Abosar

<img src=https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-10%2F28efefb4-d804-412c-af96-daf18c5d6943%2Fcd67.png?rect=0%2C114%2C1600%2C840&w=1200&ar=40%3A21&auto=format%2Ccompress&ogImage=true&mode=crop&overlay=&overlay_position=bottom&overlay_width_pct=1 />

জবাব!

আহসান হাবীব



মঞ্জু সাহেবের অফিস খোলা। নিয়মিতই যেতে হয়। একটা প্রাইভেট কোম্পানি। ইন্ডেটিংয়ের ব্যবসা। অফিসে দরজায় বড় বড় করে লেখা ‘মাস্ক পরে ঢুকুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন!’ কিন্তু মঞ্জু আর দু-একজন ছাড়া কেউই নিয়ম মানে না। তাদের বস ওবায়েদুর রহমানও মানে না। একদিন সাহস করে মঞ্জু বসকে বলেই ফেলল।

স্যার?

কিছু বলবে?

স্যার, আপনি যদি মাস্ক পরতেন, তাহলে ভালো হতো।

মানে? ভ্রু কুচকে গেল ওবায়েদ সাহেবের।

না মানে বলছিলাম, আপনি অফিসের বস, আপনি যদি নিয়মটা মানতেন, তাহলে সবাই মানত। করোনা তো স্যার এখনো যায়নি। ইউরোপে তো স্যার আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। তাই বলছিলাম, আমাদের সবার মাস্ক পরা উচিত…।

ও, তোমার কাছে আমার উচিত-অনুচিত শিখতে হবে?

ছি ছি স্যার, বেয়াদবি নেবেন না। আপনি অফিসের বস, আপনাকে দেখেই তো আমরা শিখব। তাই বলছিলাম…

আভি নিকালো?

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন বস। মঞ্জুরও মেজাজ গরম হয়ে গেল। সে ঠান্ডা গলায় বলল:

স্যার, বাংলায় অনেক সুন্দরভাবে ‘বেরিয়ে যাও’ বলা যায়। এটা তো স্যার হিন্দি বললেন। নিজের মাতৃভাষাকে সম্মান করা উচিত। সামনে ফেব্রুয়ারি মাস আসছে, ভাষার মাস। আমাদের ভুললে চলবে না, এই ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।

এবার উর্দুতে গর্জন করে উঠলেন বস ওবায়েদুর রহমান।

দাফা হো যাও ইহাসে…

এটা তো স্যার উর্দু বললেন। উর্দু তো স্যার ঐতিহাসিক কারণেই বলা যাবে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা এত বড় যুদ্ধ করলাম কেন?

ওবায়েদ সাহেব এবার শেষ চিৎকারটা দিলেন ‘ ইউ আর ফায়ার্ড…!’

সত্যি সত্যি চাকরি খুইয়ে অফিস থেকে বের হয়ে এল মঞ্জু। এটা যেহেতু প্রাইভেট কোম্পানি, যেকোনো সময় বস চাকরি খাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে মঞ্জু খুশি বসকে বেশ কিছু কথা মুখের ওপর শুনিয়ে দিতে পেরেছে বলে। বেশ একহাত নেওয়া হয়েছে। আরেক হাত নেওয়া যেতে পারে! বাঁ হাত নেওয়া হয়েছে, এবার ডান হাত নেওয়া যায়—ভাবল মঞ্জু।

দিন যেতে লাগল। একদিন ‘গ্লোবাল ইন্ডেন্টিং’ অফিসের বস ওবায়েদ সাহেব অফিসের সামনে গাড়ি থেকে নেমে হকচকিয়ে গেলেন। ঠিক তাঁর অফিসের মেইন গেটের সামনে একটা ভ্যানগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ভ্যানের ওপর ছোট্ট একটা ঘরের মতো, বেশ রংচঙে ঘর। তাতে বড় বড় করে লাল কালিতে লেখা ‘ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, সিটি করপোরেশন’।

এর মানে কী?

ওবায়েদ সাহেব দ্রুত অফিসে ঢুকে সেক্রেটারি রুহুলকে ডেকে পাঠালেন।

এসব কী হচ্ছে?

কোন ব্যাপারে বলছেন, স্যার?

কী আশ্চর্য! তোমরা কি চোখের মাথা খেয়ে বসে আছ? অফিসের সামনে সিটি করপোরেশনের ভ্যান কেন? হোয়াই?

জি স্যার, বুঝতে পেরেছি কী বলতে চাইছেন। ওটা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, স্যার। পানির সুবিধা আছে এবং ফ্রি। যেকেউ ব্যবহার করতে পারে।

উফ্​কিন্তু আমার অফিসের সামনে কেন? হোয়াই?

স্যার, এটা করেছেন মঞ্জু সাহেব।

মঞ্জু?

জি, ওই যে কম্পিউটার সেকশনের মঞ্জু। গত সপ্তাহে আপনি যাকে স্যাক করলেন।

সে কেন এটা করেছে?

উনি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ওই ভ্রাম্যমাণ টয়লেট আমাদের অফিসের সামনে কিছুদিনের জন্য রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

কেন?

উনি প্রতিদিন সকালে এখানে এসে বাথরুম করেন।

কী, ক্কী বলছ! কিন্তু কেন?

স্যার…

সেক্রেটারি রুহুল এবার গলা নামিয়ে ফেলল। প্রায় ফিস ফিস করে বলল, ‘উনি আপনাকে বোঝাতে চাইছেন, আপনি ওনার চাকরি খেয়ে দিলেও উনি দিব্যি খেয়েপরে আছেন…!’

বস ওবায়েদের মুখ হাঁ হয়ে গেল! এসি রুমে সাধারণত মাছি দেখা যায় না। থাকলে নিশ্চয়ই ওবায়েদ সাহেবের মুখে ঢুকে পড়ত এতক্ষণে!