বাসায় ঢুকেই নীলাকে ফোন করে রিনি।
একটা রিং হতেই ওদিক থেকে নীলার উচ্ছ্বসিত স্বর শোনা যায়, ‘হ্যালো, ফিরলি কবে?’
‘আজকেই, এইমাত্র।’
‘এবার কোথায় গেলি? বান্দরবান?’
‘হুম, কীভাবে জানলি? বলেছিলাম?’
‘নাহ্, ছবি দেখে মনে হলো।’
‘আমি তো কোনো ছবি দিইনি!’
‘তোর প্রেমিক দিয়েছে, তোরই তোলা ছবি মনে হয়।’
‘আচ্ছা, আমি দেখিনি, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে আছি।’
‘তুই দূরে থাকলে কী হবে, সবাই দেখেছে, দেখছে।’
‘বয়েই গেল তাতে আমার।’
‘ফরহাদের বউ কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করে।’
‘করে হয়তো, আমি কী জানি?’
‘শোন, ঝড় এলে উটপাখি বালিতে মুখ গুঁজে রাখে, সে ভাবে, সব ঠিক আছে।’
‘দর্শন কপচানোর দরকার নেই, কী বলতে চাস সরাসরি বল’, রিনির কণ্ঠে বিরক্তি লুকানো থাকে না।
‘ফরহাদ কি তার বউকে বলেছে তোর কথা?’ নীলার গলায় রাগ নাকি উদ্বেগ—বুঝতে পারে না রিনি।
‘এখনো না।’
‘ওদের ডিভোর্সের কত দূর? পেপার্স রেডি?’
‘আমি জানি না নীলা, তোর কি ধারণা, আমি তাকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি?’
‘তাহলে সম্পর্ক রেখেছিস কেন?’
‘কারণ, আই লাভ হিম…অ্যান্ড ম্যারেজ হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ লাভ অ্যান্ড ভাইস ভার্সা।’
‘ওকে, তোর লাইফ, তুই ভালো বুঝবি।’
‘তুই হঠাৎ এমন মিসেস গ্র্যান্ডি হয়ে গেলি কেন বল দেখি?’
‘দ্যাখ, আমি তোর বন্ধু, কেউ তোকে ওর রক্ষিতা বললে শুনতে আমার ভালো লাগবে না, ন্যাচারালি।’
‘কে বলেছে এ কথা তোকে?’
‘কেউ এখনো বলেনি, কিন্তু বলতে কতক্ষণ?’
‘লুক নীলা, আই লিভ অন মাই ওউন অ্যান্ড আর্ন মাই ওউন ব্রেড, ওনলি বিকজ মাই লাভার ইজ আ রিচ ম্যান, দ্যাট ডাজন্ট নেসেসারিলি মেইক মি হিজ মিস্ট্রেস।’
‘তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? সোসাইটিতে ব্যাপারটা এভাবেই এক্সপ্লেইন করা হয়।’
‘কে সেই সোসাইটি? তুই নাকি তোর তথাকথিত সতী–সাবিত্রী বান্ধবীরা?’
‘রিনি, হ্যাভ ইউ এভার থট হোয়াই হি ইজ স্টিল নট ডিভোর্সিং হিজ ওয়াইফ? তুই জিজ্ঞেস করেছিস, ওদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন?’
‘না, জিজ্ঞেস করিনি। কজ আই রেসপেক্ট পিপলস প্রাইভেসি।’
‘ফরহাদ কী বলেছে তোকে? সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে না?’
‘আমি কেন সেটা জানতে চাইব? ভালোবাসলে নিশ্চয়ই আমাকে ভালোবাসতে পারত না, পারত?’
‘তাহলে সে তোর সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে দিচ্ছে না কেন?’
‘হয়তো সে কষ্ট পাবে বলে।’
‘সো, হি স্টিল কেয়ারস ইনাফ টু হার্ট অ্যাবাউট।’
‘মে বি।’
‘বটম লাইন কী হলো তাহলে?’
‘নীলা, লাভ ইজ নাথিং লাইক আ চকলেট বার, একজনকে দিলে সে খেয়ে ফেলবে আর কাউকে দেওয়া যাবে না সেটা।’
‘এগজ্যাক্টলি রিনি, লাভ ইজ নাথিং লাইক আ চকলেট বার দ্যাট আ ম্যান ক্যান ব্রেইক ইন্টু পিসেস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউট এমাং দা উইমেন হি লাভস।’
‘তুই কী বলতে চাচ্ছিস? সরাসরি বল দেখি।’
কী জন্য নীলাকে ফোন করেছিল, সেটা এতক্ষণে ভুলে গেছে রিনি। খুব জরুরি দরকার ছিল নিশ্চয়ই, নইলে কাপড় না পাল্টেই ফোন করত না। এখন নিজের ওপরই রাগ লাগছে, সন্দেহ হচ্ছে নীলাই হয়তো ফরহাদের সঙ্গে তার গোপন প্রেমের খবরটা চাউর করে বেড়াবে, ওকে কিছু বলাই ভুল হয়েছিল।
‘রিনি, আমি শায়লা আহমেদের ফেসবুকের প্রোফাইল দেখেছি কয়েক দিন ধরে, তোরা যখন ট্যুরে ছিলি। ইদানীং উনি কী পোস্ট দেন জানতে চাস?’
‘না, জানতে চাইলে আমি নিজেই দেখে নিতাম।’
‘ওকে, তুই জানতে না চাইলেও বলছি। শি ইজ পোস্টিং এভরিথিং ডিপ্রেসিং অ্যান্ড আই গেস শি বিকেম সুইসাইডাল। এমন কিছু হলে লোকজন কিন্তু তোর গায়ে থুতু দেবে।’
‘উনি কি ফেসবুক সেলিব্রিটি নাকি? সেলিব্রিটিরা অ্যাটেনশন সিক করার জন্য এমন অনেক কিছুই করে।’
‘উনি সবকিছুই ফেসবুকে দেন। ওনার স্বামীর জন্য বানানো কাউল আর পিঠাপুলির ছবিও দেন।’
‘দিতে থাকুক, আমার তাতে কী যায় আসে?’
‘তোর যাওয়া–আসা উচিত। তুই তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ইনভলভড।’
‘নিকাহনামা থাকলেই কেউ হাজব্যান্ড–ওয়াইফ হয়ে যায় না নীলা, দ্যাটস জাস্ট আ পিস অব পেপার।’
‘তাহলে কীভাবে দুজন বিবাহিত হয়?’
‘শোন, তুই যাত্রাদলের বিবেকের পার্ট বাদ দিয়ে আমাকে রানার নতুন ফোন নম্বরটা টেক্সট কর, আমি রাখছি।’
ফোনটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে দেয় রিনি। যে লাল কাউল ফেরার সময় বাসে পরে ছিল ফরহাদ, সেটা শায়লার বোনা তাহলে!
গলায় কাউল পরার মতন শীত কি আদৌ পড়েছে? নাকি শুধুই লাভ বাইটস ঢাকার জন্য পরা? এবারে তাদের মধ্যে কথা হয়েছিল লাভ বাইটসের ব্যাপারে, শায়লাকে কিছু বলার দরকার হবে না। ফরহাদ বলছিল, ‘ইয়োর লাভ বাইটস উইল স্পিক ফর ইউ’। বাসায় গিয়ে ফরহাদ নিশ্চয়ই কাউল খুলবে। রিনি আর কিছু না ভেবে চারটা লেক্সোটানিল খেয়ে নেয়।
অনেক ঘুম দরকার তার।