রঞ্জন চোখ বুঁজে মালকোষে আলাপটা ধরতেই মল্লিকা আর প্রবীরের চার চোখের মিলন হল। অপলক চোখে দু’জনে দু’জনের দিকে চেয়ে রইল। এ ও কি সম্ভব! প্রায় পনের বছর পরে এমন এক গানের আসরে প্রবীরের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে মল্লিকা কি কখনও ভেবেছিল? প্রবীরের খুব বেশি পরিবর্তন ঘটেনি। কেবল সময়ের রুপোলি ছোঁয়া তার চুলে। ঝকঝকে মসৃন কপাল আর নিখুঁত দাড়ি কাটা গাল, ব্র্যান্ডেড ফুল শার্ট আর ট্রাউজার বলে দিচ্ছে প্রবীর এখনও বিদেশবাসী। তবে এখানে হঠাৎ এল কী করে? এ বাড়ির কর্তা জয়দেব মেলবোর্নে থাকে। বছরে একবার দেশে এলে এমনই একটা গানের আসর বসায়। জয়দেব ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ভক্ত। রঞ্জনের সঙ্গে গানের সূত্রেই আলাপ। প্রায় প্রতি বছর এই আসরে ডাক পড়ে রঞ্জনের। বলা যায়, এখন জয়দেবের পারিবারিক বন্ধু হয়ে গিয়েছে সে। স্বামীর সঙ্গে মল্লিকারও আমন্ত্রণ থাকে। প্রবীরকে এর আগে কখনও গানের আসরে দেখেনি। ভাবতে ভাবতে প্রবীরের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল মল্লিকা। বেয়ারা পানীয়ের ট্রে মল্লিকার সামনে ধরতে একটা নরম পানীয় তুলে নিতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিল সে। পাশের ঘরে লাউঞ্জের এক কোণে বার কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। যা ভেবেছিল ঠিক তাই হল। একটা ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে পিছন ফিরতেই প্রবীরের মুখোমুখি। প্রবীরও আসর ছেড়ে মল্লিকার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
‘‘কেমন আছেন?’’
‘‘আছি। আপনি?’’
‘‘এই আর কী। দু’জনেই চুপ।’’
‘‘যিনি গাইছেন তিনি কি...’’
‘‘ হ্যাঁ, আমার স্বামী।’’
‘‘ও।’’
একটু চুপ করে থেকে প্রবীরই নিরবতা ভাঙল।
‘‘বাইরের ব্যালকনিতে মনে হয় বসা যায়।’’
মালকোষের আলাপটি পিছনে রেখে কাচের স্লাইডিং দরজা ঠেলে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল মল্লিকা। প্রবীর এসে দাঁড়াল তার পাশে। পিছনের কাচের দরজা বন্ধ হল। আর গান শোনা যাচ্ছে না।
অকিঞ্চিৎকর দু’একটা কথাবার্তা আর মাঝে মাঝে গ্লাসে চুমুক। প্রবীর একদৃষ্টে চেয়ে আছে মল্লিকার দিকে। মল্লিকা মুখ নিচু করে তাকিয়ে আছে গ্লাসের দিকে। এত বছর পরে একটা হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের সামনে দাঁড়িয়ে সে। যে সম্পর্ক গড়ে উঠেতে না উঠতেই ভেঙে গিয়েছিল। তা নিয়ে আর কী বা বলা যায়। মল্লিকা মনে মনে ক্ষমা চাইল প্রবীরের কাছে। অন্যায় করেছিল সে। প্রবীরের সঙ্গে মল্লিকার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর মল্লিকা বিয়ের দুদিন আগে কাউকে কিছু না বলে রঞ্জনের সঙ্গে দিল্লি চলে গিয়েছিল। রঞ্জন তখন দিল্লির উস্তাদ আসলাম খাঁর বাড়িতে থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিচ্ছে। গানই ওদের দু’জনকে বেঁধে রেখেছিল। দু’জনেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র-ছাত্রী। রঞ্জনের বিষয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর মল্লিকার রবীন্দ্রসঙ্গীত। দু’জনেই এম এ- তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। কথা ছিল দু’জনে শান্তিনিকেতনে গিয়ে গবেষণা করবে। কিন্তু রঞ্জন হঠাৎ দিল্লিতে উস্তাদজির তত্ত্বাবধানে গান শেখার সুযোগ পেয়ে গেল। উস্তাদ আসলাম খাঁর খ্যাতি ভারতজোড়া। কাজেই রঞ্জন এ সুযোগ হারাতে চাইল না। দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে যাবে ভেবে মল্লিকাও পরিস্থিতি মেনে নিয়ে রবীন্দ্রভারতীতেই এম ফিল- এ ভর্তি হয়ে গেল। কিন্তু দু’বছর যখন চার বছর পেরিয়ে পাঁচে পড়ল আর মল্লিকা এম ফিল শেষ করে গবেষণাতেও কয়েক বছর কাটিয়ে দিল তখন বাবা-মাকে আর ঠেকানো গেল না। বিয়ে বিয়ে করে তাঁরা অস্থির করে তুলল মল্লিকাকে। ছোট বোনের বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বড়কে রেখে তো আর ছোটর জন্য সম্বন্ধ খোঁজা যায় না। বাবা-মায়েরও বয়স হয়েছে। তা ছাড়া রঞ্জনের সঙ্গে মল্লিকার এতদিনের সম্পর্ক নিয়েও আত্মীয় মহলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মল্লিকার নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু রঞ্জন তখন বিয়ের কথা কানেই তোলে না। সে গানের মধ্যে ডুবে আছে। বছরে দু’একবার কলকাতায় আসে, তাও উস্তাদজির কোনও অনুষ্ঠান থাকলে। উস্তাদজির সঙ্গে রঞ্জন মঞ্চে বসে। উস্তাদজিও গুণীমহলে রঞ্জনকে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন রঞ্জনের কথা বলার সময় কোথায়? ফোনেই কথা বলার সময় নেই, চিঠি লিখলে উত্তর নেই। তাই শেষে বাধ্য হয়েই মল্লিকা বাবা-মাকে তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে মত দিল।
ছোট কাকিমার বাপের বাড়ির সূত্রে বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক হল। প্রবীর, অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, ইঞ্জিনিয়ার। ভালই হল। রঞ্জনের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। যত দূরে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। মাত্র দিন কুড়ির জন্য দেশে এসেছে প্রবীর। তাই রেজিস্ট্রি করে বিয়ের পর্ব মিটিয়ে ছোটখাটো একটা জয়েন্ট রিসেপশনের ব্যবস্থা হল। এরই মধ্যে সিনেমা, থিয়েটার দেখার ছলে প্রবীরের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করে নেওয়া, রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে পাসপোর্ট-ভিসা সংক্রান্ত দরকারি কথা সেরে নেওয়া সবই ঝড়ের মতো হয়ে গেল। একদিন মল্লিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে একটা আংটিও কিনে নিল প্রবীর। বিয়ের কার্ড ছেপে বিলি করার সময় নেই। ফোনে ফোনেই অল্প কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের, যাদের না বললেই নয়, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হল। তারপর যা হওয়ার তাই হল। কোথা থেকে খবর পেয়ে বিয়ের দিন দুই আগে রঞ্জন এসে হাজির। মল্লিকা এরকম একটা কাণ্ড করতে পারে রঞ্জন কল্পনাই করতে পারেনি। মল্লিকা ছাড়া তার জীবনে চলা যে সম্ভব নয়, তা কি মল্লিকা জানে না? না, মল্লিকা সত্যিই জানত না যে, রঞ্জনের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে তাকে প্রত্যাখান করার মতো মনের জোর মল্লিকার নেই। বিস্তর ঝগড়া- কান্নাকাটির পর রঞ্জন শেষে জোর করে মল্লিকাকে নিয়ে দিল্লি চলে গেল। বাবা-মা যখন জানতে পারলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
রঞ্জন এখন খ্যাতনামা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী। মল্লিকা তার সংসার সামলায়, সেক্রেটারির মতো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে কবে, কোথায় কখন রঞ্জনের অনুষ্ঠান হবে, সহ-শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আবার রঞ্জনের ছাত্রদের যাতে ক্লাসের ক্ষতি না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখে। আস্তে আস্তে মল্লিকার গান গাওয়া, গান শেখানো বন্ধ হয়ে গেল। চাকরিও ছেড়ে দিল সে। রঞ্জন এখন খ্যাতনামা শিল্পী। তার সহধর্মিনীর সহযোগিতা না পেলে এই প্রতিযোগিতার বাজারে সে দাঁড়াবে কি করে? সেলেব্রিটিদের স্ত্রী-কে কখনও সেলেব্রিটি হতে নেই। তাকে সেলেব্রিটি-মেকার হতে হয়, নইলে ভারসাম্য বজায় থাকে না। মল্লিকা মন দিয়ে সেই ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
‘‘আচ্ছা আগামীকাল কি আমাদের একবার দেখা হতে পারে?’’
‘‘কেন?’’ চমকে উঠল মল্লিকা। হঠাৎ এমন প্রস্তাব আশা করেনি সে।
‘‘না, মানে,’’ থতমত খেয়ে প্রবীর বলে ‘‘আপনার আপত্তি থাকলে থাক। আমি পরশু অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাব। ভাবলাম যাওয়ার আগে একবার ...’’
‘‘কৈফিয়ৎ চাইবেন?’’
‘‘না... না, ছি-ছি, এ কী বলছেন। আমার বলাটা অন্যায় হয়েছে।’’
‘‘অন্যায় হবে কেন। আপনার তো অধিকার রয়েছে কৈফিয়ৎ চাইবার। দোষ তো আমার। আপনাকে কিছু না বলে...’’
‘‘ওসব কথা থাক। পনেরো বছর বাদে ওসব পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কি?’’
‘‘আপনি কি আমায় ক্ষমা করতে পেরেছেন?’’
‘‘ক্ষমা! সে কি! কেন? কীসের জন্য?’’ প্রবীর হাসলেন।
‘‘যা করেছি তার ক্ষমা নেই। তবু জানেন, বহুবার মনে মনে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আসলে তখন আমার নিজের ওপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আসলে আমি না...’’
‘‘আবার কৈফিয়ৎ। এবার কিন্তু আমি সত্যি রাগ করছি।’’
‘‘না... না, রাগ করবেন না। প্লিজ।’’
‘‘বেশ, করব না। কিন্তু একটা শর্তে। বলুন কথা রাখবেন?’’
‘‘রাখব। কিন্তু কী কথা?’
‘‘কাল প্রিন্সেপ ঘাটে বসে একটা গান শোনাবেন?’’
‘‘ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার...’’
মুখ তুলে প্রবীরের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল মল্লিকা। পনের বছর আগে প্রিন্সেপ ঘাটে বসে গানটা প্রবীরকে শুনিয়েছিল সে। গানটা গাইতে গাইতে রঞ্জনের কথা মনে করে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছিল মল্লিকা। আর তাই দেখে প্রবীর অবাক হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল গানের মধ্যে এমন করে একাত্ম হয়ে যেতে পারে কেউ? সেদিনের কথা আজও ভোলেনি সে।
‘‘গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি,’’ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল মল্লিকা।
‘‘সে কি! গানের মধ্যেই তো ডুবে আছেন সারাদিন। একটি মাত্র গান আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন না?’’
‘‘চেষ্টা করব।’’
‘‘বেশ, তাহলে দেখা হচ্ছে প্রিন্সেপ ঘাটে। কাল সন্ধে ছ’টায়।’’
পরদিন মল্লিকা সারা সকাল গুনগুন করে গাইল, ‘চোখের জলের লাগল জোয়ার...’ এতবার গাইল যে, রঞ্জন ঠাট্টা করে বলল, ‘‘কী ব্যাপার? এতবার গাইছ কেন গানটা? কাউকে শোনাবে না কি?’’
‘‘ঠিক ধরেছ।’’
‘‘কাকে?’’
‘‘তারায় ভরা শরতের আকাশকে।’’
‘‘দু’এক জায়গায় সুর কম লাগল। একটু দেখে নিও,’’ মল্লিকার উত্তরটা যেন শুনতে পেল না রঞ্জন। কখনই বা শোনে? বিকেলে মল্লিকা রঞ্জনকে চা-জলখাবার করে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। প্রিন্সেপঘাটে যখন পৌঁছল তখন তারায় ভরা আকাশে শরতের টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। গঙ্গার জল ছলাৎ ছলাৎ করে ঘাটের সিঁড়িকে ছুঁইয়ে যাচ্ছে। সাদা ধবধবে থামগুলো পনের বছর আগেকার এমনি এক সন্ধের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে। একটা থামের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রবীর, মল্লিকার অপেক্ষায়।
‘‘দেরি হয়ে গেল?’’
‘‘তেমন কিছু নয়। না এলেও কিছু বলার ছিল না।’’
‘‘বাঃ, আসব না কেন? কথা দিয়েছি যখন, তখন নিশ্চয়ই আসব।’’
‘‘তাই?’’ কথাটা শ্লেষের মতো শোনালো। আহত হল মল্লিকা। ‘‘আপনি তা হলে সেই পুরোনো রাগ পুষে রেখেছেন,’’ সিঁড়ির ধাপে বসতে বসতে বলল মল্লিকা।
‘‘পুষে তো রেখেইছি। আগে গান শুনি তবে তো রাগ যাবে।’’
‘‘শোনাব শোনাব। আগে আপনার কথা শুনি। অস্ট্রেলিয়ায় কোথায় থাকেন, কী করেন, কে কে আছে বাড়িতে...জানতে হবে না?’’
‘‘জেনে কী করবেন?’’
‘‘কী আবার করব। যে মানুষকে তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় ছেড়ে চলে গেলাম... তারপর কী হল জানবার আগ্রহ থাকবে না?’’
‘‘তেমন কিছুই হল না। জীবন যেমন চলছিল, তেমনই চলতে লাগল।’’
‘‘অর্থাৎ একটা নিটোল দাম্পত্য জীবন, তাই তো?’’
‘‘তা আর হল কই?’’ হাসল প্রবীর, ‘‘আর একজন মল্লিকাকে খুঁজেই পেলাম না,’’
‘‘সে কী! এত বছর একা একা কাটিয়ে দিলেন?’’
‘‘একা কেন? অনেক বন্ধু আছে, চাকরি-বাকরি... একা কোথায়? দিব্যি আছি।’’
মল্লিকা চুপ করে বসে রইল। নিজেকে ভীষণ স্বার্থপর মনে হল। মানুষটার জীবনটাকে সে তছনছ করে দিয়েছে। কোন অধিকারে? কতখানি আঘাত পেলে মানুষ এমন নিঃসঙ্গ জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় অনুভব করার চেষ্টা করল।
‘‘কই গান গাইবেন না?’’
‘‘গাইছি,’’ ধরা গলায় বলল মল্লিকা। একদিন রঞ্জনের কথা ভাবতে ভাবতে গানটা শুনিয়েছিল প্রবীরকে। আজ শুধু প্রবীরের জন্যই প্রাণ ঢেলে গাইল মল্লিকা, ‘ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার দুখের পারাবারে,’ সেদিনের মতোই দু’চোখ জলে ভেসে গেল তার। বহুদিন পরে গান গাইতে গাইতে গানের মধ্যে ডুবে গেল মল্লিকা। সুর কম লাগল কি না এসব কথা তার মনেই রইল না।
গান শেষ করে অনেকক্ষণ বসে রইল দু’জনে। ঝকঝকে শরতের আকাশে এক টুকরো চাঁদ আর হীরের কুচির মতো অজস্র তারা। মাঝে মাঝে গঙ্গার ঢেউয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, ছলাৎ ছলাৎ।
‘‘এবার উঠতে হবে,’’ মল্লিকা নিরবতা ভাঙল।
‘‘হ্যাঁ। খুব সুন্দর কাটল আজকের এই সন্ধেটা। মনে থাকবে।’’
‘‘ও, হ্যাঁ। আপনার একটা জিনিস আমার কাছে রয়ে গিয়েছে।’’
‘‘আমার জিনিস!’’
‘‘সেই আংটিটা,’’ বলে পকেট থেকে ছোট একটা আংটির বাক্স বের করল প্রবীর। মল্লিকার মনে পড়ল তারা দু’জনে মিলে গিয়ে আংটিটা কিনেছিল। কিন্তু এখন কী ভাবে সে আংটিটা নেবে?
‘‘ওটা না হয় আপনার কাছেই থাক,’’
‘‘নেবেন না? আমি জানতাম, আপনি ‘না’ করবেন তবু... আসলে এটা বড় কষ্ট দেয় আমায়। তবুও এতদিন কাছ ছাড়া করতে পারিনি। বিক্রি করে দিতে পারিনি, ফেলে দিতে পারিনি, কাউকে দিয়ে দিতেও পারিনি,’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চুপ করে থাকল প্রবীর। তারপর আবার বলল, ‘‘তার চেয়ে বরং আসুন দুজনে মিলে এটা গঙ্গায় ভাসিয়ে দিই।’’
‘‘না...ওটা আমায় দিন...কাছে রেখে দেব,’’ কোনও দ্বিধা নেই মল্লিকার গলায়।
পনের বছর লোকটা তার মনের কষ্ট ওই বাক্সটার মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। মল্লিকা না হয় বাকী জীবন ওই কষ্টটা বহন করুক।