Abosar

অচেনা সুর

ছন্দা বিশ্বাস

হিক্কিম ছাড়িয়ে অন্য একটি পথ ধরল রিনচেন। আজ এখনই তাকে এক বার যেতে হবে কিব্বের ভিলেজ। রিনচেনের সঙ্গে আছে একটি বাইসাইকেল। আজ প্রায় কুড়ি বছর হতে চলল এই সাইকেলটার বয়স। এই সাইকেলটা রিনচেন কিনেছিল কাজা থেকে। তখন ও হিক্কিমেরই তাংগিউদ মনাস্ট্রিতে যাতায়াত করত। তাদের গ্রামের সকলেই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। এই গুম্ফার অধীনস্থ বিদ্যালয়ে অন্যান্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে রিনচেন লেখাপড়া করত। 

এক দিন মঠের এক জন লামা ওকে আনন্দের খবরটা দিলেন। সরকার থেকে হিক্কিমে নাকি ডাকঘর খোলার পরিকল্পনা চলছে। একজন শিক্ষিত, দক্ষ এবং পরিশ্রমী মানুষ চাই। হিক্কিম থেকে কাজা প্রায় পনেরো-ষোলো কিমি রাস্তা। আর সেই রাস্তা তৈরি হয়েছে পাহাড়ের গা কেটে। জায়গায় জায়গায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। কোথাও বেশ সঙ্কীর্ণ, কোথাও বা চড়াই উতরাই। অসাবধান হলেই মৃত্যু অবধারিত। 

লামার কথামতো রিনচেন দেখা করেছিল কাজায় হেড পোস্টমাস্টারের সঙ্গে। দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলেন পোস্টমাস্টার সাহেব। সেই দরখাস্ত নিয়ে সে শিমলা চলে গিয়েছিল। 

কিছু দিন বাদে কয়েক জন লোক এল গাড়ি করে, সঙ্গে বেশ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এলেন, হিক্কিমের আশপাশ দেখেশুনে একটা জায়গা পছন্দ করলেন। মাসখানেকের ভিতরে একটা ছোট পোস্ট অফিস তৈরি হয়ে গেল। সভ্যতার পিলসুজ। হিক্কিমে বিদ্যুৎ নেই, তাই টেলিভিশন থাকার প্রশ্ন ওঠে না। এই সুদূর, রুক্ষ, দুর্গম অঞ্চলে কে-ই বা তাদের রোজকার খবরাখবর দেবে। সভ্য জগৎ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়েই দিন কাটাত এত কাল।

দেখতে দেখতে রিনচেনের চোখের সামনে গড়ে উঠল ডাকঘর। এ বারে চিঠিপত্র, পার্সেল এবং গ্রামবাসীদের মানি অর্ডার আসবে। মঠের সন্ন্যাসীরাই বলে-কয়ে, সরকারের কাছে লাগাতার চিঠিপত্র লিখে এখানে একটা ডাকঘর খোলার আর্জি জানিয়েছিলেন। গুম্ফায় দূর-দূরান্ত থেকে বহু সন্ন্যাসী আসেন, থাকেন। তাঁদের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই পোস্ট অফিস। 

যে দিন ডাকঘরটি তৈরি হল, সে দিন খুব মনে পড়ছিল মিংলার কথা। মিংলা রিনচেনের গাঁয়েরই মেয়ে। ওর চেয়ে বছরতিনেকের ছোট। সারাটা দিন রিনচেন আর মিংলা এক সঙ্গে কাটাত— স্কুলে যেত, ছুটির পরে স্পিতি নদীর ধারে ঘুরে বেড়াত, হাসত, খেলত, পাখির মতো উড়ে বেড়াত। সে বড় সুখের দিন, সে বড় আনন্দের দিন ছিল। 

হিক্কিমের চার দিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সুন্দর জায়গা। বিক্ষিপ্ত ভাবে মাথা তুলেছে পাহাড়চুড়ো। সারা বছর বরফ জমে থাকে চুড়োয়। সকালের সোনালি রোদ্দুর পরশ বুলিয়ে যায় তার মাথায়। নীল আকাশের বুকে খেলে বেড়ায় সাদা মেঘের দল। রিনচেন মিংলার হাত ধরে স্পিতি নদীর ধারে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সেই অপরূপ শোভা দেখে।  

রিনচেনের মতো মিংলার মনেও রং লাগে। ভালবাসার রং। 

রিনচেন ভাবে, সে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে এক দিন চাকরি করবে, তার পর মিংলাকে বিয়ে করে শিমলা, নয়তো মানালি চলে যেবে। মিংলা যখন দিনে দিনে বেড়ে উঠতে লাগল, রিনচেন সেই সময়ে এখানকার পাঠ শেষ করে পড়তে গেল কাজায়। কাজায় মঠের সন্ন্যাসীরা তাকে খুব ভালবাসতেন। রিনচেনের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে সন্ন্যাসীরা তাকে কাজা থেকে শিমলায় পাঠিয়ে দিলেন। দশ ক্লাস পাশ করে রিনচেন যখন ফিরে এল, তখন সে জানতে পারল মিংলার বিয়ে হয়ে গেছে। এক জন ভারতীয় জওয়ানের সঙ্গে ঘর করতে সে চলে গেছে মানালি। 

 

কিব্বেরে যাওয়ার পথে রিনচেন সাইকেলটা পথের এক পাশে দাঁড় করিয়ে রাখল। সামনেই ট্রেকিংয়ের রাস্তা। এ রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কয়েক জন ট্রেকারকে দেখল মালপত্র কাঁধে চাপিয়ে রওনা দিচ্ছে। বেশ চড়াই পথ। কিছুটা গেলেই পড়বে একটা গুম্ফা। গুম্ফার নাম কি গুম্ফা। সেখানে  কয়েকটা চিঠি দিতে যেতে হবে। অনেকটা উঁচুতে উঠতে হবে কি গুম্ফায় যেতে গেলে। 

রিনচেন খুব সাবধানে পাথুরে সিঁড়ি ধরে উপরের দিকে উঠতে লাগল। এখানে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। কয়েকটি ছেলেমেয়ে ভিউ পয়েন্ট-এ দাঁড়িয়ে চার পাশ দেখছে, ছবি তুলছে। দলের ভিতরে একটি সুন্দরী মেয়ে ছিল। 

মেয়েটিকে একনজর দেখল রিনচেন। চোখাচোখি হল মেয়েটির সঙ্গে। কতই বা বয়স, উনিশ-কুড়ির বেশি নয়। মেয়েটিকে দেখে অবাক হল রিনচেন। এত মিল! 

কুড়ি বছর আগের কথা। রিনচেনের হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে আসে। কোথায় আছে এখন মিংলা? কত না স্বপ্ন দেখত সে মিংলাকে নিয়ে। মিংলার কথা ভাবতে ভাবতে রিনচেন যে সিঁড়ির ধাপে চুপটি করে দাঁড়িয়ে পড়েছে, তার নিজেরই সে খেয়াল নেই। 

“হ্যালো?” হুবহু মিংলার মতো দেখতে মেয়েটির ডাকে সম্বিৎ ফেরে রিনচেনের। 

মেয়েটি তার কাছে এসে হিন্দিতে বলল, “আঙ্কল, হামলোগোকা এক ফটো খিঁচ দিজিয়ে না।” 

মেয়েটির গলার স্বর শুনে চমকে ওঠে রিনচেন। কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটির কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে সে ওদের টিমের সকলের একটা গ্রুপ ছবি তুলে দিল।

এর পর মেয়েটির আবদারে তার নিজের একটা সিঙ্গল ছবিও তুলে দিল রিনচেন। 

“থ্যাঙ্ক ইউ!” বলে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিল মেয়েটি। সেই হাসি তরঙ্গের মতো বুকে এসে ধাক্কা খেল রিনচেনের। স্পিতি নদীর ঢেউয়ের মতো দোলা লাগল। 

একটা ভাল লাগার বোধ নিয়ে সে ধীর পায়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল।

কি গুম্ফার অধ্যক্ষের হাতে চিঠিটা দিয়ে রিনচেন আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে নীচে নেমে এল। 

ভিউ পয়েন্টে এসে দেখল কেউ কোথাও নেই। রিনচেনের বুকের ভিতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে এল। মনটা বিষাদে ভরে গেল। রিনচেন রাস্তা থেকে সাইকেলটা নিয়ে ফেরার পথ ধরল। 

হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে রিনচেন ফিরে তাকাল।

দেখল ওর প্রিয় ছাগল, তেরি, পাহাড়ের ঢাল ধরে তারস্বরে ডাকতে ডাকতে ছুটে পালাচ্ছে। 

ছাগলটা সারাটা দিন প্রায় তার সঙ্গে সঙ্গেই থাকে। সে যখন বাড়ি থেকে বেরোয়, তখন সেই ইবেক্স ধরনের ছাগলটাও ওর সঙ্গে হেঁটে চলে। ও পোস্ট অফিসে এলে সেও ডাকঘরের বাইরে শুয়ে থাকে। যখন সে চিঠিপত্র নিয়ে কাজায় যায়, ছাগলটা তার পিছন পিছন অনেকটা দূর চলে আসে। রিনচেন ওর গলায় হাত বুলিয়ে বলে, “তাড়াতাড়ি ফিরে আসব, এ বার বাড়ি যাও।”

ছাগলটা খুব বাধ্য সন্তানের মতো বাড়ি ফিরে আসে। 

এই ছাগল আর এই সাইকেল নিয়েই রিনচেনের সংসার। সাইকেল না হলে তার এক মুহূর্ত চলে না। এই ছাগলটা তার সংসারে একমাত্র জীবিত প্রাণী। অবসরে এই ছাগলটার সঙ্গেই কথা বলে সময় কাটে রিনচেনের। 

এই ছাগলটা আসলে ছিল মিংলার। খুব ছোট একটা ছানাকে বড় করে তুলেছিল মিংলা। তার পর এক দিন মিংলার বিয়ে হয়ে গেল। প্রায় বছরখানেক পর এক দিন মিংলার বাবা রিনচেনের কাছে এসে বলে, ছাগলটা কিনে নিতে। কারণ তিনি তখন থেকে মেয়ের কাছে থাকবেন ঠিক করেছেন। 

পাঁচশো টাকা দিয়ে তেরিকে কিনে ঘরে নিয়ে এল রিনচেন। 

রাতে সমস্ত জগৎ যখন নিস্তব্ধ হয়ে আসে, বাইরে তুষারপাতের শব্দ শোনা যায়, তখন মিংলার কথা খুব মনে পড়ে রিনচেনের। আর ঠিক তখনই তেরি রিনচেনের খুব কাছে সরে আসে, ওর শরীর থেকে ওম নেবার চেষ্টা করে।

রিনচেনের বিছানার ঠিক পাশে, একটা চটের বস্তার উপর শুয়ে থাকে তেরি। মিংলার কথা ভাবতে ভাবতে ছাগলটার গায়ে হাত বুলোয় রিনচেন। আর মনে মনে ভাবে এক দিন মিংলা ছাগলটাকে এ রকম ভাবেই আদর করত। এর গায়ে মিংলার হাতের ছোঁয়া আছে। মিংলা তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহু কাল, কিন্তু তেরি মিংলাকে রিনচেনের অন্তরে বাঁচিয়ে রেখেছে। 

একটা তুষার-চিতা তেরিকে শিকার করার জন্যে ছুটছে। দেখে রিনচেনের বুক শুকিয়ে গেল। সর্বনাশ! 

কিছু দিন ধরে এই তুষার-চিতা মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। গত এক মাসে সে চল্লিশটা ছাগল-ভেড়া খেয়েছে। 

কাজার রেঞ্জার সাহেবের কাছে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে গিয়েছিল। পাঁচ ঘণ্টা ধর্না দেওয়ার পরে রেঞ্জার সাহেব হরদেব কুফারি আশ্বাস দিয়েছেন, যে করেই হোক এই চিতাকে ধরবেন। এর আগেও তিনি বনকর্মীদের কাজে লাগিয়ে তুষার-চিতা ধরে কুফরি ন্যাশনাল পার্কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। 

রিনচেন দেখল, চিতাটা তেরির খুব কাছে এসে গেছে। ও একটা পাথর নিয়ে চিতাটার দিকে তাক করে সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে মারল। চিতার মতো এমন ভয়ানক জন্তু খুব কমই হয়। পাথরটা তার গায়ে না লাগলেও ঠিক তার পাশে পাহাড়ের গায়ে সশব্দে আঘাত করল। 

চিতাটা ওর উপর হামলা হচ্ছে বুঝতে পেরে শিকার ছেড়ে পালিয়ে গেল।

রিনচেন চিৎকার করে ডাকল, “তেরি-ই!” 

তেরি মনিবের গলা শুনে ম্যা-ম্যা করতে করতে তার দিকে ছুটে চলে এল। কিছু চিঠিপত্র দেওয়া বাকি ছিল। রিনচেন সাইকেল চেপে ডাকঘরের পথে রওনা দিল। পিছন পিছন তেরিও আসতে লাগল ছুটতে ছুটতে। 

 

রিনচেন খামের গায়ে স্ট্যাম্প মারছে, দ্রুত হাতে ডাক টিকিট সাঁটছে। বেশ কিছু মানি অর্ডার আছে। সেগুলো নিয়ে আগামী কাল সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে কাজার উদ্দেশে। এমন সময় বাইরে কিছু মানুষের গলার আওয়াজ পেল।

তিব্বত লাগোয়া ছোট্ট গ্রাম হিক্কিম। ভারতবর্ষের শেষ সীমানায় এই প্রত্যন্ত জনবিরল রুক্ষ ভূমিতে বাইরের লোকের দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। কখনও-সখনও পর্বত আরোহীদের দেখা মেলে। কালেভদ্রে কোনও দুঃসাহসী পর্যটক আসেন। বেশির ভাগ মানুষ কাজা পর্যন্ত এসে ফিরে যান। নিতান্ত অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় সাহসী মানুষ ছাড়া এ সব অঞ্চলে কারও পা পড়ে না। তাই বাইরের মানুষ দেখলে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। 

রিনচেন কৌতূহলী হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। 

ওর চোখের পলক পড়ে না। বিস্ময়বিহ্বল দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে দেখে, কি গুম্ফা যাওয়ার রাস্তায় সেই ভিউ পয়েন্টে যে ছেলেমেয়েগুলো ছবি তুলছিল, তারা এখন তার ডাকঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। 

মিংলার মতো দেখতে সেই মেয়েটি তার ডাকঘরের সামনে, যেখানে বড় সাইন বোর্ড টাঙানো আছে, ‘বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পোস্ট অফিস, হিক্কিম’ সেই বোর্ডটাকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে ছবি তুলছে। 

রিনচেন যে দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই সাইন বোর্ডটা লাগিয়েছিল, সে দিন ওর খুব মিংলার কথা মনে পড়ছিল। আজ যদি মিংলা থাকত, তবে তার খুব গর্ব হত। কারণ বিশ্বের উচ্চতম ডাকঘরের প্রথম পোস্ট মাস্টার সে। 

আজ কুড়ি বছর পর সেই সাইন বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক মিংলার মতোই এক জন! 

মেয়েটি অফিসে ঢুকে একটি খাম এবং ডাকটিকিট কিনে খামের ভিতরে একটি চিরকুট ভরে দিল। এর পর মেয়েটি রিনচেনের সঙ্গে একটা ছবি তুলল। ছাগলটারও একটা ছবি তুলে নিল। যাওয়ার সময়ে রিনচেনের কাছ থেকে এখানকার ঠিকানাটা পরিষ্কার করে লিখে নিল। তার পর রিনচেনের হাতে ওর ঠিকানা লেখা একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে গেল, চিঠিটা অতি অবশ্যই যেন সে পাঠিয়ে দেয়।

ও বন্ধুদের দেখাবে, বিশ্বের উচ্চতম পোস্ট অফিস থেকে আসা চিঠি। 

মেয়েটির সঙ্গে যারা এসেছে, প্রায় সবাই ওরই বয়সি। কথা শুনে মনে হচ্ছে দিল্লির কোনও কলেজ থেকে দল বেঁধে এসেছে ঘুরতে। ছেলেমেয়েগুলো গাড়িতে উঠে পাহাড়ের বাঁকে অদৃশ্য হওয়ার পরও বেশ খানিক ক্ষণ রিনচেন চিঠি হাতে দাঁড়িয়ে রইল। 

এর পর পরেই হিক্কিমের চার দিক বরফে ঢেকে গেল। এই ছ’মাস কার্যত ডাকঘরের কাজকর্ম সব বন্ধ থাকে। 

বেশ কিছু দিন পর রিনচেন কাজায় গেল চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়া করতে। 

হঠাৎ একটা চিঠিতে ওর চোখ আটকে গেল। হিক্কিমের ঠিকানায় ওর নামেই এসেছে দিল্লি থেকে একটি চিঠি। রিনচেন খামের মুখ খুলে দেখে চিঠির সঙ্গে একটা ছবি। রিনচেন মেয়েটির যে ছবি তুলে দিয়েছিল, তার এক কপি। 

রিনচেন অফিসের কাজকর্ম শেষ করে চলে যায় স্পিতি নদীর দিকে। স্পিতি নদীর ধারে বসে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে সেই ছবি। 

এখন রিনচেনের নতুন এক কাজ হয়েছে, রোজ সন্ধে নামার একটু আগে ঠিক নদীর ধারে এসে বসা। 

সাইকেল চেপে চলে আসে এখানে। তেরি আসে পিছু পিছু। ধীর শান্ত জলে পা ডুবিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে ছবিটা। 

মিংলার মেয়ে স্পিতির ছবি।

নদীর নামে নাম। মিংলারই দেওয়া। চিঠিতে লিখেছে স্পিতি। তার জন্মের সময়ে তার মা মারা যায়। মা কেমন দেখতে ছিল, তার কখনও জানা হল না। কারণ মায়ের কোনও ছবি ছিল না। বাবাকে মনে আছে। লাদাখের যুদ্ধে গিয়ে বাবাও আর ফিরে আসেনি। স্পিতি মায়ের জন্মস্থান দেখতে এসেছিল। হিক্কিমের গ্রাম আর তার আশপাশে ঘুরে ঘুরে দেখে গিয়েছে মায়ের জন্মস্থান, শৈশব-কৈশোর কাটানোর জায়গা। এই সব আরও অনেক কথাই সে লিখেছে চিঠিতে। 

স্পিতির ছবির দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রিনচেন ফিরে যায় তার অতীতে। মিংলার সঙ্গে কাটানো সেই সোনার দিনগুলোয়। স্পিতির ছবিটা তখন কেমন ঝাপসা হয়ে ওঠে।