দেখিস এবার কালবৈশাখী ঝড় হবে না।
কালবৈশাখী ঝড় হবে না মানে?
বাহ, দেখছিস না সরকার লকডাউন দিয়েছে। তুই কি মনে করিস লকডাউন ভেঙে কালবৈশাখী ঝড় হবে?
এক কান থেকে রাবারব্যান্ড ছুটে গেলে সেটা আরেক কানে ঝুলতেই পারে। এর জন্য চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তার স্টাইল বদলাবে মানে?
আরে ব্যাপারটাই বুঝলি না। মাস্ক প্রপার জায়গায় না পরে থুতনিতে পরলে থুতনিতে চাপ পড়ে, মাথায় থাকলে মাথায় চাপ পড়ে। দুদিক থেকে সাঁড়াশি চাপে মাঝখানে ১৪ গ্রাম ব্রেনের কী অবস্থা, বুঝতে পারছিস?
কী অবস্থা?
আরে, এ তো পুরা সায়েন্স, থারমোডিনামিস্কের সূত্র ভুলে গেছিস? সেই যে চাপ ও তাপে…
বিজ্ঞানমনস্ক বন্ধুকে পেছনে রেখে বাসার পথ ধরলেন মোতালেব সাহেব।
মোতালেব সাহেব ধনু রাশির জাতক। এ কারণেই কি না কে জানে, এবার তিনি একটা ধনুক ভাঙা পণ করেছেন, এবার পয়লা বৈশাখে তিনি পান্তা ভাত খাবেনই খাবেন। সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজি। গতবার মিস হয়েছে লকডাউনের কারণেই। এবার আর মিস করা যাবে না। বাঙালি হিসেবে এটা তার একটা পবিত্র দায়িত্ব। স্ত্রী থাকলে সুবিধা হতো। কিন্তু করোনার কারণে তারা এখন দেশের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে।
আসেন স্যার, তাজা মাছ নিয়া যান।
পানির মাছ পানির দরে ছাড়ছি…
নদীর মাছ এক্ষণ ধইরা আনলাম। জাল এখনো শুকায় নাই…
কোয়ারেন্টিন-ইলিশ নিয়া যান, স্যার, আরেকজন পাশ থেকে চেঁচিয়ে উঠল।
কোয়ারেন্টিন-ইলিশ মানে?
এই মাছ জালে ধরা পড়ার আগে চল্লিশ দিন পানির নিচে ছিল।
এসব কী বলো? কোনো মাছ জালে ধরা পড়ার আগে কি পানি ওপরে থাকে?
কী কন স্যার, কোল্ড স্টোরেজে মাছ থাকে না? ওইখান থাইকা মাছ আইনা মাছওয়ালারা বেচে না? ওইখানে তো সামাজিক দূরত্বই নাই মাছের।
ঠিক আছে, একটা ইলিশ দাও।
ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরলেন মোতালেব সাহেব। ঠিকা বুয়াকে দিয়ে কাটিয়ে দু-তিনটা পিস ভাজি করিয়েও রাখলেন। তারপর ভাত পানিতে ভিজিয়ে সাজিয়ে রাখলেন ডাইনিং টেবিলের ওপর। সঙ্গে কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ আর লবণ। ব্যস, প্রস্তুতি কমপ্লিট। ঠিক বারোটা এক মিনিটে বৈশাখের প্রথম দিন যখন শুরু হবে, তখন তিনি খাবেন—এমনটাই প্ল্যান তার, বাঙালি বলে কথা।
ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাত দশটার দিকে ঘুম দিলেন একটা।…চিকেন স্লিপ।
কিন্তু কী আশ্চর্য, ঘুম ভাঙল মাঝরাতে—দুইটায়। অ্যালার্ম বাজেনি কেন কে জানে! ধড়মড় করে উঠে ছুটে গেলেন ডাইনিং টেবিলে। এ কী! পান্তা ভাতের প্লেট ফাঁকা। কে খেল? বিড়াল ঢুকেছিল? বিড়াল তো পান্তা খায় না। ছুটে গেলেন ফ্রিজে, আরও আশ্চর্য অপেক্ষা করছিল তার জন্য—ফ্রিজে রাখা ইলিশভাজিও নেই, এক পিসও নেই! তিন পিস রেখেছিলেন ওভেনে গরম করে পান্তা ভাতের সঙ্গে খাবেন বলে, কিন্তু একটাও নেই। কেউ ফ্রিজ খুলে খেয়ে ফেলেছে! কিন্তু কে সে?
এই, তুমি কে? হুংকার দিলেন মোতালেব সাহেব।
তুমি চোর? আমার পান্তা খেয়েছ?
স্যার, ঠিকই ধরছেন। বউ কইল, বাংলা বছরের প্রথম দিন ভালো কিছু চুরি করতে পারলে বছরটা ভালো যাইব। তাই বাইর হইছিলাম। আমি স্যার আগে ত্যানামানা যাই পাইতাম, সব চুরি করতাম, এই জন্য সবাই কয় ত্যানাচোরা। তয় এখন স্যার স্প্যাশালাইজড চোর হইছি। অ্যান্টিক জিনিসপত্র চুরি করি। তবে আপনার আলমারিতে কিছু পাইলাম না সে রকম।
কী, তুমি আমার আলমারি খুলেছ? হাউ ডেয়ার ইউ…কীভাবে খুললে? চাবি তো আমি হারিয়ে ফেলেছি এক মাস হলো।
স্যার, চাবি লাগে না আমগো, মাস্টার কি আছে। ঠিক আছে, আমি চাবিটা দিয়া যামু আপনারে, বৈশাখী গিফট।
আমি তোমাকে পুলিশে দেব। তুমি আমার পান্তা খেয়েছ?
স্যার, কী করমু, আলমারিতে কিছু না পাইয়া দেখলাম টেবিলের পান্তাভাত আর ফ্রিজে ইলিশভাজা। লোভ সামলাইতে পারলাম না। এই কারণেই তো স্যার ঘুমায়া পড়ছি। পান্তা খাইলে ঘুম আহে। নেন স্যার, ধরেন। আমি যাই…
এই, তুমি এই লকডাউনে বের হয়েছ, তা-ও মাস্ক ছাড়া। তোমার এত বড় সাহস!
স্যার, সাহস কম দেইখাই না চুরি করি। সাহস বেশি থাকলে তো স্যার ডাকাতিই করতাম। আর মাস্কের কথা কন? করোনাভাইরাস চুরি কইরা যখন আমগো শরীলে ঢুকে…হেরা কি মনে করেন মাস্ক পইরা ঢুকে? স্যার যাই…
ওদিকে ত্যানাচোরা কদ্দুসের ছুড়ে দেওয়া জিনিসটা ঘরের ভেতর টং করে এসে পড়েছে। বৈশাখী গিফট, সেই মাস্টার কি!