Abosar

অমনোনীত

জয় সেনগুপ্ত

একটা মানসিক কষ্টে ভুগছে শাক্যদীপ। দীর্ঘ দিন ধরে। তার এই কষ্টের কথা সকলকে বলার নয়। কেউ বুঝবে না। গুরুত্ব দেবে না। বলবে, এই সামান্য কারণে এত ভেঙে পড়ার কী আছে! কিন্তু কারণটা ওর কাছে সামান্য নয়। 

মনের মধ্যে ব্যর্থতার যন্ত্রণা নিয়েই সে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরছে, সকলের সঙ্গে বসে টিভি দেখছে, শ্রেয়সীর সঙ্গে সিনেমা যাচ্ছে— কিন্তু তার মধ্যে হতাশার যে যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে মস্তিষ্কে গিয়ে ধাক্কা মারছে, তা কেউ জানতে পারছে না। তবে যে অব্যক্ত বেদনাকে সঙ্গী করে তার দিন কেটে যাচ্ছে, তা বোধহয় তার মতো উঠতি লেখকদের অনেকের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে। 

কলেজে পড়ার সময় থেকে ইউনিভার্সিটিতে পা দেওয়ার সময় পর্যন্ত যে-ক’টা গল্প তার প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটা পত্রিকায়, সেগুলো নেহাতই অনামী এবং তেমন জনপ্রিয় নয়। বুদ্ধিজীবী মহলেও সে রকম কদর নেই। যে পত্রিকায় নিজের গল্প ছাপার অক্ষরে দেখার তীব্র বাসনা তার শ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে রয়েছে, সে-পত্রিকাটির নাম ‘অনুভাষ’।

একের পর এক গল্প পাঠালেও অনুভাষ পত্রিকায় আজ পর্যন্ত তার একটাও গল্প মনোনীত হয়নি। গল্প পাঠায়, তার পর অপেক্ষা, টেনশন… নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়, সে ফোন করে পত্রিকার দফতরে। এবং জানতে পারে— মনোনীত হয়নি। 

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শাক্যদীপ সান্যালের বুকের ভেতর থেকে। প্রতিটি লেখকেরই তো স্বপ্ন অনুভাষে গল্প ছাপানো। অবশ্য আজ পর্যন্ত যতগুলো গল্প বেরিয়েছে শাক্যর, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, তার প্রায় সবগুলোই প্রশংসা কুড়িয়েছে পাঠকমহলে। কিন্তু অনুভাষের কাছে সেগুলোর মূল্য আছে কি?

শাক্যর ঠাকুরদা নামী সাহিত্যিক ছিলেন। মনোময় সান্যাল। এখনও বিক্রির নিরিখে তাঁর বই সবার শীর্ষে। নানা পুরস্কার পেয়েছেন। বেশ কয়েকটা বই থেকে সিনেমাও হয়েছে। সেই সময় বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক তাঁর একটা গল্প কিংবা উপন্যাস পাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকতেন। অত্যন্ত সফল, জনপ্রিয় এই সাহিত্যিকের যখন মৃত্যু হয়, শাক্য তখন চোদ্দো বছরের কিশোর। 

মনোময় ছোটদের জন্য লিখতেন না। তিনি বড়দের লেখক। ঘরে বসে টাইপরাইটারে নিজেই টাইপ করতেন। সারা রাত ধরে লিখতেন আর ভোরের দিকে ঘুমিয়ে নিতেন। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে শাক্য কত বার টাইপরাইটারের খটাখট আওয়াজ পেয়েছে! 

তিনি বড়দের লেখক, তাই শাক্যকে সে সময় তাঁর বই পড়তে দেওয়া হত না। শাক্যর বাড়ি বরাবরই খুব কনজ়ার্ভেটিভ। মাধ্যমিক পাশ করার আগে বড়দের বই হাতে নেওয়ার অধিকার ছিল না তার। পরে সে লাইব্রেরিতে গিয়ে ঠাকুরদার বেশ কয়েকটা বই পড়ে ফেলেছে। আর তখন থেকেই তার ইচ্ছে গল্প লেখার। 

লিখেওছে ছোটখাটো পত্রিকায়। তবে ঠাকুরদার ছায়া পড়েনি শাক্যর লেখায়। তার লেখার স্টাইল, প্লট একেবারে অন্য রকম। কোনও লেখকের মতো করে লেখার কথা কখনও মনে হয়নি তার।

তার যাবতীয় মনের কথা, ইচ্ছে-অনিচ্ছে, ভাল লাগা, না-লাগা— সব সে শ্রেয়সীকেই বলে। বলে হালকা হয়। বাড়িতে সব সময় শাসন। ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে সে, বাইশ বছর বয়স হল, এখনও…

এক জনই আছে, যাকে ভরসা করে সব কথা খুলে বলা যায়। তাদের পাশাপাশি বাড়ি। শ্রেয়সী মাত্র তিন মাসের ছোট শাক্যর চেয়ে। 

“তোর আজ মুড অফ মনে হচ্ছে?” শ্রেয়সী শাক্যর হাতের ওপর নিজের হাত রাখল।

“হ্যাঁ,” ছোট্ট উত্তর শাক্যর।

“কেন? কী হয়েছে?” 

একটু চুপ করে থেকে শাক্য বলে, “এ বারের লেখাটাও অমনোনীত। পত্রিকায় ফোন করেছিলাম।”

শ্রেয়সীর মুখটা থমথমে হয়ে গেল। শাক্য দুঃখ পেলে ওরও মনটা ভারী হয়ে ওঠে। শাক্যর বেদনা ও সব সময় ভাগ করে নিতে চায়। 

“তুই কোনও দিন সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেছিস?” 

শ্রেয়সীর প্রশ্নের জবাবে মাথা নাড়ল শাক্য, “অনুভাষের সম্পাদকের সঙ্গে অত সহজে দেখা করা যায় না রে… আর আমার মতো এক জন অনামী লেখকের সঙ্গে সম্পাদক দেখা করবেনই বা কেন?”

 

*****

সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারটা ভাবাচ্ছিল শাক্যকে। ‘তুই কোনও দিন সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেছিস?’ কথাটা মাথার মধ্যে একটা অনুরণন তুলছিল তার। শ্রেয়সীর পরামর্শটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সামনাসামনি দেখা করে নিজের ত্রুটিটা জানা খুবই দরকার। তার লেখা কেন বার বার অমনোনীত হচ্ছে, প্লটের জন্য, না কি ন্যারেটিভের গোলমাল— এগুলো বুঝতে পারলে তো সংশোধন করার একটা চেষ্টা অন্তত করা যেতে পারে।

সে দিন ঠাকুরদার ঘরে গিয়ে বসল শাক্য। ঘরটা সারা দিন খোলাই থাকে। নিয়মিত ঝাড়পোঁছ করা হয়। দেওয়ালে টাঙানো ঠাকুরদার বিশাল ফটোটায় প্রতিদিন রজনীগন্ধার মালা দেন শাক্যর বাবা, ধূপ জ্বালেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঘরে তালা দিয়ে দেন শাক্যর মা। 

কাঠের বড় টেবিলটা, যেটাতে ঠাকুরদা লিখতেন, সেটা ও ভাবেই রয়েছে। সামনে চেয়ার। ওতে বসতেন। এই চেয়ারে বসেই অসাধারণ সব গল্প-উপন্যাস লিখেছেন মনোময় সান্যাল। 

চেয়ারটায় বসে শাক্য তাকাল ঠাকুরদার ফটোর দিকে, তার মনের মধ্যে নানা চিন্তা ভিড় করে এল। আজ ঠাকুরদা বেঁচে থাকলে কি তার মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হত? ঠাকুরদা কি তাকে সাহায্য করতেন? মনে হয় না। কারণ, ঠাকুরদা কোনও দিন কারও জন্য সুপারিশ করতেন না। খুব কড়া ধাতের মানুষ ছিলেন। বলেই দিতেন হয়তো, ‘যা করার নিজের যোগ্যতায় করো, তোমার গল্প ছাপানোর ব্যাপারে আমি কোনও সাহায্য করতে পারব না।’

টাইপরাইটারটা ঢাকনামুক্ত করল শাক্য। কত দিন হয়ে গেল এটা এক ভাবে পড়ে আছে। তবে বাবাকে মাঝে-মাঝে মোছামুছি করে রাখতে দেখেছে সে। এখন কি আর টাইপরাইটার ব্যবহার করে কেউ, লেখালিখির কাজ সব কম্পিউটারেই হয়। খটাখট করে টাইপরাইটারের কয়েকটা কি চাপল শাক্য। বাঃ, এখনও বেশ স্মুথ আছে তো! তার পর টেবিলের ড্রয়ারটা টানল। 

আজ কেন এ রকম করছে সে! ঠাকুরদা মারা যাওয়ার পর থেকে সে তো এ ঘরে বড় একটা আসেইনি। তার মনের মধ্যে কী চলছে সে নিজেই বুঝতে পারল না। 

দুটো ড্রয়ারের মধ্যে ঠাকুরদার লেখা কয়েকটা উপন্যাসের ফটোকপি। যে-পত্রিকাতেই পাঠান না কেন, টাইপরাইটারে টাইপ করার পর তার একটা জ়েরক্স কপি ঠাকুরদা রেখে দিতেন। দু’-এক বার শাক্য নিজেও জ়েরক্স করিয়ে নিয়ে এসেছে। 

ঠাকুরদার ছবির দিকে তাকিয়ে চোখে জল এসে গেল শাক্যর। কত নামী সাহিত্যিক ছিলেন। তার মধ্যেও তো অচঞ্চল বয়ে যাচ্ছে ঠাকুরদার রক্ত। ঠাকুরদার প্রতিভার সামান্য অংশও কি সে জিনসূত্রে বয়ে বেড়াচ্ছে না! সেও তো চেয়েছিল লেখক হবে, নাম করবে। গল্প লিখতে লিখতে এক দিন উপন্যাসে হাত দেবে। কিন্তু অনুভাষে ছাপা না হলে কে চিনবে তাকে?

ড্রয়ার ঘাঁটতে-ঘাঁটতে হঠাৎ চমকে উঠল শাক্য। এগুলো এখানে পড়ে আছে! কেউ জানে না এগুলোর কথা!    

 

*****

“আসলে আমরা তো কোনও দিন বাবার জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করে দেখিনি, তাই জানতেও পারিনি গল্প দুটোর কথা,” শাক্যর বাবা বললেন।

“এত বছর ধরে পড়ে রয়েছে, অ্যাঁ! কী আশ্চর্য, আমাদের চোখের আড়ালে!” রান্নাঘরের দিকে এগোতে এগোতে বললেন শাক্যর মা।

“যাক, অনেক দেরিতে হলেও পাওয়া যখন গেছে, তখন বাবা যে-সব পত্রিকায় লিখতেন, সেগুলোয় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ওরা লুফে নেবে লেখাগুলো। এর কৃতিত্ব পুরোটাই শাক্যর। না হলে আমরা জানতেও পারতাম না যে, বাবা মারা যাওয়ার আগে এই গল্প দুটো লিখে ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলেন। শাক্যই তো পেল এগুলো,” বাবা বললেন।  

শাক্য আর সময় নষ্ট করল না। পর দিনই ছুটল অনুভাষের অফিসে। রিসেপশনে নিজের পরিচয় দিয়ে সব কথা বলার কিছু ক্ষণ পর সম্পাদক মশাই ডেকে পাঠালেন শাক্যকে।

“মনোময় সান্যালের অপ্রকাশিত গল্প পাওয়া গেছে?” সম্পাদক মশাইয়ের চোখমুখ থেকে বিশাল প্রাপ্তির আনন্দ উছলে পড়ছিল।

“হ্যাঁ, ঠাকুরদার ঘরেই ছিল,” হেসে বলল শাক্য।

অনেক পুরনো হয়ে যাওয়া কাগজে টাইপ করা দুটো গল্প হাতে নিয়ে সম্পাদক বললেন, “বাঃ। সব পাতায় সইও রয়েছে। এ ভাবেই তো লেখা পাঠাতেন উনি। মনে আছে আমার। কিন্তু এত দিন আপনারা জানতে পারেননি, এই অমূল্য সম্পদ রয়েছে আপনাদের বাড়িতে?” 

শাক্য বলল, “ঠাকুরদার ঘরে কাল হঠাৎই পেয়ে গেলাম। দেরি না করে তাই চলে এলাম আজই।”

“কাগজগুলো পুরনো হয়ে গেলেও টাইপটা পরিষ্কার আছে। ভাল করে খুঁজে দেখুন, আরও এ রকম গল্প যদি থাকে,” খুশিতে উদ্বেল সম্পাদক।

“হ্যাঁ, নিশ্চয়ই দেখব,” ছোট্ট করে উত্তর দিল শাক্য।

“চা বা কফি খাবেন তো? না কি ঠান্ডা কিছু?”

“না না, কিছু খাব না। আমি আজ উঠি। বাড়িতে ভাল করে দেখব, যদি আর কোনও গল্প খুঁজে পাওয়া যায়।”

“ঠিক আছে, আমরা পর পর দুটো সংখ্যায় দুটো গল্প বার করব। যদি আরও পান, সঙ্গে-সঙ্গে জানাবেন, কেমন? আর আপনার মোবাইল নম্বরটা রেখে যান।”

 

অনুভাষ মাসিক পত্রিকা। পর পর দুটো সংখ্যায় প্রকাশিত হল মনোময় সান্যালের অপ্রকাশিত গল্প। পত্রিকার বিক্রি এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গেল। এর মধ্যে সম্পাদক শাক্যকে দু’বার ফোন করেছিলেন, আর কোনও গল্প সে খুঁজে পেয়েছে কি না জানতে। শাক্য নিরাশ করেছিল তাঁকে।

শেষ গল্পটা প্রকাশিত হওয়ার ঠিক সাত দিন পর শাক্য গেল সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে। 

সম্পাদকের ঘরে ঢুকতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, “পেয়েছেন মনোময়বাবুর আর লেখা?”

সম্পাদকের আশায় জল ঢেলে দিয়ে শাক্য বলল, “না। তবে একটা কথা বলার জন্য এলাম আজকে।”

“সম্পাদক একটু মিইয়ে গিয়ে বললেন, “কী কথা? বলুন?”

শাক্য হেসে বলল, “ঠাকুরদার গল্পগুলো কী রকম?”

“কী রকম মানে? অসাধারণ। উনি যে রকম লিখতেন, সেই ঘরানা থেকে বেরিয়ে একেবারে অন্য ধরনের লেখা। দুঃখের বিষয় উনি ছাপার অক্ষরে দেখে যেতে পারলেন না।”

শাক্য হাসল। বলল, “যে কথাটা বলার জন্য আজ আমার এখানে আসা… আমি টানা দু’বছর অনুভাষে গল্প পাঠিয়ে গেছি। কখনও মেল করে, কখনও রিসেপশনে জমা দিয়ে। এক-এক করে দশটা। ফোন করেছি, জেনেছি অমনোনীত, প্রতি বারই। প্রতিটা গল্প পাঠানোর আগে, যাঁদের সাহিত্যবোধ আছে, নিয়মিত গল্প-উপন্যাস পড়েন, টুকটাক লেখালিখিও করেন, তাঁদের পড়িয়েছি। তাঁদের মধ্যে আছেন ইংরেজি এবং বাংলা সাহিত্যের দুজন অধ্যাপকও। প্রত্যেকেই প্রশংসা করেছেন সেই সব গল্পের। উৎসাহ পেয়েছি তাঁদের থেকে। ‘দিগন্ত’ আর ‘গোধূলি’ পত্রিকায় আমার কয়েকটা গল্প বেরিয়েছে। যদিও অনুভাষের সঙ্গে ওদের তুলনা চলে না। অনুভাষ অনেক উচ্চমানের পত্রিকা। তাই আমার একটা পরীক্ষা করতে ইচ্ছে হল। আজ পর্যন্ত আমার একটা গল্পও অনুভাষে ছাপা হল না কেন? আমার লেখা কি সত্যিই খারাপ? তাই আমি অনুভাষ থেকে  বাতিল হওয়া দুটো গল্প ঠাকুরদার রেখে যাওয়া পুরনো ফুলস্কেপ পেপারে ঠাকুরদারই টাইপরাইটারে টাইপ করে আপনাদের দিলাম। বললাম, বাড়িতে পেয়েছি। মাধ্যমিক পাশের পর নেহাত শখে টাইপরাইটিং শিখেছিলাম, কাজে লেগে গেল। আপনারা ওঁর অপ্রকাশিত লেখা ভেবে ছেপে দিলেন। পাঠকের প্রশংসা পেল। পত্রিকাও বিক্রি হল হটকেকের মতো। আসলে ঠাকুরদা যে-টেবিলে বসে লিখতেন, তার ড্রয়ারে দিস্তেখানেক সাদা ফুলস্কেপ কাগজ পেয়েছিলাম, ঠাকুরদা কিনে রেখেছিলেন। কারও চোখে পড়েনি। দেখলাম, কাগজগুলো লালচে হয়ে এসেছে। প্রতিটি পাতায় সই করে রেখেছিলেন, পাতার ওপরে লেখা ‘ওঁ হরি’। লিখতে বসার আগে উনি পাতার ওপরে ‘ওঁ হরি’ লিখতেন আর নীচে সই করতেন। দুর্ভাগ্য, আর কিছু  লেখার আগেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় ঠাকুরদার।”

একটু থেমে সম্পাদকের চোখে চোখ রেখে বলল, “দুটো গল্পই আমার লেখা, অনুভাষে অমনোনীত। অথচ লেখকের নাম বদলে যাওয়ার পর আপনিই সেগুলোর প্রশংসা করছেন। আর বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে দেখুন, সকলেরই লেখা ভাল লেগেছে। এক জনও বলেননি, শেষ দিকের লেখায় মনোময় সান্যালের ধার কমে এসেছিল, বা তিনি আর তেমন লিখতে পারছিলেন না। লেখার মান খারাপ হলে কিন্তু পাঠক নরম বা মৃদু ভাবে হলেও সমালোচনা করত। সে রকম বিরূপ মন্তব্য কিন্তু কেউ করেননি। তবে হ্যাঁ, আমি আমার ঠাকুরদার নাম ব্যবহার করে নিজের লেখা চালিয়ে অন্যায় করেছি, কিন্তু ঠাকুরদার নাম এবং বড় পত্রিকার মান যে আমার লেখার জন্য মাটিতে মিশে যাবে না, এটুকু আত্মবিশ্বাস আমার ছিল। তবে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলব না। কারণ, এখানে আমার ঠাকুরদার সম্মান জড়িয়ে। কিন্তু আর-একটা সিদ্ধান্তও নিয়েছি, অনুভাষে আর লেখা পাঠাব না। যদি লিখতে পারি, তা হলে পাঠক ঠিক আমায়  খুঁজে নেবে, তা সে যত অখ্যাত পত্রিকাতেই আমার লেখা ছাপা হোক না কেন। ঠিক আছে… নমস্কার।” 

হতভম্ব সম্পাদককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, তাঁর ঘর থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে এল শাক্য।