইন হেভেন। শুনলে খুব আনন্দ হয় আমাদের। এক শটে হাজারটা লাইক পাওয়ার মতো।
দেখেছেন, কী কথা বলতে বলতে কোথায় চলে যাচ্ছি! কথা হচ্ছিল গিফ্ট দেওয়া নিয়ে, এসে গেল লাইক। তবে বিপাশা কী লাইক করবে বুঝে উঠতে পারছি না একদম। ফুলের কথাও ভেবেছিলাম। দারুণ একটা বোকে। বিদেশি, বেগুনি রঙের দামি অর্কিড বসানো। দেড়-দুই হাজারের মধ্যে দারুণ একটা কালেকশন নেমে যাবে। বললাম, ‘‘ফুল নে।’’ বিপাশা বলল, ‘‘কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে। পাথরে লেখো নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে। ফুলেতে লেখো নাম, সে ফুল গরু খাবে।’’ বলে হিহি করে হাসতে লাগল। রাস্তায় সবার সামনে আমার গালটা জোরে টিপে দিল আর বলল, ‘‘বোগাস। ফুল তোর কাছে রাখ, ইউ ফুল।’’
মাঝে-মাঝে মনে হয়, এই ভি-ডে নামের বস্তুটা কেন আসে প্রতি বছর। গুগল করে দেখেছি, ভ্যালেন্টাইন নামের ওই সেন্ট ভালবাসার কথা বলেছিলেন। গুগলেই পড়লাম, ভ্যালেন্টাইন ডে মানে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা নয়, বর-বৌয়ের ভালবাসাও নয়। মাকে ভালবাসা যায়, বাবাকে, ভাইকে, বোনকে, যে-কোনও প্রিয়জনকে। অচেনা কাউকেও প্রিয়জন বানানো যায় ভালবেসে। জানলাম, এই দিনটায় নাকি আঠাশ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় প্রতি বছর এ দেশে। বোঝো কাণ্ড। তার মধ্যে সাতাশ কোটি টাকার শুধু গোলাপ। গোলাপ তো দেওয়া যাবে না। গরু খাবে। ভাবতে ভাবতে সত্যি এ বারে খুব বিরক্তি লাগছে। কস্টিউম জুয়েলারি নিয়ে কিছু ক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করলাম ইন্টারনেটে। একটু ঘেঁটেই অবশ্য মনে পড়ে গেল, বিপাশা বছরদুয়েক আগে বলেছিল, জুয়েলারি দিলে ‘‘অলওয়েজ় অ্যাড আ ডায়মন্ড টু দিস, হানি। না হলে দিস না। আর হিরে মানে কিন্তু মুসুরির ডালের মতো নয়, বিগ ডায়মন্ড, বুঝেছিস? যেন স্পার্ক করে, আমার মতো।’’ দুম করে এ কথাটা মনে পড়ে যাওয়ায় ‘ক্লোজ় অল অ্যাপস’ করে দিই তাড়াতাড়ি। হিরে-টিরে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কোনও একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট সিনেমায় দেখেছিলাম, খুব বোরিং সিনেমাটা অবশ্য, একটা ডায়লগ ছিল— ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো। আপাতত তাই করছি। চারদিকে এত অপশন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, আমার কাছে কোনও অপশন নেই। খুব ক্লুলেস লাগছে। বাইরে থেকে যা দেখা যায়, তা ভাল করে দেখানোর জন্য যা-যা দরকার, সব আছে বিপাশার। আমি যে কী করি? আচ্ছা, বিপাশাও কি আমাকে দেওয়ার গিফ্ট নিয়ে এত ভাবছে? গড নোজ়। যেন ভাবে।
***
এই একটু আগে যেটা বললাম, সেটাই মাথার মধ্যে কেমন যেন আর্কাইভ হয়ে গেল, জানেন! ওই ‘বাইরে থেকে যা দেখা যায়’ লাইনটা। আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে। ভি-ডে। আবার একটা আঠাশ হাজার কোটি টাকার দিন। এ বছরে হয়তো এই অঙ্কটা আরও বাড়বে। চারদিকে সেলিব্রেশন। বাইশ পাতার ইংরিজি খবরের কাগজটা আজ আটচল্লিশ পাতার। একেবারে ডবল এক্স-এল সাইজ়। বাড়িতে প্রেশার কুকারে মাংসে সিটি পড়লে যেমন সুগন্ধ বেরোয়, চারদিকে সকাল থেকেই ঠিক তেমন লাভ-লাভ গন্ধ। মা-বাবা সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই তাঁদের সেডানে চেপে অফিসমুখো। আমি আজ কলেজ যাইনি। বিপাশাও যাবে না।
সাড়ে দশটার মধ্যেই বিপাশা চলে এল। ও খুব পাংচুয়াল। পুরো লালে লাল। ইংরিজিতে একে বলে র্যাভিশিং রেড। লাল জিন্সটা দেখে থাকলেও এই লাল টপটা আমি আগে দেখিনি। স্লিভলেস। হাতদু’টো একদম মাখনের মতো লাগছে। আরও একটু বেশি গরম পড়লেই যেন গলে যাবে, প্যান ফ্রায়েড পিৎজ়ার উপরে চিজ় যে ভাবে গলে। আমার বিপাশা ওর পুরো কনফিগারেশন নিয়ে চকচক করছে। ব্র্যান্ড নিউ ল্যাপি কেনার পর প্রথম বারের জন্য স্ক্রিনটা খুললে যেমন লাগে, ঠিক তেমন। মা-বাবা বাড়িতে না থাকার সময় এই প্রথম বিপাশা আমাদের ফ্ল্যাটে এল। ওকে, কেন জানি না, আজ খুব এক্সপ্লোর করতে ইচ্ছে করছে আমার। এক চোখ মারা ইমোজির মতো। উইঙ্কিং।
মাখন হাতের নীচে মাখন আঙুল। নখগুলোয় বাহারি নেল-আর্ট। আঙুলের নীচে এ বারে চোখ-ক্যামেরা নেমে যায়। আর কিছু নেই। আর কিছু নেই? আমার ভি-ডে গিফ্ট? আঠাশ হাজার কোটিতে আমার শেয়ার কই? না না, এ সব ভাবতে নেই।
‘‘হাইই সানু, হ্যাপ্পি ভি ডে,’’ বলে ক্লিয়োপাট্রার মতো হেসে ওঠে আমার বিপ্স। তার পরেই বলে, ‘‘হোয়্যার ইজ় মাই ভি-ডে সারপ্রাইজ়?’’ সয়া সস দিয়ে গার্নিশ করা নুডলের মতো দু’টো ভুরু এ বারে একটু কুঁচকে যায়। আমি বলি, ‘‘বেবি, আছে আছে। কিন্তু একটা কন্ডিশন আছে। হাতটা পেতে দে।’’ একটা পেন নিই। বিপাশা বলল, ‘‘সো কিউট।’’ খুব মিষ্টি করে এক বার হাসল। তার পর বলল, ‘‘আমারও একটা কন্ডিশন আছে, হানি। তুইও হাতটা পাত। আর আমাকেও একটা পেন দে। তোকেও চোখ বন্ধ করতে হবে কিন্তু।’’
আমাদের চোখ বন্ধ। উত্তেজনায় হাত ঘেমে গিয়েছে আমার। একই রকম ভাবে ঘেমে গিয়েছে বিপাশার হাতের তালুও। টের পাই, পরম আদরে খসখস করে আমার হাতে কিছু লিখতে থাকে বিপাশা। আমিও লিখতে শুরু করি ওর হাতে। ও কী লিখছে আন্দাজ করতে পারছি না তো! ‘লাভ ইউ’? না না, তা তো মনে হচ্ছে না। ‘সুইটহার্ট’? না মনে হয়। পেনের ক্যাটওয়াক তো বলছে না সে কথা। সব মিলে হয়তো দশ-বারো সেকেন্ডের একটা এপিসোড। আমি বললাম, ‘‘তুই আমার মেঘপিওন। তুইই আমার সানি লিওন। চোখ খুলি?’’ বিপস্ বলল, ‘‘তুই আমার বল বীর, তুইই আমার রণবীর। চোখ খুলি?’’
আমরা চোখ খুললাম দু’জনেই। একই সঙ্গে। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম হাতের তালুর দিকে। আমার হাতে লেখা একটা কোড। বাংলায় লিখলে দাঁড়ায়, বি ন্যুড এম ফিফটি।
আমি বিপাশার হাতে লিখেছি, বি ন্যুড এফ ফিফটি।
আমরা দু’জনেই জানি এটা হাই ন্যুডিটি ডট কম-এর কুপন কোড। দেড় হাজার টাকার উপরে শপিং করলে এই কোড লাগালেই পঞ্চাশ পার্সেন্ট অফ। এই সাইটটা ইদানীং খুব নাম করেছে শুধু ডিজ়াইনার আন্ডারগার্মেন্টস-এর জন্য।
বাইরে থেকে যা দেখা যায়, সেই টপ-ফুল-গয়না-ফোন সরিয়ে ভেবেছিলাম একটা সেক্সি সারপ্রাইজ় দিই। বিপাশাকে এক্সপ্লোর করার আগে এর থেকে চার্মিং আর কী-ই বা হতে পারে?
বিপাশাও কি তা-ই ভেবেছিল? আমাদের মধ্যে এত, এত মিল?
আর বিলম্ব নয়। দু’জন দু’জনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ি এ বারে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই। কিন্তু মুশকিলটা হল, কেউ কাউকে ঠিকমতো জড়াতে পারছি না। প্রবল এক্সাইটমেন্টে হাতের তালুটা ঘেমে গিয়েছে খুব। আনন্দের চাপা ঘাম সারা শরীরে।
ঠিক করে জড়ালেই কোডটা মুছে যাবে। আমার, আমাদের ভি-গিফ্ট।
এটা হতে দেওয়া যায় না।
(গল্পে ব্যবহৃত ডিজ়াইনার আন্ডারগার্মেন্টস এর সাইটটির নাম, তাদের নিয়মাবলি এবং ডিসকাউন্ট কোড সম্পূর্ণ কাল্পনিক)