আর একটু হলেই উল্টে পড়ে যাচ্ছিল সুবিনয়। হাঁটু নড়বড়ে। ডাক্তার বলেছেন, দেখে চলাফেরা করতে। তা-ই করে সুবিনয়। জানে, এই বয়সে হাঁটু ভাঙলে দেখার কেউ নেই। তবু সব সময় হিসেব মেলে না। এখন যেমন। সিঁড়ির শেষ ধাপে পা দিতেই কর্কেট বল লাগা স্টাম্পের মতো হাঁটু কাত হয়ে গেল। এমনিই। তার জেরে পড়ে যাচ্ছিল। পিছন থেকে বাসন্তী হাত ধরে ফেলায় সামলে নিল।
চাপা ধমকও শুনতে হল তাই, “তোমার সব ব্যাপারে তাড়াহুড়ো। সাবধানে পা ফেলতে কী হয়?”
সুবিনয় চুপচাপ ধমক হজম করল। এক বার তাকাল বাসন্তীর দিকে। হাসল।
বাসন্তী আর কিছু বলল না। সুবিনয় এ বার বাসন্তীর হাত ধরল। নিজের জন্য নয়। বাসন্তীর কথা ভেবে। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তা পেরিয়ে বালিয়াড়ি। খানিক হাঁটলে সমুদ্র। অতটা রাস্তা বাসন্তী একা হেঁটে যেতে পারবে না। ওর হার্ট দুর্বল। কোমরে চোট। দু’চোখে ছানি অপারেশন হয়েছে। গতকাল সকালেও সুবিনয় নিশ্চিত ছিল না এই ট্রিপ নিয়ে।
বাসন্তী যদিও মোবাইলে বার বার আশ্বস্ত করেছে, “ভেবো না। আমি ঠিক টাইমে পৌঁছে যাব।”
তবু সুবিনয় ভয় পাচ্ছিল। সত্তর বছর বয়সে বালিগঞ্জ থেকে ট্যাক্সি নিয়ে একা হাওড়া স্টেশনে আসা সোজা কথা নয়। তার উপর শরীরের যা অবস্থা! রাত ন’টায় হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে সুবিনয়ের টেনশনই হচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত ঠিক সময়ে এসেছিল বাসন্তী। বলেছিল, “কী ভেবেছিলে? আসব না?”
সুবিনয় সেই কথার উত্তর দেয়নি। বাসন্তীর স্ট্রলিব্যাগটা টেনে নিয়েছিল। বলেছিল, “এটা আমি নিচ্ছি। এক বার হোঁচট খেয়ে পড়লে পুরো ট্রিপ মাটি।”
বাসন্তী হেসে বলেছিল, “এমন ভাব করছ যেন এখনও ইউনিভার্সিটিতে পড়ো!”
এর পর দু’জনে মিলে ধীরেসুস্থে উঠে বসেছিল নিজেদের কামরায়। সকালে সাড়ে সাতটায় পুরী স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে যখন হোটেলের পাঠানো গাড়িতে গিয়ে উঠল, তখন খানিক হালকা লাগল সুবিনয়ের। প্রতি বারের মতো এ বারও পাশাপাশি রুম। দুটো ঘর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। ভাল ভাবে।
বাসন্তী চিরদিন পিটপিটে। বছর দশেক হল সেটা আরও বেড়েছে। হোটেলে ঢুকে আগে ও ভাল করে স্নান করল। তার পর এল সুবিনয়ের রুমে। সুবিনয় অবশ্য তত ক্ষণে শুধু মুখ ধুয়েছে। সেই থেকে দুপুর পর্যন্ত চলল গল্প-আড্ডা। সবই পুরনো দিনের স্মৃতি। মাঝে দুপুরে মাছের ঝোল-ভাত। খেয়ে উঠে নিজের-নিজের ঘরে হালকা ঘুম। এখন দু’জনে বেরিয়ে পড়েছে। সমুদ্রের ধারে গিয়ে সারা সন্ধে বসবে।
বাসন্তীর হাত ধরে ধীরে-ধীরে রাস্তা পেরোল সুবিনয়। আজকাল কথায়-কথায় বড় পুরনো কথা মনে পড়ে। এখনই যেমন রাস্তা পেরোতে-পেরোতে মনে পড়ল, ডায়মন্ড হারবারে পিকনিক করতে যাওয়ার কথা। সে বারও ভাঙা কেল্লার কাছে দু’জন এ ভাবে হাত ধরাধরি করে ঘুরেছিল। তখন অবশ্য চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। নতুন সংসার গড়ার স্বপ্ন।
হাঁটতে-হাঁটতে বাসন্তী বলল, “তুমি ভাবছিলে শরীর খারাপের জন্য আমার আসা হবে না। কিন্তু বিপদ এসেছিল অন্য দিক থেকে।”
“কী হয়েছে?”
“সকাল থেকে বুলার পেটে যন্ত্রণা। পাড়ার ডাক্তার ডাকতে হল। সে এসে বলল ইউএসজি করতে। বোধ হয় গলস্টোন হয়েছে।”
“তার পর?”
“দুপুরের পর ব্যথাটা কমল। তাই আসতে পারলাম। না হলে হয়তো ওই জন্য আটকে যেতাম,” দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বাসন্তী, “ফিরে গিয়ে একটা ঝামেলা অপেক্ষা করছে। যদি সত্যিই গলস্টোন হয়ে থাকে, তা হলে অপারেশন করাতে হবে। তার এক গাদা খরচ। ঝামেলা।”
“তেমন হলে আমি অপারেশন করাব। আমার এক ছাত্রের ভাই সার্জেন। তোমাকে দৌড়োদৌড়ি করতে হবে না।”
টুকটুক করে দু’জন রাস্তা পেরিয়ে বালিয়াড়িতে চলে এসেছে। চার পাশে ঝুপড়ি দোকান। সব বন্ধ। মাঝখান দিয়ে সৈকতে যাওয়ার রাস্তা। সুবিনয় সেদিকে এগিয়ে চলল। ওখানে চেয়ার ভাড়া পাওয়া যায়। সেই চেয়ার ভাড়া করে দু’জনে বসবে।
হাঁটতে-হাঁটতে সুবিনয় ভাবছিল বুলা, মানে বৈশাখীর কথা। বাসন্তীর ছোট বোন। বাসন্তীর মতো বৈশাখীরও বিয়ে হয়নি। বাসন্তী তবু চাকরি করেছে। বৈশাখী কোনও দিন ঘরের বাইরে সে ভাবে পা রাখেনি। সেই কলেজ জীবন থেকে সুবিনয় দেখে এসেছে বৈশাখী রুগ্ণ। শরীরে নানা রোগ। সেই রোগের জন্যই মেয়েটার বিয়ে হয়নি। সারা জীবন বাসন্তীকে ঘুরতে হচ্ছে বৈশাখীকে ঘাড়ে করে। শুধু কি বৈশাখী! ওদের ছোটবোন হৈমন্তীও তো বছর পাঁচেক হল বাসন্তীর জিম্মায়। হৈমন্তীর অবশ্য ভাল বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী মারা যায় রিটায়ারমেন্টের পর পর। ছেলে-ছেলের বৌ সব সম্পত্তি কায়দা করে নিজেদের নামে লিখিয়ে মাকে প্রায় তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে। সেই থেকে হৈমন্তীও এসে উঠেছে ওদের পৈতৃক বাড়িতে। তিন বোনের বয়সই ষাটের উপর। সবারই নানা অসুখ। সব সামলাতে হচ্ছে বাসন্তীকে।
এই সব ভাবনার মধ্যেই বাসন্তীর গলা শোনা গেল, “একটু দাঁড়াও। কোমরে লাগছে।”
থামল সুবিনয়। দেখল বাসন্তী হাঁপাচ্ছে। সুবিনয় চার পাশে তাকাল। সমুদ্র কাছেই। নোনা হাওয়ায় আঁশটে গন্ধ। সেই হাওয়ায় ওর সাদা চুল উড়ছে। নিজের চুলে হাত বোলাল সুবিনয়। বাসন্তী তবু নিজের বোনদের নিয়ে নাজেহাল। সুবিনয়ের কে আছে? দুই ভাইপো। তারা অপেক্ষা করছে, কবে জেঠু মরবে। তার পর সব সম্পত্তি হাতানো যাবে। চেতলা রোডের উপর দু’কামরার ফ্ল্যাটের দাম ভালই। তার উপর ভাল ব্যাঙ্ক ব্যালান্স। মায়ের গয়নার অনেকটাই পেয়েছে সুবিনয়। তার দামও এখন কোটিতে ঠেকেছে। ভাইপোরা চিলের মতো পাক দিচ্ছে ওর জীবনের উপর।
বাসন্তী এক বার দেখল সুবিনয়কে। বলল, “কী এত ভাবছ বলো তো?”
“কিছু না।”
“সম্বুদ্ধরা কি আবার যোগাযোগ করেছিল? তুমি এ বার উইল করে কোনও অনাথ আশ্রম কিংবা তেমন কোথাও সব লিখে দাও। না হলে ওরা তোমায় ছাড়বে না।”
“দিলেই কি ছাড়বে?” সুবিনয় হাসল, “সম্বুদ্ধরা জানে আমার দুর্বলতা কোথায়। দেখলে, তোমাদের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হল।”
বাসন্তী চুপ করে গেল। জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “চলো। এ বার হাঁটতে পারব।”
দু’জন গুটিগুটি সমুদ্রের পাড়ে পৌঁছল। সুবিনয় দুটো চেয়ার ভাড়া করল। প্লাস্টিকের। সেই চেয়ারে ওরা বসল। পুরীর সমুদ্র বাসন্তীকে খুব টানে। ছোটবেলা থেকে। এ বার নিয়ে বোধ হয় কুড়ি-বাইশ বার বাসন্তী পুরী এল। সুবিনয়ের সঙ্গেই বেশি বার এসেছে। অল্প বয়সে এই পরিবেশে বাসন্তী গলা ছেড়ে গান ধরত। এখন পারে না। থাইরয়েড ধরা পড়ার পর গানের গলাটা কেমন যেন নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
সুবিনয় চুপ করে বসে থাকল। সূর্য তলিয়ে গিয়েছে মেঘের আড়ালে। আকাশ লাল। সে দিকে তাকিয়ে সুবিনয়ের মনে হল, আর কি কখনও এ ভাবে আসা হবে? দু’জনের যা বয়স হয়েছে! শরীরও ভাল না। হয়তো এটাই শেষ। আড়চোখে বাসন্তীকে এক বার দেখল সুবিনয়। বাসন্তী ঠায় তাকিয়ে সমুদ্রের দিকে। চশমার পিছনে দুটো টানা-টানা চোখ, যা সুবিনয়ের মনে ঢেউ তুলেছে পঞ্চাশ বছর ধরে, এখন কেমন ঘোলাটে। টোল পড়া ফরসা গালও চুপসে গিয়েছে। সেই নরম ত্বক এখন বালিয়াড়ির মতো ভাঁজ-ভাঁজ।
প্রথম-প্রথম সুবিনয় আর বাসন্তী যখন সংসার করার পরিকল্পনা করত, তখন নানা ধরনের স্বপ্ন বুনত দু’জনে। বাসন্তী বলত, “আমি চাকরি করব না। প্রথম দু’বছর আমরা শুধু ঘুরে বেড়াব। আমার সমুদ্র খুব ভাল লাগে। পুরী যাব। গোয়া যাব। মাদ্রাজ যাব। দুটো ছেলেমেয়ে হবে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে।”
“তুমি শিয়োর, আমাদের
ছেলে এবং মেয়ে পর পর হবে?” সুবিনয় হাসত।
“হবে। তুমি দেখো হবে,” সুবিনয়ের কাঁধে মুখ গুঁজে
বাসন্তী বলত।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সুবিনয়। তখন কি জানত মেয়ের প্রেমের খবর পেয়ে বাসন্তীর বাবা ওই ভাবে বেঁকে বসবেন? শুধু বেঁকে বসা! মেয়ের বাইরে পা দেওয়াই বন্ধ করে দেবেন। কী সব দিন গিয়েছে তখন। বাসন্তীর মা মারা গিয়েছিলেন আগেই। ওদের বাবা একা হাতে তিন মেয়েকে মানুষ করেছিলেন। কড়া মেজাজের মানুষটা ভাবতেই পারতেন না যে, তাঁর মেয়েরা প্রেম করতে পারে। প্রেম করাকে তিনি হীন কাজ বলে মনে করতেন। সুবিনয়কে নিয়ে প্রথম বাবা-মেয়ের টানাপড়েন শুরু হয়েছিল। যার পরিণতি, বাসন্তীকে কুলদেবতার পা ছুঁয়ে শপথ করতে হয় যে, কোনও দিন সুবিনয়কে বিয়ে করবে না। সেই শপথ সারা জীবন ধরে পালন করেছে বাসন্তী। কিন্তু কিছুতেই অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বরং একটা স্কুলে চাকরি নিয়েছিল।
বাসন্তীর সেই শপথ এবং সিদ্ধান্ত ওদের পরিবারকে চুরমার করে দিয়েছিল। বাবা কোনও দিন ভাবতে পারেননি, মেয়ে এই রাস্তা নিতে পারে। পরে তিনি মনে মনে অনুতাপ করেছিলেন। কিন্তু মেয়েকে কুলদেবতার পা ছুঁইয়ে যে শপথ করিয়েছেন, তা ভাঙতে বলার সাহস তাঁর ছিল না।
সুবিনয়ও আর বিয়ে করেনি। এমএ পাশ করার এক-দেড় বছর পর উত্তর কলকাতার এক কলেজে ও চাকরি পেয়ে যায়। সুবিনয়রা দুই ভাই। ছোটভাই বিয়ে করে নেয়। তবু মায়ের হাজার কান্নাকাটিতেও সুবিনয়কে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যায়নি। এমনকী বাসন্তীও বলেছিল, “তুমি কেন আমার জন্য জীবন নষ্ট করবে? মেয়েরা এ ভাবে জীবন কাটাতে পারে। পুরুষমানুষ পারে না। পুরুষমানুষের চাহিদা থাকে।”
সুবিনয় কোনও উত্তর দেয়নি। শুধু হেসেছিল।
বাসন্তীর বাবা পরের দুই মেয়ের বিয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বৈশাখীর বিয়ে দিতে পারেননি। হৈমন্তীকে পাত্রস্থ করার কিছু দিন বাদেই তাঁর সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। বিছানায় পড়েছিলেন দু’বছর। কথা বলতেন ফিসফিসিয়ে। সেই সময় তিনি বার বার সুবিনয়কে দেখতে চাইতেন। সুবিনয় এলে ওর হাত ধরে থাকতেন। তখন বাবার চোখ দিয়ে শুধু জল গড়াত। বাসন্তী চুপ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। কেউ কোনও কথা বলত না।
বাবার মৃত্যুর পর বাসন্তী আর সুবিনয় আরও কাছাকাছি এসেছে। সেই মৃত্যুতে বাসন্তীর তখন দিশেহারা অবস্থা। সুবিনয় রোজ গিয়ে ওদের দেখাশোনা করত। বাসন্তীকে ধাতস্থ করতেই প্রথম দু’জনের ঘুরতে বেরনো। কিন্তু প্রথম থেকে আলাদা ঘর নেওয়ার নিয়ম। প্রথম থেকে দু’জনের মাঝখানে হালকা কাচের দেওয়াল। সুবিনয় এক-দু’বার আপত্তি করেছিল। বাসন্তী রাজি হয়নি। এক বার তো দিঘা ঘুরতে গিয়ে সুবিনয় মাঝরাতে বাসন্তীর রুমের দরজায় টোকা দিয়েছিল। অনেক বার। বাসন্তী সাড়া দেয়নি। তার পর থেকে সুবিনয় নিজেকে সামলে নিয়েছে।
সমুদ্রের দিকে মুখ করে দু’জন বসে থাকল। চার পাশে অন্ধকার নামছে। সমুদ্রপাড়ের দোকানগুলো খুলছে একে-একে। কয়েকটা পাখি উড়ে গেল ওদের উপর দিয়ে।
বাসন্তী বলল, “কী এত ভাবছ?”
“ভাবছি, এটাই শেষ ট্রিপ কি না।”
বাসন্তী চুপ করে থাকল। বলল, “তোমাকে একটা কথা বলব-বলব করে বলা হয়নি।”
“কী?”
“হঠাৎ যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তুমি কী করবে?”
সুবিনয় চুপ করে থাকল। তার পর হাত বাড়িয়ে বাসন্তীর হাত ধরল। বলল, “চিন্তা কোরো না। আমি আগে যাব। আমি তোমার চেয়ে ছ’মাসের বড়। মনে নেই কলেজে যখন জন্মদিন জানতে চেয়েছিলাম…”
বাসন্তী আরও জোরে সুবিনয়ের হাত চেপে ধরল। বলল, “না। তুমি আগে যাবে না। আমি যাব। আমি…আমি…”
সুবিনয় এ বার উঠে দাঁড়িয়ে বাসন্তীর মাথায় হাত বোলাল। বাসন্তী চুপ করে বসে থাকল। উত্তেজনা থিতিয়ে এল।
সুবিনয় বলল, “হঠাৎ এই সব ভাবছ কেন?”
“ভাবছি বুলার জন্য। আমি মারা গেলে ওর কী হবে? হেলা না হয় ছেলের কাছে ফিরে যেতে পারবে। জানি সেই জীবন হবে খুব কষ্টের। তবু কিছু তো পাবে। হাজার হোক নিজের ছেলে। একেবারে ফেলতে পারবে না। কিন্তু বুলা? ও কোথায় যাবে? তুমি… তুমি ওকে দেখো। মেয়েটা এই বয়সে নিরাশ্রয় হয়ে যাবে। রোগাভোগা মেয়ে। মায়ের মৃত্যুর ধাক্কা ও সামলাতে পারেনি। তার পর থেকে ওর শরীর ভেঙে গেল। পড়াশোনায় খারাপ হয়ে গেল…”
সুবিনয় দেখল, বাসন্তীর সুন্দর মুখ কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
বাসন্তীর হাতে চাপ দিয়ে ও বলল, “তুমি চিন্তা কোরো না। যদি তোমার কিছু হয়, আমি বুলার দায়িত্ব নেব।”
বাসন্তীর রোগা আঙুলগুলো মিশে গেল সুবিনয়ের আঙুলে।
প্রসঙ্গে পাল্টাতে সুবিনয় হালকা হেসে বলল, “কিন্তু আমি যদি আগে মারা যাই? তুমি তখন কী করবে?”
অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। সেই অন্ধকারে বাসন্তী চেয়ে থাকল সুবিনয়ের দিকে। চাপা গলায় বলল, “নিরামিষ খাব। আর হলুদ শাড়ি পরব না। হলুদ রং তোমার প্রিয়। মনে নেই সে বার শান্তিনিকেতনের দোলে…”
বাসন্তীর বাকি কথা প্রবল হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সেই হাওয়া-অন্ধকারে দু’জন শুধু বসে থাকল। পাশাপাশি। চুপচাপ।