বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতেই বাসটার যেখানে গতি পাওয়ার কথা, সেখানেই গেল থেমে। ইঞ্জিন কয়েকবার খক খক করে উঠল বটে, কিন্তু তার পরই যেন দম ছেড়ে দিল। আমার মেজাজ চড়ল সপ্তমে! নাইট কোচের যদি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আর কী বলার থাকে? সুপারভাইজারকে বললাম, ‘ভাই কী হইছে?’
সুপারভাইজার মাথা নাড়িয়ে এমন একটা ভঙ্গি করল, তাতে কী বোঝাতে চাইল, বোঝা গেল না!
রাত আড়াইটা বাজে।
এখন যদি টেনে যেতে না পারি, তাহলে ঢাকায় ঢুকতে ঢুকতে দুপুর হয়ে যাবে। অফিস সকাল নয়টায়…তিন দিনের ছুটির সঙ্গে আজকের এই অছুটিটাও মারা যাবে। জবাবদিহি করতে হবে এইচআরে। নানান ফ্যাকড়া…অথচ এদিকে ইঞ্জিন দম ধরে নিয়েছে।
ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেব কি না, বুঝছি না। আমাদের বলার জায়গা তো ওই ফেসবুকই। ছোট ছোট রাগ, দুঃখ, আনন্দ—সব জানাই ফেসবুকে। কেউ কেউ পড়ে, বেশির ভাগই পড়ে না। তা বলে আমাদের উৎসাহের খামতি থাকে না।
পকেটে সিগারেট আছে। নিচে নেমে ধরানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি, ‘কতক্ষণ লাগবে ঠিক হতে?’
ড্রাইভারও সুপারভাইজারের মতো মাথা নাড়াল। এদের বোধ হয় বিশেষ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ানোর কোচিং করা আছে, যার কোনো মানে দাঁড়ায় না।
নিচটা ভেজা। এদিকে সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছে। আকাশে মেঘ আছে এখনো। আবার যদি বৃষ্টি শুরু হয়…টাঙ্গাইলের কোনো এক নির্জন রাস্তার পাশে বাসের ভেতর বসে থেকে থেকে রাতটা পার করতে হবে হয়তো।
‘ভাই, আপনেরা কি ঢাকা যাইতেছেন?’
আমার সামনে একটা লোক এসে দাঁড়িয়েছে। অন্ধকারে ভালো দেখা যায় না। উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা হয় না। সিগারেটে টান দিয়ে অল্প করে বলি, হুম।
লোকটার মধ্যে ব্যস্ততা, ‘আমারে নেওয়া যাইত না! আমার একটু ঢাকা যাওনের দরকার!’
আমি ভদ্রতার ধার দিয়েও যাই না। মেজাজ এমনিতেই তিতিবিরক্ত হয়ে আছে। বলি, ‘আমাকে এই সব বলে লাভ নাই। সুপারভাইজারকে বলেন, যান! বিরক্ত করবেন না!’
‘জি, স্লামালাইকুম!’
মেজাজ যখন আরও খারাপের দিকে তখনই ভালো খবরটা শোনা গেল। বাসটা চালু হলো। আমরা যে যার মতো উঠতেই বাসটা চলতে শুরু করল আর তখনই একজন ঘাড়ের ওপর এসে পড়ল, ‘স্যার…ওরা নিছে। আপনার কথা বলছিলাম। তারপর নিছে!’
লোকটার মুখ নিচে দেখতে পাইনি। এখন দেখে আর চোখ রাখা যাচ্ছে না। ভয়ানক বিশ্রী। গালের চামড়াগুলো যেন ঝলসে গেছে। একটা লম্বা কাটা দাগ। লালচে হয়ে আছে এখনো!
আমি কোনোমতে বললাম, ‘আমার কথায় নিছে মানে? আমি কি বলছি আপনাকে আমার কথা বলতে?’
লোকটা অনুমতি না নিয়েই আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। আমি একটু সরে বসলাম। লোকটা হেসে বলল, ‘স্যার, ভয় পাইতেছেন?’
তখনই বাসের লাইট নিভে গেল। ভয় এবার সত্যিই পেলাম আমি। কেন কে জানে!
‘ভয় পাইয়েন না স্যার। আব্বা বলত, ভয় নাই ত্রিভুবনে…যত ভয় তোর নিজের মনে! এইটা বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের লাইন স্যার, না?’
‘আমি ঠিক জানি না।’
‘রবীন্দ্রনাথ পড়ার দরকার আছে, স্যার। কী বলেন?’
‘ভাই, আমি একটু ঘুমাই? আপনি অন্য দিকে গিয়ে বসেন।’
‘সিট খালি নাই স্যার। আমি চুপ কইরা যাই। তাইলেই আপনি ঘুমাইতে পারবেন!’
আমি কিছু বললাম না। তবে লোকটা চুপ করে গেল। আমি সত্যি সত্যি ঘুমানোর চেষ্টা শুরু করলাম। সকালে গিয়ে অফিস করতে হবে। একটুও ঘুম না হলে সারাটা দিন জঘন্য যাবে। কিন্তু বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও ঘুম এল না। অস্বস্তিটা আসলে পাশের লোকটা…কেমন উৎকট গন্ধও তো আসছে লোকটার শরীর থেকে!
‘স্যার কি পানি খাইবেন?’
মনে হলো আসলেই পিপাসা পেয়েছে। পানির বোতল সঙ্গেই ছিল। একটু খেয়ে নিলাম।
‘আব্বা বলত, সব ভয় তো আসলে নিজের মনেই। আপনি ভালো করে খিয়াল করেন নাই তাই বোঝেন নাই!’
‘কী খেয়াল করি নাই?’
‘আমারে। আমার মুখের যে এই কাটাকুটা…এইগুলা স্যার ফলস! মেকআপ!’
আমি আরেকবার তাকাই লোকটার দিকে। ভালো করে কিছু দেখা যায় না। আলো নাই। লোকটা একটা ছোট টর্চ বের করে নিজের মুখে মারে, ‘এই যে স্যার, দেখেন…’
লোকটা আঙুল দিয়ে মুখের রং ওঠায়। কালো কালো কিছু হাতে উঠেও আসে।
‘আমি স্যার আর্টিস্ট…এক্সট্রা আর্টিস্ট! ফিল্মের সিন করি। শুটিংয়ের পরপরই আসছি তো, মুখে রং থাইকা গেছে!’
‘ও আচ্ছা।’
আমার ঘুমানো দরকার। চোখ কড়কড় করা শুরু করেছে এর মধ্যেই। কিন্তু লোকটা তার বকর-বকর এবার থামাচ্ছে না।
‘ফিল্মের নাম স্যার “গরীবের রাজা”।’
‘ভালো নাম।’
‘হিট হইব স্যার ফিল্মটা। মান্না ভাইয়ের ফিল্ম মানেই হিট!’
‘আচ্ছা আচ্ছা।’
‘মান্না ভাই বাঘের বাচ্চা। পর্দায় আইসা যখন এইইই বলে… পর্দা ফাইট্টা যায়।’
‘খুব ভালো। এইবার আমি একটু ঘুমাব ভাই।’
‘জি আচ্ছা। ঘুমান।’
লোকটা চুপ করে যায়। আমিও ঘুমানোর জন্য মাথাটা এলিয়ে দিতেই মনে হলো, লোকটা কোন মান্নার কথা বলছে? চিত্রনায়ক মান্না তো মারা গেছেন অনেক আগে…বাংলা সিনেমা দেখি না অবশ্য। নতুন কোনো মান্না হয়তো এসেছেন সিনেমায়।
ঘুম আসে না। আসবে যে না, তা-ও বুঝে গেছি। বাস বেশ টানের সঙ্গেই যাচ্ছে। ভোর হতে হতেই পৌঁছে যাব ঢাকায়। বাসায় গিয়ে যদি একটা ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি, অফিসটা করতে পারব।
লোকটা বলল, ‘স্যার, ঘুম আসতিছে না?’
‘না।’
‘এই যে স্যার এত লোক প্রত্যেক দিন ঢাকায় যে ঢুইকা যায়, ঢাকার খারাপ লাগে না?’
এখন এই লোকের সঙ্গে আমাকে দর্শন কপচাতে হবে, কে জানত! আমি কোনোমতে বললাম, ‘ঢাকার ভালো লাগে না খারাপ লাগে, আমি কী করে বলব?’
‘আপনেরা জ্ঞানীগুণী মানুষ। আপনেরা বললেও বলতে পারেন। আমি তো স্যার এক্সট্রা…ফিল্মে এক্সট্রা…মিশা সওদাগর ভাইদের পিছনে দাঁড়ায়া থাকি হাতে বন্দুক নিয়া…ঢাকাতেও এক্সট্রা স্যার…বিশ বচ্ছর ধইরা ঢাকায় আছি, তাও ঢাকা আমারে নেয় না!’
‘আপনার সিনেমায় কোন মান্না নায়ক? নতুন কোনো মান্না আসছে?’
লোকটা এবার হেসে ওঠে। হাসতে হাসতেই কাশে। কাশতে কাশতে বলে, ‘মান্না ভাই তো একটাই। বাঘের বাচ্চা। একটু পানি খাইতাম স্যার…’
আমার বোতলটায় এখনো বেশ কিছুটা পানি আছে। কিন্তু বোতলটা দিলে পানিটা আর খেতে পারব না আমি পরে। তবে এসব ভাবনার পরও বোতলটা দিয়ে দিই। একেবারে মায়া ছেড়েই দিই।
লোকটা পানি খায়। ছিপিটা আটকে বলে, ‘আর কি নিবেন এই বোতল?’
আমি অগত্যা হাত বাড়িয়ে নিই। লোকটা তাকিয়ে থাকে। এবার আমিও ওখান থেকে পানি খাই। লোকটা আবারও হাসে। বলে, ‘ঢাকায় কদ্দিন আছেন, স্যার?’
‘আমি? অনেক দিন। পড়ালেখা শেষ করেই ঢাকাতে…’
‘আপনেও কিন্তু এক্সট্রা…ঢাকার হইতে পারেন নাই…ঢাকা আপনারেও কিন্তু নেয় নাই।’
‘ঢাকাতেই আমার সব ভাই। অফিস, বাসা, পরিবার, ঢাকা আমাকে নেবে না কেন?’
‘কী জানি! আপনেরা জ্ঞানী-গুণী মানুষ…আপনেরা ভালো বলতে পারবেন। আমারও পরিবার ঢাকাতেই…কিন্তু তাও…ঢাকা আমারে নেয় নাই!’
লোকটা যে কিছুটা ছিটগ্রস্ত তা বুঝতে বাকি থাকে না। একই কথা বারবার বলে যাচ্ছে। কিন্তু একই কথা বারবার শোনার মতো আগ্রহ আমার নেই। ইচ্ছা করছে অন্য কোনো সিটে গিয়ে বসি। কিন্তু অন্য সিটগুলো ভরা। এবং ঈর্ষণীয়ভাবে সেই সব সিটের প্রায় সবাই-ই ঘুমাচ্ছে। দুয়েকজন নাকও ডাকছে। নিজেকে মনে হচ্ছে একটা ভ্যাবদা মাছ। পুরো রাতটা নষ্ট!
লোকটা উসখুস করছে। কথা বলার জন্যই বোধ হয়। আমি আর কোনো সুযোগ দিতে চাই না। সিটটা একটু পিছিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিই। চোখ বন্ধ করি। লোকটা যেই হোক, এক্সট্রা আর্টিস্ট হোক কি মেইন ভিলেন, মান্নার সঙ্গে অভিনয় করুক কি শাকিব খানের সঙ্গে, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার দরকার ঘুম। সকালে অফিস। ঠিক সময়ে অফিস না পৌঁছালে এক শ একটা কথা শুনতে হবে। তা ছাড়া বাড়ির মানুষজনও চিন্তা করবে। আয় বাবা…ঘুম আয়!
একটা বিকট শব্দের সঙ্গে বাসটা থেমে যায়। ধড়ফড় করে উঠে বসি, ‘কী হইছে?’
লোকটার কণ্ঠ শান্ত। বলে, ‘চিন্তা কইরেন না স্যার, অ্যাকসিডেন্ট হইতে হইতে হয় নাই। মানে অন্য একটা বাস এই বাসটারে ধাক্কা দিছে…অল্প লাগছে…বাসটা একটু ঘুইরা গেছে শুধু…আর কিছু হয় নাই স্যার। আপনার ঘুম হইছে?’
ঘুম হয়েছে কি না, বুঝতে পারছি না। মোবাইলে সময় দেখে নিই। তিনটা চুয়ান্ন। অল্প একটু ঘুমিয়েছি বোধ হয়, নাকি? বাইরের দিকে উঁকি দিই। কোথায় আছি বোঝার চেষ্টা করি। কিন্তু আলো এখনো ফোটেনি বাইরের ‘এটা কোন জায়গা?’
লোকটা বলে, ‘রাইতের বেলা সব জায়গা স্যার একই রকম লাগে, না?’
পানির বোতলটা দেখি খালি। লোকটা খেয়ে ফেলেছে বাকিটা মনে হয়। সিগারেট খেতে পারলেও ভালো হতো। বাস চলতে শুরু করেছে। ড্রাইভারের পাশে গিয়ে খাব নাকি একটা? লোকটা বিড়বিড় করে।
‘কিছু বলছেন?’
‘না, স্যার। কিছু বলতেছি না।’
‘আচ্ছা।’
‘আসলে স্যার, ঢাকায় ঢুকা আমার জন্য খুব জরুলি…’
‘আচ্ছা।’
‘আমাগো বস্তিটায় আগুন লাগছে স্যার। লাগছে কি লাগায়া দিছে কেউ কে জানে, স্যার…’
‘কী বলেন?’
‘জি স্যার। মাঝেমইধ্যে ঢাকার লোকেরা এক্সট্রাদের বস্তিতে আগুন লাগায়া দেয়। দেয় না স্যার?’
‘আপনার ফ্যামিলিরা সব কই? ওই বস্তিতেই?’
‘ফ্যামিলি আর কী স্যার…আমার বউ। সুরাইয়া জাহান। মিষ্টি নামে পরিচয় আছে তার ফিল্মপাড়ায়। সে-ও এক্সট্রা স্যার। লাস্ট সিনেমায় শাবনূর ম্যাডামের বান্ধবী হইছিল। এখন আর ফিল্ম করে না।’
‘ছেড়ে দিয়েছেন?’
‘না না। পেটে বাচ্চা তো স্যার। আমারই বাচ্চা।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা।’
‘তিন বচ্ছর হয় বিয়া করছি…আপনে বিয়া করছেন, স্যার?’
‘হ্যাঁ করেছি।’
‘কয় বচ্ছর স্যার?’
‘চার। চার বছর। আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে? ওনারা কেমন আছেন?’
লোকটা কথা বলে না। চুপ করে যায়। আমি তাকিয়ে থাকি। অনেক পরে লোকটা বিড়বিড় করে বলে, কথা হয় নাই ম্যালা বচ্ছর! ফোন বন্ধ থাকে। নাম্বার পুইড়া গেছে হয়তো!
আমি তাকিয়ে থাকি আরও কিছুক্ষণ। মাথা খারাপ লোকটার, নাকি বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে?
‘স্যার, আপনে ঘুমান। এক্সট্রাদের কষ্টের শেষ নাই…’
‘আপনি বলছেন আপনাদের বস্তিতে আগুন লেগেছে আর আপনি সেইখানে যাচ্ছেন…ঢাকার কোনো বস্তিতে আগুন লাগার কোনো খবর আমি পাইনি। ফেসবুকে আজকাল সব খবর আসে, বুঝলেন? কষ্টের কথা বলে কি সাহায্য চাইবেন আমার কাছে, নাকি?’
‘আপনেও স্যার একটু একটু ঢাকা হইছেন…ঢাকা হইলে মানুষ মানুষরে বিশ্বাস করবার পারে না।খালি সন্দেহ করে। আপনে একটু ঢাকা হইয়া গেছেন স্যার!’
‘সুপারভাইজার…এই সুপারভাইজার…’
চিৎকার দিতেই সুপারভাইজার ছুটে আসে। চোখ লাল তার। ঘুমে ঢুলুঢুলু।
‘স্যার…’
‘এই লোকটারে আমার পাশে ক্যান বসাইছ, অ্যা? এরে এক্ষুনি বিদায় করো…হয় অন্যদিকে বসাও, নাইলে নামায়া দাও…এইটা তো মলম পার্টি!’
‘জি স্যার, সরাইয়া দিতেছি স্যার। এই, আসো আসো। বনেটে বসো। আসো…স্যার, আপনে ঘুমান।
উত্তরায় নামবেন না স্যার?’
আমি আর কিছু বলি না। পানিও নাই যে খাই। লোকটা যাওয়ার আগে বলে, ‘স্যার আসি। স্লামুআলাইকুম।’
আমি হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করি। রাতটাই মাটি।
দুই.চোখ খুলতেই দেখি ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। এর মধ্যেই গাড়ি ব্রেক করে। সুপারভাইজার হন্তদন্ত হয়ে আসে, ‘স্যার, আসেন। নামেন স্যার।’
‘মাস্কট প্লাজা চলে আসছি?’
‘নামেন স্যার…’
আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। রাত যেন কাটেইনি এমন অবস্থা। আমি নেমে পড়ি। একটা রিকশা পাওয়া দরকার। বৃষ্টির চোটে চোখে কিছু ঠাওর করতে পারছি না। রাস্তায় আলোও নেই। এর মধ্যেই যতটুকু দেখা যায় তাতে জায়গাটা আর যাই হোক উত্তরা না। মাস্কট প্লাজা তো অবশ্যই না!
‘স্লামুআলাইকুম স্যার!’
দেখি যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। এত বৃষ্টিতেও মুখের মেকআপ ধুয়ে যায়নি। বরং কাটা দাগটা আরো দগদগে হয়ে উঠেছে।
‘স্যার কি আমারে দেইখা অবাক হইছেন?’
আমি কিছু বলি না।
‘স্যার কি ভাবছেন আমি আপনারে ফলো কইরা আসছি?’
আমি কিছু বলি না।
‘স্যার, ভালো কইরা দেখেন…আমি না, আপনেই আমারে ফলো কইরা আসছেন…’
আমি ভালো করে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। তবু এর মধ্যেই আমার বুকটা ধড়াস করে ওঠে। আমি কি টাঙ্গাইলের সেই অখ্যাত জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে আছি?
‘বারো বচ্ছর ধইরা টেরাই করতাছি স্যার…ঢাকায় ঢুকতে পারতেছি না। যেই গাড়িতেই উঠি… ঘুইরা ফুইরা এইখানে নামায়ে দেয়। আমার স্যার ঢাকা যাওন দরকার। আমার বস্তিতে আগুন লাগছে, স্যার। মিষ্টির প্যাটে বাচ্চা। আমারই বাচ্চা। আমার যাওন দরকার স্যার…কিন্তু ঢাকা আমারে নেয় না। আমি যে এক্সট্রা…আমারে নেয় না, স্যার…’
আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বুঝতে পারি না ঢাকা আমাকেও নেবে কি না!
অন্য আলোয় লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]